ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান৷
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ৷
তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হযেছে৷ পাশাপাশি আরেকটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ জিয়া ও আকরাম পলাতক৷ বাকি চারজনের উপস্থিতিতে বিচারক রায় ঘোষণা করেন৷
অভিযোগে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় অপর দুই পলাতক আসামি সাব্বিরুল হক চৌধুরী এবং জুনাইদ আহমদ ওরফে মওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে জুনায়েদকে খালাস দিয়েছেন বিচারক৷
২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের বাড়িতে ইউএসএইড কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷
নানা মত, নানা পথকে পাথেয় করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো৷ বাংলাদেশে মসজিদ থেকে আদালত, মেলা থেকে সিনেমা হল- কিছুই বাদ যায়নি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর থাবা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর উপর জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হয়৷ এর পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিরা৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোণায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলায় নিহত হয় আট জন৷
ছবি: bdnews24.com২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলে রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়৷ ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের দনিয়ার এক মেলায় বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৮ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে জঙ্গিদের বোমা হামলায় আট জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়৷ ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর পুরান ঢাকায় হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়৷ ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে বোমা হামলায় মারা যায় আট জন, আহত হয় ৪০ জন।
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের অলকা, ছায়াবাণী, পূরবী ও অজন্তা সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা হয়৷ তাতে মারা যায় ১৮ জন, আহত হয়েছিলেন ৩০০ মানুষ৷
ছবি: DW/ISPR২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জন নিহত হন৷ ওই হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ ঘটে নব্য জেএমবির৷
ছবি: bdnews24.com২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হয়৷ ওই হামলায় হাইকমিশনার বেঁচে গেলেও মারা যান দুইজন৷ ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে খুন হন ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে রংপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে সহকারী জেলা জজ সোহেল আহম্মেদ এবং জগন্নাথ পাঁড়েকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়৷
ছবি: APবিভিন্ন সময় সশস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা নিহত হয়েছেন৷ ২০১৫ সালের ঢাকায় গলা কেটে হত্যা করা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে৷ ২০১৬ সালেন ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জুলহাজ আর মাহবুব ছিলেন নাট্যকর্মী৷
ছবি: Robert Richter২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গোলাগুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হয়৷
ছবি: bdnews24.com২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি৷ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে বোমা ফাটিয়ে আলোচনায় এসেছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Munirকিছু সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নজরে আসার পর সেগুলোকে থামাতে সময়ে সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ‘আনসার আল ইসলাম’, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সব ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লেকসার্কাস রোডের আছিয়া নিবাস নামে ছয়তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে মাকে নিয়ে থাকতেন জুলহাজ৷ সেদিন বিকাল ৫টার দিকে টি শার্ট ও প্যান্ট পরা একদল যুবক ওই বাসায় যায়৷
নিরাপত্তাকর্মীর বাধা সত্ত্বেও তারা জোর করে বাসায় ঢুকে জুলহাজ ও তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে৷ হামলাকারীরা ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে বলতে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা সে সময় জানিয়েছিলেন৷ তাদের আটকাতে গিয়ে মমতাজ নামে পুলিশের একজন এএসআই জখম হন৷ তবে হামলাকারীদের একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে রাখেন কলাবাগান এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এএসআই মমতাজ; সেখানে একটি পিস্তল, একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মোবাইল ফোন পাওয়া যায়৷
ঘটনার রাতেই জুলহাজের ভাই মিনহাজ মান্নান অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন৷ এএসআই মমতাজের ওপর হামলা এবং অস্ত্র পাওয়ার ঘটনায় আরেকটি মামলা করেন কলাবাগান থানার এসআই শামীম আহমেদ৷
সে সময় আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে খবর এলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে৷
২০১৯ সালের ১২ মে জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম৷ গত বছরের ১৯ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত৷ নয় মাসের মাথায় বিচার শেষে রায় ঘোষণা হল৷
এ মামলায় দণ্ডিত সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য৷ তাদের মধ্যে জিয়া, মোজাম্মেল, আরাফাত ও আকরাম বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি৷
এছাড়া প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় জিয়া, আকরাম, মোজাম্মেল ও শেখ আব্দুল্লাহর ফাঁসির রায় এসেছে এ বছরের শুরুতে৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)