জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবার নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ কিছু দেশ অনুমোদন দিলেও অনেকেই এর বিরোধিতা করছে৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী? উত্তর দিচ্ছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি ‘বেলা'-র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: জেনেটিক্যালি মডিফাইড পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন কেমন?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবারের ব্যাপারে বিশ্বে খুবই বিতর্ক রয়েছে৷ বিতর্ক এ কারণে যে, জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাদ্য মানবদেহে কী ধরনের ক্ষতি করতে পারে, সে সম্পর্কে আমরা এখনও অবগত না৷ একটা জিন আরেকটার মধ্যে ঢুকে কখন, কীভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তা আমরা জানি না৷ জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাদ্য নিয়ে বিশ্বে যে বিতর্ক রয়েছে, তার কারণ বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখেন৷
বিজ্ঞান ও গবেষণা এই পদ্ধতি সম্পর্কে কী বলছে?
বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে বিভক্ত৷ যেসব কোম্পানি অ্যাগ্রোকেমিক্যাল প্রোডাক্ট তৈরি করে, তাদের সঙ্গে যেসব বিজ্ঞানী কাজ করেন, তাঁরা বলেন জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবার একেবারেই নিরাপদ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবার আর ননজেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবারের কোনো তফাৎ করে না৷ কিন্তু ইউরোপে জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফুড এবং ফিড অনেকদিন ধরে নিষিদ্ধ ছিল৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে আফ্রিকা এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানও জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবারের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে৷ তারা বলছে, যতক্ষণ না বিজ্ঞান এটাকে একেবারে নিরাপদ বলছে, ততক্ষণ এটার অনুমতি দেওয়া যাবে না৷
কমলা বেগমের জৈব খামার
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকে বাড়ে ফসলের উৎপাদন৷ কিন্তু এতে জমির যেমন দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়, বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিও৷ ফলে বিশ্বজুড়েই গড়ে উঠছে জৈবকৃষি আন্দোলন৷ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ফসলের চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশেও৷
ছবি: DW/M. Rahman
সার উৎপাদনে কেঁচো!
দেশজুড়ে যখন রাসায়নিক সার ও জিনগতভাবে পরিবর্তন করা বীজ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন স্রোতের উলটো দিকে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের কিষানি কমলা বেগম৷ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন জৈব খামার৷ কমলা বেগম কেঁচোকে ব্যবহার করেন জৈবসার উৎপাদনে৷ ইংরেজীতে এই পদ্ধতিতে উৎপন্ন সারকে বলা হয় ‘ভার্মি কম্পোস্ট’৷ এই পদ্ধতিতে গাছের পাতা, খড়, গোবর, লতাপাতা, পচনশীল আবর্জনা খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে৷ সেই মল থেকেই তৈরি হয় কেঁচো সার৷
ছবি: DW/M. Rahman
ফলমূল, সবজি থেকে সার
বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবজি, ফলমূলের উচ্ছিষ্ট জোগাড় করেন কমলা৷ সব একসাথে মিশিয়ে জমানো হয় একটি পাত্রে৷ একসময় সেই সবজি-ফলমূল পঁচে তৈরি হয় জৈব কম্পোস্ট৷ এসব উপাদানে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থাকে বলে তা জমির জন্য ক্ষতিকর হয় না৷
ছবি: DW/M. Rahman
খোপ সার
