সুইডিশ ফ্যাশন ডিজাইনার নাইম ইয়োসেফির তৈরি এই মডেলটির নাম ‘মেলোনিয়া'৷ এর বিশেষত্ব হলো: এর উৎপাদন পদ্ধতি৷ এই হাইহিল জুতোজোড়া পলিয়ামিড দিয়ে তৈরি৷ এগুলো এসেছে থ্রি-ডি প্রিন্টার থেকে৷ নাইম ইয়োসেফি বলেন: ‘‘আমার থ্রি-ডি প্রিন্টিং সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না৷ আমি একটা অরগ্যানিক আকার সৃষ্টি করার পন্থা খুঁজছিলাম৷ তখন আমি এই নতুন ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ পদ্ধতির কথা শুনি৷ থ্রি-ডি প্রিন্টিং একটা খুব উচ্চ মানের প্রযুক্তি, যা দিয়ে নতুন নতুন আকৃতি তৈরি করা যায়৷''
জন্মসূত্রে ইরানের মানুষ নাইম ইয়োসেফির চোখে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি হল ভবিষ্যতের ‘জুতা আবিষ্কার': মুচির হাতুড়ি-ফর্মার বদলে কম্পিউটার আর প্রিন্টার দিয়ে তৈরি করা৷ নকশাটা করা হয়েছিল কম্পিউটারে৷ তারপর স্টকহোমের এক বিশেষজ্ঞ মিকায়েল এরিকসন সেই নকশা ‘অপটিমাইজ' করেন৷ একটি বিশেষ সফটওয়্যার জুতোর ডিজিটাল মডেলটিকে সিগনালে পরিণত করে, যা থেকে থ্রি-ডি প্রিন্টার ত্রিমাত্রিক মডেলটি তৈরি করে৷
পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে শুধু সুন্দর মুখশ্রী নয়, আকর্ষণীয় ফিগারের মতো মেয়েদের পায়ের সৌন্দর্যও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে৷ সুস্থ এবং সুডৌল পায়ের জন্য কিছু টিপস পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Imagoবিশ্বখ্যাত জার্মান অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলেনে ডিট্রিশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর এক কিংবদন্তি শিল্পী৷ ক্যাবারে গায়িকা হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল৷ জন্ম ১৯০১ সালে৷ মারলেনে তাঁর কণ্ঠ, অভিনয় আর সুন্দর পায়ের অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে পুরুষদের মাথা ঘুরিয়ে দিতেন৷ তাঁর পা জোড়ার মূল্য ছিলো ১.৮ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-imagesপপস্টার মারাইয়া ক্যারি তাঁর সুন্দর পায়ের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের বিমা করেছেন৷ ছবিতে সুন্দর পায়ের অধিকারী মারাইয়া ক্যারিকে মোনাকোর মন্টে কার্লোতে ২০১৪ সালের ওয়ার্ল্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Imagesদক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যেমন মেয়েদের মুখ আর ফিগার নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়, জার্মানিতে তেমনটা শোনা যায় মেয়েদের সুন্দর পা নিয়ে৷
ছবি: Fotolia/marsপরিষ্কার পরিচ্ছতাই হলো সৌন্দর্যের প্রথম শর্ত অর্থাৎ পায়ের লোম ভালোভাবে দূর করতে হবে৷ আর পরে অবশ্যই ভালো লোশন বা ক্রিম মাখা জরুরি৷
পায়ের ছোটখাটো দাগ বা ক্রুটি দূর করার জন্য ব্রাউন রংয়ের বিশেষ ধরনের কয়েকটি মেকআপ পাওয়া যায়৷ এর মধ্য থেকে পছন্দের একটি বেছে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে স্পঞ্জ দিয়ে লাগিয়ে নিতে হয়৷ পরে পাউডার লাগিয়ে দিলেই সব ঢেকে যায়৷ এই পরামর্শ দিয়েছেন জার্মানির এক ফার্মেসিতে কাজ করা কর্নেলিয়া গ্যুটে৷
ছবি: DPAহাই হিল জুতো পরলে বেশিরভাগ মেয়েকেই আরো আকর্ষণীয় লাগে সন্দেহ নেই৷ তা সত্ত্বেও সবসময় হাই হিল পরা উচিত নয়৷ মাঝে মাঝে একদম খালি পায়ে থাকতে পারলে আরো ভালো৷ তবে পা দুটো ক্লান্ত মনে হলে তাতে খুব ঠাণ্ডা, বিশেষ করে জেল বা থারমাল স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে যেন পাগুলো আবার সজীব হয়ে ওঠতে পারে৷ সুন্দর জুতোর জন্য যে চাই সুন্দর পা!
