1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জোটের নেপথ্যে ক্ষমতার বলয় আর শক্তির ভারসাম্য'

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ জুন ২০২৪

আঞ্চলিক, বৈশ্বিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক - এত জোট থাকলেও সব কি খুব কার্যকর?

ব্রিকস
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান বলেন, জোট গঠনের দুইটি কারণ। একটি হলো রাজনৈতিক প্রভাব বলয় তৈরি করা,আরেকটি হলো শক্তির ভারসাম্য, সেটা অর্থনেতিক বা সামরিক জোট যেটাই হোক ছবি: Themba Hadebe/AP/picture alliance

জোটের ভূমিকা, সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান।

ডয়চে ভেলে: বিশ্বে রাষ্ট্রগুলোর নানা জোট। রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক। যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক, রাশিয়া-চীনকেন্দ্রিক। এক সময় ন্যাটোর বিপরীতে ওয়ারশ জোট ছিল। এখন আর ওয়ারশ নেই। এই জেটগুলোর ভূমিকা কী? কী কাজে লাগে?

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান: জোট গঠনের দুইটি কারণ। একটি হলো রাজনৈতিক প্রভাব বলয় তৈরি করা,আরেকটি হলো শক্তির ভারসাম্য। যেসব রাষ্ট্র শক্তিতে পিছিয়ে আছে, তারা শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে জোট করে কমন যে শত্রু তার সঙ্গে শক্তির ভারসাম্য তৈরি করতে চায়। সেটা অর্থনেতিক বা সামরিক জোট যেটাই হোক। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে যাই তাহলে ১৪৯৪ সালে স্পেন এবং পর্তুগালের মধ্যে প্রথম সামরিক জোট হয়েছ। এর ধারাবাহিকতায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে, পরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, পরে । আবার নাইন ইলেভেনের পরে জোট তৈরির প্রবণতাগুলো তৈরি হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এবং পরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তো মিত্র শক্তি ছিল। পরে তারা আলাদা জোটের দিকে গেল। এখানে জোটের কোন প্রবণতা কাজ করেছে?

স্নায়ু যুদ্ধকালীন সময় বিশ্ব রাজনীতি একরকম ছিল। তখন এক ধরনের বাস্তবতা ছিল। দুই মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব রাজনীতি। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে কম্যুনিস্ট বিশ্ব। সেই জায়গায় একটা পরিবর্তন আসে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর। তখন ওয়ারশ প্যাক্টের অস্তিত্ব আর থাকলো না। তখন ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।কিন্তু রাশিয়াতে তখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা ভবিষ্যৎ হুমকি হিসেবে দেখেছেন তাই তারা ন্যাটোর সম্প্রসারণকে প্রাসঙ্গিক হিসবে দেখেছেন। মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউপোপেও দেখা গেল কসভো এবং যুগোস্রাভিয়ায় ভাঙনের পর গৃহযুদ্ধ এবং গণহত্যাও দেখলাম। সেখানে ন্যাটো তার ভূমিকা রাখলো।  এখন যেটা দেখা যাচ্ছে রাশিয়া এবং চীনকে কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা একটা কম্পিটিটিভ পাওয়ার বা প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করছেন। আমরা ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের মধ্য দিয়েও দেখলাম ন্যাটো আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলো। তুরস্ক বা গ্রিসও এখন ন্যাটোর সঙ্গে থাকতে চায়। এখন যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব যাচ্ছে তাতে কিন্তু রাশিয়া এবং চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। ফলে জোট এবং পাল্টা জোট তৈরির প্রবণতা আরো বাড়ছে। আমরা সম্প্রতি দেখলাম রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অনেকগুলো চুক্তি হলো। ইউক্রেনে রাশিয়া যে বোমাগুলো ব্যবহার করছে তা উত্তর কোরিয়ার বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগেও অভিযোগ করে আসছে। গত কয়েকদিনে তারও প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তর আমরা দেখলাম।

নাইন ইলেভেনের পর জোট তৈরির প্রবণতা তৈরি হয়েছে: তানজিমউদ্দিন

This browser does not support the audio element.

