আসল পুরস্কার
৮ মার্চ ২০১২বেস্ট অব ব্লগস'এর প্রেক্ষাপট
প্রথমেই বলতে হচ্ছে যে, বেস্ট অব ব্লগস বা ডিডাব্লিউ'র সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতা৷ কিন্তু বস্তুতই একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা৷ অর্থাৎ, বব্স'এ কোনো বিশেষ ভাষাকে নয়, বরং ভাষা নির্বিশেষে বিশ্বের বিভিন্ন উচ্চমানের ব্লগকে অন্যের সামনে তুলে ধরা এবং তাকে পুরস্কৃত করাই এর মূলে৷ তাছাড়া এ প্রতিযোগিতায় এমন সব ওয়েবসাইট বাছার চেষ্টা করা হয়, যেগুলি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আঙ্গিকে ইন্টারনেটে মুক্ত আলাপ-আলোচনার ধারক ও বাহক৷
২০০৪ সাল থেকে এই পুরস্কার চালু হয়৷ আর তখন থেকেই এর উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেটের মাধ্যমে মতবিনিময়ের বৈচিত্র্য এবং দেশ বা ভাষা সাপেক্ষে তার তাৎপর্যকে তুলে ধরা৷ শুধু তাই নয়, সেই মতবিনিময়ের শ্রেষ্ঠ নমুনাগুলোকে পেশ করা এবং তার সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আলাপচারিতার ব্যাপারে বিভিন্ন ভাষার ব্লগারদের মধ্যে একটি সংলাপ সৃষ্টি করা৷
অতীতের দৃষ্টান্ত
যেমন ‘উই আর খালিদ সাইদ' নামের ফেসবুকের পাতাটি৷ ঐ ফেসবুক পাতাটা না থাকলে খালিদ সাইদের হত্যা এবং তার ফলে মিশর তথা সারা আরব বিশ্বে যে প্রতিবাদ দেখা দিয়েছিল – সেটা সম্পর্কে আমরা হয়তো সেভাবে জানতেও পারতাম না৷ বিশ্ব দরবারে সেই আন্দোলনের কথা ছড়িয়ে দিতে বব্স'এর একটা ভূমিকা আছে বৈকি!
আবার ধরা যাক, গতবারের ‘বেস্ট ব্লগ' বা সেরা ব্লগ ক্যাটাগরির জুরি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ‘এ টিউনিশিয়ান গার্ল' ব্লগটি...টিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল দেশটির আপামর জনসাধারণ৷ যা ঠেকাতে সরকার নিয়েছিল নির্যাতনের পথ৷ আর সে সময়, এসব নির্যাতনের ছবি, লেখা নিজের ঐ ব্লগে তুলে ধরেন লিনা বেন মেহনি৷
বব্স'এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এই সব সামাজিক আন্দোলন, মানবাধিকার লঙ্ঘন অথবা হাইতির ভূমিকম্পের পর ‘উশাহিদি' ব্লগটি জায়গায় জায়গায় সাহায্য পৌঁছে দেয়ার জন্য যে কাজটি করেছিল – সে কাজটি অন্য ভাষার ব্লগারদের কাছে তুলে ধরা৷ আসলে একে অন্যের কাছ থেকে যে আমাদের অনেক কিছু জানার আছে, শেখার আছে৷
ভাষার প্রাচীর অতিক্রম করাই মূল চ্যালেঞ্জ
ভাষা একটা অন্তরায় হলেও সে জন্যই তো ডয়চে ভেলের ব্লগ প্রতিযোগিতা অন্যান্য প্রতিযোগিতার থেকে আলাদা৷ কারণ বব্স শুরু থেকেই বহুভাষী৷ এছাড়া, এই প্রতিযোগিতার জুরিরাও যে আন্তর্জাতিক৷ তাঁরাই বিভাগ অনুযায়ী ব্লগের উপজীব্য, উদ্দেশ্য এবং সেটির প্রচ্ছদকে বিভিন্নভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন৷ একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল৷ একবার একটা জুরি ‘সেশন'-এ এক জুরি-সদস্য মনোযোগ দিয়ে অন্য একটি ভাষার ব্লগের কথা শুনছিলেন৷ হঠাৎ উৎসাহের তাড়নায় তিনি আসন ছেড়ে বলে ওঠেন, ‘‘আমি এই ব্লগের জন্য ভোট দেব৷ আমাদের দেশেও এই ধরনের ব্লগের প্রয়োজন আছে৷'' অর্থাৎ কোনো একটি ব্লগের সামাজিক গুরুত্ব, বিষয়, বাচনভঙ্গি, অবিচ্ছিন্ন কর্মকৃতি, সৃজনশৈলী, নতুনত্ব, স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর ভিত্তি করেই ব্লগটি নিয়ে চলে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা এবং সবশেষে ভোটাভুটি৷
পুরস্কারের খুঁটিনাটি
জুরি অ্যাওয়ার্ড'ই কিন্তু আসল পুরস্কার এই প্রতিযোগিতায়৷ গ্রাহক, অর্থাৎ জুরি বহির্ভূত ইন্টারনেট জনতা যে ভোট দেবেন, তার ভিত্তিতে ‘‘ইউজার প্রাইজ'' বিজয়ী নির্ধারণ করা হয় ঠিকই, তবে সেটা নিতান্তই করা হয় জনপ্রিয়তার খাতিরে৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে যতোই ভোট পড়ুক না কেন, আদতে বিজয়ী কিন্তু তারাই হবে, জুরি যাদের নির্বাচন করবেন৷ অর্থাৎ, জুরি-সেশনে ছয়টি আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে জুরি-মণ্ডলী যাদের বেছে নেবেন, একমাত্র তারাই পাবে পুরস্কার৷
মনোনয়ন পর্ব
মনোনয়ন পর্ব চলবে ১৩ই মার্চ পর্যন্ত৷ অর্থাৎ হাতে আর খুব কম সময়৷ তাই যত দ্রুত সম্ভব জমা দিতে হবে আপনার পছন্দের ব্লগটি৷ এজন্য ভিজিট করুন : www.thebobs.com ওয়েবসাইট৷ সাইটটিতে আপনার ফেসবুক, টুইটার বা ওপেন-আইডি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লগ ইন করুন৷ এরপর পছন্দের ব্লগটির ওয়েবলিংক জমা দিন৷ এখানেই কাজ শেষ৷ তবে কোন্ ভাষায় এবং কোন্ বিভাগে আপনি আপনার ব্লগটি জমা দিচ্ছেন, তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে৷ এবছরও মূল প্রতিযোগিতাটি হবে ছয়টি বিভাগে৷ আর এবারের বিশেষ বিভাগ হলো ‘এডুকেশন অ্যান্ড কালচার'৷ মানে, সংস্কৃতি ও জনশিক্ষা৷ আমি মনে করি, এবছরও আমাদের লড়াই করতে হবে ছয়টি আন্তর্জাতিক বিভাগের ‘‘জুরি অ্যাওয়ার্ড''-এ জয়ী হওয়ার জন্য৷ তবেই না বাংলা ব্লগ একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আসল সম্মানের অধিকারী হয়ে উঠতে পারবে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