জুয়াখেলার পরিণতি
৩ মার্চ ২০১৪
শুধু একবার জেতার ইচ্ছা৷ বোতামে চাপ দিলে রঙিন ছবি ঘুরতে থাকে৷ সম্পূর্ণ ভাগ্যের ব্যাপার এটা৷ কয়েকটি ছবি মিলে গেলে জেতা যায়৷ যা খুবই বিরল ঘটনা৷ অনেক স্লট মেশিনের গেমে প্রচুর অর্থ ঢালেন৷ সর্বস্বান্তও হন৷ জুয়া খেলাগুলির মধ্যে স্লট মেশিনে খেলাটি সবচেয়ে বেশি সর্বনাশা৷
আইনত ১৮ বছর বয়স থেকে স্লট মেশিনে খেলা বৈধ৷ গেমরুম ছাড়াও পানশালা বা কোনো কোনো রেস্তোঁরায় দেখা যায় এক কোণে একটি স্লট মেশিন৷ বেকার অভিবাসী তরুণরাই এক্ষেত্রে ঝুঁকির মুখে বেশি৷ এই তথ্য সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে৷
আসক্তের সংখ্যা কম নয়
আসক্তি সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জার্মানিতে স্লট মেশিন খেলায় গুরুতর আসক্তের সংখ্যা তিন লক্ষের মতো হবে৷
জুয়াখেলায় আসক্তদের পরামর্শ কেন্দ্রে যাঁরা আসেন তাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই স্লট মেশিন গেমে আসক্ত৷
‘‘যে খেলায় যত তাড়াতাড়ি ফলাফল পাওয়া যায়, তাতে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশি৷'' বলেন বনের আসক্ত-থেরাপি কেন্দ্রের রিশার্ড শ্টেলৎসেনম্যুলার৷
সংগীত, আলোর প্রভাব, দ্রুত গতি এসব মানুষকে আকৃষ্ট করে৷ পরামর্শকেন্দ্রে শ্টেলৎসেনম্যুলারের প্রথম প্রশ্নটি এরকম হয় না, ‘‘কতদিন ধরে এই আসক্তিতে আক্রান্ত? বরং প্রশ্নটি হয়, আপনি কী টাকার জন্য কখনও চুরি করেছেন?''
অপরাধে জড়িয়ে পড়েন অনেক
বেআইনি মাদক জগতের মতো জুয়াখেলার ক্ষেত্রেও অর্থ জোগাড়ের জন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েন অনেকে৷ অনেকে আবার স্ট্রেসে থাকলে মাদক ও জুয়াখেলার মাধ্যমে তা দূর করতে চেষ্টা করেন৷ এর ফলাফল হয় মারাত্মক৷ চলে যেতে পারে চাকরি৷ পরিবার হয় ধ্বংস৷ আত্মহত্যার হারও বৃদ্ধি পায়৷ অনেকে বছরে এই নেশার পেছনে এত খরচ করেন, যা একটি ফ্ল্যাটের দামের সমান৷ বছরে চার বিলিয়ন ইউরোরও বেশি অর্থ গেমরুমে ঢালা হয়৷
সমস্যা হলো গেমরুমগুলি সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকে না৷ লটারি, জুয়াখেলা, ঘোড়দৌড়ের মতো বাজি ধরার খেলাগুলি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে রাষ্ট্র৷
আসক্তি দূরীকরণকেন্দ্রের পরামর্শদাতা ইলোনা ফ্যুশ্টেনস্নিডার সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এই ধরনের সর্বনাশা খেলা সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে না কেন?''
আসক্তি প্রতিরোধের চেয়ে স্লট মেশিনের লবি রাজনীতির জন্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ সরকার এই শাখাটিকে ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখে৷ এর বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই সংগ্রাম করছেন ইলোনা ফ্যুশ্টেনস্নিডার৷
নতুন একটি স্লট মেশিন বাজারে এলে প্রথমে এতে বাধা দেওয়া হয় না৷ পরে এটা সমস্যাজনক মনে হলে ঠিকঠাক করার জন্য দীর্ঘ সময় দেওয়া৷
স্লট মেশিন শিল্পের প্রভাব
অন্যদিকে রয়েছে বিশাল স্লট মেশিন শিল্প৷ যাদের বিক্রির পরিমাণ বছরে এক বিলিয়ন ইউরোর বেশি৷ রাষ্ট্রও এ থেকে আয় করে৷ প্রায় সব রাজ্যই প্রমোদ কর ধার্য করেছে৷ বড় বড় শহরগুলিতে অর্থ আদায়ের পরিমাণ মিলিয়নও ছাড়িয়ে যায়৷ কিন্তু স্থানীয় পৌর এলাকাগুলিকে অসংখ্য গেম রুমের কারণে ভুগতে হয়৷ কেননা তাদেরই আসক্তদের কারণে খরচ করতে হয়৷ এই নেশায় পড়ে চাকরি হারালে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমে যায়৷ গেম রুম থাকার কারণে অনেক এলাকার মানও নেমে যায়৷ যা একটা বড় সমস্যা৷ গেম রুম থাকলে কিংবা জুয়া খেলা চললে কেই ব সেই এলাকায় একটি দোকান খুলতে চাইবে বা কিনতে চাইবে একটি বাড়ি?
প্রতিরোধে অনীহা
হোহেনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুয়াখেলা বিষয়ক গবেষণাকেন্দ্রের টিলমান বেকার এ সম্পর্কে বলেন, ‘‘এটা এক ধরনের কপটতা৷ একদিকে গেমরুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে পৌর এলাকাগুলি, অন্যদিকে এগুলি খোলার জন্য অনুমতিও দিচ্ছে৷''
আর কোনো পথ না থাকলে ক্লিনিকে রিশার্ড শ্টেলৎসেনম্যুলারের কাছে আসতে হয় আসক্তদের৷ তাঁদের অভ্যাস পরিবর্তন করা শিখতে হয়৷ শ্টেলৎসেনম্যুলার রোগীদের নিজেদের আচরণ আমূলভাবে বদলে ফেলার চেষ্টা করেন৷ জুয়াখেলা একেবারে চলবে না৷ তাই মাদকাসক্তদের মতোই জুয়ারিদেরও নেশা ছাড়ার কষ্টভোগ করতে হয়৷
মেজাজের ওঠা-নামা, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ইত্যাদি দেখা দেয়৷ দুই মাস হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়৷ বহির্বিভাগের থেরাপি চলে বছর খানেক৷ এই নেশা থেকে মুক্ত হতে অনেক দিন লেগে যায়৷ কিন্তু তখন ঋণভারে জর্জরিত এই মানুষরা৷ তাই থেরাপিকেন্দ্রগুলি ভুক্তভোগীদের জন্য পাশাপাশি ঋণের ব্যাপারেও কাউন্সিলিং-এর ব্যবস্থা রাখে৷