জেল খাটা থেকে বেঁচে গেলেন নাদিয়া
২৬ আগস্ট ২০১০নাদিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল গুরুতর৷ জেনেশুনে এইডস ছড়িয়েছেন তিনি৷ অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে আদালতেও৷ তবে নাদিয়া ক্ষমা চেয়েছিলেন৷ আর প্রতিপক্ষের আইনজীবীও লঘু শাস্তিতে অনাপত্তি জানিয়েছিলেন৷ এই সব বিষয় বিবেচনায় করেই, আজ বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছে ডার্মস্টাটের আদালত৷ তিনটি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ২৮ বছর বয়সি নাদিয়াকে৷ একটি হল, শারীরিক ক্ষতিসাধন৷ অন্য দুটি হল, ক্ষতি সাধনের চেষ্টা৷ রায় হল - দুই বছরের কারাদণ্ড, তবে স্থগিত থাকবে তা৷ তাঁকে এখন ৩০০ ঘণ্টা সেবামূলক কাজ করতে হবে, যেতে হবে কাউন্সেলিং-এ৷ এর মানে হলো, এই ধরনের অপরাধ প্রথমবারের মতো করায় নাদিয়া করুণা পেলেন৷ একই অপরাধ পরে করলে নাদিয়াকে ঐ দণ্ডও ভোগ করতে হবে৷ আর তাঁর ক্রিমিনাল রেকর্ডে এর দাগ মুছবে না, কোনোদিনই৷
নাদিয়া নিজে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত৷ আর অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক গড়ে তিনি তা ছড়িয়েছেন অন্য এক ব্যক্তির দেহে৷ এই অপরাধের সাজা হতে পারত ১০ বছর কারাবাস৷ কিন্তু শুনানিতে নাদিয়া নিজেই স্বীকার করেন অপরাধের কথা৷ বলেন, ‘‘আমি খুবই দুঃখিত৷ যদি সেই ঘটনা ঘটার আগে ফিরে যেতে পারতাম, তাহলে এটা হতে দিতাম না৷ কিন্তু তা তো আর সম্ভব নয়৷''
নাদিয়ার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তাঁর আইনজীবী আদালতে আবেদন রেখেছিলেন - তাঁকে যেন সাজা দিলেও, তা স্থগিত রাখা হয়৷ তা মেনে নিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও৷ তিনি সুপারিশ করেছিলেন, দুই বছরের সাজা এবং তা স্থগিতাদেশসহ৷ আদালত এই কথা রেখেছেন৷ রায়ের পর নাদিয়া সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘বড় ভুল করেছি আমি৷ এই ভুলের বোঝা আমাকে বাকি জীবনেও টেনে যেতে হবে৷''
১৯৯৯ সালে এইচআইভি'তে আক্রান্ত হন নাদিয়া৷ সেই অবস্থাতেই তিনজনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়েন তিনি, তাঁদের নিজের অবস্থার কথা না বলেই৷ এর একজনের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এইডস৷ কেন এমনটা করলেন - জানতে চাওয়া হলে নাদিয়ার উত্তর এলো, ‘‘ভয়, ভয়েই কাউকে বলতে পারিনি৷ আমি এইচআইভি আক্রান্ত, এটা জানার পর সবাই যদি আমায় এড়িয়ে চলে ?''
এই ঘটনার জন্য নাদিয়াকে অনেকে প্রতারক বলে অভিহিত করলেও, এইডসবিরোধী সংগঠনগুলো নাদিয়ার পক্ষেই দাঁড়িয়েছে৷ তারা বলছে, নিরাপদ যৌন সম্পর্ক নিরাপদ রাখার দায়িত্ব, যে এইডস আক্রান্ত তার একার নয়৷ তাই শুধু নাদিয়াকে দোষ দেওয়া যায় না, দায় আছে অন্য পক্ষেরও৷ নাদিয়ার ধারণা, ১৭ বছর বয়সে রক্ত পরীক্ষার সময় তাঁর দেহে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে৷
ফ্রাঙ্কফুর্টে বসবাসরত নাদিয়ার মা জার্মান হলেও বাবা মরক্কোর৷ অন্য তিন তরুণীর সঙ্গে নাদিয়া ২০০০ সালে গড়ে তুলেছিলেন ‘নো এঞ্জেলস' ব্যান্ড৷ এটি শুরুতেই বেশ জনপ্রিয়তা পায়৷ তবে তিন বছরের মাথায় ভেঙে যায় এই ব্যান্ড৷ ২০০৭ সালে ব্যান্ডটি নতুন করে আবার যাত্রা শুরু করলেও আগের জনপ্রিয়তায় পৌঁছতে পারেনি৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