প্রচলিত উৎসে মাছ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন জেলেরা৷ এ পরিস্থিতি পরিবর্তনে এগিয়ে এসেছেন কেনিয়ার দুই ভাই-বোন৷ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা গড়ে তুলেছেন এক টেকসই মাছের খামার, যেখানে অপচয় কম হয়, লাভ হয় বেশি৷
বিজ্ঞাপন
লেক ভিক্টোরিয়ায় মাছের খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ করা হয়৷ পাঁচ বছর আগে দুই ভাইবোন গিলবার্ট এবং মিশেল মাবেও এই মাছের খামার শুরু করেন৷ বর্তমানে বছরে দু'শ টন মাছ চাষ করেন তাঁরা, যা সরাসরি হিমায়িত করা হয়৷ গিলবার্ট মাবেও এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা চাষের পর মাছের অপচয় রোধ করার চেষ্টা করি৷ বর্তমানে মাছ হিমায়িত করার সঠিক পদ্ধতি না থাকায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মাছ নষ্ট হয়৷ আমরা সেটা রুখতে মাছ হিমায়িত করার ব্যবস্থা পুনরায় তৈরি করছি৷''
মাছ ধরার নৌকা থেকে খদ্দের পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াতেই সমস্যা আছে৷ লেক ভিউ মৎস খামার সর্বাধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেমন এই বহণযোগ্য কুলার, যা ফিনল্যান্ডের এক স্টার্টআপ কোম্পানি তৈরি করেছে৷ মিশেল মাবেও বলেন, ‘‘এটার মধ্যে হিমায়িত করার এক পদ্ধতি রয়েছে যা পেটেন্ট করা৷ আমরা আমাদের প্রযুক্তি সহায়তাকারীদের ব্যবহার করছি৷ যা এই বাক্সকে সাতদিন পর্যন্ত ঠান্ডা রাখে৷ এতে থাকা সেন্সর কখন বাক্স খোলা হচ্ছে এবং বন্ধ করা হচ্ছে তা শনাক্ত করতে পারে এবং বক্সের তাপমাত্রা কত আছে তা সবসময় আমাদের জানায়৷ ফলে মাছে সজীবতা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি৷''
এমফাংগানো দ্বীপে তেলাপিয়ার পোনা উৎপাদন করা হয়৷ এরপর সেগুলো ভাসমান খাঁচায় স্থানান্তরের আগে পর্যন্ত পুকুরে রাখা হয়৷ মাবেও ভাইবোন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন৷ মিশেল একজন ডেটা অ্যানালিস্ট এবং গিলবার্ট চিকিৎসক৷ এক কল্যাণকর উদ্দেশ্যে তাঁরা মাছের খামার তৈরি করেছেন৷ এই প্রসঙ্গে মিশেল মাবেও বলেন, ‘‘লেক ভিউ ফিশারিজশুধু আমার পরিবারের মাছের খামার নয়৷ এটা আমাদের কমিউনিটির খামার৷ আমরা সেখান থেকেই এসেছি৷ আমরা আমাদের প্রান্তিক কমিউনিটির মানুষদের দেখতে চাই৷ তাদের উন্নয়ন চাই৷ তাদের ক্ষমতায়ন হোক তা চাই৷ আমরা চাই তারা তাদের টেবিলে খাবার নিশ্চিত করতে সমর্থ হোক৷''
এমফাংগানো দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল৷ ১৯৮০-র দশকে লেক ভিক্টোরিয়া থেকে মাছ রপ্তানি তুঙ্গে উঠেছিল৷ কিন্তু তখন টেকসই মাছচাষের কথা কারো মাথায় আসেনি৷ ফলে সময়ের সাথে সাথে পুরো লেকের মাছ ধরে ফেলা হয়েছে৷
আর মাছের অভাবে একসময় উপকূলের মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের প্লান্টগুলো বন্ধ হয়ে গেছে৷ এমফাংগানো দ্বীপের অনেক বাসিন্দাও তখন দারিদ্র্যদশায় পতিত হন৷ এখনো সেখানে খাওয়ার বা বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত মাছ নেই৷
লোহার খাঁচায় মাছ চাষ
উগান্ডার লেক ভিক্টোরিয়ার মাছের মজুদ গত দুই দশকে ব্যাপক মাত্রায় কমে যাওয়ায় ভুগতে হচ্ছে জেলেদের৷ চাহিদা মেটাতে বিকল্প মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন আফ্রিকার বড় এই হ্রদ অঞ্চলের মানুষেরা৷
ছবি: DW/Wambi Michael
চাহিদা বৃদ্ধি
লেক ভিক্টোরিয়ার উপকূল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের আমবারকোর্ট মার্কটে ‘নিল পার্চ’ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী বেটি পিমেরি৷ একটি বড় আকারের নীল পার্চ সর্বোচ্চ ২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে৷ যদিও এই মাছ লেক ভিক্টোরিয়াতে বর্তমানে অপ্রতুল৷ অবৈধভাবে মাছ শিকার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বাড়ায় তৈরি হয়েছে মাছের এই সংকট৷