স্থানীয়ভাবে ‘খোপ সার’ বলে পরিচিত হলেও দেশের অন্যান্য জায়গায় সাধারণভাবে এই সারকে গোবর সার হিসেবেই চেনেন কৃষকরা৷ গরুর গোবর, হাঁস-মুরগি ও ছাগলের বিষ্ঠা দিয়ে তৈরি হয় এই সার৷ জমির উর্বরতা বাড়াতে বিশেষ খ্যাতি আছে এই সারের৷
ছবি: DW/M. Rahman
জৈব বীজ
যেসব বীজ প্রাকৃতিক উপায়ে গাছ থেকেই সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় জৈব বীজ৷ তবে এখন বিভিন্ন উপায়ে জিনগতভাবে পরিবর্তন করে বীজ ছাড়া হয় বাজারে৷ এসব বীজ থেকে জন্মানো গাছ আগাছাপ্রতিরোধী এবং বিভিন্ন রোগ থেকে ফসলকে দূরে রাখে৷ কিন্তু এই বীজে উৎপাদিত ফসল স্বাস্থ্য এবং জমির জন্য ক্ষতিকর বলে উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়৷ কমলা বেগম সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বীজ সংগ্রহ করে ফসল ফলান৷
ছবি: DW/M. Rahman
জৈব ক্ষেত
শুধু সার ও বীজ থাকলেই হবে না৷ এর সঠিক প্রয়োগও জানতে হবে৷ কমলা বেগম জৈব সারের প্রয়োগ যাতে ঠিকমতো হয়, তা-ও নিশ্চিত করেন৷ শুধু জৈব সার ব্যবহার করে প্রায় দুই একর জমিতে গড়ে তুলেছেন আখ খেত৷ এছাড়াও ঢেঁড়শ, লাউসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Rahman
কীটনাশকেও বিষ নেই
রাসায়ানিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া গেলেও, তাতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও থেকেই যায়৷ ফলে কমলা বেগমের মতো অনেকেই ঝুঁকছেন জৈব কীটনাশকের দিকে৷ বিভিন্ন রকম গাছের পাতা, ছাল এবং বুনো ফল দিয়ে তৈরি হয় এই কীটনাশক৷ এই কীটনাশক ব্যবহার করে বেশ ফলও পাচ্ছেন সিঙ্গাইরের কৃষকরা৷
ছবি: DW/M. Rahman
ফেরোমোন ফাঁদ
ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে কৃষক এখন নিজেই তৈরি করতে পারছেন ফেরোমোন ফাঁদ৷ এই পদ্ধতিতে একটি কৌটায় ফেরোমোন নামের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়৷ এর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় এসে পড়ে কৌটার মধ্যে৷ জৈব পদ্ধতি না হলেও এতে ক্ষতি হয় একেবারেই কম৷ পুরো ক্ষেতে রাসায়নিক ছড়িয়ে না দিয়ে মাঝেমধ্যে শুধু ফেরোমোনের কৌটা পালটে দিলেই সম্ভব হয় পোকা দমন৷ এই পদ্ধতি এখন বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷
ছবি: DW/M. Rahman
7 ছবি1 | 7
এই পদ্ধতিতে তৈরি খাবার খেলে মূলত কী ধরনের রোগ হতে পারে?
যখন ইউরোপে ম্যাডকাউ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, তখন বলা হচ্ছিল, আক্রান্ত গরুগুলো জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবার খেয়েছে৷ তারা নাকি পাগলামি করছিল৷ আর যে গরুগুলো আক্রান্ত হয়নি বা পাগলামি করছিল না, সেগুলো জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবার খায়নি৷ এই দু'ধরনের গরুর মধ্যে একটাই পার্থক্য ছিল – খাদ্যাভ্যাস৷ এই গরুগুলোর এক ধরনের প্রদাহ এবং প্রজনন ক্ষমতায় এর প্রভাব পড়ার কথাও বলা হয়েছিল৷
আপনি এই পদ্ধতিতে খাবারের পক্ষে, না বিপক্ষে?
আমি অবশ্যই এই পদ্ধতির খাবারের বিরুদ্ধে৷
তার কারণ কী?
কারণ হচ্ছে, এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে যুক্তিগুলো৷ এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে ফসল একটা বা দু'টো পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়৷ যেমন বেগুনের কথাই বলি – আমি কেন এই বেগুন খাবো না? কারণ এই বেগুনের মধ্যে যে জিনটা দেওয়া হয়েছে, সেটা ন্যাচারাল জিন না৷ ফলে এই জিনের কারণে ঐ বেগুন পরবর্তীতে কী ধরনের পরাগায়নে ভূমিকা রাখবে, সেটা আমরা জানি না৷ এই বেগুনটা যখন আমি খাবো, তখন আমার শরীরে সেটা কী ধরনের প্রভাব ফেলবে সেটাও আমি জানি না৷
আমাদের দেশে কি জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবার উৎপাদন হয়?
