মার্কিন নির্বাচনকে ঘিরে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৭৫ মিলিয়ন ভোট পেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন জো বাইডেন৷ ট্রাম্পের পতন দেখায় জার্মানদের যতটা আগ্রহ দেখলাম নিজের দেশের নির্বাচন নিয়ে কিন্তু তেমন উৎসাহ দেখিনি৷
বিজ্ঞাপন
যে কোনো সচেতন নাগরিকই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ অ্যামেরিকার নির্বাচন নিয়ে কিছুটা হলেও খোঁজখবর রাখেন৷ আর অ্যামেরিকার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের আগ্রহ বেশি থাকে৷ তারপরও মার্কিন নির্বাচন নিয়ে আমার জার্মান বন্ধুবান্ধবের আগ্রহ আমাকে কিছুটা হলেও বিস্মিত করেছে৷
জো বাইডেন অ্যামেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় খুশি ৪০ বছর বয়সি করডুলা ম্যুলার৷ কারণ ডনাল্ড ট্রাম্পের বর্ণবৈষম্যমূলক মনোভাব তার মোটেই পছন্দ নয়৷ অ্যামেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তাঁর আচরণের সমালোচনা করে করডুলা বলেন, ‘‘অ্যামেরিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ইউরোপেও৷ আমার বিশ্বাস, জো বাইডেন কিছুটা হলেও এসব কমিয়ে আনতে পারবেন৷’’ চাকরি সূত্রে করডুলা কয়েক বছর স্পেনের মাদ্রিদে কাটিয়েছেন৷
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP Photo/picture alliance
11 ছবি1 | 11
জার্মানরা এমনিতেই বেশ পরিবেশ সচেতন, ছোট বড় কাজের মধ্য দিয়ে তাদের অনেকেই পরিবেশ সুরক্ষায় নিজেদের অবদান রাখার চেষ্টা করে থাকেন৷ পরিবেশ দূষণ সারা বিশ্বে যেভাবে বাড়ছে সেখানে অ্যামেরিকার মতো একটি দেশ জলবায়ু চুক্তি থেকে পিছিয়ে যাওয়া কোনো দেশের জন্যই সুখকর নয় বলে মনে করেন আমাদের প্রতিবেশি হেলগা গেটেন্স ও তাঁর স্বামী মার্টিন৷ ডনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়, বলেন তাঁরা৷ জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে জলবায়ু চুক্তিতে আবার ফিরে আসবেন সেকথা তিনি আগেই বলেছেন, কাজেই জো বাইডেনের বিজয়ে তাঁরা আনন্দিত৷
‘‘ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বিদেশি মেয়েদের যে আশার বাণী শুনিয়েছেন তা অনেকটা আমাদের মনের কথা৷ সেতাঙ্গ নয়, এমন অ্যামেরিকানদেরও যে ‘পলিটিক্যাল ভয়েস’ আছে, সে আশ্বাসই তিনি দিয়েছেন৷ আশা করা যায়, শুধু ত্বকের রঙের কারণে কাউকে আর দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক ভাবতে হবেনা৷ জন্মভূমি জার্মানিতে ফিরে আসার আগে অ্যামেরিকায় আমার স্থায়ী ঠিকানা ছিলো পেনসিলভেনিয়া, সেখানেই আমি পোস্টাল ভোট দিয়েছি৷ জো বাইডেনের বিজয়ে ভরসা পাচ্ছি, কারণ অ্যামেরিকার ডেমোক্র্যাসি সঠিকভাবে চললে জার্মানিতেও তার প্রতিফলন হবে,’’ জানালেন সাংবাদিক নাদিয়া৷ জার্মানি এবং অ্যামেরিকা দুই দেশেই তার ভোট দেয়ার অধিকার রয়েছে৷ তার জন্ম, বেড়ে ওঠা জার্মানিতে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, প্রথম চাকুরির অভিজ্ঞতা অ্যামেরিকায়৷
জন্ম থেকেই লুইডিয়াকে চিনি৷ ওর কথা বলতে গেলে ওর মা-বাবার বিয়ের কথা মনে পড়ে যায়৷ ‘পল্টার আবেন্ড’ বলে বিয়ের একটা রীতি রয়েছে জার্মানদের, বিয়ের দুই একদিন আগেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ সেখানে কাচের থালা বাসন বাটি ইত্যাদি আছড়ে আছড়ে মাটিতে ফেলে ভাঙা হয়, যত বেশি জিনিস ভাঙা হবে তত বেশি নাকি সুখী হবে নব দম্পতি৷ সে এক ভীষণ মজার খেলা! আগে থেকেই আশেপাশের বাড়ি বা পরিচিতদের কাছ থেকে কাপ, প্লেট, বাটি কত কী জোগাড় করে রেখেছিলাম, সেগুলো মনের আনন্দে ‘পল্টার আবেন্ড’-এ ভেঙেছি৷ এত বছর পরেও সে আনন্দের রেশ যেন কিছুটা হলেও রয়ে গেছে! তবে এসব অনুষ্ঠান আজকাল হয় না বললেই চলে! ও হ্যাঁ, বলছিলাম মার্কিন নির্বাচনের কথা, অ্যামেরিকার ইতিহাসে জো বাইডেন সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় খুশি বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লুইডিয়া হালিৎসকি৷ ‘‘পরিবেশ দূষণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যেমন কোনো ভাবনা নেই, তেমনি জনগণের স্বাস্থ্য নিয়েও তিনি ভাবেননি৷ যার প্রমাণ তিনি দেখিয়েছেন করোনা মহামারির সময়ে৷ তাছাড়া তিনি বিদেশি ছাত্রদের বিপক্ষে ছিলেন,’’ মন্তব্য লুইডিয়ার৷
কমলা হ্যারিস: প্রথম নারী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলা হ্যারিস৷ জেনে নিন এই মার্কিন নারীর সাফল্যের গল্প৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