ছবি: DW/Wambi Michael
খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ
মাছের সংকট মোকাবিলায় চীনা পদ্ধতির দ্বারস্থ হয়েছেন ওই এলাকার মানুষ৷ বুগুনগু এলাকার ‘এসওন ফিশ ফার্ম’-এ ভোক্তার চাহিদা মেটাতে ভিন্ন উপায়ে মাছ চাষ চলছে৷ প্রথমে এ ধরনের পুকুরে মাছকে বড় করা হয়, এরপর নেয়া হয় বড় পুকুরে৷ সবশেষে সেগুলোর স্থান হয় লেকের মধ্যে লোহার খাঁচায়৷ সুবিধামত আকার না হওয়া পর্যন্ত খাঁচার মধ্যেই মাছগুলোকে পালন করা হয়৷
ছবি: DW/Wambi Michael
পরিবেশের ঝুঁকি
২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সময়ে খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ চলে পরীক্ষামূলকভাবে৷ তখন থেকে হাজার হাজার খাঁচা রাখা হয় লেক ভিক্টোরিয়ার কেনিয়া ও উগান্ডা তীরে৷ এভাবে মাছ চাষের সময় রাসায়নিক দেওয়া খাবার ও মাছের মলে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন পরিবেশবাদীরা৷ অবশ্য বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে আরো উৎকৃষ্ট নীতি গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়তে চেষ্টা চালাচ্ছেন৷
ছবি: DW/Wambi Michael
বিনামূল্যের খাবার
শিকারি পাখির এমন উপস্থিতি এসওন ফিশ ফার্মে মাছের খাঁচা এলাকার পরিচিত দৃশ্য৷ খাঁচার মাছকে খাবার দেওয়ার সময় সেখান থেকে ছিটকে পড়া খাবার খেতে আসে অন্য মাছেরা৷ আর অন্য মাছগুলোক ধরে খায় এসব পাখি৷ একটি বড় খাঁচা ৫ হাজারের মতো মাছ ধারণ করতে পারে৷ আর বৃদ্ধি ভালো হওয়ায় পুরুষ মাছকে গুরুত্ব দেন চাষিরা৷
ছবি: DW/Wambi Michael
মাছ নিয়ে বাজারে
রাজধানী কাম্পালার উদ্দেশ্যে মাছ নিয়ে যেতে মেসেসে সমবায় সমিতির চাষিদের সতর্ক প্রস্তুতি নিতে হয়৷ কারণ রাজধানীর দূরত্ব সেখান থেকে ৮০ কিলোমিটার৷ মাছগুলোকে প্লাস্টিকে মোড়ানোর পর সেগুলোতে বরফ দেওয়া হয়ে থাকে৷
মাছ বিক্রেতারা কোনো কিছুকেই আবর্জনা হতে দেন না৷ উগান্ডার জিনজা এলাকার মেসেসে ল্যান্ডিংয়ে নিল পার্চের মাথা আর মেরুদণ্ড শুকাচ্ছেন সাফিনা নামুকোসে৷ অতীতে মাছের এই অংশগুলো ফেলে দেয়া হলেও বর্তমানে সেগুলোকে লবণ দিয়ে শুকিয়ে দক্ষিণ সুদান, রুয়ান্ডা, কঙ্গোসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়৷
ছবি: DW/Wambi Michael
7 ছবি1 | 7
মিশেল এবং গিলবার্ট মাবেও তাদের মাছের খামার লাভজনক করে এটির পরিধি বাড়াতে চাইছেন৷ জার্মানির জিআইজেড উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় তারা একটি নতুন, টেকসই মাছ হিমায়িতকরণের ওয়্যারহাউস গড়ে তুলছেন৷ গিলবার্ট মাবেও বলেন, ‘‘সূর্য এখানে প্রচুর আলো দেয়৷ ফলে কোল্ডরুম সচল রাখতে সূর্যকে ব্যবহার ভালো ব্যাপার৷ এতে করে লোডশেডিংয়ের সময়ও সমস্যা হবে না৷ আমার আসলে খুব ভালো লাগছে এটা জেনে যে কোল্ডস্টোরেজটিতে সৌরশক্তি ব্যবহার করা হবে, যা গ্রিড বিদ্যুতের উপর নির্ভরতা কমাবে৷''
মাবেওরা তাদের মাছের খামারটিকে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় খামারের রূপ দিতে চান৷ গিলবার্ট মাবেও বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি যে আমাদের জেলে সম্প্রদায় এটাকে লেক ব্যবহারের এক নতুন উপায় হিসেবে দেখবেন৷ লেক ভিক্টোরিয়া যে কতবড় সম্পদ – তাঁরা সেটা বুঝতে পারবেন৷''
তবে শুধুমাত্র তাঁরাই সুবিধাভোগী নন৷ এখন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতেও ডিনারে লেক ভিক্টোরিয়ার মাছ পাওয়া যাচ্ছে মাবেওদের কল্যাণে৷
গ্যোনা কেটেলস/এআই
টাটকা মাছ চেনা ও সংরক্ষণের উপায়
মাছে ভাতে বাঙালি বলে কথা! তবে মাছ টাটকা হলেই কেবল পুরো স্বাদ পাওয়া যায়৷ কিন্তু মাছ টাটকা কিনা, তা চেনার বা মাছ সংরক্ষণের উপায় জানা আছে তো?
