জেরুসালেমের সংঘর্ষে আহত শিশুরাও। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইইউ এবং জাতিসংঘ। উৎখাতের মামলা আপাতত বাতিল।
বিজ্ঞাপন
জেরুসালেমে ইসরায়েলের পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনের বিক্ষোভকারীদের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। প্রায় তিন ধরে সংঘর্ষ চলেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৯০ জন। এর মধ্যে বেশ কিছু শিশুও আছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলি জানিয়েছে। সংঘর্ষের জেরে জেরুসালেম সংলগ্ন অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করার যে মামলার শুনানি সোমবার হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে।
জেরুসালেম নিয়ে ইসরায়েলেরইহুদিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের সংঘাত বহুদিনের। ওই অঞ্চলটি কাদের, তা নিয়েই সংঘাত। ইসরায়েল বেশ কিছুদিন আগেই জানিয়েছিল, জেরুসালেমের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়া হবে। সেই মোতাবেত উৎখাত করার নোটিশও জারি হয়েছিল। যা নিয়ে মামলা হয়। সোমবার সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মামলায় ইসরায়েলের পক্ষে রায় হতো।
প্রাণের শহর জেরুসালেম
মুসলমান, ইহুদি আর খ্রিস্টান; তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র এক নগরী জেরুসালেম৷ যা দখল করে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে ইসরায়েল৷ অন্যদিকে মুসলমানদের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নও এই জেরুসালেমকে ঘিরেই৷
ছবি: Reuters/A. Awad
হারাম আল শরীফ
মুসলিমদের কাছে হারাম আল শরীফ আর ইহুদিদের কাছে পরিচিত টেম্পল মাউন্ট হিসেবে৷ এখানেই রয়েছে আল আকসা মসজিদ, কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা, কুব্বাত আন নবীর মত মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনাগুলো৷ অন্যদিকে ইহুদিরা মনে করে তাদের বাইবেলে বর্ণিত সবচেয়ে পবিত্র দুইটি গির্জার ঠিকানা এটি৷
ছবি: picture alliance/CPA Media
আল-আকসা মসজিদ
রূপালি রঙের গম্বুজ এবং বিশাল হলঘর বিশিষ্ট আল-আকসা মসজিদ৷ সুন্নি মুসলমানদের কাছে যা মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান৷ ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী মেরাজে যাওয়ার সময় হযরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসায় এসে নামাজ আদায় করেন৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
কুব্বাত আস সাখরা
কুব্বাত আস সাখরা বা ডোম অব দ্যা রক৷ টেম্পল মাউন্টেনের উপর অবস্থিত গম্বুজটিতে সাখরা নামের একটি পাথর রয়েছে৷ ইসলাম ধর্মমতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) মেরাজে যাওয়ার পূর্বে এই পাথরটি সেখানে স্থাপন করেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Cupolo
জলপাই পাহাড়
দৃশ্যটি পুরাতন নগরের পূর্ব পাশে পাহাড়ের নীচের৷ এই পাহাড়ের পশ্চিম ও দক্ষিণ ঢালুতে আছে প্রাচীন ইহুদি সমাধি৷ এক সময় এলাকাটি ছিল জলপাই বাগানে ঘেরা৷ তাই নামও হয় জলপাই পাহাড়৷ এটি ইহুদিদের সবচেয়ে প্রাচীন সমাধি৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
পশ্চিম দেয়াল
জেরুসালেমের পুরাতন শহরে অবস্থিত চুনাপাথরের এই প্রাচীন দেয়ালটি টেম্পল মাউন্টেন বা পশ্চিমের দেয়াল৷ ইহুদিদের নিকট এটি সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান৷ তারা এখানে প্রার্থনা করতে আসেন৷ এখানে পুরুষ-নারীর জন্য পৃথক বিভাগ রয়েছে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে৷ অবশ্য প্রবেশের পূর্বে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা তল্লাশী পার হতে হয়৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
যেখানে যিশু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন
জেরুসালেমের ওল্ড সিটি বা পুরান নগরী গুরুত্বপূর্ণ খ্রিস্টানদের কাছেও৷ বেশিরভাগের ধারণা যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ ও সমাধিস্থ করা হয় এখানেই৷ সেই স্থানটিতে রয়েছে তাদের পবিত্র একটি গির্জাও৷ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানরা মনে করেন বাইবেলের বার্তা অনুযায়ী ইসরায়েলে ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা খ্রিস্টানদের ধর্মীয় দায়িত্ব৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
জেরুসালেম কার?
