মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেন বলে মনে করছেন কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা৷ মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন দূত জারেড কুশনারের বক্তব্যেও সেই আভাস পাওয়া গেছে৷
বিজ্ঞাপন
রবিবার এক অনুষ্ঠানে কুশনার বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট তাঁর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন৷ এক্ষেত্রে তিনি অনেক বিষয় ভেবে দেখছেন৷ যখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন তখন তিনিই তা আপনাদের জানাতে চাইবেন৷'' এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কুশনার বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা অস্বীকার করা থেকে বিরত থাকলেন৷
ট্রাম্প যদি এমন ঘোষণা দেন তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা যেন সেই সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করেন সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ৷ আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘাইট বলেছেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন তাহলে অত্র অঞ্চলে শান্তির আশা নিভে গিয়ে সংঘাত বাড়বে৷ ‘‘এমন সিদ্ধান্ত (জেরুসালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি) যে মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে পারে অনেকে তা যে বুঝতে পারছেন না, সেটা এটা দুর্ভাগ্যজনক,'' রবিবার কায়রোতে সাংবাদিকদের বলেন তিনি৷ আরব লিগ প্রধান বলেন, তিনি পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আরব রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান কী হবে তা সমন্বয় করা হচ্ছে৷
জেরুসালেমকে রাজধানীর স্বীকৃতির পরিণতি ‘মারাত্মক' হতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়েছে জর্ডান৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি এক টুইটে জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন৷ ‘‘এমন সিদ্ধান্ত আরব বিশ্বে ক্রোধের জন্ম দেবে এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে,'' বলেন তিনি৷
এদিকে, হামাস নতুন করে ‘ইন্তিফাদা' শুরুর হুমকি দিয়েছে৷ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস রবিবার হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন৷ সেই সময় দুই নেতা মার্কিন নীতির সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে একমত হন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হামাস৷
মার্কিন দূতাবাস তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সোমবার সিদ্ধান্ত জানাতে হবে৷ প্রতি ছয়মাস পরপর মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ ১৯৯৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দিয়েছেন৷ ট্রাম্পও প্রথমবার প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দিয়েছিলেন৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)
৫০ বছরে কত বদলে গেছে জেরুসালেম!
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেম সফর করেছেন৷ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে কণ্টকাকীর্ণ একটা ইস্যু হচ্ছে এই শহর৷ ছবিঘরে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের সময়কার জেরুসালেমের সঙ্গে ৫০ বছর পরে এখনকার জেরুসালেমের তুলনা...
ছবি: Reuters/R. Zvulun
এখনকার জলপাই পাহাড়
পেছনে দেখা যাচ্ছে, পুরাতন নগর দেয়াল, স্বর্ণ-গম্বুজ মসজিদ, পাথরের গম্বুজ৷ দৃশ্যটি পুরাতন নগরের পূর্ব পাশে পাহাড়ের নীচের৷ এই পাহাড়ের পশ্চিম ও দক্ষিণ ঢালুতে প্রাচীন ইহুদি সমাধি৷ এক সময় এলাকাটি ছিল জলপাই বাগানে ঘেরা৷ তাই নামও হয় জলপাই পাহাড়৷ এটাই এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে আসা ইহুদিদের সবচেয়ে প্রাচীণ সমাধি৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
