মালয়েশিয়ার সরকার ও অ্যাক্টিভিস্টরা মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে ‘জেনোসাইড' বা গণহত্যার অভিযোগ এনেছে৷ মিয়ানমার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
বিজ্ঞাপন
জেনোসাইড – এই ‘টার্ম' বা শব্দটি প্রায়ই আলোচনায় আসে৷ কোন ঘটনাকে জেনোসাইড বলা হবে, কোনটিকে নয়, কিসের ভিত্তিতেই বা এর সংজ্ঞায়ন হয়, সেই সব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন জার্মান ইতিহাসবিদ বরিস বার্থ৷ ২০০৬ সালে জেনোসাইডের ইতিহাস নিয়ে তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে৷
ডয়চে ভেলে: ‘জেনোসাইড' শব্দটি আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
বরিস বার্থ: পোলিশ-ইহুদি আইনজীবী রাফায়েল লেমকিন ১৯৪৪ সালে প্রথম ‘জেনোসাইড' শব্দটি ব্যবহার করেন৷ আউশভিৎস ক্যাম্পে ইহুদিদের উপর যে ধরণের নির্যাতন চালানো হচ্ছিল তার বর্ণনায় ‘অ্যাট্রোসিটি' বা ‘নির্মমতা' শব্দটি পর্যাপ্ত নয় বলে মনে হয়েছিল তাঁর৷ হলোকস্ট ছিল সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক অপরাধ, যার জন্য নতুন ‘টার্ম’ বা শব্দের প্রয়োজন ছিল৷ ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের কনভেনশনে ‘জেনোসাইড' শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়৷
বর্তমানে জেনোসাইড টার্মটি নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে তা বুঝতে গেলে বিভিন্ন ভাষায় জেনোসাইড শব্দের ব্যবহারের বিষয়টি জানতে হবে৷ জার্মানি ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, যদি ইচ্ছে করে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা করা হয় তাহলে সেটি ‘জেনোসাইড' বলে বিবেচিত হতে পারে৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শব্দটি আরও বড় পরিসরে ব্যবহৃত হয়৷ সেখানে এমন ঘটনাকেও জেনোসাইড বলা হয় যেই ঘটনায় হয়ত কেউ প্রাণ হারায়নি৷ আবার অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে দেখুন, সেখানে যখন কর্তৃপক্ষ আদিবাসী শিশুদের তাদের মায়েদের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছিল তখন বেশ বিতর্ক শুরু হয়েছিল৷ সেটি অবশ্যই বর্ণবৈষম্যমূলক অপরাধ ছিল৷ অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজিতে ঐ ঘটনা জেনোসাইড বলে পরিচিত, যদিও তখন কেউ মারা যায়নি৷
কী ধরনের ঘটনা ঘটলে জেনোসাইড হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যায়?
যখন জাতিগত ও ধর্মের কারণে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়৷ একটি দেশ যখন ঘোষণা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে চায় তখন সেটি জেনোসাইড বলে বিবেচিত হতে পারে৷ জাতিসংঘের কনভেনশন তা-ই বলে৷ এই কনভেনশনে অভিযু্ক্ত হিসেবে শুধু দেশের কথা বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷
বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের কথা
জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, নভেম্বরের ১৯ থেকে ২১ তারিখ, এই তিনদিনে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে শত শত রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
সহিংসতা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৬ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার জন৷ অক্টোবরের ২৭ তারিখে তোলা এই ছবিতে ঐ রাজ্যের একটি গ্রামের বাজার দেখা যাচ্ছে, যেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ শিশুরা সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করছে৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
পালিয়ে বাঁচা
সহিসংতা থেকে বাঁচতে নভেম্বরের ১৯ থেকে ২১ তারিখ শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা৷ উপরের ছবিটি ২১ নভেম্বরের৷ কক্সবাজারের কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারীরা নতুন আসা শরণার্থীদের দেখছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
নতুন শরণার্থী
মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন নতুন শরণার্থীরা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
ধরা পড়ায় কান্না
অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হওয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা তাদের ধরেছে৷ মুসলিম নারী ও তাঁর সন্তানরা তাই কাঁদছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
অপেক্ষা
কুটুপালাং ক্যাম্পে ঢোকার অপেক্ষায় নতুন আসা রোহিঙ্গারা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
সন্তানসহ মা
মুসলিম এই রোহিঙ্গা নারী তাঁর সন্তানকে নিয়ে কুটুপালাং শিবিরে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
শরণার্থী শিশু
কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রের রোহিঙ্গা শিশুরা স্কুলে পড়াশোনার ফাঁকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
আদি বাসিন্দা
কুটুপালাং ক্যাম্পে নিজেদের বাড়িতে শিশুরা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
বাড়ির আঙিনায়
একজন রোহিঙ্গা নারী তাঁর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কুটুপালাং শরণার্থী শিবিরে তাঁর বাড়ির সামনে বসে আছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
9 ছবি1 | 9
জেনোসাইড হয়েছে কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন কারণ আমাদের এই অপরাধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে৷ একটি দেশ গণহত্যা করছে কিনা তা যাচাই করতে সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে৷
‘জাতিগত নিধন' শব্দটি সংজ্ঞায়িত করাও কি কঠিন?
এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত নিধন বিষয়টি সংঘাতপূর্ণ নাও হতে পারে৷ জাতিগত কারণে কোনো দেশে একটি গোষ্ঠীকে অযাচিত মনে হতে পারে৷ অবস্থা সে রকম হলে ঐ গোষ্ঠীকে শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্বাসিত করা হতে পারে৷ কিংবা সেটি খুবই বর্বরও হতে পারে, যা গণহত্যার পর্যায়ে পড়তে পারে৷ আসলে সীমারেখা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়৷ তবে ইতিহাস বলছে, জাতিগত নিধন অনেক সময় গণহত্যা পর্যন্ত গড়িয়ে থাকে৷
সাক্ষাৎকার: রডিওন এবিগহাউজেন/জেডএইচ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
রোহিঙ্গারা কি গণহত্যা বা জেনোসাইডের শিকার হচ্ছে মিয়ানমারে? আপনার মন্তব্য জানান নীচের ঘরে৷
বাংলাদেশে শরণার্থী, বাংলাদেশের শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর-এর এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷ তেমনি বাংলাদেশ থেকেও অনেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ নবম
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস-২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির তুলনায় ধারণক্ষমতার দিকে থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর নবম শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশ৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
কতজন শরণার্থী?
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে দুটি সরকারি শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজারের মতো মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) শরণার্থী বসবাস করছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন৷ শিবিরের বাইরে আছে আরও দুই থেকে পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত ব্যক্তি৷
ছবি: AP
আশ্রয়প্রার্থী
হ্যাঁ৷ বাংলাদেশেও কেউ কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন৷ ইউএনএইচসিআর ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ পাতায় এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন বলে জানানো হয়েছে৷ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা এমন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
বাংলাদেশের শরণার্থী
উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ অনেকক্ষেত্রে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে রওনা দেন৷ কেউ গন্তব্যে পৌঁছে গ্রেপ্তার হয়ে ফিরে আসেন৷ কেউ বা শরণার্থী পরিচয় পান৷ বাংলাদেশের এমন শরণার্থীর সংখ্যা ৯,৮৩৯ জন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী
উন্নত বিশ্বে কোনোভাবে ঢুকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চল অনেকদিন ধরেই চলছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২,১২৮ জন৷ সংখ্যাটা ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters
স্বপ্নের শুরু টেকনাফে
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক বাংলাদেশি৷ এ জন্য তাঁরা দালালদের অনেক অর্থও দিয়ে থাকেন৷ তাঁদের এই যাত্রা শুরু হয় টেকনাফ থেকে৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায়
টেকনাফ থেকে প্রথমে ছোট নৌকায় যাত্রা শুরু হয়৷ তারপর একসময় মাছ ধরার বড় নৌকা বা কার্গোতে যাত্রীদের তুলে দেয়া হয়৷ সাধারণত অক্টোবর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসকে সমুদ্র যাত্রার জন্য সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Asiapics
খাবার, পানির অভাব
ইউএনএইচসিআর-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, যাঁরা সাগর পথে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদের অনেকে খাবার ও পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এছাড়া দালালরা অনেক সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে৷