জেলখানায় এক সন্দেহভাজন জঙ্গির আত্মহত্যার খবরে হতভম্ব জার্মানি৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার দ্রুত এবং বিস্তৃত ব্যাখ্যা চেয়েছে৷ সিরীয় নাগরিকটির বিরুদ্ধে জার্মানিতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ ছিল৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বিচার মন্ত্রণালয় বুধবার রাতে নিশ্চিত করেছে যে সিরীয় নাগরিক জাবের আল বকরকে লাইপজিগের একটি কারাকক্ষে মৃত পাওয়া গেছে৷ তার মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা বলেও প্রাথমিকভাবে জানা গেছে৷ এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় লিখেছে, ‘‘বারো অক্টোবর বিকেলে জাবের আল বকর, যিনি একটি সিরিজ হামলার পরিকল্পনা করছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল, লাইপসিগের কারেকশনাল হাসপাতালের ডিটেনশন সেন্টারে তিনি আত্মহত্যা করেছেন৷'' বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে মন্ত্রণালয়৷
আল বকরের আত্মহত্যার খবরে প্রচন্ড চাপে পড়েছে স্যাক্সনির পুলিশ বিভাগ, কেননা, আল বকর আত্মহত্যা করতে পারেন, এমন আভাষ পুলিশ আগেই পেয়েছিল এবং তাকে এ কারণে নজরদারির মধ্যেও রাখা হয়েছিল৷ এর আগে শনিবার কেমনিৎসে অভিযান চালিয়ে আল বকরকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছিল জার্মানির পূর্বের এই রাজ্যের পুলিশ৷ পরবর্তীতে কয়েক সিরীয় নাগরিকের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় পুলিশ৷
এদিকে, জেলে আল বকরের আত্মহত্যার খবরে বেজায় চটেছেন জার্মানির রাজনীতিবিদরা৷ জার্মানির সবুজ দলের কো-চেয়ারম্যান চেম ওয়েজদেমির বিস্ময় প্রকাশ করে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘কারাগারে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী থাকা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে আত্মহত্যা করেন? আমি এই ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছি৷''
জার্মানির হেসে রাজ্যের পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভল্ফগাং গ্রিলিশ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘স্যাক্সনির পুলিশ, প্রসিকিউটর এবং আইন শৃঙ্খলারক্ষকারীদের কোথায় ভুল হচ্ছে? আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না৷''
জার্মানির জনপ্রিয় ‘স্ট্যার্ন' ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ফিলিপ জেসন টুইটারে জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন একজন জঙ্গির নজরদারির মধ্যে থাকা একটি সেলের মধ্যে আত্মহত্যা জার্মানিতে সম্ভব নয়৷
উল্লেখ্য, গত সোমবার আল বকরকে বেধে রেখে তিন সিরীয় নাগরিক পুলিশকে জানায়৷ সেই তিন ব্যক্তি প্রথমে তাকে থাকতে দিয়েছিল৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই টের পায় যে পুলিশ তাকে খুঁজছে৷ এর আগে, শনিবার আল বকরের সেমনিৎসের অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ঘরে তৈরি এক ধরনের বিস্ফোরক খুঁজে পায়৷ গতবছর নভেম্বর প্যারিস হামলার সময় এবং এ বছর মার্চে ব্রাসেলসে হামলায় একই ধরণের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এআই / এসিবি (ডিপিএ, আরটিএল, এএফপি)
জার্মানিতে জঙ্গিবাদ
তারা তরুণ, ধর্মান্ধ এবং জান্নাতে যেতে চায়৷ জার্মানিতে এমন প্রায় ৫০০ ইসলামি জঙ্গি আছে যারা যে-কোনো ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তুলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Boris Roessler
ব়্যাপার থেকে জিহাদি
ডেনিশ কুসপার্ট এর বাবা জার্মান এবং মা ঘানার৷ তাঁর জন্ম ১৯৭৫ সালে বার্লিনে৷ ইসলামিক স্টেটের অন্যতম জিহাদিস্ট এই ব়্যাপার ডেসো নামেও পরিচিত৷ ২০১২ সালের শেষ থেকে সিরিয়ায় আছেন কুসপার্ট৷ তার লক্ষ্য হলো জার্মানির সালাফিস্টদের জিহাদি হওয়ার পথে নিয়ে যাওয়া৷ চলতি মাসের প্রথম দিকে শিরশ্ছেদের নতুন ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে৷ জার্মান সরকার জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: twitter.com
শরিয়া পুলিশ
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভুপার্টাল শহরের রাস্তায় রাস্তায় এদের দেখা যায়৷ মুসলিম তরুণরা যাতে জুয়া না খেলে, মদ না খায় এবং গান না শোনে তার নির্দেশ দেয় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
