পূর্ব জেরুসালেমে বসতি স্থাপনের ‘পারমিট' বা অনুমতিপত্র বিষয়ে একটি ভোট বাতিল করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ৷ ওবামা প্রশাসন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো৷
বিজ্ঞাপন
পূর্ব জেরুসালেমে নতুন আরো কয়েকশ' বসতি স্থাপনের পারমিটকে কেন্দ্র করে ভোটাভুটির পরিকল্পনা করছিলো জেরুসালেম সিটি কাউন্সিল৷ কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখবেন জানার পর এ সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেছে তারা৷ কাউন্সিল সদস্য হানান রুবিন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই ভোট বাতিলের নির্দেশ সরাসরি এসেছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে থেকে৷
শুক্রবার পশ্চিমতীরে ইসরায়েলের অধিকৃত এলাকার বৈধতা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকে৷ এছাড়া জাতিসংঘে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপস্থাপিত হয় যেখানে পূর্ব জেরুসালেমসহ ইসরায়েলের অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সব ধরনের বসতি স্থাপন বন্ধের দাবি জানানো হয়৷
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত কোন পথে?
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি এলাকা জুড়ে যে সহিংসতার ঢেউ চলেছে, তা-তে দু’পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভ, অবিশ্বাস ও মারমুখি ভাব৷ এই প্রবণতা চলতে থাকলে একটি তৃতীয় ইন্তিফাদার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/M. Abu Turk
একটি পবিত্র স্থান
পুরনো জেরুসালেমের প্রাচীন অংশে আল-আকসা মসজিদ; ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা৷ ইসরায়েলিদের কাছে এই স্থানটি হল টেম্পল মাউন্ট৷ মাস খানেক আগে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গুজব ছড়ায় যে, ইসরায়েল প্রাঙ্গণটি দখল করে নেওয়ার কথা ভাবছে৷ সেই থেকেই দাঙ্গা-হাঙ্গামার শুরু৷ ১৭ই জুলাই, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
একটানা আক্রমণ
বিশেষ করে জেরুসালেমে ইসরায়েলিদের ওপর ছুরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ায় ইসরায়েলি সরকার চিন্তিত৷ প্রধানত জেরুসালেমবাসী ফিলিস্তিনি কিশোররাই এই সব আক্রমণ চালাচ্ছে ও নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে৷ তাদের কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় আবার দাঙ্গা বাঁধছে৷ অক্টোবরের সূচনায় বেথলেহেমের কাছে একটি উদ্বাস্তু শিবিরে এক ১৩ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি কিশোর এভাবে প্রাণ হারায়৷ বেথলেহেমে দাঙ্গার ছবি, ৫ই অক্টোবর, ২০১৫৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Coex
অন্যত্র, সর্বত্র
গাজা স্ট্রিপের দক্ষিণে খান ইউনুসেও একই দৃশ্য৷ ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে সংঘাতে ১৫ বছর বয়সি মোহাম্মেদ আল-রেকেব প্রাণ হারানোর পর তাকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় আত্মীয়স্বজন শোকার্ত৷ ৯ই অক্টোবর, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
গাজা স্ট্রিপে
২২ বছর বয়সি জিহাদ আল-ওবাইদের সমাধি অনুষ্ঠানে যোগদান করে আল-কাসাম ব্রিগেডের জঙ্গিরা৷ জিহাদ প্রাণ হারান গাজা স্ট্রিপের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, সীমান্তের কাছে, ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে৷ ছবিটি তোলা ১০ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে৷ ১৫ই অক্টোবর অবধি এই ‘তৃতীয় ইন্তিফাদায়’ এ যাবৎ প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন ইসরায়েলি ও অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি; দু’পক্ষে আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Khatib
বিজয় চিহ্ন
পশ্চিম জর্ডানের হেব্রনে মোহাম্মেদ ফারেস আল-জাবারিকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে দাঙ্গা বাঁধে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের৷ আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্টরি সাইন দেখাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী৷ ছবিটি ১০ই অক্টোবর, ২০১৫-র৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Bader
বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, দাঙ্গা
পশ্চিম জর্ডানের নাবলুসে হাওয়ারা চেকপয়েন্টে ইসরায়েলি সৈন্যদের দিকে ঢিল ছুঁড়ছে ফিলিস্তিনি কিশোর ও তরুণেরা৷ ১১ই অক্টোবর, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Reuters/A. Talat
যাত্রীবাহী বাসে আক্রমণ
১২ই অক্টোবর, ২০১৫-র ঘটনা৷ পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী জনৈক আরব একটি যাত্রাবাহী বাসের মধ্যে এক ইসরায়েলি সৈন্যকে ছুরিকাঘাত করার ও বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ অপর এক সৈন্যের গুলিতে আততায়ী নিহত হয়৷ ছবিতে পুলিশ কর্মকর্তারা বাসটির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Ziv
ইসরায়েলি সরকার নিরুপায়
ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হাজার চারেক পুলিশ ছাড়াও তিন’শ সৈন্য পথে নামানো হয়েছে৷ অস্থায়ী চেকপয়েন্ট সৃষ্টি করে গাড়ি ও ড্রাইভারদের পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ছবিতে পূর্ব জেরুসালেমের জাবাল মুকাবর এলাকায় কংক্রিটের ব্লক বসানোর কাজ চলেছে বুধবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/S. Scheiner
আরো একটি মৃতদেহ
