1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জেড প্লাস' বলয়ে থাকা মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় গলদ?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৯ জুলাই ২০২২

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বড়সড় গলদ৷ কীভাবে বেষ্টনী পার করে এক সন্দেহভাজন তার বাড়িতে ঢুকে পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে এমনটা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটা?

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: Prabakhar/DW

কলকাতার দক্ষিণে পুরোনো পাড়া কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরবাড়ি৷৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে তার বাড়ি ঘিরে সবসময় থাকে অতন্দ্র প্রহরা৷মুখ্যমন্ত্রী ‘জেড প্লাস' ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান৷তাই মমতার বাড়ি যে রাস্তায় পৌঁছনো যায়, সেখানে দিনরাত পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখে৷ কিন্তু সেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে গলদ রয়েছে, তা প্রমাণ করে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের বাসিন্দা হাফিজুল মোল্লা৷সে গভীর রাতে ঢুকে পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি৷

গত শনিবার গভীর রাতের ঘটনা৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত দেড়টা নাগাদ এক সন্দেহভাজন ঢুকে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির চত্বরে৷একাধিক ব্যারিকেড ও ঘেরাটোপ টপকে সে শুধু প্রবেশ করেনি, গোটা রাত কাটিয়েছে সেখানে৷রবিবার সকাল আটটা নাগাদ এক কর্মী নজরে আসে, একজন ব্যক্তি গাড়ির পিছনে বসে রয়েছেন৷ সেই কর্মী তৎক্ষণাৎ পুলিশকে খবর দেন৷কালীঘাট থানা পাকড়াও করে সন্দেহভাজনকে৷পরে তাকে লালবাজারে হাতে তুলে দেওয়া হয়৷জানা যায় ধৃত ব্যক্তির নামধাম৷

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে শুধু পুলিশ নয়, সব মহলে হইচই পড়ে যায়৷প্রশ্ন ওঠে, সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় থাকা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সুরক্ষা বেষ্টনীতে এত বড় গলদ কীভাবে হল? মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঘিরে রয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি৷তার পর্দায় সর্বক্ষণ চোখ রাখার কথা নিরাপত্তা কর্মীদের৷সন্দেহভাজন মমতার বাড়িতে ঢুকে সাত ঘন্টা ঘাপটি মেরে থাকলেও কেন কারো নজরে পড়ল না? এই ঘটনার তদন্তে সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে৷ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তায় থাকা আইপিএস অফিসার বিবেক সহায়কে৷

আগন্তুক হাফিজুল মোল্লাকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়৷তাকে ১১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক৷সূত্রের খবর, হাফিজুল জানিয়েছে, সে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িকে লালবাজার অর্থাৎ কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর বলে ভেবেছিল৷তা হলে তার লালবাজারে ঢোকার উদ্দেশ্য কী ছিল? নাকি হাফিজুল সত্য গোপন করতে চাইছে? তার মানসিক রোগ থাকতে পারেও বলেও মনে করা হচ্ছে৷এর আগে সে নবান্নে ঢুকতে গিয়ে পাকড়াও হয়েছিল৷

আগন্তুকের উদ্দেশ্য বা মানসিক স্থিতি নিয়ে যে তর্কই হোক না কেন, মুখ্যমন্ত্রী  নিরাপত্তায় মস্ত গলদের অভিযোগ তাতে চাপা পড়ছে না৷রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্তের বক্তব্য, মানসিক বিকৃতি আছে কি না, সেটা বিবেচ্য নয়৷ বুঝতে হবে, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীও জেড প্লাস সুরক্ষা পান৷ আমরা যখন ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ-এ ছিলাম, বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতাম৷ভিভিআইপি-দের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো শৈথিল্য দেখানো হত না। প্রশ্ন উঠছে, হাফিজুল যদি মানসিক ভাবে অসুস্থই হয়, তা হলে কোনো অপরাধী পরিকল্পনা করে তো সহজেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়তে পারে? রাজ্যের প্রাক্তন ইনটেলিজেন্স কর্তা দিলীপ মিত্রের বক্তব্য, ‘‘ওই ব্যক্তি মুখমন্ত্রীর বাড়িতে রেইকি করতে এসেছিল কি না, সেটা কে বলবে? ইনটেলিজেন্স-এর দায়িত্ব এ সংক্রান্ত খবরাখবর পুলিশকে দেওয়া৷পুলিশ তার ভিত্তিতে কাজ করবে৷''

মুখ্যমন্ত্রীর  ‘জেড প্লাস' নিরাপত্তায় কমবেশি দেড়শো জন আধিকারিক থাকেন৷ ৷এর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রক্ষী জনা ৩৫ ৷ তাঁর কনভয়ে ১৮টি গাড়ি থাকে৷ এহেন নিরাপত্তা যাঁর জন্য বরাদ্দ, সেই প্রশাসনিক প্রধানের বাড়িতে কোনো জঙ্গি পৌঁছে গেলে কী হত? মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন না৷ যেমন থাকতেন না তাঁর পূর্বসূরি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট ফ্ল্যাটের পাশে অন্য আবাসিকরাও রয়েছেন৷ নির্দিষ্ট বাসভবনের বদলে এ ধরনের বাড়ি বা ফ্ল্যাটে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের, এমনটাই মনে করছেন পুলিশ কর্তাদের একাংশ৷ এই সমস্যা বুদ্ধদেবের পূর্বসূরি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ছিল না।

‘‘আগন্তুক মুখ্যমন্ত্রীর প্রাণনাশের চেষ্টা করতে পারত’’

This browser does not support the audio element.

মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আগন্তুকের প্রবেশ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে৷ বিরোধীরা তির্যক মন্তব্য করছে৷ অ্যালুমিনিয়াম শিটের প্রাচীর থেকে ওয়াচ টাওয়ার, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে এমন নানা পরিকল্পনার কথা উঠে আসছে৷

রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘যদি সত্যি এটা ঘটে থাকে, তা হলে ভয়াবহ ঘটনা৷ আগন্তুক মুখ্যমন্ত্রীর প্রাণনাশের চেষ্টা করতে পারত৷  কিংবা বাড়িটাই উড়িয়ে দিত, তবে আমার মনে হয়, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বেসরকারি জমিতে নিরাপত্তা খাতে খরচ না করে সরকারি বাসভবন গড়ে তোলা হোক৷''

কোনো কোনো মহল থেকে চক্রান্ত বা অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে৷ সবটাই অবশ্য তদন্তসাপেক্ষ৷ আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় পাহারা আরো আঁটোসাঁটো৷ নাকা তল্লাশি চলছে যাতে মাছিও গলতে না পারে! নাম প্রকাশে অরাজি কালীঘাটের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ৮০০ মিটার দূরে থাকি৷ কয়েকদিন ধরে নিরাপত্তা আরো বেড়েছে৷ এমন বজ্র আঁটুনি গলে কেউ কী করে ঢুকে পড়ল, সেটাই বুঝতে পারছি না!''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