হড়হড়ে, আঠালো সামুদ্রিক প্রাণী হিসেবেই জেলিফিশ পরিচিত৷ ডেনমার্কের এক বিশেষজ্ঞ সেই জেলিফিশ দিয়ে সুস্বাদু চিপস তৈরি করার কাজ করছেন৷ নাস্তা হিসেবে এই খাদ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
অচেনা এক খাদ্য খেয়ে মানুষের নানারকম প্রতিক্রিয়া শোনা গেল৷ কেউ বলেন, মুখে দিলে গলে যায়, অনেকটা মাছের মতো খেতে৷ কেউ বলেন লবণাক্ত৷ মুখে দিলে অবশ্য আলুর মতো খেতে লাগে৷ সুস্বাদু এই স্ন্যাক বা নাস্তা জেলিফিশ দিয়ে তৈরি৷ কয়েক দিন আগে ডেনমার্কের উপকূলে সেগুলি ধরা হয়েছে৷
কাঁচা অবস্থায়ও কি সেগুলি সুস্বাদু হতে পারে? গ্যাস্ট্রো-পদার্থবিজ্ঞানী মি টোরবর্গ পেডেরসেন বলেন, ‘‘এমন আঠালো কিছু আমি পছন্দ করি না৷ তবে সেগুলি দিয়ে সুস্বাদু রান্না করার পথ আমরা খুঁজে পেয়েছি৷''
থলথলে জেলিফিশ থেকে মচমচে চিপস তৈরিকরতে হলে সবার আগে তাদের শরীর থেকে পানি দূর করতে হয়৷ তার জন্য সেগুলি অ্যালকোহলে ভিজিয়ে রাখতে হয়৷ অ্যালকোহল জেলিফিশের শরীরের কাঠামো নষ্ট করে দেয়৷ ফলে শরীর ভেঙে পানি বেরিয়ে আসে৷ তবে অ্যালকোহলে ডোবানোর আগে পেডেরসেন নিশ্চিত হতে জেলিফিশের পেট পরীক্ষা করেন৷ সেটি খালি ও পরিষ্কার থাকতে হবে৷
সমুদ্রসুন্দরী জেলিফিশ
জেলিফিশের বেশ দুর্নাম আছে৷ বেশিরভাগ মানুষই একে ঘেন্না করেন, অনেকে আবার ভয়ও পান৷ কিন্তু এই সামুদ্রিক জীবটি আসলে ভয়ঙ্কর সুন্দর৷ এবং সাগরজুড়ে ভেসে বেড়াতে তাদের মস্তিষ্কেরও প্রয়োজন পড়ে না৷
ছবি: Stefan Ebersberger
মস্তিষ্কই নেই? তাতে কি!
প্রায় ৫০ কোটি বছর ধরে সাগরের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে জেলিফিশ৷ কোথায় যাচ্ছে, কোনদিকে যাচ্ছে, তা বোঝার জন্য যে বুদ্ধিটুকু থাকা দরকার, তাও নেই তাদের৷ থাকবেই বা কিভাবে? বুদ্ধির জন্য মস্তিষ্ক তো থাকতে হবে! জেলিফিশের তাও নেই৷ তবে তাদের জটিল স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক ছাড়াই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
সাগরের মেডুসা
গ্রিক পুরাণের এক পিশাচির নাম মেডুসা, চুলের বদলে যার মাথা ভর্তি সাপ৷ জেলিফিশও দেখতে অনেকটা সেরকম৷ মূল শরীর থেকে কিলিবিল করে বের হয়ে এসেছে সাপের মতো কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ৷ এজন্য তাদের বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয়েছে মেডুসোজোয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Heimken
হাত-পাওয়ালা ছাতা
আমরা অনেকেই জানি যে, মানুষের শরীরের ৬৩ শতাংশ পানি৷ এবার চিন্তা করে দেখুন, একটা জেলিফিশের শরীরের ৯৯ শতাংশই পানি৷ তাদের শরীরের একটা বড় অংশ দেখতে ছাতার মতো৷ এর সাথে থাকে হাত-পায়ের মতো শত শত কর্ষিকা৷ কিছু কিছু জেলিফিশের ক্ষেত্রে এই কর্ষিকাগুলো কয়েক মিটার লম্বা হয়ে থাকে৷ শিকার ও খাবার আহরণের জন্য জেলিফিশ এই কর্ষিকাগুলো ব্যবহার করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Zankl
এই মাছ, মাছ নয়
নাম জেলিফিশ হলেও, এরা কিন্তু মোটেও ফিশ বা মাছ নয়৷ জীববিজ্ঞানিরা তাদের বিশ্লেষণ করে অন্তর্ভূক্ত করেছেন স্নিডারিয়া পর্বে৷ এই পর্বের অন্যান্য জীবদের মধ্যে আছে প্রবাল এবং এনেমোন নামের এক ধরনের সামুদ্রিক শিকারি ফুল৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
দৈত্যাকার জেলিফিশ
