জয়ধ্বনি নিয়ে লঙ্কা কাণ্ড
৪ জুন ২০১৯![Indien westbengalische Politikerin Mamata Banerjee](https://static.dw.com/image/48054206_800.webp)
সংসদীয় নির্বাচনের প্রচারপর্ব থেকে জয় শ্রীরাম শ্লোগান নিয়ে বিতর্কের শুরু৷ নির্বাচনি ফলাফলের পরে তার উত্তাপ আরো তীব্র হয়েছে৷ রাজ্য রাজনীতির পরিধি ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে জাতীয় রাজনীতির আঙ্গিনায়৷ প্রচার পর্বে এবং নির্বাচনি ফলাফলের পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় একাধিকবার এর প্রতিবাদে সোচ্চার হন৷ ভোট প্রচারের সময়ে এবং ফল প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার রাস্তায় জয় শ্রীরাম শ্লোগান শুনে তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন৷ গাড়ি থেকে নেমে শ্লোগানকারিদের তেড়ে যান৷ তাঁর নির্দেশে জনা দশেক শ্লোগানকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে৷ মমতার এই আচরণ প্রসঙ্গে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যত এর প্রতিবাদ করবেন, শ্লোগানের আওয়াজ তত বাড়বে, জয় শ্রীরাম বলা কি অপরাধ?
জয় শ্রীরাম শ্লোগানকে এখন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি৷ ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং-এর দাবি, আর কয়েকদিনের মধ্যেই অন্ততঃ ১০ লাখ জয় শ্রীরাম লেখা পোস্টকার্ড মমতার কাছে পাঠানো হবে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে৷ কয়েক হাজার পোস্টকার্ড এর মধ্যে পাঠানো হয়ে গেছে৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়-এর কথায়, এটা দলের ঘোষিত কর্মসূচি নয়. দলের কর্মী সমর্থকদের উদ্যোগ৷ চাইলেও দল তা আটকাতে পারে না৷ কেন্দ্রীয় পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে সরাসরি বলেছেন, মমতাদিদির আচরণ স্বাভাবিক নয়৷ তিনি যে পদে আছেন, সেই পদের মর্যাদার সঙ্গে এটা বেমানান৷ আসলে তাঁর কিছুদিন বিশ্রাম দরকার৷ রাজ্যের অপর মন্ত্রী কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রি দেবশ্রী চৌধুরি বলেছেন মমতা দিদি জয় শ্রীরাম-এর বিরুদ্ধে যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছেন, আজকাল যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর পদটাই মর্যাদা হারাচ্ছে৷
জয় শ্রীরাম শ্লোগান নিজের অবস্থান খোলসা করতে গিয়ে মমতা সোশ্যাল মিডিয়ায়. বলেছেন, জয় সিয়া রাম বা রামজী কি জয় বা রাম নাম সত্য হ্যায় ইত্যাদির মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক আবেগ জড়িত৷ সেই ভাবাবেগকে বিজেপি সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে, সেটা হতে দেওয়া যায় না. রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করা হবে৷ শ্রীরামের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভক্তিতে ঘাটতি নেই৷ প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব শ্লোগান থাকতেই পারে৷ তাতে আপত্তিও নেই. যেমন, বন্দে মাতরম, জয় হিন্দ, যেমন বামপন্থীদের ইনকেলাব জিন্দাবাদ৷
এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানি প্রবীর কুমার ডয়চে ভেলেকে বললেন, দেখা যাচ্ছে মানুষের যে চাহিদা, গণতন্ত্রের প্রতি যে আকাংখা, জীবন যাপন বা রুজি রোজগারের যে দৈনন্দিন দাবি, সেসব পেছনে চলে যাচ্ছে৷ একটা সময়ে উগ্র জাতীয়তাবাদ উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অনেকটা দাবিয়ে রেখেছিল৷ মনে হচ্ছে, আবার আমরা সেই পর্বে ঢুকে পড়ছি৷ সেক্ষেত্রে ধর্মটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে৷ ধর্ম এমন একটা উপাদান যা সব কিছুকে আচ্ছন্ন করে দেয়৷ ধর্ম কার্যতঃ মৌলবাদ দ্বারা চালিত, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বিচার বিবেচনা সব কিছুকেই অবরুদ্ধ করে রাখে৷ ভারতের রাজনীতি মনে হয় সেদিকেই এগোচ্ছে৷ মমতা বন্দোপাধ্যায়ও তার ব্যতিক্রম নন৷ সময় উপযোগী যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সেটা সে রকমভাবে রক্ষা করতে পারছেন না তিনি৷ আরেকটা কথা, মমতা ব্যানার্জীর দলটা একক ব্যক্তি-নির্ভর বলে সেই চাপটা তিনি একা নিতে পারছেন না৷