প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তরের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, তাঁর দেশও একই সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত৷ তবে সেই জেরুসালেম হবে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের যৌথ রাজধানী৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক যে একেবারেই মধুর নয়, তা কারো অজানা নয়৷ গত বছর গাব্রিয়েল-এর ইসরায়েল সফরে নেতানিয়াহু তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই অস্বীকার করেছিলেন৷ গাব্রিয়েল ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের বিরোধী কিছু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় তাঁর এই গোঁসা৷
এবার অবশ্য সে রকম কোনো অঘটন ঘটেনি৷ নেতানিয়াহু গাব্রিয়েল-কে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন৷ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দুই নেতার আলোচনা হয়েছে৷ তবে এই প্রশ্নে দুই দেশের চরম মতপার্থক্যও স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ নেতানিয়াহু কার্যত দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্র থেকে অনেকটা সরে এসেছেন৷ তাঁর দাবি, যে কোনো ভবিষ্যৎ সমঝোতার আওতায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনি এলাকার সীমান্তে সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখবে৷ এছাড়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনেক বিষয়েও ইসরায়েল সিদ্ধান্ত নেবে৷ অর্থাৎ ফিলিস্তিনি এলাকা পুরোপুরি সার্বভৌম হতে পারবে না৷
অন্যদিকে জার্মানি ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি স্থায়ী অঙ্গীকারের পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থনে অবিচল রয়েছে৷ ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সমঝোতার আওতায় জেরুসালেম শহরের উপর দুই পক্ষেরই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, জার্মানি এমনটাই ধরে নিচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে সেই শহরে দুই রাষ্ট্রের জন্যই জার্মান দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করা হবে – বলেন গাব্রিয়েল৷ অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জার্মানি তথা ইউরোপের মতপার্থক্যও আবার স্পষ্ট করে দিলেন তিনি৷
ইসরায়েল সফরে এসে গাব্রিয়েল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ তীর্যক ভাষায় বললেন, ইসরায়েলের সরকার যে এখনো দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্রের উল্লেখ করছেন, তাতে তিনি সন্তুষ্ট৷ ভবিষ্যৎ সমাধানসূত্র নিয়ে বর্তমানে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে ইউরোপে নৈরাশ্য দেখা যাচ্ছে৷
এই প্রসঙ্গে গাব্রিয়েল ইউরোপে ইসরায়েলের বর্তমান ভাবমূর্তির কথাও মনে করিয়ে দেন৷ তেল আভিভ শহরে এক ভাষণে ইসরায়েলের বর্তমান সরকারি নীতির পরিণামের উল্লেখ করেন৷ তাঁর মতে, ইউরোপের অনেক মানুষ ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন না৷ সেই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সরকারের প্রতি সমর্থনের কারণ ব্যাখ্যা করা কঠিন হয়ে উঠছে৷ গাব্রিয়েল বলেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে ইসরায়েলকে স্পষ্ট করে দিতে হবে, যে সে দেশ এখনো দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ কিনা৷
রামাল্লাহ শহরে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনার পরিবেশ ছিল অনেক বেশি অনুকূল৷ গাব্রিয়েল আব্বাস ও ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে বলেন, তারা যে বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সমঝোতার জন্য প্রস্তুত, তা সত্যি প্রশংসার যোগ্য৷
ফিলিস্তিনের পাথর ছোঁড়া তরুণেরা
জেরুসালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানায় ফিলিস্তিনি তরুণরা৷ নাম প্রকাশ না করে তাঁরা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন৷
ছবি: REUTERS
সম্বল গুলতি
