আফ্রিকার দেশ সুদানে বছরজুড়েই গরম থাকে৷ এমনকি, বৃষ্টির মধ্যে সেখানে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে৷ মরুর দেশ সুদানে গড় তাপমাত্রা থাকে ৫২ ডিগ্রি৷ একেবারে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরমে বেশি নাভিশ্বাস উঠে৷

আরবের ধনী দেশ ওমান৷ অতি উষ্ণ দেশ হিসাবেও এটি আছে প্রথম সারিতে৷ বছরের পাঁচ থেকে ছয় মাস এখানে তাপমাত্রা ৫০-৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে৷ দেশটির বেশির ভাগ জায়গাই এয়ার-কন্ডিশনড৷

যুদ্ধের বাইরে অন্য অনেক সমস্যা মোকাবেলা করে ইরাক৷ এর মধ্যে একটি বড় সমস্যা অধিক তাপমাত্রা৷ গরমের দিনে এখানকার তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি থেকে শুরু করে ৫৪ ডিগ্রিতে ছাড়িয়ে যায়৷ উত্তরের পর্বত এলাকায় বরফ পড়লেও পুরো দেশে তাপমাত্রা থাকে অসহনীয়৷

বহু রকম আবহাওয়া প্রত্যক্ষ করা হয় ভারতে৷ দেশটির হিমালয় এলাকায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামে৷ আর রাজস্থানের মতো মরু এলাকায় তাপমাত্রা উঠে ৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত৷

গ্রীষ্মে মধ্য অ্যামেরিকার দেশ মেক্সিকোতে গড় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে থাকে৷ এমন তাপমাত্রার মধ্যও মেক্সিকোর কয়েকটি সমুদ্র সৈকত পৃথিবী অন্যতম শীর্ষ পর্যটক গন্তব্য৷

১৩টি রাজ্য ও তিনটি প্রজাতান্ত্রিক এলাকা নিয়ে গঠিত পূর্ব-এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া৷ দেশটির তাপমাত্রায় নানাবিধ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ সারাবছর এখানে তাপমাত্রা থাকে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে৷ আর কোনো কোনো সময় এটা ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে৷

উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার আবহাওয়া বিচিত্র রকম৷ এখানে যেমন ভয়াবহ উষ্ণ দিন হয়, তেমনি সবচেয়ে ঠাণ্ডা রাত পাওয়া যায়৷ মৃদু বৃষ্টিপাতের দেশটিতে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে৷ শীতকালে আলজেরিয়ায় গড় তাপমাত্রা থাকে ২৫ ডিগ্রি৷ আর গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা থাকে অনেক শুষ্ক এবং আর্দ্র৷

বেশির ভাগ অঞ্চল মরুভূমি হওয়ায় সৌদি আরবের তাপমাত্রা বেশি৷ বছরের বিভিন্ন সময়ে দেশটির তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে৷ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় তাপমাত্রা পরিবেশকে অসহনীয় করে তোলে৷ দিনের বেলা গরমের মাত্রা ৫২ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠা সেখানে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার৷

পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণ দেশ ইথিপিওয়া৷ দেশটির ‘দানাকিল ডিপ্রেসন’ মরুভূমির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের একশ‘ মিটার নিচে অবস্থিত৷ এখানে হরহামেশা লু হাওয়া বয়ে যায় এবং ভূমিকম্প হয়৷ দিনের বেলা তাপমাত্রা ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছার রেকর্ডও আসে দেশটিতে৷

লিবিয়ায় গরমের কারণে গ্রীষ্মে চামড়া পুড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হয়ে থাকে৷ লিবিয়ান মরুভূমির দখলের দেশটির বড় অংশ৷ এখানকার শুষ্ক আবহাওয়া তাপমাত্রা প্রায় ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠায়৷ ১৯২২ সালে রেকর্ড ৫৭ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে লিবিয়ায়৷

পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অবস্থানরত এই ব্যক্তি সম্ভবত সরাসরি মুখে সূর্যের তাপ নিতে পছন্দ করেন৷ দেশটিতে তার মতো অনেকেই এমন সুযোগ পাচ্ছেন, কেননা ইবেরিয়ান উপদ্বীপটি গত কয়েকদিন ধরে উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা গরমে সেদ্ধ হচ্ছে৷ গতবছর দেশটিতে অনেক গরম পড়েছে তবে সেখানকার সর্বোচ্চ রেকর্ডটা ভাঙা হয়নি৷ ২০০৩ সালে সেদেশের এক অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৭ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল৷

লিসবনের রোসিও স্কয়ারের মতো এই ফোয়ারা অনেককে গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়৷ পর্তুগালে যে শুধু তাপদাহ চলছে তাই নয়, বরং সাহারা মরুভূমি থেকে আসা ধুলার মেঘ সেদেশের কোনো কোনো অঞ্চলের আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হলুদ রঙে ঢেকে দিয়েছে৷

পর্তুগালের প্রতিবেশি দেশ স্পেনেও তাপমাত্রা উপরের দিকেই রয়েছে৷ বাড়তি গরমের বিষয়ে সেদেশে সতর্কতাও জারি করা হয়েছে৷ গত সপ্তাহে সেদেশে গরমে তিন ব্যক্তি মারা গেছেন বলেও জানা গেছে৷ সেখানকার কর্তৃপক্ষ তাই গরমের সময় সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকতে এবং বেশি করে পানি পানের পরামর্শ দিয়েছে৷

ইউরোপের উত্তরের দিকে অবস্থান হলেও জার্মানিতে গত কয়েকসপ্তাহ ধরে প্রচন্ড গরম পড়ছে এবং একইসঙ্গে স্বাভাবিক চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে৷ অবস্থা এমন যে, বাড়তি গরমের ফলে ক্ষতির শিকার কৃষকরা সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে৷

প্রচন্ড গরমে রাইন নদীর পানি অনেক কমে গেছে৷ ফলে অনেক স্থানে নদীর পাড় শুকিয়ে অনেকটা দেখতে মরুভূমির মতো হয়ে গেছে৷ এই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে চলতে অনেক পণ্যবাহী জাহাজ মাল কমিয়ে রাইন নদীতে চলতে বাধ্য হয়েছে৷

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পুলিশের কুকুর দলের জন্য বিশেষ জুতার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ গরম থেকে তাদের থাবা বাঁচাতে আর কী-ই বা করার ছিল বলুন৷

সুইডেনে গত ২৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে জুলাই মাসে৷ অতিরিক্ত গরমের কারণে সেদেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তবে স্টকহোমের বাসিন্দারা সম্ভবত গরমটা বেশ উপভোগ করেছেন৷ এভাবে জলাশয়ের পাশে তাদের বসে থাকতে দেখা গেছে৷

অপ্রত্যাশিত লম্বা গ্রীষ্ম ব্রিটেনের চারদিকটা ধূসর এবং হলুদ করে দিয়েছে৷ অগ্নি নির্বাপক কর্তৃপক্ষ সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, সূর্যের তাপে শুকিয়ে যাওয়া পার্ক এবং তৃণভূমিগুলোতে যে কোনো সময় আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে৷ দেশটিতে গত একশ’ বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ গরম মাস ছিল জুলাই মাস৷

রেকর্ড গরম তাপমাত্রার বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে উত্তর কোরিয়া৷ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশটির কৃষিখাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরমের কারণে৷ মোটের উপর, পানি সেচ এবং খরা মোকাবিলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও দেশটিতে নেই৷

পিয়ংইংয়ে দুই ব্যক্তিকে একটি ইলেক্ট্রিক ফ্যান নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে৷ আসলে শুধু উত্তর কোরিয়া নয়, গরম যেসব অঞ্চলে পড়ছে, সর্বত্রই এই ফ্যানের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে৷ জার্মানিতেতো এখন রীতিমত ফ্যানের সংকট চলছে৷