আমাদের দেশে সরকার গত তিন বছর ধরে জেনেটিক্যালি মডিফাইড পদ্ধতিতে একটি বেগুনের বাণিজ্যিক চাষাবাদের অনুমতি দিয়েছে৷ বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইন্স যৌথভাবে গবেষণা করেছে৷ ভারত ও ফিলিপাইন্স এটা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে৷ এটা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় – এটা প্রমাণ করতে যে পরিমাণ গবেষণা হওয়া দরকার, সেটা করা হয়নি৷ এছাড়া যে সমস্ত দেশ তাদের গবেষণার ভিত্তিতে এটা বাতিল করেছে, বাংলাদেশ সেই সমস্ত দেশের গবেষণার সারপত্রের উপর ভিত্তি করেই এটার অনুমোদন দিচ্ছে৷ ফলে এখন বাংলাদেশে জেনেটিক্যালি মডিফাইড বেগুনের চাষ হচ্ছে বলে সরকার দাবি করলেও আমি খুব একটা দেখিনি৷ সরকার প্রথম দফায় ২০ জন কৃষককে অনুমোদন দিয়েছে৷ এর মধ্যে ১৮ জন কৃষক মার খেয়েছে৷ এরপর সরকার ঘটা করে ১০০ জনকে দিয়েছে৷ তারও পরের দফায় সরকার দাবি করেছে যে, ১ হাজার জনকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু চারা নিয়ে গিয়ে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন কিনা, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷
’সরকার অত্যন্ত ভ্রান্ত একটা অবস্থান নিয়েছে জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাদ্যের ব্যাপারে’
আমাদের যে বিচি বেগুনের চাষাবাদ শুরু হয়েছে, সেটার রেজাল্ট কী?
প্রথম দু'বছর আমরা মনিটরিং করেছি৷ তখন সংখ্যা ছিল ২০ জন এবং ১০০ জন৷ প্রথম দফার ২০ জনের ১৮ জনই মার খেয়েছে৷ একজন বলেছেন তাঁর ভালো ফলন হয়েছে৷ তবে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে তিনি ভালোভাবে বিক্রি করতে পারেননি৷ তারপরের ১০০ জনের অধিকাংশই বলেছেন যে, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে চারা নিলেও চাষাবাদ করেননি৷ এরপর সরকার যে ১ হাজারের কাছে চারা দিয়েছে তাঁদের তালিকা আমরা চেয়েছি৷ কিন্তু সরকার আমাদের সেই তালিকা দেয়নি৷ এ থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে, সরকার মুখে বলছে এর চাষাবাদ হচ্ছে৷ কিন্তু আমাদের কাছে যে তথ্য, তাতে এর বাণিজ্যিক কোনো চাষাবাদ হচ্ছে না৷
এই বেগুন নিয়ে আপনারা কি কোনো গবেষণা করেছেন?
