২০১৬ থেকে চলছে জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার'কে নতুন সামরিক জুতা এনে দেওয়ার কথা৷ কিন্তু ব্যবস্থাপনা ও যথেষ্ট উৎপাদন না থাকায়, ২০২২ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাদের৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের যে কোনো উন্নত সামরিক বাহিনীর ন্যূনতম প্রয়োজনগুলির একটি সামরিক পোশাক, যার মধ্যে যুদ্ধে ব্যবহৃত জুতাও রয়েছে৷ ন্যাটোর সদস্য জার্মানির সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার' ইউরোপের অন্যতম আধুনিক সেনাবাহিনী৷ কিন্তু ‘বুন্ডেসভেয়ার' সদস্যদের যুদ্ধের উপযোগী জুতা পেতে করতে হবে অন্তত ছয় বছর অপেক্ষা!
ফলে, বিপক্ষ সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধেক্ষেত্রে লড়তে কতটা তৈরি তারা, সেবিষয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে৷
২০১৬ থেকেই আলোচনায় উঠে আসছে দুই ধরনের নতুন জুতার প্রয়োজনীয়তা৷ ‘অল সিজন' বা দৈনন্দিন ব্যবহারের জুতার পরিবর্তে একটি ‘হেভি কমব্যাট' বা ভারী লড়াইয়ের জুতা৷ আরেকটি ‘লাইট কমব্যাট' বা হালকা লড়াইয়ের বুট৷
২০২০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবার কথা ছিল এই দুই ধরনের বুট সেনাসদস্যদের জন্য প্রস্তুত করা৷ কিন্তু জার্মান দৈনিক ডেয়ার স্পিগেল জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ২০২২ সালের আগে এই কাজ শেষ হবে না৷ কারণ হিসাবে তারা বলেছে যথেষ্ট পরিমাণে যুদ্ধের বুট উৎপাদনের ব্যর্থতার কথা৷ উঠছে কাগজপত্রের জটিলতার কথাও৷
জার্মানির ন্যাটো মিশন
ন্যাটোতে পশ্চিম জার্মানির অন্তর্ভূক্তির পর থেকে ট্রান্স-আটলান্টিক জোটের বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছে বার্লিন৷ আর ১৯৯০ সাল থেকে জার্মানির সেনাবাহিনী বুন্ডেসভেয়ার নিজেদের ‘আওতাভুক্ত নয়’, এমন জায়গায়ও কাজ করেছে৷
ছবি: S. Gallup/Getty Images
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ১৯৫৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দেয়৷ তবে, দুই জার্মানির পুর্নমিলনের আগ অবধি নিজেদের ‘আওতাভুক্ত নয়’ এমন এলাকাতে ন্যাটোর নেতৃত্বে মিশনে যায়নি জার্মানি৷ ১৯৯০ সালের পর থেকে বিশ্বের নানাপ্রান্তে শান্তিরক্ষা থেকে প্রতিরক্ষা অবধি নানা পর্যায়ে ন্যাটোর মিশনে অংশ নিয়েছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
জার্মানি ১৯৯৫ সালে প্রথম ‘নিজেদের আওতাভুক্ত নয়’ এমন এলাকায় ন্যাটোর নেতৃত্বে শান্তি রক্ষায় সেনা মোতায়েন করে৷ দেশটির নাম বসনিয়া হ্যারৎসেগোভিনা৷ বসনিয়া যুদ্ধের সময় সেখানে নিরাপত্তা প্রদানে ভূমিকা পালন করে জার্মান সেনারা৷ ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর ষাট হাজারের বেশি সেনা সেসময় বসনিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোয় শান্তি রক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরু থেকে সাড়ে আট হাজারের মতো জার্মান সেনা সেখানে মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে ন্যাটো সার্বিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বিমান হামলাও চালিয়েছিল, কেননা, সেই সময় তারা সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তাদের বেসামরিক সমর্থকদের উপর দমনপীড়ন চালাচ্ছিল৷ এখনও সাড়ে পাঁচশ’র মতো বুন্ডেসভেয়ারের সেনা দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সি-তে টহল
জার্মানি ২০১৬ সালে কমব্যাট সাপোর্ট শিপ ‘বন’-কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থিত ন্যাটো মিশনের আওয়তায় এজিয়ান সি-তে মোতায়েন করে৷ অভিবাসী সংকটের সময় গ্রিক এবং তুর্কি সমুদ্রসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ছিল এই মিশনের অংশ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
জার্মান সংসদ ২০০৩ সালে আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনীতে সেনা পাঠানোর পক্ষে মত দেয়৷ ফলে জার্মানি ন্যাটো বাহিনীতে তৃতীয় বৃহত্তম সেনা পাঠানো দেশে পরিনত হয়৷ এই মিশনে পঞ্চাশ জনের বেশি জার্মান নিহত হয়েছে৷ এখনো প্রায় হাজারখানেকের মতো সেনা সেদেশে মোতায়েন রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Niedringhaus
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে ন্যাটোর উপস্থিতি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বুন্ডেসভেয়ারের সাড়ে চারশ’ সেনা ২০১৭ সালে লিথুয়ানিয়ায় মোতায়েন করা হয়েছে৷ ন্যাটোর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই উপস্থিতিকে শক্তিশালী করছে জার্মানির সর্বাধুনিক ট্যাংক৷ তাছাড়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তত বাহিনীর নেতৃত্বেও রয়েছে জার্মানি, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
নেতৃত্ব গ্রহণ
২০১৯ সালে ন্যাটোর বহুজাতিক ‘ভেরি হাই রেডিনেস জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স (ভিজেটিএফ)’-এর নেতৃত্ব দেবে জার্মানি৷ জোটটির পূর্বাংশে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাব দিতে এই ব়্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: S. Gallup/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এক লাখ ৮৩ হাজার সেনাসদস্যের মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্য এখন পর্যন্ত শুধু হেভি কমব্যাট বুটই পেয়েছেন৷ বাকিরা তা পাননি৷ লাইট কমব্যাট বুট পেয়েছেন মাত্র ৩১ হাজার জন৷
এই নিয়ে আবার আলোচনায় জার্মান সেনাসদস্যদের জীবনযাত্রার মান৷ কমিশনার ফর আর্মড ফোর্সেসের পক্ষে হানস পেটার বারটেলস বলছেন, ‘‘যতদিনে সব সদস্যের কাছে পৌঁছবে দুই জোড়া জুতা, ততদিনে এখনকার জুতাগুলি পুরোনো হয়ে যাবে৷ ফলে, কিছু সেনাসদস্যদের নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে মনে হতে পারে৷''