বেশিরভাগ জেলিফিশই সাদা এবং স্বচ্ছ হয়৷ কিন্তু আছে কিছু ব্যতিক্রমও৷ এশিয়ান নমুরা জেলিফিশ খুব একটা রঙচঙে না হলেও, আকারে হয়ে থাকে বিশাল৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২ মিটার ব্যাসের এক একটি জেলিফিশের ওজন ২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে৷
সবসময় সমুদ্রের স্রোতের সাথে ভেসে চলায় বিজ্ঞানীরা জেলিফিশকে প্ল্যাঙ্কটন হিসেবেই বিবেচনা করেন৷ নিজে থেকে কোথাও যাওয়া জেলিফিশের কাজ না৷ মাঝে মাঝে অবশ্য ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি তুলতে পারে জেলিফিশ৷ তবে যে কোনো ছোট আকারের পোকাও এর চেয়ে জোরে হাঁটতে পারে৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
বিষাক্ত সুন্দরী
জলে ভেসে বেড়ানোর সময় রঙিন জেলিফিশকে দেখতে অসাধারণই লাগে৷ কিন্তু এদের অনেকেরই আছে ভয়ঙ্কর কর্ষিকা৷ ছবির লায়নস মেইন জেলিফিশ কর্ষিকা দিয়ে বিষ ঢুকিয়ে শিকারকে মেরেও ফেলতে পারে৷ প্ল্যাঙ্কটন, শ্যাওলা, ছোট ছোট কাঁকড়া এবং মাছের পোনা আছে জেলিফিশের খাবারের তালিকায়৷
ছবি: cc-by-sa/Kip Evans
আগুনের মতো জ্বলুনি
লায়নস মেইন জেলিফিশের সংস্পর্শে মানুষের চামড়ায় আগুনের মতো জ্বলুনি হয়৷ লাল লাল ফোসকাও পড়ে চামড়ায়৷ এই জেলিফিশের বিষ অবশ্য প্রাণঘাতী না৷ কিন্তু বক্স জেলিফিশ বা সি ওয়াসপ জেলিফিশের ক্ষেত্রে তা এতটা জোর দিয়ে বলা যায় না৷ প্রাণিজগতে সবচেয়ে বিষধরদের একটি এই জেলিফিশ৷
ছবি: picture-alliance/R. Wilms
স্পেশাল ইফেক্ট
সামান্য এই জেলিফিশেরও আছে অসামান্য ক্ষমতা৷ পেলাগিয়া নকটিলুকা নামের এক ধরনের জেলিফিশ সাগর উত্তাল হলে উজ্জ্বল আলো ছড়ায়৷ এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় বায়োলুমিনেসেন্স৷ অসাধারণ, তাই না?
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/H. Goethel
জেলিফিশও ঘুমায়!
জেলিফিশের কোনো মস্তিষ্ক নেই, নেই কোনো হৃদয়ও৷ কিন্তু তারপরও তারা ঘুমায়৷ অবাক কাণ্ড না? বিজ্ঞানীরা বলছেন ছবির এই ক্যাসিওপিয়া নামের জেলিফিশটি দিনের বেশিরভাগ সময়ই সাগরের তলদেশে কাটায়৷ রাতের সময়টা তারা ঘুমিয়ে কাটায় বলেও জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ এমনকি মানুষের মতোই তাদের জেগে উঠতেও সময় লাগে বেশ কিছুক্ষণ৷
ছবি: Caltech
10 ছবি1 | 10
স্বাস্থ্যবিধিসম্মত কারণে সেটাও কোনো সমস্যা নয়৷ কারণ, অ্যালকোহল শুধু জেলিফিশের মৃত্যু নিশ্চিত করে না৷ দুই দিন অ্যালকোহলে ভিজিয়ে রাখার পর পানি বেরিয়ে যায়৷ তখন রান্নার জন্য পরবর্তী প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব৷ পেডেরসেন বলেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, অ্যালকোহলের কারণে এটি দুধের মতো দেখতে হয়ে গেছে৷ ছুঁলে রবারের মতো মনে হবে৷''
এবার জেলিফিশ শুধু শুকাতে হবে৷ পেডেরসেন সাধারণ ওভেন ব্যবহার করেই সেই কাজ সারেন৷ এই ধরনের ওভেনে সাধারণত শুকনা ফল তৈরি করা হয়৷ ঘণ্টাখানেক পর অ্যালকোহল উবে গিয়ে জেলিফিশ চিপস প্রস্তুত হয়ে যায়৷ সেই চিপস কেমন খেতে? মি টোরবর্গ পেডেরসেন সেটি চেখে দেখে বলেন, ‘‘একটু লবণাক্ত ও তাতে সমুদ্রের স্বাদ পাওয়া যায়৷ তবে মুখের মধ্যে যে অনুভূতি হয়, তা সত্যি অনবদ্য৷ সামান্য মচমচে এই খাবার দ্রুত উধাও হয়ে যায়৷''