তখনকার জলপাই পাহাড়
এখানে পেছনে যদি পুরাতন অটোমান নগর দেয়াল এবং মসজিদ না থাকতো, তাহলে দর্শকরা হয়ত বুঝতোই না যে, এটা একই জায়গা৷ ১৯৬৭ সালের ৭ জুন এই ছবিটি তোলা হয়৷ ছয় দিনের যুদ্ধ বা আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলাকালে এই পাহাড়ের চূড়ায় ছিল একটি ব্রিগ্রেড কমান্ডের ছাউনি৷
ছবি: Government Press Office/REUTERS
এখনকার আল-আকসা মসজিদ
রূপালি রঙের গম্বুজ এবং বিশার হলঘর বিশিষ্ট আল-আকসা মসজিদ৷ এটা টেম্পল পাহাড়ে অবস্থিত৷ মুসলমানরা এটাকে ‘হারাম আল শরীফ’ বলে থাকে৷ এটা ইহুদিদেরও সবচেয়ে পবিত্র স্থান৷ এখানে বাইবেলে উল্লেখিত দু’টি উপাসনালয় রয়েছে৷ এটা সুন্নি মুসলমানদের কাছে মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান৷ পুরো পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘ বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Awad
তখনকার আল-আকসা মসজিদ
‘আল-আকসা’ নামের অর্থ সবচেয়ে দূরের মসজিদ৷ এটা জেরুসালেমের সবচেয়ে বড় মসজিদও৷ ১৯৬৭ সালে জেরুসালেম জয়ের পর এই এলাকার উপর ইসরায়েল কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে৷ তখন নেতারা একমত হয়েছিলেন যে, ‘ওয়াকফ’ নামে ইসলাম ধর্মীয় একটি ট্রাস্ট দ্বারা টেম্পল মাউন্ট পরিচালিত হবে৷
ছবি: Reuters/
এখনকার দামেস্ক গেট
ঐতিহাসিক এই গেট ‘দামেস্ক গেট’ নামে পরিচিত৷ কারণ, এই গেট থেকে উত্তরের রাস্তা দামেস্কের দিকে গেছে৷ পূর্ব জেরুসালেম এবং একটি ব্যস্ত আরব বাজারে ঢুকতে এটা ফিলিস্তিনিদের প্রধান প্রবেশদ্বার৷ গত দুই বছরে এটা ফিলিস্তিনিদের আক্রমণের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
তখনকার দামেস্ক গেট
আজকে আমরা যে গেট দেখি, এটা ১৫৩৭ সালে অটোমান সুলতান মহামতি সুলেইমান নির্মাণ করেছিলেন, যা ১৯৬৭ সালেও প্রায় একই রকম ছিল৷ পুরাতন শহর এবং এর বিভিন্ন অংশে প্রবেশের দ্বার ৭টি৷
ছবি: Reuters/
এখনকার পুরাতন শহর
জেরুসালেমের প্রাণবন্ত পুরাতন শহর৷ ১৯৮১ সালে ইউনেস্কো এটাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে৷ এটা বিভিন্ন ধর্মের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান৷ পাথরের গম্বুজ, আল-আকসা মসজিদ, টেম্পল পাহাড়, ইহুদিদের পশ্চিম দেয়াল এবং খ্রিষ্টানদের একটি পবিত্র চার্চ এখানে অবস্থিত৷ ব্যস্ত ও বর্ণময় এই শহর কেনাকাটা, খাবার-দাবার এবং ভ্রমণের জন্য খুবই আকর্ষণীয়৷
ছবি: Reuters/A. Awad
তখনকার পুরাতন শহর
১৯৬৭ সালের জুলাই মাসে এই ছবি নেয়া হয়৷ কিন্তু ৫০ বছর পরেও পুরাতন শহরে একই জিনিস৷ একেবারেই বদলায়নি৷ এই ছবিতে ছেলেরা ‘ব্যাগেল’ নামের তিলের পেস্টি নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছে৷ এই দৃশ্য পুরাতন শহরে এখনো দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/Fritz Cohen/Courtesy of Government Press Office
এখনকার পশ্চিম দেয়াল
জেরুজালেমের পুরাতন শহরে অবস্থিত চুনাপাথরের এই প্রাচীণ দেয়ালটি টেম্পল মাউন্টের পশ্চিমের দেয়াল৷ ইহুদিদের নিকট এটা সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান৷ তারা এখানে প্রার্থণা করতে আসে৷ কখনো কখনো দেয়ালের ফাটলে চিরকুট রাখতে আসে৷ এখানে পুরুষ-নারীর জন্য পৃথক সেকশন রয়েছে৷ তবে সারা বছরই এটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে৷ অবশ্য প্রবেশের পূর্বে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা তল্লাশী পার হতে হয়৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
তখনকার পশ্চিম দেয়াল
পশ্চিম দেয়ালের আরেক নাম ‘ওয়েইলিং ওয়াল’ বা ক্রন্দনের দেয়াল৷ অবশ্য ইহুদিরা এটাকে মর্যাদাহানিকর শব্দ হিসাবে বিবেচনা করে৷ তারা এই শব্দ ব্যবহারও করে না৷ প্রার্থণার জন্য দেয়ালের দিকে জড়ো হওয়া এই মানুষদের ছবিটি ১৯৬৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তোলা হয়েছে৷