ক্রিসমাসের আগে খুশির খবর পেলেন গাজায় বসবাসরত খ্রিষ্টানরা। তাঁদের জেরুসালেমে যাওয়ার অনুমতি দিলো ইসরায়েল প্রশাসন। গত বছরেও অনুমতি পেয়েছিলেন তাঁরা।
বিজ্ঞাপন
জেরুসালেমে গিয়ে ক্রিসমাস পালনের অনুমতি পেলেন গাজায় বসবাসকারী খ্রিষ্টানরা। রবিবার টুইট করে এ কথা জানিয়েছে ইজরায়েলের প্রশাসন।
ভূমি তুমি কার
পশ্চিম তীরে একসময় শুধু ফিলিস্তিনি মুসলমানরাই ছিলেন৷ তবে ১৯৬৭ সালে তা দখল করে সেখানে ইহুদিদের বসতি গড়তে শুরু করে ইসরায়েল৷ এখন দু’ পক্ষেরই দাবি, ‘‘এই ভূমি আমাদের৷’’ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/R. Sawafta
বাড়ছে, বাড়বে ইহুদিদের বসতি
পশ্চিম তীরে ইতিমধ্যে ১২০টি বসতি গড়ে দিয়েছে ইসরায়েল সরকার৷ গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময়ই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়ানহু বলে রেখেছেন ভবিষ্যতে আরো বসতি গড়া হবে অধিকৃত সেই অঞ্চলে৷
ছবি: Reuters/Peace now
‘এই জায়গা আমাদের বাইবেলেও তা বলা আছে’
মাইকেল নেটসার৷ বয়স ৬৩ বছর৷ ইহুদি এই ব্যক্তি ১৯৮৫ সাল থেকে পশ্চিম তীরের বাসিন্দা৷ পশ্চিম তীর ইসরায়েল বা ইহুদিদের নয় তা তিনি একেবারেই মানতে রাজি নন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ইহুদিরা এখানে বাস করতে পারবে না, এ কথাটা খুবই হাস্যকর৷ এটা তো বাইবেলের অংশ৷ আমি প্রশ্ন করতে চাই— আপনার পূর্বপুরুষ বা পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া কি এত সহজ? মোটেই তা নয়৷ ইতিহাসই ইহুদিদের এখানে নিয়ে এসেছে৷ ’’
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘এই ভূমি আমার হুদয় এবং আত্মা’
মুসলিম কৃষক আজমি মুসলেহর সোজা দাবি— এই ভূমি মুসলমানদের৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই জায়গাটা আমার হৃদয় এবং আত্মা৷ ওটা আমার পরিবারের হৃদয় এবং আত্মা৷’’ তিনি জানান, এখন যেখানে ইহুদিদের বাস, এক সময় সেখানে তাঁরা চাষবাস করতেন৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘নিজেকে সেটলার মনে হয় না আমার’
৬০ বছর বয়সি মাইকের কোভেন-ভোগেল ইহুদি৷ পেশায় আইনজীবী৷ পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল সেখানে তাদের জন্য বসতি গড়ে দিলেও নিজেকে আর বহিরাগত মনে হয় না তার৷ তিনি বললেন, ‘‘নিজেকে মোটেই সেটলার মনে হয় না৷’’ তিনি মনে করেন, ইসরায়েল ইহুদিদের জন্য আরো বসতি গড়ে দিলে ভালো হবে৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘এই জায়গা ইসরায়েলের জনগণের’
৪৩ বছর বয়সি ইহুদি ইতাই জার মনে করেন, ‘‘এই জায়গা যে ইসরায়েলি জনগণের সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না৷’’
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘অন্য জায়গায় জমি কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়’
ডেভিড হামবার্গারও একজন ইহুদি৷ ইসরায়েলে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয় বলে পশ্চিম তীরে বাস করছেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা আদর্শিক কারণে এখানে আসিনি৷এই জায়গায় না কিনলে অন্য কোথাও জমি কিনে বাড়ি বানানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷’’
ছবি: Reuters/N. Elias
‘আমাদের মধ্যে শান্তি আসা অসম্ভব’
মোহাম্মদ আওয়াদ একজন ফিলিস্তিনি মুসলমান৷ বয়স ৬৪ বছর৷ তাঁর মতে, পশ্চিম তীরে শান্তি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই, ‘‘একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা ওরা দখল করে নেয়ার কারণে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত৷ ফলে এখানে শান্তি আসা অসম্ভব৷আমার জমি কেউ চুরি করে নিয়েছে এটা কেমন করে মেনে নেবো? তার সঙ্গে কিভাবে শান্তিতে বসবাস করবো?’’
ছবি: Reuters/R. Sawafta
7 ছবি1 | 7
২০০৭ সালে প্যালেস্তাইনের গাজা অঞ্চল হামাস দখল করে নেয়। তার পর থেকেই ওই অঞ্চলকে কার্যত অবরুদ্ধ করে দেয় ইজরায়েল এবং মিশর। গাজায় বসবাসকারী মানুষ বাইরে যেতে পারেন না। গেলে বিশেষ পারমিট করাতে হয়। মূলত মুসলিম অধ্যুষিত গাজায় সব মিলিয়ে হাজারখানেক খ্রিষ্টানের বাস। যার অধিকাংশই গ্রিক প্রোটেস্টান্ট। তবে সামান্য কিছু ক্যাথোলিকও আছে। প্রতি বছরই ক্রিসামাসের সময় জেরুসালেমে প্রার্থনা করতে যাওয়ার দাবি জানান গাজার খ্রিষ্টানরা। কিন্তু সব সময় যাওয়ার সুযোগ তাঁরা পান না। গত বছর বিশেষ অনুমতিপত্রের ব্যবস্থা করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু এ বছরও অনুমতি পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত রবিবার দুপুরে অনুমতিপত্র দেওয়া কথা জানালো ইসরায়েল। তবে তার জন্য যথেষ্ট লড়াই করতে হয়েছে জেরুসালেমের খ্রিষ্টান ধর্মগুরুদের। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা ইসরায়েল প্রশাসনের উপর চাপ দিচ্ছিলেন, যাতে তারা অনুমতিপত্রের ব্যবস্থা করে।
গাজায় বসবাসকারী খ্রিষ্টানের সংখ্যা গত কয়েক বছরে চোখে পড়ার মতো কমেছে। অনেকেই দেশ ছেড়ে বাইরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। হামাসর অবশ্য দাবি, তারা খ্রিষ্টানদের উপর কোনও রকম অত্যাচার করে না। কিন্তু খ্রিষ্টানদের দাবি বহু সময়েই তাঁদের উপর অত্যাচার হয়। সে কারণেই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন অনেকে।