1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জোড়া পরীক্ষার সাঁড়াশিতেই কি ডাক্তারি পড়ুয়াদের মৃত্যুফাঁদ?

পায়েল সামন্ত
৪ আগস্ট ২০২২

একের পর এক ডাক্তারি পড়ুয়ার আত্মহত্যা পশ্চিমবঙ্গে৷ বাড়তি পরীক্ষার জন্যই কি আরো চাপে তারা? কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও কেন কমছে না মানসিক চাপ?

পশ্চিমবঙ্গে মেডিকাল শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্কশপ
পশ্চিমবঙ্গে মেডিকাল শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্কশপছবি: Payel Samanta/DW

একের পর এক আত্মহত্যা

গত সোমবার আত্মঘাতী হন কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়া প্রদীপ্তা দাস৷ মেডিকেলের চূড়ান্ত বর্ষের এই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়৷ ৩০ জুলাই এনআরএস মেডিকেল কলেজের ছাত্র অনুপ ঢেলিয়া আত্মহত্যা করেছেন৷ হাওড়ায় নিজের বাড়ির ছাদ থেকে তিনি ঝাঁপ দেন৷ সপ্তাহ তিনেক আগে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের আর এক ছাত্রী নিজের বাড়িতে আত্মঘাতী হন৷ কেন ক্রমশ বাড়ছে ডাক্তারি পড়ুয়াদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা?

সমাজের চোখে এখনো সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা চিকিৎসকের৷ তাই উচ্চ মেধাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশের লক্ষ্য থাকে ডাক্তার হওয়া৷ এই ডাক্তারি পড়ার সময় তাঁরা এতটাই মানসিক চাপে পড়ছেন যে তাঁদের আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হচ্ছে৷ কোনো ব্যক্তিগত কারণ থাকতেই পারে, তবে ঘনিষ্ঠ মহলের বয়ান অনুযায়ী পড়াশোনা সংক্রান্ত চাপ এই চূড়ান্ত পদক্ষেপের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় কারণ৷

ছবি: Payel Samanta/DW

জোড়া পরীক্ষার চাপ

এই পর্বে আলোচনার কেন্দ্রে নয়া পরীক্ষা৷ ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনের নিয়মে অনুযায়ী আগামী বছর থেকে এমবিবিএস-এর চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার সঙ্গে জাতীয় স্তরের একটি পরীক্ষা হতে চলেছে৷ গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করছে হবু চিকিৎসকদের ভবিষ্যৎ৷ কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়া অয়ন চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের ফাইনাল ইয়ারে মোটামুটি চারটি বিষয়ে পড়াশোনা করতে হয়৷ নতুন যে পরীক্ষাটা দিতে হবে, তাতে প্রথম থেকে ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত যে ১৯টা বিষয় পড়েছি, সবটা নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে৷ তার সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ ও তা মুখস্থ করার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ এর সঙ্গে ডাক্তার হয়ে ওঠার সম্পর্ক খুব একটা নেই৷” পড়ুয়াদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করা ছাত্রনেতা, ডা. শামস মুসাফির বলেন, "পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন ও নতুন পরীক্ষার ফলে ছাত্রছাত্রীরা চাপে পড়ে যাচ্ছেন৷ আমাদের সময়ের থেকে সিলেবাস ক্রমশ বদলে যাচ্ছে, এর ফলে চাপ সহ্য করতে না পেরে আরও মানসিক অবসাদে চলে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা৷”

সমীক্ষার ফলে অবসাদের চিহ্ন

পড়াশোনা নিয়ে চাপের কথা প্রদীপ্তা বা অনুপের সহপাঠীরা স্বীকার করে নিচ্ছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা যাচ্ছে৷ সে কারণে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে গত জানুয়ারি থেকে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে হেল্পলাইন নম্বর দেয়া হয়েছে৷ মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সম্বলিত ভিডিও দেখানো হয় ইউটিউব চ্যানেলে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় সমীক্ষাও চালানো হয়৷ চিকিৎসাশাস্ত্রের পঠনপাঠনে সঙ্গে যুক্ত হাজার ছয়েক পড়ুয়া একটি সমীক্ষা ফর্ম অনলাইনে পূরণ করে জমা দেন৷ তাতে দেখা যাচ্ছে , ১০ শতাংশ পড়ুয়ার মধ্যে গভীর অবসাদ রয়েছেন, যার একাংশ আবার আত্মহত্যাপ্রবণ৷ বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনকে চিঠি দিয়ে জানায় স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়৷ তার পরও প্রদীপ্তা বা অনুপের মৃত্যু ঠেকানো যায়নি৷

ছবি: Payel Samanta/DW

কাউন্সেলিং কি পর্যাপ্ত?

প্রদীপ্তার মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুহৃতা পালের প্রতিক্রিয়া, "আমরা কি হেরে যাচ্ছি? ছেলেমেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য যাতে ঠিক থাকে, তার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ তারপরেও এমন ঘটনা ভীষণ দুঃখের৷” যদিও চলতি প্রশিক্ষণ বা কাউন্সেলিং ব্যবস্থা সম্পর্কে খুব একটা আশাবাদী নন চিকিৎসকদের একাংশ৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম-এর সদস্য ডা. পুণ্যব্রত গুণ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা যখন পড়েছি, তার তুলনায় এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি৷ তার উপর যে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে, সেটা মোকাবিলা করার ঠিকঠাক ব্যবস্থা নেই৷ একটা কার্যকরী, উন্নত কাউন্সেলিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার৷ পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়লে বাবা-মা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন৷ এই কাজটা প্রতিষ্ঠানকে আরো নিবিড়ভাবে করতে হবে৷”

একলা ঘর আমার দেশ…

আত্মহত্যা ঠেকাতে চেষ্টা চলছে৷ ‘গেট কিপার'-এর মতো অভিনব প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে৷ কোনো পড়ুয়া অবসাদে ভুগলে বা তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হলে সেটা কিছু লক্ষণে প্রকাশ পায়৷ এই লক্ষণ সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের পরিচিত করাতে রাজ্যের মেডিকেল কলেজ-সহ স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘গেট কিপার' প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে৷ কিন্তু অনুপ-প্রদীপ্তাদের ক্ষেত্রে সেই লক্ষণ কি চোখে পড়েনি? ডাক্তারি পড়ুয়া অয়নের বক্তব্য, "সবাই আত্মকেন্দ্রিক আর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে৷ শুধু নিজেরটা বুঝে নিতে হবে৷ প্রতিযোগিতা এমনই৷ অন্যের দিকে কে লক্ষ্য রাখছে? সবাই তো দৌড়ে সামিল!

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