এটা করা তো আর আমাদের কাজ নয়৷ তবে আমরা জেনেছি, যে মিটিং থেকে সরকার এই বিচি বেগুনের অনুমোদন দিয়েছে, সেই মিটিংয়ে বসেই অনেক সরকারি কর্মকর্তা এর প্রতিবাদ করেছেন৷ কৃষি মন্ত্রণালয় গায়ের জোরেই এই প্রস্তাবটি পাশ করিয়ে নিয়েছে৷ আমাদের আগে ভারত ও ফিলিপাইন্সে এটা নিয়ে গবেষণা হয়েছে৷ তারা তো বলেই দিয়েছে যে, এটা নিয়ে যে পরিমাণ গবেষণা হওয়া দরকার সেটা হয়নি৷
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি-র সঙ্গে জেনেটিক্যালি মডিফাইড জায়ান্ট কোম্পানি মনসান্টোর চুক্তিটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
প্রকৃতি ও মানুষ বাঁচাতে দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীদের উদ্যোগ
কুষ্টিয়ার ছেলে দেলোয়ার জাহান ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে ‘প্রাকৃতিক কৃষি’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেছেন৷ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহিত করছেন তাঁরা৷
ছবি: Delowar Jahan
বিষমুক্ত খাবারের অঙ্গীকার
বাংলাদেশে ফসলের ক্ষেতে প্রতি মিনিটে ৭২ কেজি ‘বিষ’ ছিটানো হয় বলে জানান দেলোয়ার জাহান৷ এতে মাটির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে যে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজ পদ্ধতিকে উৎসাহিত করছেন দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা৷
ছবি: Delowar Jahan
‘প্রাকৃতিক কৃষি’ আন্দোলন
দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷ এর মাধ্যমে তাঁরা আশেপাশের কৃষকদের দেখান যে, এভাবেও ফসল উৎপাদন করে লাভ করা সম্ভব৷ এছাড়া কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বসে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের নতুন নতুন পদ্ধতি বের করেন তাঁরা৷ ছবিতে দেলোয়ারকে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
শুরুর কথা
২০১৩ সালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলি গ্রামে জমি লিজ নিয়ে গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন শুরু করেন দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা৷ বর্তমানে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হাজীপুর গ্রামে দেড় একর জমিতে প্রায় ৪০ রকমের সবজি উৎপাদিত হয় বলে জানান তিনি৷ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত দেলোয়ার নিজে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে জড়িত ছিলেন৷ আর তাঁর সঙ্গীদের পরিবারও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷
ছবি: Delowar Jahan
লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন দেলোয়ার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্সে দ্বিতীয় ও মাস্টার্সে যৌথভাবে প্রথম হয়েছিলেন দেলোয়ার৷ এরপর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন৷ কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন ভেবে সেখানে যাননি তিনি৷ ‘প্রাকৃতিক কৃষি’র পাশাপাশি ঢাকায় একটি পত্রিকায় কৃষি বিষয়ক সাংবাদিকতা করছেন দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
সঙ্গীদের কথা
দেলোয়ারের সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন তরুণ-তরুণী৷ তাঁদের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করেছেন৷ ছবিতে দুজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
সাফল্যের কথা
দেলোয়ারদের যেখানে খামার আছে, সেই মানিকগঞ্জ ছাড়াও ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার অনেক কৃষক বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে ফসল উৎপাদন করছেন৷ ছবিতে দেলোয়ারের সঙ্গীদের ফসল তুলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
পণ্যের বাজার
বিভিন্ন জেলার কৃষকদের প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা সবজি, ফল ঢাকায় কিনতে পাওয়া যায়৷ এজন্য মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে ‘প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র’ চালু করা হয়েছে৷ ছবিটি বিপণন কেন্দ্রের সামনে তোলা৷
ছবি: Delowar Jahan
যা পাওয়া যায়
কী চান? শাক-সবজি, ফল, চাল, ডাল, হাতে ভাজা মুড়ি, মসলা, তেল, ঘি, দুধ, ডিম; বলে শেষ করা যাবে না৷ মাঝেমধ্যে বাসায় চাষের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রাকৃতিক সারও পাওয়া যায় ঐ কেন্দ্রে৷ হালনাগাদ তথ্য পেতে ‘প্রাকৃতিক কৃষি’র ফেসবুক পাতা দেখা যেতে পারে৷ এজন্য উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Delowar Jahan
নিরাপদ ফসল
ঢাকায় প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কিষাণীরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে এসেছেন৷
ছবি: Delowar Jahan
গ্রামে যাওয়া হয়নি
দেলোয়ার কুষ্টিয়ার ছেলে৷ কিন্তু নিজের গ্রামে না গিয়ে মানিকগঞ্জে কাজ করার কারণ বলতে গিয়ে তিনি জানান, সেটি সম্ভব ছিল না৷ ‘‘যখন পড়ালেখা করতাম তখন গ্রামে গেলে সবাই জানতে চাইতো কতদিন আছি কিংবা কবে যাব? তখনই বুঝতে পারি যে, আসলে গ্রামে ফেরা সম্ভব না,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজ
বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে কেউ যদি উচ্চশিক্ষার পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজে জড়িত হয়ে জীবনযাপন করতে চায় তাহলে সেটি সম্ভব বলে মনে করেন দেলোয়ার৷ ‘‘কেউ যদি সমন্বিত খামার করেন, যেখানে মাছ চাষ থাকবে, গরু থাকবে, দুধের জন্য ছাগল থাকবে, হাঁস থাকবে, সবজি থাকবে- তাহলে সম্ভব৷’’
ছবি: Delowar Jahan
তবে...
