গোপনে আত্মহত্যা নয়, সবাইকে জানিয়ে, ডাক্তারের সহায়তা নিয়েই নিজের জীবনে যবনিকা টেনেছেন ব্রিটানি মেনার্ড৷ যুক্তরাষ্ট্রের এই তরুণীর ইচ্ছামৃত্যুকে নিয়ে চলছে তুমুল তোলপাড়৷
বিজ্ঞাপন
বয়স মাত্র ২৯৷ গত জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রিটানি মেনার্ড ছিলেন জীবনীশক্তিতে ভরপুর উদ্যমী তরুণী৷ মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চষে বেড়িয়েছেন মানচিত্র৷ নেপালের অনাথ শিশুরা পেয়েছে তাঁর ভালোবাসার উষ্ণতা৷ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, কোস্টারিকার কিছু মানুষও তাঁর সেবায় শুনেছিলেন ‘জীবনের গান'৷ গত জানুয়ারিতে প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন ব্রিটানি৷ জানা গেল, মস্তিষ্কে ক্যানসার হয়েছে৷ প্রথমে বলা হলো, ব্রেন টিউমারের সঙ্গে লড়ে বড় জোর হয়ত দশ বছর বাঁচতে পারবেন৷ সে লড়াই হয়ত করতেন৷ কিন্তু আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত এপ্রিলে ডাক্তাররা জানালেন, প্রাণবন্ত তরুণীটির জীবনের আর মাত্র ছয় মাস বাকি৷ ব্রিটানি মেনার্ড ধুঁকে ধুঁকে বাঁচতে চাননি৷
যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি রাজ্যে ‘ইচ্ছামৃত্যু' আইন-অনুমোদিত৷ স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণকে সবার আগে আইন করে স্বীকৃতি দিয়েছিল ওরেগন৷ ‘ডেথ উইথ ডিগনিটি অ্যাক্ট' কার্যকর করার আগে জনগণ ভোট দিয়ে তাতে সমর্থনও জানিয়েছে৷ ব্রিটানি মেনার্ড সেখানেই চলে যান সপরিবারে৷ এক ভিডিওচিত্রে সবাইকে জানিয়ে দেন, জীবন খুব সুন্দর, তবে ক্যানসারের কাছে হারার আগে সগৌরবে এ জীবনে ইতি টানবেন৷ এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি মানুষ দেখেছেন সেই ভিডিও৷
১লা নভেম্বর, ২০১৪৷ ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে স্বামী-বাবা-মায়ের সামনেই ফেসবুকে শেষ বার্তা লিখতে বসেছিলেন ব্রিটানি৷ চিরবিদায়ের আগে লিখেছেন, ‘‘পৃথিবী, বিদায়৷ বন্ধুরা, বিদায়৷ সারা বিশ্বে তোমরা শুভশক্তি ছড়িয়ে দাও৷''
ক্যানসারকে দূরে রাখার ৯ উপায়
ক্যানসারের মতো অসুখকে শুধু ভাগ্যের লিখন বলা যায়না৷ কারণ টিউমার হওয়ার কারণগুলো গবেষকরা খুব ভালো করেই জানেন৷ ক্যানসারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রত্যেকেই কিছু করতে পারেন৷
ছবি: Getty Images
ভাগ্য নিজের হাতেই
‘আপনার ক্যানসার ধরা পড়েছে’ এমন দুঃসংবাদ শোনার জন্য কেউ কখনো অপেক্ষা করেনা৷ তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়তো ক্যানসার রোগীর সংখ্যা অর্ধেক হতে পারে৷ ক্যানসার রোগীর প্রতি পাঁচজনের একজনই হচ্ছে ধূমপায়ী৷ বিষাক্ত তামাকের ধোঁয়া যে শুধু ফুসফুসের ক্যানসারের জন্যই দায়ী তা নয়, ধূমপান অন্যান্য ক্যানসারের হওয়ারও একটি কারণ৷ তবে ধূমপান ক্যানসার হওয়ার একমাত্র কারণ নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অতিরিক্ত ওজন মৃত্যুর কারণও হতে পারে
ক্যানসার হওয়ার নানা কারণের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন এবং ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকা৷ ইনসুলিনের মাত্রা বেশি হলে তা কিডনি, গলব্লাডার, খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত মোটা মহিলাদের শরীরের মেদের কারণে খুব সহজে জরায়ু এবং স্তন ক্যানসার হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলসেমি নয়, সোফা থেকে উঠে পড়ুন!
