নাইকি এবং পুমাসহ বিশ্বখ্যাত জুতার ব্র্যান্ড এবং ডিজাইনার ক্লোদিং লেবেলগুলো জোরপূর্বক কাজ করানো বন্ধে অনেকটাই এগিয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে আরো কাজ করার সুযোগ আছে বলে৷
বিজ্ঞাপন
গবেষণায় চীনের সবচেয়ে বড় জুতা বিক্রেতা বেলে ইন্টারন্যাশনালের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, কেননা, প্রতিষ্ঠানটি ঠিক কিভাবে চামড়া সংগ্রহ করে তার বিস্তারিত জানায়নি এবং শ্রমিকদের পরিস্থিতির উন্নয়নে কোনো রকমের প্রতিশ্রুতি দেয়নি৷
পাঁচটি জুতা এবং বিলাসি পোশাক ব্র্যান্ডে জরিপ পরিচালনা করেছে নোদ্যচেইন নামের একটি রিসোর্স, যেটি ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের পণ্য সরবরাহকারীরা জোরপূর্বক কাউকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে৷
ট্যানারি শিল্পে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ক্রমেই হাজারিবাগের চামড়া শিল্পে দূষণের মাত্রা বাড়ছে৷ পরিবেশ দূষণ ছাড়াও ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি৷ পানি ও বাতোসে রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে নানারকম অসুখে ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: DW
একটি ট্যানারির ভেতরের চিত্র
হাজারিবাগে কমপক্ষে ২০০টি ট্যানারি রয়েছে, যাতে ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন৷ এ সব ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় ক্রোম পাউডার, কপার সালফেট, সোডিয়াম, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, অ্যাসিড, ব্লিচিং পাউডারসহ নানারকম রাসায়নিক৷ শ্রমিকরা নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাত-পায়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজ করার ফলে চর্মরোগ তাঁদের নিত্যসাথী৷ এছাড়া রাসায়নিকের প্রভাবেও অন্যান্য রোগে ভোগেন নিম্ন আয়ের শ্রমিকরা৷
ছবি: DW
হুমকির মুখে শ্রমিকদের নিরাপত্তা
চামড়া শিল্পে কাজকরা এ সব শ্রমিকদের শতভাগই অশিক্ষিত৷ তাই এ শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের কাজের জন্য বেশিরভাগ ট্যানারিতেই নেই কোনো চুক্তিপত্র৷ ফলে নিম্ন আয়ের এ সব শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তাও মারাত্মক হুমকির মুখে৷
ছবি: DW
আজও সচেতন নন শ্রমিকরা
ট্যানারিতে কাজ করা শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্য সচেতনও নন৷ তবে বড় ট্যানারি কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ভালো৷ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামও রয়েছে এ সব ট্যানারিতে৷ তারপরও শ্রমিকরাই নাকি এ সব সরঞ্জাম ব্যবহার করতে চান না, অভিযোগ এমনটাই৷
ছবি: DW
‘দীপ নিভে গেছে মম...’
দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা ট্যানারি শিল্পে কাজ করেছেন, তাঁদের বেশিরভাগের জীবনপ্রদীপ ৫০ বছরেই নিভে গেছে৷
ছবি: DW
অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে চামড়া শিল্প
ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকরা একরকম মৃত্যুকূপের বাসিন্দা৷ স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও বছরের পর বছর এ শিল্পে কাজ করে চলছেন বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিক৷
ছবি: DW
নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা
ট্যানারি শিল্পে কাজ করা শ্রমিকদের বড় একটা অংশ কাজ করেন দৈনিক ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা৷ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও এ সব শ্রমিকদের জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে৷
ছবি: DW
এলাকাবাসীরাও দূষণের কবলে
শুধু শ্রমিকরাই নন, ট্যানারি শিল্পের দূষণের ছোবলে আক্রান্ত হাজারিবাগ এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দা৷ এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাজারিবাগ থেকে এ সব ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর হওয়ার কথা থাকলেও, এ খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ‘‘নানান জটিলতার কারণে এ স্থানান্তর আগামী দু’বছরেও সম্ভব হবে না৷’’
ছবি: DW
শিশুশ্রম – এখনও বাস্তব হাজারিবাগে
দুঃখের খবর, তবুও এটাই সত্য৷ ট্যানারি শিল্পের শ্রমিকদের বড় একটা অংশ ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু৷ শিশুদের মজুরি যেমন কম, তেমনই দুর্ঘটনার শিকার হলে তাদের কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় না৷
ছবি: DW
প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য!
হাজারিবাগের ২০০টি চামড়াশিল্প থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭৫ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য (লবণ, হাড়, চামড়ার বর্জ্য) নির্গত হয়৷ নির্গত হয় ২১ হাজার ৬০০ ঘনমিটার তরল বর্জ্য, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ এই বর্জ্যের মধ্যে আছে ক্রোমিয়াম, সীসা, অ্যামোনিয়া, সালফিউরিক অ্যাসিড প্রভৃতি৷ কিন্তু কোনো কারখানাতেই এই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই৷ ফলে এ সব বর্জ্য আশেপাশের জলাশয় দূষণ করা ছাড়াও গিয়ে মেশে বুড়িগঙ্গা ও ভূগর্ভের পানিতে৷
ছবি: DW
মৃত্যুকূপের বাসিন্দা নারীরাও
ট্যানারিতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে আছেন নারীরাও৷ ট্যানারির বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের প্রভাবে এ সব নারী শ্রমিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে৷
ছবি: DW
10 ছবি1 | 10
নোদ্যচেইন জানিয়েছে যে, দশটি কোম্পানি যেসব দেশে চামড়া উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত এবং জুতা তৈরি করে, সেসব দেশে জোরপূর্বক কাজ করানো হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে খুব কম তথ্যই দিয়েছে৷ তবে গবেষণায় জার্মান খেলাধুলার পোশাকের ব্র্যান্ড আডিডাসের প্রশংসা করে বলা হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি তাইওয়ান এবং চীনের ট্যানারিগুলোতে জোরপূর্বক কাজ করানোর ঝুঁকি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়েতে তাদের জন্য চামড়া উৎপাদনকারীদের কাজের পরিবেশ আরো ভালো করতে কাজ করছে৷
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের চামড়া শিল্পে শিশুশ্রম এবং জোরপূর্বক কাজ করানোর বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ ইতোমধ্যে নথিভুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে সেসব ট্যানারি থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান চামড়া নিচ্ছে, তাদের এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য চর্চা বন্ধে আরো উদ্যোগী হতে হবে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে৷
প্রতিবেদনটিতে চীনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জুতা নির্মাতা দেশটিতে শ্রমিকদের বাড়তি কাজ করতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ কেউ বেশি কাজ করতে না চাইলে তাঁর মজুরি কমানো বা পদাবনতি করা হয়৷