দেলোয়ার বলেন, সমস্যা হচ্ছে তরুণরা মনে করে, কৃষিকাজ মানে অচ্ছুতের কাজ৷ তাই এটি কেউ করতে চায় না৷ ‘‘কারণ চারপাশে এত রং, এত প্রত্যাশা জীবনে যে, কেউ আসলে কৃষিকাজ করতে চায় না৷ প্রচুর ছেলেমেয়ে আমাদের কাছে (প্রাকৃতিক কৃষির কাজ দেখতে) আসে৷ যে পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে আসে তার দ্বিগুণ পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে চলে যায়’’, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানান দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
12 ছবি1 | 12
এটা একেবারেই যুক্তিযুক্ত নয়৷ আপনি যদি জীববৈচিত্র সংক্রান্ত আইনটা পড়েন, তাহলে দেখতে পাবেন যে, আপনি যদি কমিউনিটির মানুষকে কাজে লাগান, তাহলে তাঁদের সবাইকে বিষয়টা আগে জানাতে হবে৷ তাঁদের মতামত নেবেন৷ সরকারের একটা মেকানিজম থাকতে হয়৷ আমাদের তো চার প্রজাতির বেগুনের মধ্যে এটা ঢোকানো হয়েছে৷ কনভেনশন অফ বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটির (সিবিডি) মধ্যে একটা মোডারিটি সরকারকে ঠিক করতে হয়৷ কোনো দেশ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নিতে চাইলে আবেদন করবে৷ এর কোনো কিছুই করা হয়নি৷ ফলে এর অনুমোদনটাই আমার বিবেচনায় অবৈধ৷ সিবিডিতে আরো বলা হয়েছে যে, আমার বেগুন নিয়ে যদি কেউ গবেষণা করে এবং সেটার যদি বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়, তাহলে লাভের অংশ ভাগাভাগি করা হবে৷ চুক্তির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এই জিনটার মালিকানা দাবি করে মনসান্টো৷ আপনার বেগুনটার মধ্যে যখন মনসান্টোর জিন ঢুকে যায়, তখন এর মালিকানা কিন্তু আর আপনার না৷ তখন এটার মালিকানা মনসান্টো দাবি করতে পারে৷
এটা নিয়ে এই মুহূর্তে তাহলে বাংলাদেশের অবস্থান কী?
বাংলাদেশের এই মুহূর্তে অবস্থান হলো, তারা জেনেটিক্যালি মডিফাইড ধান আনবে, আলু আনবে৷ আর বেগুন তো চালু করেছেই৷ আমাদের সরকার এই মুহূর্তে অত্যন্ত ভ্রান্ত একটা অবস্থান নিয়েছে জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাদ্যের ব্যাপারে৷ সরকার যেটা করছে তা প্রতিবেশী দেশ থেকে বারবার প্রত্যাখান করা হয়েছে৷ এটা জনগণের সঙ্গে আলোচনা না করেই করা হয়েছে৷ আমি এর তীব্র বিরোধিতা করি৷ এর কোনো যৌক্তিক ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না৷ আপনি যদি কাটাহেনা প্রটোকল দেখেন, তাহলে দেখবেন যে সেখানে জেনেটিক্যালি মডিফাইড খাবারের লেভেলিংয়ের বিধান রাখা হয়েছে৷ আমাদের সরকারের আইনেও লেভেলিংয়ের বিধান রাখা হয়েছে৷ এটা আইনগতভাবেও সমর্থনযোগ্য না৷ শেষ কথা হলো – সরকার আমাদের কী খাওয়াচ্ছে সেটাও আমাদের জানানো হচ্ছে না৷