যারা সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকেন অর্থাৎ হাঁটা-চলা কম করেন, তাদের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে ব্যায়াম বা খেলাধুলা টিউমার হওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে৷ শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিনের মাত্রা কমায় এবং পাশাপাশি মোটা হওয়াও রোধ করে৷ শরীরচর্চা বলতে যে সব সময় ফিটনেস সেন্টারে যাওয়া বোঝায় তা কিন্তু নয়৷ যে কোনো ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি বা সাইকেল চালানোও হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
অ্যালকোহলকে না করুন
অ্যালকোহল বা মাদককে ক্যানসার উত্তেজক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে৷ বিশেষ করে অ্যালকোহল পানে মুখের ভেতর, গলা এবং পাকস্থলীর নালীতে টিউমার ছড়ানোকে প্রভাবিত করে৷ তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ধূমপান এবং মদ্যপান যদি একসাথে করা হয়৷ এই দুটো একসাথে হয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ১০০ ভাগ৷ তবে বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একগ্লাস ওয়াইন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পশুর মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো
রেড-মিট বা গরু বা ভেড়ার মতো প্রাণীর মাংস ক্যানসার হতে সহায়তা করে৷ তবে এর আসল কারণ ঠিক কী তা এখনও খুঁজে বের করা যায়নি৷ দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় এটুকু জানা গেছে যে রেড-মিটের সাথে ক্যানসারের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ শুকরের মাংসের তুলনায় গরুর মাংস খাওয়া বেশি বিপজ্জনক৷ অন্যদিকে মাছ খেলে হয় ঠিক তার উল্টোটা, অর্থাৎ মাছ খেলে ক্যানসার হওয়া থেকে দূরে থাকা যায়৷
ছবি: Fotolia
ফাস্টফুডকে না বলুন!
ফাস্টফুড বা রেডিমেড খাবার সব সময়ই যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সে কথা কম বেশি সবাই জানি৷ অন্যদিকে বেশি বেশি সবজি এবং ফলমূল ক্যানসার রোধে সাহায্য করে৷ দীর্ঘ গবেষণায় অবশ্য গবেষকরা দেখেছেন যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে মাত্র দশ শতাংশ ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেশি রোদ, বেশি ক্ষতি
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি মানুষের ত্বকের অনেক পরিবর্তন করে৷ তবে সানক্রিম সূর্যের বিকিরণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে ঠিকই, তবে তারও সময়সীমা রয়েছে৷ ত্বক যখন পুড়ে যায়, ধরে নিতে হবে যে ত্বকে অনেক বেশি সূর্যের কিরণ লেগে গেছে৷
ছবি: dapd
আধুনিক ওষুধ থেকে ক্যানসার
এক্সরে রশ্মি জেনোটাইপের ক্ষতির কারণ, তবে সাধারণ এক্সরেতে তেমন ক্ষতি হয়না৷ সে রকম প্রয়োজন না হলে কম্পিউটার-টোমোগ্রাফি না করাই ভালো৷ আবার অন্যদিকে এমআরআই কিন্তু মোটেই শরীরে জন্য ক্ষতিকারক নয়৷ ভালো খবর যে, প্লেন ভ্রমণ থেকে ক্যানসার হবার কোনো আশঙ্কা থাকেনা৷
ছবি: picture alliance/Klaus Rose
ইনফেকশনের মাধ্যমে ক্যানসার
হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস লিভার কোষের ক্ষতি করতে পারে৷ ছবিতে যে ব্যাকটেরিয়া দেখা যাচ্ছে সেটা পাকস্থলী নষ্ট করে দিয়ে সেখানে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে৷ তবে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে টিকা বা অ্যান্টিবায়োটিকও নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
ব্রিটানি স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছা প্রকাশের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ডাক্তারের একটা ইনজেকশনে জীবনকে এভাবে ‘না' বলা অনেকেরই পছন্দ হয়নি৷ সবচেয়ে বেশি সমালোচনা আসে কট্টর খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে৷ ব্রিটানির ইচ্ছামৃত্যুকে ‘অনৈতিক' এবং ‘নিছক আত্মহত্যা' হিসেবে দেখেছেন তাঁরা৷ ভ্যাটিকানও সোচ্চার৷ মঙ্গলবার ভ্যাটিকানের ‘পন্টিফিকাল অ্যাকাডেমি ফর লাইফ'-এর প্রধান বলেছেন, ‘‘মেয়েটি গৌরবের মৃত্যু চেয়ে এমন করেছে৷ কিন্তু এটা ভুল৷ আত্মহত্যা ভালো কিছু নয়, কারণ, এর মাধ্যমে জীবনকে, এমনকি আমরা পৃথিবীতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি – সেটাকে এবং চারপাশে আমাদের সব প্রিয়জনকে ‘না' বলা হয়৷''
‘ডেথ উইথ ডিগনিটি অ্যাক্ট'-এর মূল কথা, ১৮ বছরের বেশি বয়সি কেউ দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগযন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাইলে, দু'জন চিকিৎসক তাঁর রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত করলে, চিকিৎসকের সহায়তায় তিনি নিজের ধার্য করা দিনে মৃত্যুবরণ করতে পারবেন৷