সহজে বিচলিত হন না, হলেও তা প্রকাশ করেন না৷ কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পর পর কয়েকটি বৈঠকের পর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বললেন, কারো উপর ভরসা করলে চলবে না, ইউরোপকে তার দায়দায়িত্ব সামলাতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবার পর জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেল বাভেরিয়ায় এক তাঁবুর মধ্যে জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন৷ আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে তিনি ইউনিয়ন শিবিরের হয়ে প্রচারে মন দেবেন, এমনটাই ভেবেছিলেন উপস্থিত প্রায় ২,৫০০ দর্শক৷ কিন্তু গত কয়েক দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বার বার সাক্ষাতের পর তিনি তাঁর মনের কথা খুলে বললেন৷ বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলাসহ একাধিক বিষয়ে ট্রাম্প বেঁকে বসায় তিনি চরম বিরক্ত৷ ন্যাটো, ইইউ ও জি-সেভেন মঞ্চে ঐকমত্যের পথে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন পর পর বাধা সৃষ্টি করায় জোটসঙ্গী হিসেবে অ্যামেরিকার নির্ভরযোগ্যতা এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গেছে – পরোক্ষভাবে সেটাই বুঝিয়ে দিলেন ম্যার্কেল৷
সরাসরি ট্রাম্পের উল্লেখ না করেই ম্যার্কেল বলেন, একটা সময় ছিল যখন অন্যদের উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যেত৷ গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতার পরতাঁর মনে হচ্ছে, এখন আর সেটা সম্ভব নয়৷ এই অবস্থায় ইউরোপীয়দের সামনে একটি পথ খোলা আছে৷ অর্থাৎ নিজেদের দায়দায়িত্ব নিজেদের হাতেই তুলে নিতে হবে৷ এ প্রসঙ্গে তিনি ব্রেক্সিটের পর জোটসঙ্গী হিসেবে ব্রিটেনের দুর্বল অবস্থানেরও উল্লেখ করেন৷ নাম করে অ্যামেরিকা ও ব্রিটেন সম্পর্কে ম্যার্কেল বলেন, এই দুই দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে৷
জার্মানির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী এসপিডি দলের মার্টিন শুলৎস-ও এ বিষয়ে ম্যার্কেলের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন৷ তিনি বলেন, ইউরোপই এই সংকটের জবাব হতে পারে৷ ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সব স্তরে আরও নিবিড় সহযোগিতাই হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি জবাব৷ উল্লেখ্য, ট্রাম্প সম্পর্কে শুলৎসের মনোভাব কারো অজানা নয়৷
অ্যামেরিকা আর তার জোটসঙ্গীদের নেতৃত্ব দিতে পারছে না, ম্যার্কেলের মতো নেতার মুখে এমন মন্তব্য শুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসন আরও চাপের মুখে পড়ছে৷
বন্ধুদের কাছে শত্রুর মতো এলেন ট্রাম্প
নির্বাচনি প্রচারে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর তোপ দেগেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের প্রতি এমন বৈরি মনোভাব দেখাবেন, তেমনটা কেউ ভাবতে পারেনি৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
সৌদি আরবে স্বাচ্ছন্দ্য
নির্বাচনি প্রচারে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কড়া কথা শোনালেও প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়ে সে দেশকে বিশেষ মর্যাদা দিলেন ট্রাম্প৷ সেখানকার নেতাদের সঙ্গে তাঁকে বেশ খোশমেজাজে দেখা গেছে৷ ইসরায়েলেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ
অ্যামেরিকায় নির্বাচনি প্রচারের সময় পোপ ফ্রান্সিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প পরস্পরের সম্পর্কে বেশ কটু কথা বলেছেন৷ তাই ভ্যাটিকান সিটিতে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতকে ঘিরে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল৷ সদা হাস্যময় ও রসিকতার জন্য পরিচিত পোপ ফ্রান্সিসের মুখচ্ছবিই তাঁর মনোভাব প্রকাশ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Vucci
ন্যাটো সম্মেলনে কড়া সুর
ভ্যাটিকান থেকে ব্রাসেলসে পৌঁছেই বদলে গেল ট্রাম্পের কণ্ঠ ও শরীরের ভাষা৷ ন্যাটো শীর্ষ নেতাদের সামনে এই সামরিক জোটের প্রতি সংহতি পুনর্ব্যক্ত করার বদলে তিনি ‘বকেয়া চাঁদা’ ও ‘মার্কিন করদাতাদের স্বার্থ’ নিয়ে সোচ্চার হয়ে পড়লেন৷
ছবি: Getty Images/M.Ngan
সৌজন্যবোধের অভাব
ন্যাটোর সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও নেতাদের ভিড়ে নিজেকে জাহির করতে পিছপা হননি ট্রাম্প৷ সবাইকে পেছনে ফেলে, প্রয়োজনে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে সামনের সারিতে পৌঁছতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Dunham
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অবজ্ঞা
রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইইউ সম্পর্কেও তাঁর অবজ্ঞা এখনো দূর হয়নি৷ মুক্ত বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা, রাশিয়ার দৌরাত্ম্যের মতো বিষয় সম্পর্কে ইইউ’র মনোভাব তিনি পছন্দ করেন না৷ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পর সেকথা সাফ জানিয়েও দিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
জার্মানির প্রতি বিদ্বেষ
‘জার্মানরা খারাপ, খুবই খারাপ’ – ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকারের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন৷ অ্যামেরিকা ও জার্মানির মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ট্রাম্প শুরু থেকেই বিরক্ত৷ তবে মুক্ত বাণিজ্যের উপকার ও সার্বিক সুবিধার বদলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে চান তিনি৷
ছবি: Getty Images/M.Medina
জি-সেভেন বৈঠক
ন্যাটো ও ইইউ-র অনেক নেতার সঙ্গে আবার দেখা জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে৷ সেখানেও অ্যাজেন্ডা নিয়ে খুশি নন ট্রাম্প৷ বাকিদের সঙ্গে মতপার্থক্য বজায় রেখেই ট্রাম্প আবার ফিরে গেলেন ওয়াশিংটন৷