সোমবার জেনেভায় ন্যাটোর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রাশিয়ার। তার আগে অ্যামেরিকাকে হুঁশিয়ারি দিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ন্যাটো, জাতিসংঘ এবং অ্যামেরিকার সঙ্গে বিতর্ক চলছে রাশিয়ার। অভিযোগ, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। যুদ্ধের আবহ তৈরি করে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে ন্যাটো, জাতিসংঘ এবং অ্যামেরিকা ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। রাশিয়াকে দ্রুত সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া তা মানতে রাজি নয়।
সোমবার জেনেভা বৈঠকে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হওয়ার কথা। জেনেভায় অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক আলোচনারও কথা আছে। তার ঠিক আগে অ্যামেরিকাকে রাশিয়া চাপে ফেলার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষ্ণসাগরে বৃহত্তম নৌ-মহড়া
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে কৃষ্ণসাগরে বিশ্বের সব চেয়ে বড় নৌ-মহড়া শুরু হয়েছে। সমালোচনায় রাশিয়া।
ছবি: Konstantin Sazonchik/dpa/picture alliance
যুক্তরাজ্যের জাহাজ
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের একটি নৌ সেনার জাহাজকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল রাশিয়া। রাশিয়ার দাবি, জাহাজটি বেআইনি ভাবে তাদের সীমান্তে ঢুকে পড়েছিল, তাই ওয়ার্নিং ফায়ার করা হয়। জাহাজের রাস্তা ধরে বোমাবর্ষণও করা হয়।
ছবি: Ministry of Internal Affairs via REUTERS
যুক্তরাজ্যের দাবি
যুক্তরাজ্যের দাবি, তাদের জাহাজটি আইনভঙ্গ করেনি। ইউক্রেনের জলপথ দিয়ে জাহাজটি যাচ্ছিল। রাশিয়ার দাবি ভিত্তিহীন।
ছবি: Ben Mitchell/AP/picture alliance
ক্রিমিয়া সমস্যা
জাহাজটি আসলে ছিল ক্রিমিয়ার কাছে। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলে নেয়। আগে তা ছিল ইউক্রেনের। কিন্তু অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য সহ একাধিক দেশ রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে মান্যতা দেয় না। ফলে যুক্তরাজ্যের দাবি, ক্রিমিয়ার জলসীমা ইউক্রেনের। রাশিয়ার নয়।
ছবি: DW
মার্কিন হুমকি
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার এই বিতর্কের মধ্যেই কৃষ্ণসাগরে বিশ্বের বৃহত্তম নৌ-মহড়ার আয়োজন করে বসেছে অ্যামেরিকা। এটাই রাশিয়াকে মার্কিন হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha
বিশাল আয়োজন
ছয়টি মহাদেশের ৩২ টি দেশ এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে কৃষ্ণসাগরে এই নৌ-মহড়া শুরু হয়েছে। তবে এবারের মহড়া সব চেয়ে বড়।
ছবি: Getty Images/AFP/STR
অসংখ্য জাহাজ
বিভিন্ন দেশের পাঁচ হাজার নৌ-সেনা, ৩২টি জাহাজ, ৪০টি বিমান এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। ১৮টি স্পেশাল অপারেশন ফোর্স যোগ দিয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষিত ডাইভাররা আছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/S. Maina
ইউক্রেনের ভূমিকা
নৌ-মহড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ইউক্রেন। অ্যামেরিকার সঙ্গে তারাও এই মহড়ার আয়োজন করেছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার বিতর্কেও বিবৃতি দিয়েছে ইউক্রেন। জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের জাহাজ তাদের জলসীমায় ছিল।
নৌ-মহড়ার কড়া সমালোচনা করেছে পুটিন প্রশাসন। ক্রেমলিনের বক্তব্য, এই নৌ-মহড়া আসলে রাশিয়াকে খোঁচা দেওয়ার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। প্রয়োজনে রাশিয়া জবাব দেবে।
ছবি: Sergei Karpukhin/TASS/dpa/picture alliance
ক্রিমিয়া নিয়ে রাশিয়া
ক্রিমিয়া নিয়েও রাশিয়া নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাশিয়ার দাবি, ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ। ফলে ওই অঞ্চলের জলও তাদের আওতাধীন। সেখান দিয়ে যাতায়াত করতে হলে রাশিয়ার অনুমতি নিতে হবে, ইউক্রেনের নয়। তবে কৃষ্ণসাগরের যে অংশ নৌ-মহড়ার আয়োজন হয়েছে, তার থেকে ক্রিমিয়ার দূরত্ব খুব বেশি নয়।
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
রোববার রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারজেই রাবকভ বলেছেন, জেনেভায় ইউক্রেন সমস্যার সমাধান হবে বলে তারা মনে করছেন না। কারণ, অ্যামেরিকা আগেই অনেকগুলি পূর্বশর্ত চাপিয়ে দিয়েছে। যা মেনে নেয়া রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব নয়। রাশিয়া দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে নাক গলাতে দেবে না।
বস্তুত, ইউক্রেন নিয়ে এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের একাধিকবার কথা হয়েছে। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বিতর্কও হয়েছে। তবে দুইজনেই বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই তারা সমাধানের রাস্তা খুঁজছেন।
এদিকে অ্যামেরিকাসহ ইউরোপের একাধিক দেশ ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করতে চাইছে। ইউক্রেনের দীর্ঘদিনের দাবি এটি। রাশিয়া বরাবর এ বিষয়ে ভেটো দিয়ে আসছে। সোমবারের বৈঠকে এ বিষয়েও তীব্র বিতর্ক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বস্তুত, রাশিয়া জানিয়ে রেখেছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিলে তার ফলাফল ভালো হবে না।
এদিকে অ্যামেরিকা জানিয়ে রেখেছে, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা না সরালে তারাও কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। বৈঠকের াগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, রাশিয়ার শর্তের সামনে অ্যামেরিকা মাথা নত করবে না।
এই পরিস্থিতিতে সোমবারের বৈঠক কোন পথে যায়, সে দিকে নজর কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।