মিয়ানমারের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তাঁর দল৷ অং সান সু চি-র সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ৷ প্রথম চ্যালেঞ্জ সরকারে নিজের ক্ষমতা স্থির এবং চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করা৷
বিজ্ঞাপন
রোববার অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এ পর্যন্ত নিম্ন কক্ষে ২৩৮ টি এবং উচ্চকক্ষে ১২৬টি আসন পেয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনও এনএলডি-কে জয়ী ঘোষণা করেছে৷
প্রায় তিন দশক গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে অবশেষে দেশ শাসনের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন সু চি৷ ঠিক পাঁচ বছর আগে তাঁকে মুক্তি দিয়েছিল সামরিক জান্তা৷ পাঁচ বছর পর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতারোহনের পথ তৈরি করেছেন ঠিকই, তবে সে পথ এখনো কণ্টকাকীর্ণ৷
এ নির্বাচনের পর মিয়ানমারে গণতন্ত্রের চর্চা, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার সূচনা হবে বলে আশা করা হলেও বিষয়গুলো নিয়ে সংশয় অনেক৷ সবচেয়ে বড় সংশয় বা হুমকি নিশ্চয়ই সামরিক শাসনের দীর্ঘ অতীত এবং বর্তমান সংসদেও সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ প্রভাব৷ মিয়ানমারের সংসদের দুই কক্ষেরই এক চতুর্থাংশ আসনে কোনো নির্বাচন হয়নি, কারণ, সেই আসনগুলো সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত৷ বাকি আসনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪০টিতে জয়ী হয়েছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)-র প্রার্থীরা৷
তারপরও নির্বাচনে সু চি-র দলের বিশাল জয়কে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের সূচনাই বলা হচ্ছে৷
সু চি-কে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বিশ্ব নেতারা৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনন্দন জানিয়েছেন টেলিফোনে৷
জাতীয় সংসদের বাইরের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি মিয়ানমারের এ নির্বাচনকে বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে৷
এ নির্বাচন সু চি-র জন্যও খুব তাৎপর্যপূর্ণ৷ নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী নেত্রী মিয়ানমারের রাজনীতিকে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে কিভাবে, কতটা বের করে আনতে পারেন সেটাই এখন দেখার৷ সু চি সে কাজ শুরু করেছেন৷ সাংবিধানিক বাধার কারণে তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারছেন না৷ আগামী মার্চ পর্যন্ত সাবেক সেনাপ্রধান থেইন সেইন-ই প্রেসিডেন্ট থাকছেন৷ সু চি-কে এখন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে হবে৷ সংবিধান অনুযায়ী সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দলের মনোনীত প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট হবেন৷ তাই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচন এখন সু চি-র দায়িত্বে৷
প্রেসিডেন্ট হবার দৌড়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন সংসদের স্পিকার শয়ে মান৷ ইতিমধ্যে চিঠি লিখে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সু চি৷ বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এবং সেনাপ্রধান মিন অং-এর সঙ্গেও আলোচনায় বসছেন সু চি৷
অং সান সু চির কিছু তথ্য
ছবিঘরে তাই তাঁর ঘটনাবহুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শৈশবেই বাবার মৃত্যু
১৯৪৫ সালের ১৯ জুন তখনকার ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ বার্মার রেঙ্গুনে জন্ম অং সান সু চি-র৷ বাবা জেনারেল অং সান-কে যখন হত্যা করা হয় সু চি-র বয়স তখন মাত্র ৩ বছর৷ ওপরের ছবিটি তোলা হয়েছিল জেনারেল অং সান-এর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে৷
ছবি: gemeinfrei
রাজনীতিতে পদার্পণ
সু চি-র শৈশব কেটেছে ভারতে৷ উচ্চ শিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর সেখানে মাইকেল অ্যারিসের সঙ্গে পরিচয় হয়৷ পরবর্তীতে অ্যারিসকেই বিয়ে করেছিলেন সু চি৷ দুটি ছেলে আছে এই দম্পতির৷ ১৯৮৮ সালে নিজের দেশ মিয়ানমারে ফেরেন সু চি৷ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও দেন প্রথম জনসভাতেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
নির্বাচিত হয়েও বঞ্চিত
১৯৯০ সালে নির্বাচন হয়৷ নির্বাচনে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পায় সু চি-র দল এনএলডি৷ কিন্তু তখনকার সামরিক শাসক নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতায় পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক দাবিকে পাত্তাই দেয়নি৷
ছবি: picture alliance/AP Images/M. Sato
গৃহবন্দি
নির্বাচনের কিছুদিন আগেই সু চি-কে গৃহবন্দি করা হয়৷ ২০১০ সালে পুরোপুরি মুক্তি প্রাপ্তির আগে বার কয়েক বাইরে আসার সুযোপ পেয়েছিলেন ‘মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ হিসেবে পরিচিত এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: picture-alliance/epa/N. Chan Naing
নোবেল পেলেন সু চি
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অহিংস আন্দোলন করায় ১৯৯১ সালে সু চি-কে শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর স্বীকৃতি দেয় নোবেল কমিটি৷ গৃহবন্দি ছিলেন বলে সু চি নিজে যেতে পারেননি৷ তাঁর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন তাঁর ব্রিটেনে নির্বাসিত পুত্র কিম৷
ছবি: AP
মুক্তির দাবি
সু চি-কে মুক্তি দেয়ার দাবি উঠছিল বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ কিন্তু তখনকার সামরিক বাহিনী তাতে কর্ণপাত করেনি৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
অবশেষে মুক্তি
অবশেষে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর মুক্তি পান অং সান সু চি৷
ছবি: picture alliance/epa/N. C. Naing
সংসদ সদস্য সু চি
২০১২ সালে আবার নির্বাচন হয় মিয়ানমারে৷ ১৯৯০ সালে সু চি-কে গৃহবন্দি করার পর থেকে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি সু চি-র দল এনএলডি৷ ২২ বছর পর আবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ঠিকই নির্বাচিত হন সু চি৷ সেই সুবাদে এখন তিনি বিরোধী দলের নেত্রী৷
ছবি: AP
২০ বছর পর
২০১২ সালে মুক্ত সু চি-র হাতেই তাঁর পুরস্কারটা তুলে দেয় নোবেল কমিটি৷ সু চি জানান, এই পুরস্কার তাঁকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনেক প্রেরণা জুগিয়েছে৷
ছবি: Reuters
জার্মানিতে সু চি
২০১৪ সালে সু চি জার্মানির রাজধানী বার্লিনেও এসেছিলেন৷ তখন মানবাধিকার রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘদিন লড়াই করার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁর হাতে ভিলি ব্রান্ড পুরস্কার তুলে দেন জার্মান প্রেসিডেন্ট গাউক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সমালোচিত
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন সত্ত্বেও এর প্রতিবাদ করেননি অং সান সু চি৷ অনেক রোহিঙ্গা দেশছাড়া হয়ে সাগরে ডুবে মরলেও সু চি নীরব ভূমিকাই পালন করছেন৷ শান্তিতে নোবেল জয়ী হয়েও একটি সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়ে তাঁর নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেছেন অনেকেই৷