1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জয়ী ম্যার্কেল

কাই আলেক্সান্ডার শলৎস / এসবি২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩

অনেকে বলেন, চ্যান্সেলর রানির মতো রাজত্ব করেন৷ সংসদীয় গণতন্ত্রে একে ঠিক প্রশংসা বলা চলে না৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর ক্ষমতাপ্রীতি, ভাবমূর্তি ও নির্বাচনি প্রচার বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দেয়৷

German Chancellor and leader of the Christian Democratic Union (CDU) Angela Merkel smiles as she holds flowers after first exit polls in the German general election (Bundestagswahl) at the party headquarters in Berlin September 22, 2013. REUTERS/Kai Pfaffenbach (GERMANY - Tags: POLITICS ELECTIONS)
আঙ্গেলা ম্যার্কেলছবি: Reuters

২০০৫ সালে আঙ্গেলা ম্যার্কেল যখন প্রথম বার জার্মানির চ্যান্সেলর হলেন, তখন অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, যে তিনি আদৌ চ্যান্সেলর হিসেবে ক্ষমতা দেখাতে চান কি না৷ সে সময়ে কেউ ভাবে নি, যে ম্যার্কেল তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হতে পারেন৷ এখনো পর্যন্ত মাত্র দু জন চ্যান্সেলর এমন সাফল্য দেখাতে পেরেছিলেন৷ তাঁরাও খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ দলের – কনরাড আডেনাউয়ার (১৯৪৯-১৯৬৩) এবং হেলমুট কোল (১৯৮২-১৯৯৮)৷

চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেল-এর অভিষেক কিন্তু কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়৷ চ্যান্সেলর হবার আগেও তিনি ক্ষমতার প্রতি আকর্ষণ দেখিয়েছিলেন৷ সিডিইউ দলের চাঁদা কেলেঙ্কারির মাঝেও তিনি সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে হেলমুট কোল-এর প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন৷ কিছুদিন পরেই তিনি দলের সভাপতি হয়ে ওঠেন৷ তার আগেই তিনি কোল-এর মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন৷

ইউরোপে প্রতীকী ব্যক্তিত্ব

ক্ষমতা সম্পর্কে ম্যার্কেল-এর অনুভূতি, তাঁর কূটকৌশল ও পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা এই মুহূর্তে জার্মানি তথা ইউরোপে অন্য কোনো নেতার মধ্যে এই মাত্রায় দেখা যায় না৷

ম্যার্কেল জার্মান নাগরিকদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, জার্মানি বর্তমান সংকট থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে বেরিয়ে আসবে৷ গত কয়েক বছরে সত্যি জার্মানির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বেকারত্বের হার নজর কাড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছেছে৷ বিদেশে তিনিই জার্মানির স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন৷ জি এইট অথবা ইইউ সম্মেলনের পর শোনা যায় তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠ৷ জার্মানির অর্থ তাঁর হাতেই সবচেয়ে নিরাপদ রয়েছে – এমন আস্থা বার বার প্রতিষ্ঠিত হয়৷ ব্রিটেন-অ্যামেরিকা সহ অনেক দেশে ম্যার্কেল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী হিসেবে বিবেচিত হন৷

অভিন্ন মুদ্রা ইউরো-কে বাঁচাবার প্রশ্নে ম্যার্কেল ইউরোপে এক প্রতীকী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন৷ তিনি বলেন, শুধু জার্মানি নয় – গোটা ইউরোপকেই আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে৷ বাকিদের জন্য আর্থিক সাহায্য দিতে কার্পণ্য করেন নি তিনি, তবে সেই সঙ্গে কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন৷ প্রতিযোগিতার বাজারে ইউরোপের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে এটাই ম্যার্কেল-এর পথ৷

সিডিইউ-কে বদলে দিয়েছেন ম্যার্কেল

নিজের দল সিডিইউ-কেও বদলে ফেলেছেন ম্যার্কেল৷ দলের মধ্যে প্রথম দিকে তাঁর অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল৷ তাঁরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন, ম্যার্কেল তাঁদের সরিয়ে দিয়েছেন অথবা তাঁরা কেলেঙ্কারির কারণে নিজেদের মর্যাদা খুইয়ে বসেছেন৷ আনুগত্যের অভাব ও রাজনৈতিক দুর্বলতা দেখলেই ম্যার্কেল নেতাদের সরিয়ে দেন৷ রাজনীতির জন্য ক্ষমতার প্রয়োজন রয়েছে৷ তিনি দলের কর্মসূচি বদলাতেও সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন৷ এভাবে তিনি সিডিইউ দলকে রাজনৈতিক আঙিনায় মধ্যপন্থার দিকে ঠেলে নিয়ে গেছেন৷ বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ, বিদ্যুতের জন্য আণবিক শক্তির ব্যবহার ও পরিবার সম্পর্কে সনাতন ধারণা এককালে দলের মৌলিক অবস্থানের মধ্যে পড়তো৷ ২০১১ সালে আণবিক শক্তির ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ম্যার্কেল সেই অবস্থান থেকে সরে এলেন৷

