এদিকে মার্কিন অস্ত্র কাজে লাগিয়ে রণক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ইউক্রেনের সেনারা৷
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আবার অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ আবার শুরু হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এখনো রাশিয়ার মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে ইউক্রেন৷ সে দেশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যতটা সম্ভব ক্ষতির চেষ্টা করছে রাশিয়া৷ মস্কো এমনকি ইউক্রেনের প্রেসি়ডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির হত্যার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ উঠছে৷ এমন সন্দেহের ভিত্তিতে চলতি সপ্তাহে দুই দেহরক্ষী অফিসারকে আটক করা হয়েছে৷ জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার সেই বিভাগের প্রধান সের্গি লেওনিদোভিচ রুড-কেও বরখাস্ত করলেন৷ ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ-র সূত্র অনুযায়ী রাশিয়া জেলেনস্কি-সহ একাধিক শীর্ষ নেতার হত্যার ষড়যন্ত্র করছে৷
ইউক্রেনের পূর্বে রাশিয়া সম্প্রতি নতুন করে কিছু জমি দখল করলেও যথেষ্ট অস্ত্রের অভাবে সেনাবাহিনী তেমন বাধা দিতে পারে নি৷ বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেন, মার্কিন অস্ত্র হাতে এলেই ইউক্রেন রাশিয়ার উদ্যোগ বন্ধ করে দেবে৷ কিয়েভ সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রোব্যার্তা মাৎসোলার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে আরো সৈন্য একত্র করে বড় আকারের সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ কিন্তু তাঁর মতে, রাশিয়া যেমনটা ভেবেছিল বাস্তবে তেমনটা ঘটছে না৷
অ্যামেরিকা থেকে অস্ত্র সরবরাহ আবার চালু হওয়ায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী কিছু সুফল পেতে শুরু করেছে৷ বৃহস্পতিবার রাতেও রাশিয়া দশটি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সব কটি হামলা বানচাল করতে পেরেছে৷ সেইসঙ্গে রাশিয়ার ভূখণ্ডে বিচ্ছিন্ন ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন৷ রাশিয়া কিছু ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করলেও এমন হামলার সার্বিক চিত্র অস্পষ্ট থাকছে৷ ইউক্রেন সাধারণত রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করায় পরিস্থিতি অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে৷
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার ক্ষমতা আরো জোরদার করতে জার্মানি বাড়তি উদ্যোগের ঘোষণা করেছে৷ ওয়াশিংটন সফরকালে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস বলেন, ইউক্রেনের জন্য জার্মানি অ্যামেরিকা থেকে তিনটি হাইমার্স দূর পাল্লার মিসাইল আর্টিলারি সিস্টেম কিনছে৷ মার্কিন সেনাবাহিনীর নিজস্ব ভাণ্ডারে সেই সরঞ্জাম মজুত থাকায় সেগুলির হস্তান্তর করতে বেশি সময় লাগবে না বলে আশা করা হচ্ছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন৷
ইউক্রেনের পঙ্গু সৈনিকদের নতুন জীবন
রাশিয়ার সঙ্গে সম্মুখসমরে অঙ্গ হারিয়েছেন অনেক ইউক্রেনীয় সেনা৷ কেমন করে তারা খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন এই নতুন জীবনে?
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
নতুন করে শেখা
ওলেকজান্দর রেভতিউখ (মাঝে) কোচের বক্সিং মিটে সজোরে আঘাত করছেন৷ ৩৩ বছর বয়সি এই ইউক্রেনীয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার বাঁ হাত ও বাঁ পা হারিয়েছেন৷ দেশটির দক্ষিণাংশে জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনে তার অঙ্গহানি হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘অবস্থা অনেকটা নবজাতকের মতো৷ সবকিছু শুরু থেকে শিখতে হচ্ছে৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অসংখ্য যোদ্ধার পঙ্গুত্ব বরণ
যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কতজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তার আনুষ্ঠানিক কোনো ড্যাটা নেই৷ তবে সংখ্যাটি ২০ থেকে ৫০ হাজার হবে বলে ধারণা মানবাধিকার সংগঠন প্রিন্সিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাসি নায়েম৷ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা একাকীত্বে ভোগেন এবং সামাজিক বৈষম্যের শিকার হন বলে জানান তিনি৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তি
মাইন বিস্ফোরণে দুই পা হারানো আন্দ্রিই পিলিপচুকের বয়স ২৮ বছর৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যখন আমার ডান পা কেটে নিলেন, আমি মন খারাপ করিনি৷ কারণ এটি এতটাই থেঁতলে গিয়েছিল, যে একে বাঁচানো সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু তারা যখন আমার বাঁ পাটিও কেটে নিলেন তখন আমি খুব কষ্ট পেয়েছি৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কোন পথে ভবিষ্যৎ?
সন্তান ঘরে ফেরার পর তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ওলেকজান্দর রেভিতুখের মা৷ রেভিতুখ আগে হাঙ্গেরিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতেন৷ যুদ্ধ শুরুর দুই মাসের মাথায় তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷ এখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রবীণ যোদ্ধাদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন৷ তার ভাবাদর্শ হলো, পথ কোথাও না কোথাও খোলা আছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত
অঙ্গ হারিয়েও কেউ কেউ যুদ্ধে ফেরত গেছেন৷ ২৮ বছর বয়সি ম্যাঙ্গো মৌরিপোলে একটি হাত হারান৷ এমনকি রাশিয়ানরা বন্দিও করেছিল তাকে৷ ফেরত এসে তিনি তার কমান্ডার ও কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সমর্থ হন যে, তিনি ডিউটিতে ফিরতে পারবেন৷ যদিও তিনি আর ট্যাঙ্ক চালাতে পারবেন না, একটি বায়োনিক হাত পাবার আশা তার৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
রোবোড্যাড
রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে চারটি হাত-পা-ই হারান ৪০ বছর বয়সি আন্তন ইভান্তসিভ৷ ‘‘যখন আমি বুঝতে পারলাম আমি আর কখনো পুরোপুরি আমার সন্তান ও স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারব না, এটা মেনে নেয়া কঠিন ছিল,’’ বলেন তিনি৷ তার বায়োনিক হাত পা আছে, যা দিয়ে তিনি দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন৷ তবে তখন থেকে তার সন্তানেরা তাকে ‘রোবোড্যাড’ বলে ডাকে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অল্প অল্প করে ফেরা
আহত হবার পর নৌসেনা রোস্তিস্লাভ প্রিস্তুপা আংশিকভাবে প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলেন৷ বন্ধুরা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করছেন৷ তিনিও মনে করেন, বাঁচতে হলে ফিরতে হবে৷ প্রতি বছর যুদ্ধের কারণে প্রতিবন্ধী যুদ্ধফেরত ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা বাড়ছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
নেটওয়ার্ক: বন্ধু ও পরিবার
নিঝিনে ওলেকজান্দর রেভিতুখ তার দাদীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন৷ তার পরিবার তাকে সহায়তা করছে৷ তিনিও মনে করেন, ফিরতে পারবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ তিনি এখন মোটিভেশনাল কোচ হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছেন৷ ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান৷