1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জেলেরা ইলিশ ধরবেন কখন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ মে ২০১৯

চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে বাংলাদেশের সাগরে ৬৫ দিনের জন্য সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এর ফলে ইলিশ ধরেন এমন জলেরা বিপাকে পড়েছেন৷ তাঁদের  কোনো বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা এখনো করা হয়নি৷

ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Paul

মা ইলিশ ডিম পাড়ে নদীতে৷ সমূদ্রের এই মাছটি তাই প্রজনন মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে চলে আসে ডিম পাড়তে৷ এ কারণে প্রতি বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সব ধরনের ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে৷ এরপর ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির চেয়ে ছোট ইলিশ) ধরা নিষিদ্ধ থাকে৷ তবে এবার থেকে সাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ নতুন এই আদেশের ফলে ইলিশ ধরা জেলেরা বিপাকে পড়েছেন৷ তাঁদের কথা– এটাই সাগরে ইলিশ ধরার মৌসুম, এখন না ধরতে পারলে তাঁদের সারা বছর আর কোনো উপার্জন থাকবে না৷

এখন থেকে পরবর্তী ৫ মাস জেলেরা সাগরে ইলিশ ধরেন৷ আর সারা বছর সেই আয় দিয়ে চলেন৷ হঠাৎ করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও জেলেদের সহায়তার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷

সাগরে ৬৫ দিন মাছ না ধরার এই আদেশে বিক্ষুব্ধ হয়ে উছেছেন দেশের উপকূলীয় ১২ জেলার জেলে সম্প্রদায়৷ তাঁরা মাছ ধরার নৌকা নিয়ে নদীতে মানবন্ধন ছাড়াও সভা- সমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছেন৷ তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এই সময়ে ইলিশ ধারতে না পারলে আমরা খাবো কী?’’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে৷ কিন্তু এতদিন এটা বাস্তবায়ন করা হয়নি৷ এবার তা বাস্তবায়ন করা হলো৷ তবে স্থানীয় নদ-নদী এই নিষেধাজ্ঞা মুক্ত আছে৷

তিনটি কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে: রুহুল আমীন

This browser does not support the audio element.

উপকুলীয় জেলা বরগুনার সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিনটি কারণে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ প্রথমত, এই সময়ে সাগরে মাছের প্রজনন হয়৷ প্রজননের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা, প্রজননের পর ডিম, রেনু বা ছোট মাছ যাতে নিরপদ থাকে এবং বড় হতে পারে তার ব্যবস্থা করা৷ তৃতীয়ত, সাগরে মৎস সম্পদের একটি নিরাপদ পরিবশ তৈরি করা৷ আর পরোক্ষ একটি কারণ হলো, এই সময়ের জন্য হলেও সাগর দূষণমুক্ত রাখা৷’’

তবে তিনি জানান, ‘‘এই সময়টি অন্য মাছের প্রজনন মৌসুম হলেও ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম নয়৷ সাগরে ইলিশ ডিমও দেয় না৷’’

বাংলাদেশ ফিশিং বোট মৎসজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অক্টোবর-নভেম্বরে ২২দিন আমাদের ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আছে৷ তখন আমরা ইলিশ ধরি না৷ সেটাই প্রজননের সময়৷ এরপর আরো ৮ মাস আমরা ছোট ইলিশ (জাটকা) ধরি না৷ এখন থেকে পরবর্তী ৫ মাসই সাগরে ইলিশ ধরার সময়৷ এখন ইলিশের প্রজননের সময়ও নয়৷ বলা হচ্ছে, এখন মাছ ধরলে সাগরের অন্য মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হবে৷ পোনা মাছ ও রেণু জালে আটকা পড়ে মারা যাবে৷ কিন্তু আমরা ফিশিং বোটে যে জাল ব্যবহার করি তার ফাঁস ৪ ইঞ্চি৷ এতে কোনোভাবেই ছোট মাছ আটকায় না৷ আমাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে৷ জেলেরা সাগরে যাওয়ার জন্য নৌকা প্রস্তুত করেছে৷  ঋণ নিয়েছে৷ এখন হঠাৎ এই নিষেধাজ্ঞা তাঁদের কাছে গজবের মতো৷ এটা অনেকেই মানবে না৷’’

হঠাৎ এই নিষেধাজ্ঞা গজবের মতো: গোলাম মোস্তফা

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘সাগরে আমাদের ফিশিং বোটের বাইরে ২৫৫টি ফিশিং জাহাজ আছে৷ তারা বেহুন্দি জাল দিয়ে সব ধরনের মাছ ধরে৷ তাঁদের জালের ফাঁস এক ইঞ্চি৷ তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা হতে পারে৷ আর এই সময়ে কিন্তু ভারতের জেলেরা ইলিশ মাছ ধরবে৷ তাহলে আমরা পারব না কেন?’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারের বিকল্প সহায়তা নেই৷ কিন্তু জেলেরা এখন এটা চায় না৷ তাঁরা ভিক্ষা নেবে না৷’’

বরগুণা জেলার সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. রহুল আমীন স্বীকার করেন, ‘‘এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কিছুটা জটিলতা আছে৷ কারণ, যাঁরা ইলিশ ধরেন, তাঁরা অন্য মাছ ধরেন না৷ আর এখন সাগরে ইলিশ ধরার মৌসুম শুরু হবে৷ তাই কোনো ধরনের ফিশিং বোট তা নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে৷ তবে এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়৷’’

জেলেদের কথার যুক্তি আছে: ড. রহমান

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ৬৫ দিন যদি সাগরে অন্য মাছের সাথে ইলিশ ধরাও বন্ধ থাকে, তাহলে জেলেদের জন্য আসলেই সমস্যা, কারণ, বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে ৮ মাস ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে৷ তাছাড়া এটা ইলিশের প্রজনন মৌসুমও নয়৷ তাই এটা নিয়ে আলোচনা চলছে যে, সাগরে অন্য মাছের প্রজনন নিরাপদ রেখে এই সময়ে ইলিশ ধরা কিভাবে অব্যাহত রাখা যায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘জেলেদের কথায় যুক্তি আছে৷ তাঁদের যে জাল তাতে মাছের পোনা বা রেণু  আটকাবে না৷ আর যতদিন বন্ধ থাকে ততদিন জেলেদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে হবে৷’’

পৃথিবীর সব দেশেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকে: আশরাফ আলী খান

This browser does not support the audio element.

সাগরে ইলিশ ধরেন এরকম সমিতিভুক্ত জেলে ৬৮ হাজার৷ কিন্তু বাস্তবে তাঁদের সংখ্যা আরো বেশি৷ মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান জেলেদের যুক্তি মানতে রাজি নন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৮ মাস জাটকা ধরা বন্ধ থাকে, তখন তো তাঁরা বড় ইলিশ ধরতে পারেন৷  পুরোপুরি বন্ধ থাকে মাত্র ২২ দিন৷ আর সমূদ্রের মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও বাড়াতে  ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এ সময়ে তাঁরা নদীতে মাছ ধরতে পারবে৷ সারা বছরই তো ইলিশের মৌসুম৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘পৃথিবীর সব দেশেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকে৷ ভারতেও থাকে৷ আমাদের সাথে হয়ত সময়ের কিছুটা পার্থক্য থাকে৷’’

এই সময়ে ১২টি জেলার চার হাজারের বেশি জেলে পরিবারকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান৷ এটা দ্রুতই দেয়া শুরু হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