রাষ্ট্রের ভাবনার বাইরে, নন-স্টেট অ্যাক্টরের দিক থেকে জোটের প্রবণতা কতটুক?

নাইন-ইলেভেনের আগ পর্যন্ত এটা রাষ্ট্রকেন্দ্রিকই ছিল। যারা প্রভাবশালী রাষ্ট্র , কারা কমন শত্রু সেভাবে জোট তৈরি হতো। কিন্তু নাইন-ইলেভেনে আল কায়েদা নেটওয়ার্কের হামলা দেখলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই আক্রমণটা কোনো রাষ্ট্র করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর থেকেই আক্রমণ করলো।  এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেটা করছে সেটা হলো- হাব অ্যান্ড স্পোক সিকিউরিটি নেটওয়ার্ক ,   যাদেরকে তারা ফেইলড স্টেট হিসেবে চিহ্নিত করছে । এই কাউন্টার টেরোরিজমের ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গেও কিন্তু জোটবদ্ধ হচ্ছে। ওয়ার অন টেররের পরবর্তীতে যে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের‘ কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ফেইলড স্টেটগুলোর ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ে দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক জোটের মাধ্যমে সাহায্য করছে।

আমরা তো এ পর্যন্ত সামরিক জোট নিয়ে কথা বললাম। কিন্তু আরো তো নানা ধরনের জোট  ও প্রক্রিয়া আছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক।

এই সামরিক জোটগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরির ক্ষেত্রে অর্থনেতিক জোটগুলো বড় ধরনের প্রভাব তৈরি করতে পারে। চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ দেখছি। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জোটের মধ্যে যারা আছে, এমনকি ইটালি, অষ্ট্রেলিয়া তারা কিন্তু এই অর্থনেতিক জোট নিয়ে দ্বিধান্বিত। চীনের যেভাবে অর্থনেতিক ক্ষমতা বা প্রভাব বাড়ছে, তাতে তারা চীনের কাছ থেকে সুবিধা নিতে চীনকেও কাছে টানার চেষ্টা করছে। সামরিক জোটগুলোর মধ্যেও কিন্তু অনাস্থা তৈরি হচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ কি এই বিশ্ব পরস্পরবিরোধী জোট ব্যবস্থার ফল? আর তাতে ইউক্রেনের কী পরিণতি হচ্ছে?

কোল্ড ওয়ার শেষ হওয়ার পরে বিশ্ব ব্যবস্থার যে একটা আকৃতি পাওয়ার কথা ছিল, সেটা কিন্তু পায়নি। অর্থনেতিক দিক দিয়ে চীন শক্তিশালী হওয়ার কারণে তার কিন্তু গ্লোবাল অ্যাম্বিশনও বেড়েছে। রাশিয়া ঐতিহ্যগতভাবে একটা পরাশক্তি। তারাও তাদের অবস্থানটা ফিরিয়ে আনতে চায়। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর এমনকি ৯০-এর দশকের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে একটা একক আধিপত্য, সেটাকে কিন্তু রাশিয়া-চীন এখন চ্যালেঞ্জ করছে। এখন একটা ট্রানজিশন হচ্ছে। ইইক্রেন রাশিয়া যুদ্ধও তার অংশ। এরপর কী হবে সেটা আসলে নির্ভর করছে কারা  তাদের অর্থনৈতিক শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে বা এগিয়ে নিতে পারে। এটা আরো বড় সংঘাতে যাবে কিনা তা-ও বলা যায় না, কারণ, এই বৈপরিত্যের মধ্যেও অর্থনৈতিক নির্ভরতা আছে। চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও পারস্পরিক অর্থনেতিক নির্ভরতা আছে।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি- আরব, ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন।,গাজায় হামলা।-এটাও কি জোটবদ্ধতার প্রতিফলন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ, সেটা বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাভাবিকভাবে ইরায়েলের পক্ষেই থাকতে হচ্ছে। একইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলারের যে উত্থান এবং ইউরোপের যে অভিজ্ঞতা, তাতে এক ধরনের বাস্তবতা বিরাজ করছে। ফলে জন মানুষের আকাঙ্খার সাথে তাদের রাষ্ট্রের হিসাব নিকাশের সাথে মিলছে না

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটের শিকার। আর রোহিঙ্গারা তাদের আবাস ভূমি থেকে বিতাড়িত। রোহিঙ্গাদের এই সংকট থেকে দিন দিন বিশে্বর ফোকাস সরে যাচ্ছে। এটাও কি বিশ্ব জোট রাজনীতির ফল?

