রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করছে৷ ডয়চে ভেলের সম্পাদক ব্যার্ন্ড রিগ্যার্টের মতে এই ফলাফলকে জেনেভা আলাপ-আলোচনার ‘ব্রেক-থ্রু’ বলে গণ্য করা চলে৷
বিজ্ঞাপন
জেনেভা থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়ার ঘোষণা এলো ইস্টারের শান্তিবাণীর মতো: এ বছরে আবার ইউরোপে এবং রাশিয়ার সনাতনপন্থি গির্জার ইস্টার পরব একই দিনে পড়েছে৷ কাজেই জেনেভার ঐকমত্য এক হিসেবে প্রতীকী বলা চলে৷
অবশ্য সে ঐকমত্য ঘোষণায় সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তার বাস্তবায়নের লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হওয়া চাই: যেমন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সেই সঙ্গে ইউক্রেনের অপরাপর বেআইনী সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণ; পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে দখলীকৃত সরকারি কার্যালয়গুলি দখলমুক্ত করা, ইত্যাদি৷ সব পক্ষই ‘ডি-এসক্যালেশন' বা উত্তেজনা প্রশমন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এমনকি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ-ও৷
অপরদিকে ইউক্রেন তার সংবিধানে এমন একটি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা নথিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা রুশভাষী নাগরিকদের পক্ষে অনুকূল হবে – যদিও জেনেভা বৈঠকের আগেই কিয়েভ সরকার সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ ইউক্রেনের চরম দক্ষিণপন্থিদেরও তাদের অস্ত্রশস্ত্র জমা দিতে হবে৷ যে কোনো ধরনের ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউক্রেন সরকার৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
সবচেয়ে বড় কথা হলো, রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাবে না, বলে কথা দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ৷ মস্কো নতুন কিয়েভ সরকারকে স্বীকার পর্যন্ত করে না, তা সত্ত্বেও লাভরভকে জেনেভায় দেখা গেছে একটি অপ্রত্যাশিত ভূমিকায়: এখানে তিনিই ছিলেন শান্তির পারাবত৷ দৃশ্যত রুশ তরফ অবশেষে উপলব্ধি করেছে যে, ইউক্রেনে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা শেষমেষ রাশিয়ার পক্ষে লাভের বদলে লোকসানই ডেকে আনবে৷
ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংগঠন ওএসসিই-র পর্যবেক্ষকরা ইউক্রেনে উত্তেজনা প্রশমন ও নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখবেন৷ রাশিয়া যে এই শর্তটি মেনে নিয়েছে, সেটা বাস্তবিক আশাব্যঞ্জক৷ অপরদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, কেননা রাশিয়াকে দণ্ডদান করতে গিয়ে ইইউ-কেও কমবেশি মাশুল দিতে হত, অনেক সদস্যদেশের যা-তে আপত্তি ছিল৷ এছাড়া রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস সরবরাহ আপাতত নিরাপদ হলো৷
জেনেভায় কূটনীতির জয় ঘটল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু এ জয়ের মূল্যও দিতে হচ্ছে: ক্রাইমিয়া এখন রাশিয়ার অংশ এবং ভবিষ্যতেও রাশিয়ার অংশ থাকবে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও ইউক্রেন নীরবে এই দখলদারি মেনে নিল, যদিও তা আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী৷ বলতে কি, জেনেভা ঘোষণায় ক্রাইমিয়ার উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি৷