গাজা শহরের পূর্বে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে গুলতি হাতে এক ফিলিস্তিনিকে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি বলছেন, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন রুখতে আমি যা করতে পারি তা হচ্ছে এই গুলতি দিয়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারতে৷ আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমাদের পবিত্র ভূমি ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে সব আরব ও মুসলিম এক হয়েছে৷’’
ছবি: REUTERS
জেরুসালেম যেন শরীরেরই অংশ
এই বিক্ষোভকারী তরুণের বক্তব্য, ‘‘আমরা ট্রাম্পকে বলতে চাই যে, জেরুসালেম আমাদের শরীরের অংশ, যা ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না৷ আমরা জেরুসালেমকে ভালোবাসি এবং একে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে রক্ষার জন্য সবকিছু, এমনকি আমাদের প্রাণও উৎসর্গ করে পারি৷ বিশ্ব যদি সদয় হয়ে থাকে, তাহলে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে আমাদের জন্য যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা শেষ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত৷’’
ছবি: REUTERS
‘‘গুলতি হাতে মানুষ’’
এই নামেই পরিচিত ছবির এই তরুণ৷ তাঁর কথা, ‘‘আমি কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নই৷ আমার সংশ্লিষ্টতা জেরুসালেমের সঙ্গে৷ আমি একটা বিষয় জানি, যারা আমাকে গাজায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে, যারা আমাকে গাজার বাইরে গিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের পথে দাঁড়িয়ে আছে, তারা ঐ বেড়ার পেছনে রয়েছে, তারা হচ্ছে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী৷’’
ছবি: REUTERS
ইহুদিদের বিরুদ্ধ লড়াই
মুখে মাস্ক পরা এই ফিলিস্তিনি তরুণ বলছেন, ‘‘বিশ্বের অবশ্যই বোঝা উচিত যে, বেকারত্ব আমাদের যোদ্ধা হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ আমরা হামাস কিংবা ফাতাহর বিরুদ্ধে লড়বো না, আমরা শুধু ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়বো৷ হামাস আর ফাতাহর মধ্যে বিভাজনের সমাপ্তি ও আরও বিদ্যুতের দাবিতে ডাকা সমাবেশে আমরা অংশ নিয়েছি৷ কিন্তু আমরা হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দিকে পাথর ছুড়তে রাস্তায় নামবো না৷’’
ছবি: REUTERS
বঞ্চনার শিকার
‘‘একজন তরুণ হিসেবে আমি একটি সম্মানজনক জীবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি৷ আমার এই অবস্থার জন্য যেটা দায়ী সেই ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমি বিদ্রোহ করতে পারি৷ অ্যামেরিকার সহায়তা নিয়ে দখলদাররা আমাদের মাতৃভূমিকে অবরোধ করে রেখেছে৷’’
ছবি: REUTERS
স্বপ্নের কথা
‘‘আমি আশা করছি, আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচবো৷ আমি সবসময় চাকরি আর চলাফেরার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি৷’’
ছবি: REUTERS
দুর্ভোগের প্রতিবাদ
আহত বন্ধুর শরীরের রক্ত আবু জাবেরের হাতে লেগে রয়েছে৷ সে বলছে, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্প যে উন্মাদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানাই আমরা৷ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি৷ আমার হাতে যে রক্ত দেখছেন তা আরব ও মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েল ও অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহ দেবে বলে আমি আশা করি৷’’
ছবি: REUTERS
অন্য উপায় নেই
‘‘আমরা ক্ষুধার্ত৷ ঘরে আমাদের বিদ্যুৎ নেই, আমাদের বাবাদের চাকরি নেই৷ এই পরিস্থিতি প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছু আনতে পারে না৷’’
ছবি: REUTERS
অবরোধের প্রতিবাদ
‘‘গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি আমরা৷ অবরোধের কারণে আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে৷ আশা করছি, শিগগিরই অবরোধ তুলে নেয়া হবে৷’’
ছবি: REUTERS
শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ
‘‘ইসরায়েল ও আমাদের মধ্যে অনেকদিন ধরে যুদ্ধ চলছে৷ আমাদের ভূমিতে একজন ইসরায়েলি দখলদারি থাকা পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব৷ ট্রাম্প বা অন্য কেউ আমাদের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না৷’’