অভিবাসী জঙ্গি
জার্মানিতে অন্তত কয়েক হাজার ইসলামপন্থি রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকশ জনকে জঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ অনেকেই অভিবাসীদের সন্তান, যারা জার্মানিতে এসে একই সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে একতাবদ্ধ হতে গিয়ে এমন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ আর কিছু আছে যারা ধর্মান্তরিত হয়ে এ পথে এগিয়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইন ইলেভেন হামলা
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছিল, তার একটা অংশের পরিকল্পনা হয়েছিল জার্মানির হামবুর্গে৷ নাইন ইলেভেন হামলার সঙ্গে জড়িত চার পাইলটের তিনজন সহ আরও ছয় ব্যক্তি হামবুর্গের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন৷ ছবিতে উপরে মাঝখানে যিনি আছেন তিনি আত্মঘাতী বিমান চালক মো. আত্তা৷ নীচে বামদিকে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি মুনীর এল-মোতাস্সাদেক, যাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/lno
সুটকেস বোমা
২০০৬ সালে লেবাননের শিক্ষার্থী জিহাদ হামাদ এবং ইউসুফ আল হাজদিব কোলন শহর থেকে হাম ও কোবলেনৎস শহরে যাওয়ার দুটি ট্রেনে সুটকেস বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল৷ তবে সেটা ব্যর্থ হয়েছিল৷ হামাদকে এখন বৈরুতে ১২ বছর জেল খাটতে হচ্ছে৷ আর আল হাজদিব জার্মানিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে৷
ছবি: AP
সারল্যান্ড সেল
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নর্থ রাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্য থেকে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়৷ তারা আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে জার্মান ও মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ এদের ১২ বছর ধরে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
২০১১ সালের মার্চে আরিদ উকা নামে এক জঙ্গি ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে গুলি চালিয়ে দুই মার্কিন সেনাকে হত্যা করে এবং হামলায় আরো দুই জন গুরুতর আহত হয়৷ উকার জন্ম কসোভোতে, সে বেড়ে উঠেছে জার্মানিতে৷ ফেসবুকে সে নিজেকে একজন ‘জিহাদিস্ট’ বলে উল্লেখ করেছে৷
ছবি: picture alliance / dpa
ড্যুসেলডর্ফের আল কায়েদা সেল
হালিল এ (মাঝে) কে আদালতে হাজির করা হয়েছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে৷ অভিযোগ ড্যুসেলডর্ফের সন্ত্রাসী সেলের সঙ্গে যুক্ত তিনি৷ এই সেলের এক সদস্যের দাবি তিনি কোনো এক সময় আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের দেহরক্ষী ছিলেন৷ এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কটি জার্মানির বেশ কয়েক জায়গায় বড় আকারের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ তবে ঐ সেলের চার সদস্যই এখন কারাগারে বন্দি৷
ছবি: dapd
সালাফিস্ট
জার্মানিতে সালাফিস্টদের সংখ্যা বাড়ছে৷ বর্তমানে এদের সংখ্যা অন্তত ৭,০০০ বলে ধারণা করা হয়৷ ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে তারা ইসলাম প্রচারের অংশ হিসেবে জার্মান ভাষায় অনুদিত কোরআন শরীফ বিনামূল্যে বিতরণ করে আসছে৷ তাদের লক্ষ্য আড়াই কোটি কোরআন বিতরণ৷ তবে সালাফিস্টদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব কম৷ প্রায় ৫০০ সালাফিস্ট সিরিয়া এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ঘুরে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Britta Pedersen
বন শহরে হামলা
২০১২ সালের ডিসেম্বরে বন এর কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনে একটি নীল রং এর ব্যাগে বোমা পাওয়া গিয়েছিল৷ এই হামলার পেছনে মার্কো জি এর হাত ছিল বলে জানা গেছে৷ ওলডেনব্যুর্গ এ বেড়ে ওঠা মার্কো ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইএস
২০১৩ সালের জুলাইতে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়া গিয়েছিলেন ক্রেসনিক বি৷ জার্মানিতে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দোষ প্রমাণিত হলে তার অন্তত চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