বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এখন অনেক সোচ্চার৷ অন্যদিকে, ঠিক উল্টো অবস্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান৷
বিজ্ঞাপন
সজীব ওয়াজেদ জয় নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেও তারেক রহমান একেবারেই নিরব৷ এমনকি জয়ের কোন অভিযোগের জবাবও দিচ্ছেন না তিনি৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জয় সদ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করছেন এ কারণেই হয়ত তিনি বেশি কথা বলছেন৷ আর তারেক রহমানকে কেন তাঁর কথার জবাব দিতে হবে? বিএনপিতে অনেক নেতাই কথা বলছেন৷ দলের মুখপাত্রও আছেন৷''
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মতে, ‘‘তারেক রহমান একজন পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ৷ তিনি জয়ের সব কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না৷''
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘জয় নতুন রাজনীতিতে এসে নিজেকে জাতির সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷ তাঁর মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়ত ছেলেকে সেই সুযোগ দিচ্ছেন৷ কিন্তু দেশের মানুষ বুঝে গেছেন জয়ের রাজনীতি নিয়ে কোন ধারণাই নেই৷ তাছাড়া তিনি দেশের মানুষের সঙ্গে কখনও মেশেননি৷ ফলে তিনি বুঝতে পারছেন না কি বলা উচিত, আর কাকে নিয়ে কথা বলা উচিত৷''
প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগষ্ট শোক দিবসের দিন ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘‘এটি সত্যিই দুঃখজনক যে খালেদা জিয়া প্রতি বছর এইদিনে তার জন্মদিন পালন করতে পছন্দ করে৷ বিভিন্ন দাপ্তরিক নথিতে তার তালিকাভুক্ত ভিন্ন ভিন্ন জন্মদিন আছে, যার কোনটিই ১৫ই আগস্ট নয়৷ কি ধরনের ব্যক্তি এটি করতে পারে?''
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়েত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট৷ জামায়াত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিয়েছে৷ এদিকে দাবি উঠেছে, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
‘‘জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল’’
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (০১.০৮.১৩) বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট৷ বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ইনায়েতুর রহিম এবং কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তাদের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন৷ রায়ে বলা হয়, ‘‘জামায়াতের গঠনতন্ত্র শুধু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকই নয়, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল৷’’
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
২০০৯ সালের রিটের রায়
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা হাইকোর্টে রিট করেন ২০০৯ সালে৷ রিটে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়, জানান ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর৷ সেই রিটের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করলেন আদালত৷
ছবি: Reuters
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
আদালতের রায়ের পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং এই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জানান, রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ সেজন্য ইতিমধ্যে রায়ের কার্যকারিতার স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ‘‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল৷ তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেদলের কিছু নেতার হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে জামায়াত৷’’
ছবি: AP
ট্রাইব্যুনালে বিচার
জামায়াত যুদ্ধাপরাধের দায় অস্বীকার করলেও ২০১০ সালে গঠিত ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে৷ এই ছবিঘর তৈরির দিন (০১.০৮.১৩) অবধি ছয়জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল৷ সর্বশেষ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
এদিকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায়ের পর দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আরো জোরালো হয়েছে৷ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেও সরকার এতটা সাহসী হবে বলে আশা করেন না৷ মুনতাসির মামুনের কথায়, ‘‘জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী দল৷ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়ে তা বলাও হয়েছে৷ তাই যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্লগারদের সতর্ক প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণার আগেই ফেসবুকে আরিফ জিবতেক লিখেছেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়টা কিন্তু জামায়াত নিষিদ্ধ নিয়া মামলা না৷ মামলাটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে জামায়াত আইনসিদ্ধভাবে নিবন্ধিত হয়েছে কিনা, সেটা নিয়ে বিবেচনা৷’’ এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার চাই, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিয়া আমার মাথাব্যথা নাই৷’’
ছবি: privat
এই দাবি নতুন নয়
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর মোট তিনবার দলটি নিষিদ্ধ হয়েছে৷ ১৯৫৯ এবং ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে৷ ১৯৭৯ সালের ২৫শে মে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়৷
এর আগে তারেক রহমান নিয়ে এক মন্তব্য করতে গিয়ে জয় বলেছেন, ‘‘আমরা লেখাপড়া শিখেছি, দেশের টাকা মেরে আমাদের চলতে হবে না৷ কিন্তু যারা পড়াশোনা শেখেনি তারাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত৷''
জয়ের এসব বক্তব্যের জবাবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘তারেক রহমানকে নিয়ে তিনি যেসব মন্তব্য করছেন তা অনভিপ্রেত৷ কারণ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির মামলা বর্তমান সরকার প্রমাণ করতে পারেনি৷ আর চিকিত্সার জন্য বর্তমানে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন৷ প্রয়োজন হলে সময় মতো তিনি দেশে ফিরে আসবেন৷''
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জয় সস্তা কথা বলে নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করছেন৷ এভাবে রাজনীতিতে আসা যায় না, আর আসা গেলেও দেশের মানুষ তা ভালোভাবে নেবে না৷''
আগামী নির্বাচনে মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলেই সরকার বুঝতে পারবে কাদের জনপ্রিয়তা কত৷'' নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান৷