পূর্ব জেরুসালেমের ‘ওল্ড সিটির’ প্রবেশমুখে দামাস্কাস গেটে বুধবার আরো একটি ছুরি আক্রমণের ঘটনা ঘটে৷ দৃশ্যত পশ্চিম জর্ডানের হেব্রন থেকে আগত এক ২০ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি তরুণ এক নিরাপত্তা কর্মীকে আক্রমণ করে ও নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে নিহত হয়৷ ছবিতে নিহত আততায়ীর লাশ অকুস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/M. Abu Turk
9 ছবি1 | 9
জাতিসংঘের ঐ প্রস্তাবে ভেটো দেয়ায় ওবামা প্রশাসনের সমালোচনার মুখে পড়েন নেতানিয়াহু, নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনাকে ‘লজ্জাজনক ইসরাইলি পদক্ষেপ' হিসেবে উল্লেখ করে ওবামা প্রশাসন৷ এবারই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আনুষ্ঠানিক ভাবে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন নীতির নিন্দা জানালো, যা চলছে ১৯৭৯ সাল থেকে৷
বুধবার রাতে জন কেরি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন৷ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনেই ওবামা প্রশাসনের এ পদক্ষেপ৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করার আগেই তার প্রশাসন চায় এই সমস্যার সমাধান হোক৷ কেবল প্রচারণায় নয়, নির্বাচনে জেতার পরও ট্রাম্প বরাবরই একথা বলে আসছেন যে নেতানিয়াহুর ইসরায়েলের পররাষ্ট্র নীতিতে তার সমর্থন রয়েছে এবং পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনকেও তিনি সমর্থন করেন৷
১৫ জানুয়ারি প্যারিসে আন্তর্জাতিক মধ্যপ্রাচ্য শান্তি সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের৷ তাই এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছে ইসরায়েল৷ কেননা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ২০ জানুয়ারি৷ ট্রাম্প অবশ্য এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলের পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনের বিষয়ে তিনি খুব নমনীয় পথে থাকবেন, এছাড়া জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ব্যাপারে আগ্রহী তিনি৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
যে প্রাচীর মানুষে-মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করে
শরণার্থীদের দূরে রাখতে হাঙ্গেরি ইউরোপের দক্ষিণে কাঁটাতারের বেড়া গড়ে তুলেছে৷ তবে মানুষে-মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করতে প্রাচীর গড়ার দৃষ্টান্তের অভাব নেই৷ বার্লিন থেকে শুরু করে পশ্চিম তীর – যুগে যুগে এমন উদ্যোগ দেখা গেছে৷
ছবি: dapd
পূর্ব-পশ্চিম জার্মানি
১৯৬১ সালের ১৩ই আগস্ট তৎকালীন পূর্ব জার্মানি বার্লিন প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করে৷ ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬ লক্ষ পূর্ব জার্মান নাগরিক পশ্চিমে পালিয়ে যায়৷ কমিউনিস্ট নেতৃত্বের ভয় ছিল, এমনটা চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে৷ ১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর সেই প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মরক্কো-স্পেন
আফ্রিকার ভূখণ্ডে এক টুকরো ইউরোপ শরণার্থীদের যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে৷ মরক্কো উপকূলে স্পেন নিয়ন্ত্রিত দুই ছিটমহল সেউটা ও মেলিয়া-কে ১৯৯৩ সালে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়৷ ৬ মিটার উঁচু কাঁটাতারের বেড়া আফ্রিকার শরণার্থীদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দূরে রাখবে – এটাই ছিল উদ্দেশ্য৷
ছবি: Marco Di Lauro/Getty Images
গ্রিস-তুরস্ক
শরণার্থীদের দূরে রাখতে গ্রিস ২০১৩ সালে তুরস্ক সীমান্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ানের বহির্সীমা মজবুত করতে সে দেশের সরকার সীমান্তবর্তী এক নদীর উপরেও টহলদারি বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: dapd
ইরান-পাকিস্তান
বেআইনি অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধ করতে ইরানের সরকার ২০০৭ সাল থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাকিস্তান সীমান্তে বেড়া তৈরির কাজ শুরু করে৷
ছবি: IRNA
ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন
সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ২০০৩ সাল থেকে পশ্চিম তীরের সীমান্তে প্রায় ৮ মিটার উঁচু প্রাচীর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এ ভাবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সীমা আগেভাগেই স্থির করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Xinhua /Landov
ভারত-বাংলাদেশ
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু অংশেও কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে৷ কিন্তু ফেলানির মর্মান্তিক মৃত্যুর মতো ঘটনা এমন প্রাচীরের অমানবিক দিকও তুলে ধরে৷ তা সত্ত্বেও প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বাকি অংশেও কাঁটাতারের বেড়া লাগানো এবং নদীনালা বা জলাভূমির উপরেও বিশেষ বেড়া লাগানোর উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে৷
ছবি: Str/AFP/Getty Images
ভারত-পাকিস্তান
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা কোনোকালই দূর হয় না, শুধু বাড়ে বা কমে৷ বিশেষ করে বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’ বা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ছোটবড় সংঘর্ষ লেগেই আছে৷ বিপুল সেনা তৎপরতার মধ্যে সাধারণ মানুষের পক্ষে সেই সীমান্ত পেরোনোর সুযোগ নেই বললেই চলে৷