কমলার ইতিহাস
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকে নারীর জন্য একটি ঐতিহাসিক মোড় হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন অনেকে৷ নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অনেক বাঁকের রচয়িতা হয়েছেন তিনি৷ প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট - সবই যোগ করা যায় তার নামের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’
কমলা হ্যারিসের জয় মার্কিনিদের এক নতুন ভাবনায় ফেলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে বলা হয় সেকেন্ড লেডি৷ কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্টের স্বামী ডগলাস এমহফেরকেতো সেকেন্ড লেডি বলার সুযোগ নেই৷ তাই তার জন্য লাগবে হবে নতুন পদবি৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস অবশ্য ইতিমধ্যে তাঁকে ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’ বলে সম্বোধন করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
জন্ম ও পরিবার
৫৫ বছর বয়সি কমলার বাবার জন্ম জ্যামাইকায় এবং মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান৷ অর্থনীতিবিদ বাবা ও জীববিজ্ঞানী মায়ের সন্তান কমলার রয়েছে মায়া নামের এক বোন৷ কমলার জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকল্যান্ড শহরে৷ কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় দীর্ঘদিন থাকার পাশাপাশি তামিল মা ও জ্যামাইকান বাবার মিশ্র ঐতিহ্যকে সাথে নিয়েই বেড়ে ওঠা কমলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
স্কুল জীবন
ক্যালিফোর্নিয়ার শহর বার্কলের কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় বাস করলেও কমলা পড়তেন অভিজাত থাউজেন্ড ওকস স্কুলে৷ সেই স্কুলে এক সময় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিলেন শ্বেতাঙ্গ৷ বর্ণভিত্তিক পৃথকীকরণের নীতি রদ হবার পর এই চিত্র বদলে যায়৷ কমলা যখন সেই স্কুলে ভর্তি হন, তখন সেখানে মোট শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ৷ কিছুদিন মায়ের সাথে ক্যানাডায় ছিলেন কমলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক হবার সময়ে নানা ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন কমলা হ্যারিস৷ ছবিতে বান্ধবী গোয়েন ভিটফিল্ডের সাথে তাকে দেখা যাচ্ছে অ্যাপারথাইড বা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে৷ ছবিটি ১৯৮২ সালের৷ ১৯৮৬ সালে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন তিনি৷
ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবী ডগলাস এমহফকে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন কমলা৷ ডগলাসের আগের পক্ষের দুই সন্তান রয়েছে, কোল ও এলা, যাদের কমলা হ্যারিসের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশেও দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
রাজনীতিতে প্রবেশ
২০০৩ সালে প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন তিনি৷ তখন থেকেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে তার সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে৷ পরে ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়ার সেনেটর পদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও জয়ী হন৷
ছবি: Tasos Katopodis/Getty Images
উত্তরণ
সেনেটর হিসাবে তার ধারালো প্রশ্ন করার ক্ষমতা বারবার আলোচিত হয়েছে সংবাদমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায়৷ টানা দুই টার্ম ধরে সফল অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে তার কাজও আলোচিত হয়েছে এতদিন৷ শুধু তাই নয়, বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে নিজের মিশ্র ঐতিহ্য বিষয়ে সাবলীল আলাপ তাঁকে জনসাধারণের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তোলে৷ এছাড়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তাঁর প্রতি সমর্থনও সাহায্য করেছে বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Risberg
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