ইউক্রেন-রশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর সামরিক ব্যয় বেড়ে গেছে। তার ফলে মনযোগটা অন্যদিকে চলে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এখনো রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে। কিন্তু এখন বার্ডেনটা বেড়ে যাওয়ায় মনোযোগ কমছে। তবে মিয়ানমারের এখন যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, সেই বাস্তবতায় মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশগুলোকে কেন্দ্র করে।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশের একটা গুরুত্ব আছে। এখানে নানা আঞ্চলিক জোট আছে। আবার সামরিক জোটসহ বিভিন্ন জোটকে শক্তিধর দেশগুলো টানতে চায়। সেখানে বাংলাদেশের পলিসি কী হওয়া উচিত?

দক্ষিণ এশিয়ার একটা ইন্টারেস্টিং বৈশিষ্ট্য আছে। বিশ্ব রাজনীতিতে যে মেরুকরণ হচ্ছে, তাতে রাশিয়া, চীন, ভারত- এদেরকে আপনি একটা মেরুতে ফেলতে পারেন। আবার দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির ক্ষেত্রে এটা আবার ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একই বলয়ে অবস্থান করছে। এখানে রষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। বাংলাদেশের জন্য এটা নতুন ধরনের সংকট। বাংলাদেশের অবস্থান খুব সহজ না। বাংলাদেশে এখন যারা ক্ষমতাসীন আছেন, তারা বৈধতার জন্য যে বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটা হলো, ডেভেলপমেন্ট। বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। আর এজন্য তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে বিদেশি অর্থায়নের ওপর। আমরা যদি  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতকে বিবেচনায় রেখে বলি যে, বাংলাদেশের অবস্থান কোন দিকে যাবে তা নির্ভর করছে কে বেশি ইনসেনটিভ অফার করতে পারবে বাংলাদেশকে, পাবলিক গুডস অফার করতে পারবে বাংলাদেশকে- তার ওপর। বাংলাদেশ তার দিকেই ঝুঁকবে আসলে। সেটা যে চীনকেন্দ্রিক হবে না তা বলা যায় না। চীনের অর্থনেতিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিলে সে বাংলাদেশকে পাবলিক গুডস বেশি অফার করতে পারবে। সেটা আসলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে সময়ই তা বলে দেবে।

আরব লীগ । আবার মুসলিম উম্মাহর জন্য ওআইসি। আফ্রিকায় আঞ্চলিক জোট আছে। ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশগুলোতে জোট আছে। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আছে ব্রিকস। আবার কোয়াড আরেকটি মার্কিন সামরিক জোট। দক্ষিণ এশিয়ায় সার্ক আছে। দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ায় আছে আসিয়ান। আবার আছে জি-২০।   এর মধ্যে সাকের্র মতো জোটগুলোর ভবিষ্যৎ কী বা তারা কী করতে পারবে?

জোটগুলো কার্যকর হওয়া নির্ভর করে একটি নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর। ন্যাটে বা ইউরোপীয় ইউনিনের কথা যদি বলেন, সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির যে নেতৃত্ব, তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আফ্রিকার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অন্যদিকে আমরা যদি সার্ক  বা বিমসটেকের কথা ধরি, সার্কের ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে অনাস্থার সম্পর্ক, তাতে ওই ধরনের নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। এই ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকলে ওই জোট আসলে ফলপ্রসূ হয় না। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে আমরা জানি যে, দেশগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়নি। ফলে যতই জোট হোক, শেষ পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই অনুঘটক হয়ে উঠছে। যেমন ভারত-বাংলাদেশ, ভারত-নেপাল, ভারত শ্রীলঙ্কা।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