বিশ্বজুড়ে বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে অনেক জমির প্রয়োজন৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ প্লান্টের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ প্রতিবাদ জানালেও অনেক চাষি জমি ইজারা দিয়ে স্থায়ী আয়ের ফলে সন্তুষ্ট৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের ছোট গ্রাম হোয়েনসাটেন৷ জনবিরল এই বসতির ধারেই বিশাল অরণ্য৷ সামরিক কার্যকলাপের জন্য বহু দশক ধরে সেখানে প্রবেশ নিষেধ ছিল৷ ফলে প্রকৃতি নিজস্ব ছন্দে বিকশিত হয়েছে৷
স্থানীয় বাসিন্দা হলগার লেমান বলেন, ‘‘সেখানে পেঁচা, কালো সারস আছে৷ আমি ব্যাজারও দেখেছি৷ ৩০ বছর ধরে প্রকৃতি বিনা হস্তক্ষেপে বেড়ে উঠেছে৷ জায়গাটা প্রাণে ভরপুর৷’’
অদূর ভবিষ্যতে অবশ্য সেখানে পরিবর্তন আসছে৷ কারণ এক সোলার প্লান্ট গড়ে তুলতে ৩৭০ হেক্টর, অর্থাৎ পাঁচশোরও বেশি ফুটবল মাঠের আয়তনের সমান জঙ্গল কেটে ফেলা হবে৷ কাছেই ওডারব্যার্গ শহরের হনারারি মেয়র মার্টিনা হেনেল অবশ্য সে কারণে অসন্তুষ্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করার লক্ষ্যে আমাদের একটা জঙ্গল কেটে ফেলতে হবে, এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে আমি আতঙ্কিত হয়েছিলাম৷ ছাদ ও অন্যান্য কত জায়গায়ই না সেটা করা যায়! জঙ্গল ধ্বংস করে জ্বালানি সরবরাহের উন্নতি একেবারেই উচিত নয়৷’’
সৌরবিদ্যুতের জন্য জমি ভাড়া দিয়ে তিনগুণ আয়
03:15
বিনিয়োগকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের সামনে নিজের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন৷ বাসিন্দারা এক নাগরিক উদ্যোগ গড়ে তুলতে চান৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলে ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে সম্প্রতি সংঘাতের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ কারণ সেখানে অনেক এলাকা সৌর জ্বালানির জন্য উপযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত৷ অনেক স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিবাদ জানালেও ইয়ুর্গেন গিসের মতো চাষির কাছে সৌর জ্বালানি শাপে বর হয়ে উঠতে পারে৷ কারণ জ্বালানি কোম্পানিগুলিকে তাঁরা চাষ বাবদ আয়ের তিন গুণ বেশি মূল্যে ইজারা দিতে পারেন৷ ইয়ুর্গেন গিসে এমনই এক চাষি৷ তিনি বলেন, ‘‘চাষি হিসেবে আমাদের সার, কীটনাশক, বীজ – সবকিছুর জন্য আগাম মূল্য চোকাতে হয়৷ ফসলের মূল্য কী হবে আমরা তা কখনোই আগেভাগে জানতে পারি না৷ সেটা বড় ঝুঁকি৷ সেই সূত্রে সৌর কোম্পানিগুলি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশ্ন করলো, তাদের প্রস্তাবে আমাদের আগ্রহ আছে কিনা৷ অবশ্যই আগ্রহ রয়েছে৷ কারণ এর ফলে আমার কর্মকাণ্ডের জন্যও নিরাপত্তা আসছে৷’’
বার্লিনের উত্তরে টেম্পেলফেল্ডে এলাকায় ১০০ হেক্টর জুড়ে সৌর প্যানেল লাগানো হবে৷ সেখানেও স্থানীয় পর্যায়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে, কারণ এর ফলে কিছু মানুষের আয় হচ্ছে৷ যেমন ঘোড়া পালনের একটি ক্ষেত্র এলাকার কিছুটা বাইরে থাকায় ভবিষ্যতের প্লান্টের কাছেই সেটির অবস্থান হবে৷ সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ইয়ুলিয়ানে উলিশ বলেন, ‘‘আমার মতে, তখন মানুষ ভেবে দেখবেন, আদৌ তাঁরা আমাদের এখানে এসে ঘোড়ায় চড়বেন কিনা৷ নাকি অন্য কোনো জায়গার খোঁজ করবেন, যেখানে তাঁরা ঘোড়ায় চেপে মাঠ বরাবর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যেতে পারবেন৷’’
আশার কথা, প্রকল্পের প্রবক্তা ও বিরোধীদের মধ্যে সংলাপ গড়ে উঠেছে৷
মারিয়ন হ্যুটার/এসবি
খামারে সোলার প্যানেলে বাড়ছে আয়
