জেরুসালেম নিয়ে সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নিজেকে মুসলিম জোটের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন৷ কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাঁর লজ্জাহীন বাকসর্বস্ব বক্তৃতা ভণ্ডামিপূর্ণ, মনে করেন ডিডাব্লিউর ডানিয়েল হাইনরিশ৷
বিজ্ঞাপন
তিনি আবার ফিরে এসেছেন৷ দুষ্ট, স্বৈরশাসক, অভদ্রলোক এবং চিরদিনের পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইনার রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ ইস্তান্বুলে ওআইসির সম্মেলন শুরুর আগে তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট তাঁর পুরনো খেলায় ফিরে গেছেন৷ ইসরায়েলকে তিনি ‘সন্ত্রাসী ও দখলদারী রাষ্ট্র' হিসেবে উল্লেখ করে ‘সব দেশের' প্রতি ‘জেরুসালেমকে দখলে থাকা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি' দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ক্ষোভের পরিচিত প্রতিক্রিয়া
এর্দোয়ান ক্ষুব্ধ৷ এবং তিনি চান, এটা সবাই জানুক৷ মনে হচ্ছে মাঝে কিছুদিনের বিরতির পর তিনি আবার তাঁর ক্রোধপূর্ণ বক্তৃতা দেয়ার রীতিতে ফেরার জন্য প্রস্তুত৷ কয়েকমাস আগে তিনি জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ‘নাৎসি পদ্ধতি' প্রয়োগের অভিযোগ এনেছিলেন৷ তবে এবার তিনি আবার তাঁর প্রিয় বিষয় ইসরায়েলের সমালোচনায় ফিরে গেছেন৷
ট্রাম্পের জেরুসালেম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সারা বিশ্বে হাজার হাজার মুসলিম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেবার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ পথবিক্ষোভে মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা পোড়ানো হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
জার্মানি
রবিবার বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের একটি প্রধানত মুসলিম জনতা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করে৷ বিক্ষোভকারীদের হাতে ফিলিস্তিনি ও তুর্কি পতাকা ছিল৷ বিক্ষোভে একটি ইসরায়েলি পতাকাও পোড়ানো হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী হাইকো মাস পরে বলেন যে, জার্মানিতে ইহুদি বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
তুরস্ক
ট্রাম্পের ঘোষণার পর পরই তুরস্কে প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়৷ ছবিতে বিক্ষোভকারীরা ইস্তানবুলে মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকায় আগুন ধরাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/O. Orsal
মিশর
ছবিতে কায়রোয় সিন্ডিকেট অফ জার্নালিস্টস-এর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি প্রতিকৃতি দাহ করছেন; ছবির গায়ে লেখা আছে, ‘ট্রাম্প, সাংবাদিকরা আপনাকে বলছে, জেরুসালেম আরব’৷ পরে পুলিশ আটজন বিক্ষোভকারীকে নিষিদ্ধকৃত মুসলিম ব্রাদারহুড সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়ে গ্রেপ্তার করে৷
ছবি: Reuters/M. A. E. Ghany
লেবানন
লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনী রবিবার বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিক্ষোভকারীদের রোখার জন্য কাঁদানে গ্যাস ও জলের কামান ব্যবহার করে৷ হেজবুল্লাহ সংগঠন উত্তরোত্তর প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Hussein
ইরাক
ইরাকের শিয়াপন্থি মুসলিমরাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুসালেম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নেমেছেন, যেমন এখানে দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরে৷
ছবি: Reuters/E. al-Sudani
ইরান
ইরানের রাজধানী তেহরানে বিপুল বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে এবং আগামীতেও হবে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি রবিবার বলেন যে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ‘‘আগুনে তেল ঢেলেছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AA/Stringer