ইসরায়েলের দাবি তিন হাজার বছর আগে জেরুসালেমই ছিল ইহুদিদের রাজধানী৷ অন্যদিকে ফিলিস্তিনি আরবরাও এই ভূমিকে তাদের ঐতিহাসিক, পবিত্র নগরী হিসেবে বিবেচনা করে৷ ভবিষ্যৎ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্নও জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: Reuters/A. Awad
ইসরায়েলের দখলদারিত্ব
১৯৬৭ সালে ৬ দিনের যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর আর পূর্ব জেরুসালেম দখলে নেয় ইসরায়েল৷ আইন করে দাবি করে নিজেদের ভূমি হিসেবে৷ যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনও মিলেনি৷ টেম্পল মাউন্ট বা হারাম আল শরীফের নিজ নিজ ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাতায়াত ও প্রার্থনায় অংশ নিতে পারেন মুসলিম ও ইহুদিরা৷
ছবি: Reuters/A. Awad
রাজধানীর দাবি
১৯৮০ সালে ইসরায়েলের সংসদ নেসেট অখন্ড জেরুসালেমকে তাদের রাজধানীর মর্যাদা দেয়৷ দেশটির সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সুপ্রিম কোর্ট, সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোর অবস্থান এই শহরেই৷ জাতিসংঘ কিংবা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে কিংবা পূর্ব জেরুসালেমে দেশটির দখলদারিত্ব, কোনটিরই স্বীকৃতি দেয়নি৷
ছবি: Reuters/A. Awad
যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি
২০১৭ সালে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ সেই সঙ্গে তেল আভিভ থেকে দূতাবাস সেখানে সরিয়ে নেয়ারও নির্দেশ দেয় ওয়াশিংটন৷ এই পদক্ষেপকে ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়৷
ছবি: Getty Images/L. Mizrahi
জনসংখ্যায় পরিবর্তন
১৯৬৭ সালের আগেই পশ্চিম জেরুসালেমে ইহুদিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তবে পূর্ব জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ যুদ্ধের পর অবৈধভাবে দুই লাখের বেশি ইহুদিকে সেখানে স্থানান্তর করে ইসরায়েল৷ ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেরুসালেমের জনসংখ্যা দাড়িয়েছে সাড়ে আট লাখে৷ যার ৬৩ ভাগ ইহুদী আর ৩৭ ভাগ ফিলিস্তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/N. Alon
জেরুসালেম বিক্রির জন্য নয়
সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের এক পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ সে অনুযায়ী জেরুসালেম শহর ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী থাকবে৷ আর অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেম হবে ফিলিস্তিনিদের রাজধান৷ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেছেন, ‘‘জেরুসালেম বিক্রির জন্য নয়’’৷
ছবি: Reuters/A. Awad
12 ছবি1 | 12
শুক্রবার রাত থেকেই এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ফিলিস্তিনের আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ দমন করতে সেখানে পৌঁছায় ইসরায়েলের পুলিশ। রোববার বিকেলের পর থেকে বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। পাল্টা আঘাত করে ইসরায়েলের পুলিশও। তাতে দুই পক্ষই আহত হয়েছে। ইসরায়েলের পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বেশ কিছু পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন। অন্যদিকে বহু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। ইউনিসেফ সহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, ইসরায়েলের পুলিশের আক্রমণে একাধিক শিশুও আহত হয়েছে। তার মধ্যে এক বছরের শিশুও আছে। ঘটনার পর উত্তেজনা কমাতে আদালতের শুনানি বাতিল করা হয়।
ইসরায়েলের সরকার জানিয়েছে, গাজা থেকে হামাস দুইটি রকেট ছোড়ে জেরুসালেম লক্ষ্য করে। তাতেও বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। হামাসের পাল্টা দাবি, ইসরায়েলের পুলিশ নির্বিচারে রবার বুলেট ছুড়েছে।
এত কিছু সত্ত্বেও ইসরায়েল পুলিশের মুখপাত্র এলি লেভি জানিয়েছেন, সোমবার জেরুসালেম ডে প্যারেড বন্ধ রাখার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। এই দিন জাতীয়বাদী ইসরায়েলিরা জেরুসালেমে প্যারেড করে। যা ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরির যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
গোটা ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। দ্রুত সমস্যার সমাধানের দাবি করা হয়েছে। ইসরায়েল যাতে উত্তেজনা প্রশমনের ব্যবস্থা করে, তাও দাবি করা হয়েছে।