একদিকে চলছে কৃষিকাজ আর সেই সাথে জমির উপর বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল৷ এমন ব্যবস্থাপনায় চলছে একই সাথে বিদ্যুৎ আর ফসল উৎপাদন৷ ফলে খামারিদের আয় বাড়ছে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/R. Linke
বিদ্যুৎ উৎপাদন আর বেরি চাষ
জার্মানির কৃষক ফাবিয়ান কার্টহাউস তার খামারে বিভিন্ন ধরনের বেরি চাষ করেন৷ প্রায় আধা হেক্টর আয়তনের জমিতে বেরি গাছের উপর ফটোভোলটাইক প্যানেল বসিয়ে তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন৷ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পাডারবর্ন শহরের এ খামারটির আয়তন বাড়িয়ে তিনি দশ হেক্টর করতে চান৷ এভাবে ফসল উৎপাদনের সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন চালিয়ে গেলে তিনি চার হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবেন৷
ছবি: Gero Rueter/DW
প্লাস্টিকের বদলে কাঁচের ছাদ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের খামারিরা এখনো জমিতে প্লাস্টিকের ছাদ বসিয়ে ফল ও সবজি চাষ করেন৷ প্লাস্টিকের এমন ছাদ মাত্র কয়েক বছর স্থায়ী হয়৷ আর এ কারণে অনেক খামারি এখন জমিতে কাঁচের ছাদ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন৷ এর ফলে পরিবেশের সুরক্ষার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনও করা যাবে, কেননা কাঁচের এ ছাদ সোলার প্যানেল হিসেবে কাজ করবে৷
ছবি: BayWa r.e.
এগ্রিভোলটাইকসে এগিয়ে এসেছে চীন
খামারে ফসল ফলানোর পাশাপাশি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে কাজ করছে চীন৷ দেশটির হেবেই প্রদেশের ১০ হেক্টর জমির এ খামারটিতে সূর্যের আলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি চলছে কৃষিকাজ৷
ছবি: Zhu Xudong/Xinhua/ZUMA Wire/picture alliance
মরুভূমিও উর্বর হবে!
বিদ্যুতের এমন উৎপাদনের ফলে মরুভূমিও উর্বর হয়ে উঠছে৷ আর তাই ফসল ফলানো যাচ্ছে সেখানকার জমিতে৷ কীভাবে? ছবিতে দেখুন ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ছাদের নীচে চলছে কৃষিকাজ৷ চীনের গোবি মরুভূমিতে এ ছাদের ফলে মাটিতে সূর্যের প্রখরতাপ ঠেকানো যাচ্ছে আর ফলানো হচ্ছে ফসল৷
ছবি: TPG/ZUMA/picture alliance
লড়বে খরার সাথেও
দক্ষিণ অ্যামেরিকবার দেশ চিলির প্রথম অ্যাগ্রি-ফটোভোলাটিক সিস্টেম এটি৷ চিলির এ এলাকায় খরার কারণে ফসল উৎপাদন হতো না৷ তবে গবেষকরা অ্যাগ্রি-ফটোভোলাটাইক সিস্টেমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি জমিতে ব্রকোলি ও ফুলকপি চাষের পরীক্ষা করছেন৷ পরীক্ষার ফল নাকি বেশ ইতিবাচক৷
ছবি: Fraunhofer Chile
সহজে পানি সরবরাহ
আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার এই কৃষক পানির পাম্পের উপরে একটি সোলার প্যানেল বসিয়েছেন৷ চাকায় বসানো এ পাম্পটি তিনি ঠেলে জমিতে নিয়ে যান৷ আর পার্শ্ববর্তী পুকুর বা নালা থেকে জমিতে পানি সরবারাহ করে থাকেন৷ বিষয়টি একদিকে যেমন মজার, অন্যদিকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ফসল উৎপাদন বাড়াতেও বেশ উপকারী৷
ছবি: Ennos
করা যায় মাছের খামারেও
সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এমনভাবে কিন্তু মাছের খামারেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়৷ ছবিতে দেখুন, লেকের পানির উপর কীভাবে প্যানেল বসানো হয়েছে৷ আর এর নীচে মাছ চাষ৷ চীনের সাংহাইয়ের নিকটবর্তী তিনশ হেক্টর আয়তনের এ খামারে বসানো প্যানেল থেকে এক লাখ বসতবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে৷
আছে অন্য বিকল্পও
কৃষিজমি আর খামারের উপর সোলার প্যানেলের ব্যবহার ছাড়াও আরো নানাভাবে কিন্তু প্যানেল বসানো যায়৷ ছবিতে দেখুন জমিতে কীভাবে সারি করে বসানো হয়েছে প্যানেল৷ জার্মানিতে এমনভাবে বসানো সোলার প্যানেলগুলো খামার বা জমির ছাদে বসানো প্যানেলের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে৷