ছবি: Fotolia/Zeit4menলুইবেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিকের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. বিরগিট কালে বলেন, ‘‘পায়ের ত্বক মসৃণ করতে সপ্তাহে দু’বার বিশেষ ধরনের ওয়েলনেস বা ম্যাসাজ গ্লাভস পরে ম্যাসাজ করুন৷ এতে পায়ের রক্ত চলাচল ভালো হবে এবং ত্বক খুব সুন্দর ও মসৃণ হবে৷ তবে ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে ভালো লোশন ব্যবহার করুন৷’’
ছবি: picture alliance/chromorangeডা. কালে আরো বলেন, ত্বকে আর্দ্রতা কমে গেলে তা ত্বকের জন্য হয় স্ট্রেস৷ তখন তা অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণের মতো কাজ করে থাকে অর্থাৎ ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ত্বরান্বিত করে৷ তাই সপ্তাহে দু’দিন পায়ের গোড়ালি থেকে ওপর পর্যন্ত স্ক্রাব ক্রিম দিয়ে আস্তে আস্তে ঘসে ধুয়ে পরে ভালো বডি লোশন লাগাতে হবে৷ এতে পায়ের ত্বক মসৃণ তো হয়ই, রক্ত চলাচলও খুব ভালো হয় এবং দেখতেও আকর্ষণীয় লাগে৷
ছবি: Fotolia/Franz Pflueglমাঝে মাঝে পায়ের নীচ থেকে উপর পর্যন্ত আঙুল দিয়ে মৃদুভাবে চেপে ধরে উপর-নীচ করতে পারেন৷ এছাড়া পা ম্যাসাজ করার জন্য বিশেষ রোলার পাওয়া যায়৷ সেটা একবার ওপর থেকে নীচে, আবার পরে নীচ থেকে ওপরে তুলতে থাকুন৷ এভাবে কয়েকবার করলেই পা দুটো খুব হালকা মনে হবে এবং ক্লান্তি দূর হবে৷
ছবি: Elenathewise - Fotolia.comসুন্দর পায়ের জন্য হাঁটা এবং ব্যায়াম খুবই জরুরি৷ পায়ের মাংশপেশি কিছুটা শক্ত না হলে পা দেখতে সুন্দর লাগে না৷ তাছাড়া হাঁটা যে-কোনো মানুষকে ফিট রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে৷ সুস্থ ও সুন্দর থাকতে হাঁটাহাটির কোনো বিকল্প নেই৷ মানুষ যত সুন্দরই হোক না কেন সুন্দর করে না হাঁটলে যেমন তার ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে না, তেমনি ব্যক্তিত্বহীন মানুষকেও সুন্দর বলা যায় না৷
ছবি: Andreas Stommelনিয়মিত সাইকেল চালানো পায়ের জন্য একটা বেশ ভালো ব্যায়াম৷ সারাদিন পর বাড়িতে ফিরে পা দুটোকে একটু উঁচুতে তুলে বসে বা শুয়ে থাকলে পায়ের বেশ আরাম হয়৷ এভাবে রক্ত চলাচলও ভালো হয়৷ যাঁদের দিনের অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে কাটাতে হয় তাঁদের জন্য এই আরাম অবশ্যই প্রয়োজন৷
ছবি: Imago
জুতো ছাপার কাণ্ডকারখানা
ত্রিমাত্রিক মুদ্রণে অনেক সময় লাগে৷ একটি প্ল্যাটফর্ম ধীরে ধীরে নীচে নেমে যায়, কেননা তার উপর পরতে পরতে পাদুকাটি গড়ে ওঠে৷ প্রণালীটা ঠিক কাগজে ছাপার মতো: শুধু কালির বদলে তরল প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়৷ সেই প্লাস্টিক আবার একটি লেজার থেকে অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণে শুকোয় এবং শক্ত হয়ে ওঠে৷ স্তরে স্তরে ছাপা, খুব পাতলা সব স্তর, কাগজের চেয়েও পাতলা৷ মাত্র ১৬ মাইক্রন, অর্থাৎ এক মিলিমিটারের ষোলো হাজারের এক ভাগ৷ তা থেকে বোঝা যায়, একটা জুতো তৈরি করতে কেন চল্লিশ ঘণ্টা সময় লাগে৷ ও রকম একটা জুতো তৈরি করার খরচ হল দেড় হাজার ইউরো৷
আরো অনেক ফ্যাশান ডিজাইনার থ্রি-ডি প্রিন্টার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ নাইম ইয়োসেফি-র ‘মেলোনিয়া' মডেলটিকে নান মিউজিয়ামে দেখতে পাওয়া যাবে – যেমন লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম৷ ইয়োসেফি আপাতত একটি নতুন মডেলের জুতো নিয়ে কাজ করছেন৷ থ্রি-ডি প্রিন্টার থেকে ‘ছাপানো' এই ধরনের একজোড়া জুতো আজ বিক্রি হয় কয়েক হাজার ইউরো দামে৷ তবে ইয়োসেফি ভবিষ্যতে দাম কমানোর আশা রাখেন: ‘‘গ্রাহকরা যাতে এই ধরনের জুতো আরো সহজে কিনতে পারেন, আমি তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি৷ তারা আমার দোকানে আসবেন, নিজেদের শরীর স্ক্যান করাবেন আর জুতো অথবা অ্যাক্সেসরির অর্ডার দেবেন৷ খুবই সোজা কাজ৷''