পাকিস্তান
পাকিস্তানের করাচিতে শিয়াপন্থি বিক্ষোভকারীরা মার্কিন কনস্যুলেটের দিকে যাবার পথে মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করছেন৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর
শ্রীনগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে বুদগাম শহরে বিক্ষোভকারীরা জুম্মার নামাজের পর মিছিল করেন ও ইসরায়েলের পতাকা পোড়ান (ছবি)৷ তাদের মুখে ‘অ্যামেরিকা নিপাত যাও’ ও ‘ইসরায়েল নিপাত যাও’ ধ্বনি শোনা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/D. Yasin
মালয়েশিয়া
কুয়ালা লামপুরে শুক্রবারের নামাজের পর সহস্রাধিক মুসলিম ট্রাম্পের জেরুসালেম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে যাত্রা করেন৷ ক্রীড়ামন্ত্রী জামালুদ্দিন স্বয়ং তাদের নেতৃত্ব দেন৷ জনতা ‘ইসলাম দীর্ঘজীবী হোক’ ধ্বনি দেয়৷
ছবি: Reuters
ইন্দোনেশিয়া
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ায় চার দিন ধরে প্রতিবাদ চলেছে৷ জাকার্তার মার্কিন দূতাবাসের সামনে মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে৷ এছাড়া ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতিকৃতি দাহ করা হয়৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
ব্রাজিল
রবিবার ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে ফিলিস্তিনি ফ্রন্ট নামধারী একটি আন্দোলন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করে৷
অন্যদিকে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র' ও ‘শিশু হত্যাকারী'র সেই পুরনো অভিযোগ অনেকটা রোবটিক শোনায়৷ এবং যেভাবে মুখস্থ ও একঘেঁয়ে উপায়ে অভিযোগগুলো উচ্চারিত হয় তা শুনতে প্রায় বিরক্তিকর মনে হয়৷ তাছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় তুরস্কের ইসরায়েলকে দায়ী করার বিষয়টি ভণ্ডামি মনে হয় এই কারণে যে, সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ নিয়মিত হারে বাড়ছে৷
তারপরও ইহুদি রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা থেকে এর্দোয়ান নিজেকে বিরত রাখছেন না৷ ২০০৯ সালে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে দেয়া তাঁর বক্তব্য ভোলার নয়৷ সেই সময় পাশে বসা ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজকে তিনি অপমান ও গালাগালি করেছিলেন৷ তাঁর সেই বক্তব্যের ভিডিও ইউটিউবে ৩০ লক্ষবারের বেশি দেখা হয়েছে৷
বিভক্ত মুসলিম বিশ্ব
ওআইসি সম্মেলনের আগে এর্দোয়ান বলেছিলেন, ‘‘সম্মেলনে আমরা পুরো মুসলিম বিশ্বকে এক করব৷'' কিন্তু সম্মেলন শুরুর সময় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এর্দোয়ানের বক্তব্য ছিল একেবারে অর্থহীন৷ ওআইসির ৫৭ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশ তাদের রাষ্ট্রপ্রধানকে সম্মেলনে পাঠিয়েছে৷ কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপকারী সৌদি জোটের দেশগুলো উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে৷
কাতার সংকটের পর আর কে মুসলিম বিশ্বের ‘ঐক্যের' বিষয়টি বিশ্বাস করবে? আঞ্চলিক দুই বড় শক্তি সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সংঘাত ছাড়াও তুরস্কের ধর্মীয়-রক্ষণশীল নেতা ও মিশরের সামরিক নেতাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
তবে এর্দোয়ান তাঁর নীতিতে ঠিক আছেন৷ তিনি ‘সবসময় শিরোনাম তৈরি করতে' চান৷ তাঁর বার্তা সবসময় স্পষ্ট ছিল, ওআইসির সম্মেলনেও তা বলবৎ আছে৷ আর তা হচ্ছে, ইসরায়েল একটি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র', একটি ‘দখলদারী রাষ্ট্র' এবং....এবং....এবং...৷
ডানিয়েল হাইনরিশ/জেডএইচ
Erdogan calls on Jerusalem to be recognized as Palestinian capital