ইহুদিদের কাছে জায়গাটির নাম টেম্পল মাউন্ট, মুসলিমদের কাছে পবিত্র স্থান। তার কাছেই গুলি চালালো এক আক্রমণকারী।
বিজ্ঞাপন
রোববার জেরুসালেমের পুরনো শহরে এক ব্যক্তি পবিত্র স্থানের কাছে গুলি চালাতে থাকে। চারজন আহত হন। পরে হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। আক্রমণকারীর হাতে সাবমেশিনগান ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, আক্রমণকারীকে মারা হয়েছে।
আক্রমণকারীর গুলিতে যারা আহত হয়েছিলেন, তার মধ্যে দুইজন সাধারণ মানুষ এবং দুইজন পুলিশ কর্মী। তাদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একজন মারা যান।
ওই স্থানটি ইহুদি এবং মুসলিমদের কাছে পবিত্র। পুলিশ বলেছে, টেম্পল মাউন্টের প্রবেশদ্বারের কাছে গুলি চলেছে। অতীতে এই পবিত্র স্থানকে ঘিরে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
প্রশংসায় হামাস
সম্প্রতিক সময়ে জেরুসালেমের ওল্ড সিটিতে এই নিয়ে দ্বিতীয় সহিংস ঘটনা ঘটলো। গত বুধবার একজন ১৬ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি দুইজন ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষীকে ছুরি মেরে আহত করে। তারপর রক্ষীদের গুলিতে তার মৃত্যু হয়। রোববার পবিত্র স্থনের কাছে গুলি চললো।
হামাসের উত্থান ও কার্যক্রম
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হামাস৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশের কাছে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত৷ তবে হামাসের কিছু মিত্র দেশও রয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
উত্থানপর্ব
১৯৮০-এর দশকে ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র বিরোধিতায় হামাসের জন্ম৷ পিএলও-র বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে শুরুর দিকে ইসরায়েল সরকার হামাসকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল বলে অনেকক্ষেত্রে দাবি করা হয়৷ তবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের ভূমিকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Reuters/S. Salem
ইসরায়েলকে অস্বীকার
পিএলও-র মতো হামাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারে বিশ্বাস করে না৷ তাদের প্রতীকে রয়েছে জেরুসালেমের ‘ডোম অব দ্য রক’৷ ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীরকে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে তারা বিবেচনা করে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান
১৯৯৩ সালে ইয়াসির আরাফাত অসলো চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন, যার মধ্য দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া প্রথম ইন্তিফাদার অবসান হয়৷ হামাস এই শান্তি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখে৷
ছবি: J. David Ake/AFP/Getty Images
নির্বাচনে জয়
২০০৬ সালের গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ এরপর থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ-এর অধীনে রয়েছে পশ্চিম তীর আর গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে৷ ২০০৮-০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনার সঙ্গে হামাসের তুমুল লড়াই চলে৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত
১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে৷ ২০০৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদেরকে সন্ত্রাসী তালিকায় রাখে৷ হামাস এই বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে৷ তবে আদালত তাদের আবেদন বাতিল করে৷ যুক্তরাজ্য ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khatib
হামাসের সহযোগী
হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী কাতার৷ দেশটির আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি প্রথম রাষ্ট্রনেতা, যিনি ২০১২ সালে হামাস সরকারের সঙ্গে দেখা করেন৷ এখন পর্যন্ত দেশটি হামাসকে ১৮০ কোটি ডলার দিয়েছে৷ হামাসের প্রতি তুরস্কেরও সমর্থন রয়েছে৷ সংগঠনটির নেতা ইসমাইল হানিয়ের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে রেচেপ তাইয়েপ-এর্দোয়ানের৷ এছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ ও ফাউন্ডেশনের সহযোগিতাও পায় তারা৷
ছবি: AP
হামাসের রকেট উৎস
সবশেষ সংঘাতেও ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে হামাস৷ দীর্ঘদিন হামাস রকেটের জন্য ইরানের উপর নির্ভরশীল ছিল৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুদান ও মিশর হয়ে সেখান থেকে অস্ত্র চোরাচালান হতো৷ তবে বর্তমানে গাজাতেই হামাস রকেট বানাচ্ছে বলেও ধারণা করা হয়৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
ইসরায়েলের পাবলিক সিকিউরিটি মন্ত্রী বলেছেন, রোববারের এই ঘটনার জন্য হামাসই দায়ী। যে ব্যক্তি গুলি চালিয়েছিল, সে হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য।
হামাসও জানিয়েছে, আক্রমণকারী তাদের সদস্য। তারা এই আক্রমণের প্রশংসা করে বলেছে, ওটা ছিল বীরোচিত কাজ। হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, ''আমাদের গণপ্রতিরোধ চলতেই থাকবে। যতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারছি, দখলদারদের আমাদের ভূমি ও পবিত্র স্থান থেকে উচ্ছেদ করতে না পারছি, ততদিন এই ধরনের হামলা হবে।''