সমালোচকরা বলেন, তিনি নিজের দলের পরিচয় ধ্বংস করেছেন অথবা দলকে আরও সামাজিক গণতন্ত্রী করে তুলেছেন৷ অনেকে তাঁকে সুবিধাবাদীও বলেছেন৷ দলের কিছু নেতা তাই সদ্য গজিয়ে ওঠা ‘আল্টারনাটিভে ফ্যুর ডয়েচলান্ড' বা জার্মানির বিকল্প দলে চলে আসেন৷ কিন্তু বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে ম্যার্কেল-এর নীতির জনপ্রিয়তা বেড়েছে৷ ২০০৯ সালে ১৮ বছরের কমবয়সিদের মধ্যে এক সমীক্ষায় সিডিইউ দল শীর্ষ স্থান দখল করেছিল৷

সংকটের সময় ম্যার্কেল-এর নেতৃত্ব

অনেক বছর ধরে নাগরিকদের সমর্থন পেয়ে এসেছেন ম্যার্কেল৷ ক্ষমতা-নির্ভর ভাবমূর্তির মাধ্যমে তিনি সেই আস্থা অর্জন করেছেন৷ সংকটের সময় অনিশ্চয়তার মাঝে তিনি স্থিতিশীলতা ও দিক-নির্দেশনার প্রতি জার্মানদের অভিলাষ কাজে লাগিয়েছেন৷

ম্যার্কেল-এর আচরণের মধ্যেও স্থিতিশীলতার ছাপ দেখা যায়৷ বছরের পর বছর ধরে তাঁর চুলের বিন্যাস প্রায় অপরিবর্তিত থাকে৷ পোশাক-আশাকও প্রায় এক – শুধু রং বদলায়৷ বিশ্ব তোলপাড় হয়ে গেলেও টেলিভিশনের পর্দায় ম্যার্কেল-এর শান্ত উপস্থিতি দেখা যায়৷ বার্লিন শহরে বিশাল নির্বাচনি পোস্টারে ম্যার্কেল-এর দুই হাত ধরের রাখার যে ভঙ্গি দেখা গেছে, তার সঙ্গে স্লোগানটিও ছিল বেশ মানানসই – জার্মানির ভবিষ্যৎ ভালো হাতেই রয়েছে৷

বার্লিন শহরে বিশাল নির্বাচনি পোস্টারে ম্যার্কেল-এর দুই হাত ধরের রাখার যে ভঙ্গি দেখা গেছে, তার সঙ্গে স্লোগানটিও ছিল বেশ মানানসই – জার্মানির ভবিষ্যৎ ভালো হাতেই রয়েছেছবি: Imago

ব্যক্তিগত উষ্ণতা, তবে আড়ালে ব্যক্তিজীবন

সিডিইউ দলের নির্বাচনি পোস্টার দেখলেই বোঝা যায়, চ্যান্সেলর ম্যার্কেল-ই তাদের মূলধন৷ তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই এবার তিনি নিজের ব্যক্তিজীবনের কিছু অংশ বাকিদের সামনে তুলে ধরেন৷ যেমন ছুটি কাটানোর সময় তিনি স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ার-এর নাতি-নাতনীদের সঙ্গে দাদী হিসেবে সময় কাটিয়েছেন, যার ছবি প্রকাশিত হয়েছে৷ স্বামীও ঘর-সংসারের কিছু খবর জানিয়েছেন৷

ম্যার্কেল-এর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে এর বেশি তেমন কিছু জানা যায় নি৷ বার্লিন শহরের মাঝে পুরানো একটি ফ্ল্যাটে ম্যার্কেল ও তাঁর স্বামী বসবাস করেন৷ ছুটি পেলে কাছেই উকারমার্ক নামের ছোট্ট শহরে চলে যান দুজনে৷ সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন৷ সেখানে তাঁর মা এখনো বসবাস করেন৷ ২০১১ সালে তাঁর বাবা মারা গেছেন৷ ম্যার্কেল নিজের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরলেও ব্যক্তিজীবনকে গোপনীয়তার বেড়াজালে আবদ্ধ রাখতে চান৷ কারণ জনগণের সামনে চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি যেটুকু তুলে ধরেন, তাই তো যথেষ্ট৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