সেনেটর পদে নির্বাচিত হবার পর কমলা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন৷ সমকামীদের বিবাহের অধিকারের পক্ষে, মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে থাকার পাশাপাশি কমলা বিভিন্ন সময়ে পুলিশনীতিতে বদলের দাবি তুলেছেন৷ বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ও পুলিশের অনৈতিকতা যেভাবে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আলোচনায় উঠে আসছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি অংশগ্রহণ যথাযথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
আমাদের জার্মান বন্ধু গাড়ি ব্যবসায়ী আন্দ্রেয়াস লাউবাখ অ্যামেরিকার খুটিনাটি সব খবরই রাখেন৷ আর নির্বাচনের মতো এতবড় একটি বিষয় নিয়ে তো তার আগ্রহ থাকারই কথা৷ মার্কিন নির্বাচনের কটা দিন আমাদের বন্ধুদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে মেসেজ পাঠিয়ে পাগল করে ফেলেছে সে! একটু পরপরই ভোটের আপডেট আর মাঝে মাঝেই ট্রাম্পকে নিয়ে তৈরি হাসির নানা ভিডিও পোস্ট করেছে৷ জার্মানির নির্বাচন নিয়ে কিন্তু ওদের মধ্যে এত উত্তেজনা কখনো দেখিনি৷ নির্বাচনে আমরা ভোট দিয়েছি কিনা সেটাই কেবল জানতে চেয়েছে, এর বেশি কিছু নয়৷ যাক, তবে বাইডেনের বিজয়ে আন্দ্রেয়াসসহ গ্রুপের সবাই খুব খুশি৷
মার্কিন নির্বাচন সম্পর্কে আন্দ্রেয়াস তার মতামত জানাতে গিয়ে বললেন, ‘‘শুধু অ্যামেরিকা নয়, সারা বিশ্বের জন্যই এই পরিবর্তন প্রয়োজন ছিলো৷ ডনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু চুক্তি বাতিল করা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে যাওয়ার মতো কিছু বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ অভিবাসী এবং মুসলিমদের ইমেজও নষ্ট করেছেন তিনি৷ কোনো কিছু না ভেবেই বলা যায়, বাইডেনের বিজয় বিশ্বের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে৷’’
মুসলিম কমিউনিটি এবং সকলেই একসাথে মিলেমিশে থাকার কথা জানিয়ে জো বাইডেন হাদিসের বাণী থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে এক বার্তা দিয়েছেন৷ সেই বার্তার ভিডিও ক্লিপটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথেই রিটা জুন্ডাকেম্পার আমাদের গ্রুপে পোস্ট করেছেন৷ এবং নিজে মন্তব্য করেছেন, ‘‘এমনটাই চাই আমরা, মানব ধর্মই হোক সকলের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্ম৷’’ রিটার এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন হোয়াট অ্যাপ গ্রুপের অন্যরাও৷
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে সাধারণ রাজনীতিকদের মতো নন তা প্রায় সকলেরই জানা৷ কিন্তু তারপরও নির্বাচনে কোনোভাবেই পরাজয় মেনে না নেওয়া, ভোটে কারচুপির অভিযোগ কিংবা প্রেসিডেন্ট ভবন ছাড়তে না চাওয়া, কথায় কথায় আইনি লড়াইয়ের হুমকি দেওয়ার মতো উদ্ভট কান্ডগুলো কেন করছেন তিনি? প্রশ্ন রেখেছিলাম মার্সেল শ্রায়াররের কাছে৷ একটি বীমা কোম্পানিতে চাকরিরত মার্সেলের ঝটপট উত্তর, ‘‘আমি অবশ্য ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অন্য কিছু আশা করিনি৷ স্থান কাল না ভেবে তিনি নিজেকে সবসময় ‘বস' ভাবেন, ছাড় দেয়া বা পরাজয় স্বীকার তিনি চেনেন না৷ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট যদি জোকার সেজে বিশ্বকে আনন্দ দেয়, আমরা তা উপভোগ করতেই পারি৷’’
আসলে মার্কিন নির্বাচন অনেকের কাছেই বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ছিলো৷ নির্বাচনের দিন, পরের দিন, বিশেষ করে ভোট গণনায় যখন বাইডেনের ভোটের পাল্লা ভারি হচ্ছিলো তখন থেকে আমার মোবাইলে ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে বাংলা, ইংরেজি, জার্মান, হিন্দি ভাষায় হাস্যরসে ভরপুর নানা জোকস, কার্টুন, ছোট ছোট ভিডিও শেয়ার করেছে নানা প্রান্ত থেকে বন্ধুরা, ভাইবোনেরা ৷ যার প্রায় সবই ছিলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হেরে যাওয়ার গল্প নিয়ে৷ টাম্পকে মানুষ এতটা অপছন্দ করে? কিন্তু তারপরও তো তিনি ভোট পেয়েছেন সাত কোটি, কম নয়! যাই হোক, বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে উপহাস করা মজার মজার ভিডিওগুলো কিন্তু করোনাকালে আমার কাছে প্রচণ্ড গরমে এক পশলা বৃষ্টির মতো মনে হয়েছে! আমি ভাবছি, খনিকের আনন্দের জন্য এসব ভিডিও ,কার্টুন তৈরি করতে গিয়ে কতই না বুদ্ধি আর সময় খরচ হয়েছে৷ ইশ, এসব সুক্ষ্ম বুদ্ধি আর সময় যদি অন্য কাজে লাগানো হতো!