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
বরফে রাখা টাটকা মাছ চেনার উপায়
মাছের নীচে যথেষ্ট পরিমাণ বরফ রয়েছে কিনা, ভালো করে দেখে নিন৷ বরফ কম হলে অনেক সময় দেখে বোঝা না গেলেও মাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাছের গন্ধ
টাটকা মাছে কিন্তু কখনো গন্ধ থাকেনা, তবে যদি তা সাগর বা পুকুরের পানির গন্ধ হয়, তাহলে অবশ্য আলাদা কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/imageBROKER
মাছের চেহারা
লাল ফুলকা, স্বচ্ছ চোখ আর মাছের গায়ের চকচকে আঁশ দেখে মাছ কিনুন৷ কারণ টাটকা মাছের চেহারা এমনই হয়৷
ছবি: Fotolia/HLPhoto
মাছটি একটু টিপে দেখুন!
আর হ্যাঁ, মাছ বিক্রেতার অনুমতি নিয়ে মাছের গায়ে আঙুল দিয়ে একটু টিপে দেখতে পারেন৷ যদি এতে একটু গর্তের মতো হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে মাছটি তেমন টাটকা নয়৷
ছবি: Bdnews24
মাছ বহন করবেন যেভাবে
দোকানদার যদি ‘ইনসিউলেটিং পেপার’ দিয়ে মাছ প্যাকেট করে দেয় তাহলে তো ভালোই৷ তবে নিজেও বাড়ি থেকে একটি ‘কুল ব্যাগ’ নিয়ে যেতে পারেন, তাহলে আপনার সাধের কেনা মাছটি বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত টাটকা থাকা নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রিজে রেখে দিন
টাটকা মাছ ভাজি বা রান্না করে খাওয়ার পর একটু বেচে গেলে তা ভালো করে ঢেকে ফ্রিজে রেখে দিন, তাহলে পরেরদিনও কিন্তু খেতে একই রকম স্বাদ লাগবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
বরফ দিয়ে রাখুন
টাটকা মাছ কেনার পর যদি কোনো কারণে রান্না করা না হয় তাহলে এমন ঠাণ্ডায় রাখতে হবে, যেন ফ্রিজের তাপমাত্রা নরমাল ফ্রিজের চেয়ে ঠাণ্ডা থাকে৷ অর্থাৎ ফ্রিজেই মাছের গায়ে বাড়তি বরফ দিয়ে রাখুন৷ এভাবে মাছ দু’দিন টাটকা থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Media for Medical
বেশিদিন মাছ তাজা রাখতে চাইলে
ডিপফ্রিজে রাখার জন্য বিশেষ ব্যাগে ভরে ডিপফ্রিজে রেখে দিন৷ তবে মনে রাখবেন যে ডিপফ্রিজে রাখার আগে অবশ্যই মাছের আঁশ, ফুলকা ইত্যাদি পরিষ্কার করে নেবেন৷ এতে মাছ জীবাণুমুক্ত থাকবে৷ মাছ ভালোভাবে ফ্রিজ করলে মাছের স্বাদ কয়েক সপ্তাহ পরেও একই রকম থাকে৷
ছবি: Jennifer Collins
ফ্রোজেন মাছ গরম পানিতে ভেজাবেন না!
তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে ডিপফ্রিজে রাখা মাছ কখনো গরম পানিতে ভেজাবেন না, যা অনেকেই করে থাকেন৷ এতে মাছের রসালোভাব কমে গিয়ে মাছকে শুষ্ক করে ফেলে এবং এতে মাছের আসল স্বাদ কমে যায়৷ তাই রান্নার কয়েক ঘণ্টা আগেই ডিপফ্রিজ থেকে বের করে বাইরে রেখে দিন, নিজে থেকেই মাছ গলে যাবে৷ তখন রান্না, ভাজি যাই করুন না কেন, মাছের পুরো স্বাদই পাবেন৷