ক্রিভি রিহ শহরে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। বেসামরিক ভবনে হামলা রাশিয়ার।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সকাল থেকে ইউক্রেনের একাধিক অঞ্চলে লাগাতার মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। জেলেনস্কির ছোটবেলার শহর ক্রিভি রিহে একের পর এক মিসাইল ছোঁড়া হয়। ইউক্রেনের প্রশাসনের দাবি, কয়েকটি মিসাইল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সাহাযতায় ধ্বংস করা গেলেও সব মিসাইল আটকানো যায়নি। ক্রিভি রিহের একটি বাড়িতে এসে পড়ে একটি মিসাইল। বাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। সেখানেই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে এখনো একজন আটকে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনার পর টেলিগ্রামে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার জঙ্গি সেনা ফের ইউক্রেনের বেসামরিক ভবনে হামলা চালিয়েছে। সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এবার মস্কোর আবাসিক এলাকাতেও ড্রোন হামলা
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো মস্কোর আবাসিক এলাকায় ড্রোন হামলা হয়েছে৷ ইউক্রেন এই হামলা চালায়নি বলে দাবি করেছে৷ পুটিন বলছেন, এই হামলার মাধ্যমে রাশিয়াকে ভয় দেখানো ও উসকানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
প্রথমবার হামলা
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো মস্কোর আবাসিক এলাকায় ড্রোন হামলা হয়েছে৷ তবে এতে কেউ মারাত্মকভাবে আহত হননি বলে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷ তবে কয়েকটি আবাসিক ভবনে ‘সামান্য’ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তারা৷ এর আগে চলতি মাসে ক্রেমলিনের উপর দুটো ড্রোন রুখে দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: Kirill Kudryavtsev/AFP/Getty Images
৮টি ড্রোন
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মস্কোতে আটটি ড্রোন দিয়ে হামলা করা হয়৷ এর মধ্যে কিছু ভূপতিত ও কিছু ড্রোনের দিক পরিবর্তন করে দেয়া হয়৷ অভিজাত এলাকা দক্ষিণ-পশ্চিম মস্কোর দুটি উঁচু আবাসিক ভবনে দুটি ড্রোন ভেঙে পড়ে৷ আরেকটি, অন্য এলাকার এক ভবনে কিছুটা ক্ষতি করেছে৷ বাকিগুলো মস্কোর বাইরে পড়েছে৷ অবশ্য রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘বাজা’য় ২৫টির বেশি ড্রোনের কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: Lev Sergeev/REUTERS
অকল্পনীয়
মস্কোর স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বলছেন, তারা কখনও ভাবেননি যে রাশিয়ার রাজধানীতে এমন হামলা হতে পারে৷ মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিমের পেনশনভোগী তাতিয়ানা কালিনিনা এএফপিকে বলেন, ‘‘আমি ভেবেছিলাম এসব অনেক দূরে ঘটে৷ এগুলো আমাদের পর্যন্ত আসবে না৷ কিন্তু এখন হঠাৎ করেই এগুলো এত কাছে চলে এসেছে৷’’ ছবিতে মস্কোতে হামলা করা একটি ড্রোনের অংশ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Alexander Shcherbak/Tass/picture alliance
ইউক্রেনের অস্বীকার
ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ট কর্মকর্তা মিখাইলো পোডোলিয়াক মস্কোয় ড্রোন হামলার সঙ্গে কিয়েভের সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন৷ তবে ‘এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করে তারা আনন্দিত’ এবং ভবিষ্যতে এমন হামলা আরও হতে পারে বলে জানিয়েছেন৷ ছবিতে ড্রোন হামলার পর মস্কোর এক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মঙ্গলবার বলেন, মস্কোতে ড্রোন হামলার মাধ্যমে রাশিয়াকে ভয় দেখানো ও উসকানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ মস্কোর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেন তিনি৷ এদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বুধবার বলেন, মস্কোতে ড্রোন হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ‘নিন্দা না জানানোর’ বিষয়টি রাশিয়া খেয়াল করেছে৷
ছবি: Gavriil Grigorovvia/Kremlin/Sputnik via REUTERS
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
মস্কোতে ড্রোন হামলা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জ্য-পিয়ের বলেন, ‘‘আমরা রাশিয়ার ভেতরে হামলা সমর্থন করি না৷ দ্যাটস ইট৷ পিরিয়ড৷’’ ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেয়া দেশগুলোর অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে তাদের শর্ত হচ্ছে, এগুলো শুধু নিজেদের প্রতিরক্ষার কাজে এবং রাশিয়ার দখল করা এলাকা মুক্ত করতে ব্যবহার করা যাবে৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP
কিয়েভে টানা তৃতীয় দিন হামলা
মঙ্গলবার কিয়েভে রাশিয়া টানা তৃতীয় দিনের মতো ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে৷ ইউক্রেন বলছে, রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ৩১টির মধ্যে ২৯টি ড্রোন ভূপতিত করা হয়েছে৷ ছবিতে মঙ্গলবার কিয়েভে রাশিয়ার ড্রোন হামলার পর একটি ভবনে আগুন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kyiv City Military Administration/Handout/REUTERS
রাশিয়ার তেল শোধনাগারে ড্রোন হামলা
রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষ্ণসাগরের পাশে অবস্থিত তেল রপ্তানি করতে ব্যবহৃত দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল নভোরোসিস্ক বন্দর থেকে ৬৫-৮০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত দুটি তেল শোধনাগারে বুধবার ড্রোন হামলা হয়েছে৷ হামলার কারণে একটিতে আগুন ধরেছে, অন্যটিতে কোনো ক্ষতি হয়নি৷ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া এই তথ্য জানিয়েছে৷ মস্কোয় ড্রোন হামলার পরদিন এই হামলা হলো৷ উপরের ছবিটি ফাইল থেকে নেয়া৷
প্রেসিডেন্টের অন্যতম পরামর্শদাতা মিখাইলো পদলিয়াক লিখেছেন, প্রতিদিন এভাবেই বেসামরিক অঞ্চলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। গোটা বিশ্বের এবার একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। তাদের ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে হবে। মিখাইলোর কথায়, ''ভূরাজনীতি, আলোচনা, শান্তিপ্রস্তাব এই শব্দগুলি কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে বসে বলা যায়। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলা যায় না। ইউক্রেনকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়েই যুদ্ধে নেমেছে রাশিয়া।''
জাতিসংঘে ইউক্রেনের প্রতিনিধিও বলেছেন, যেভাবে রাশিয়া আক্রমণ চালাচ্ছে তা অন্যায়। সকলের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যুদ্ধ হলেও কখনো বেসামরিক অঞ্চলে আক্রমণ চালানো যাবে না।
উত্তর পূর্বের খারকিভ শহরেও আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। সেখানে ড্রোনের সাহায্যে আক্রমণ চালানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কিয়েভেও একাধিক রকেট হামলা চালানো হয়েছে বলে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে প্রতিটি রকেটই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে।
ইউক্রেনের এই অভিযোগ নিয়ে রাশিয়া অবশ্য এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। কেন তারা বার বার বেসামরিক পরিকাঠামোকে টার্গেট করছে, সে বিষয়েও কোনো মন্তব্য করা হয়নি।