ইউক্রেনের বিপক্ষে জয় দিয়ে ইউরো-২০১৬ শুরু করেছে জার্মানি৷ বিশ্বকাপের সঙ্গে ইউরোপ সেরার শিরোপাও যোগ করার লক্ষ্যের দিকে যাত্রায় এ জয় নিশ্চয়ই ভালো সূচনা৷ জার্মানির সূচনা ভালো হলেও ইউরোর শুরুটাকে কলঙ্কিত করেছে মারামারি৷
বিজ্ঞাপন
নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইউক্রেনকে ২-০ গোলে হারিয়েছে জার্মানি৷ ১৯ মিনিটে দলের হয়ে প্রথম গোল মুস্তাফি৷ তারপর বেশ জমে উঠেছিল ম্যাচ৷ খেলায় সমতা ফেরানোর অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করেছিল ইউক্রেন৷ কিন্তু জার্মান গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ারের দৃঢ়তায় সারা ম্যাচে তারা একবারও গোলের দেখা পায়নি৷ উল্টো অতিরিক্ত সময়ে বাস্তিয়ান শোয়াইনস্টাইগার ব্যবধান দ্বিগুণ করায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়৷
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তেই মাঠে নেমে বাজিমাত করেন শোয়াইনস্টাইগার৷ ফলে গোলটি এখন তুমুল আলোচনায়৷ মাত্র তিন মিনিট খেলে, তিনবার বল স্পর্শ করে, দু'টি মাত্র পাস দিয়ে মহামূল্যবান গোলটি করায় তাঁর প্রশংসা করছেন অনেকেই৷
ইউরো-২০১৬ এখনো কোনো ভালো বা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচের জন্য খুব বেশি আলোচনায় আসেনি৷ আলোচনা বেশি হচ্ছে বরং সমর্থকদের মারামারি নিয়ে৷ বিশেষ করে রাশিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে-পরে দু'দেশের সমর্থকদের সংঘর্ষ আয়োজকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে৷ নিজেদের সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ না করলে রাশিয়া এবং ইংল্যান্ডকে টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কারের হুমকিও দিয়েছে ইউরো-২০১৬-র আয়োজক কমিটি৷
শুধু রাশিয়া আর ইংল্যান্ডকে সতর্ক করলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এমনটি ধরে নেয়া কি ঠিক? তা সম্ভব নয় বলেই সমর্থকদের উচ্ছৃঙ্খল এবং আক্রমণাত্মক আচরণের রেশ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে গ্যালারিতে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করেছে উয়েফা৷
ইউরো ২০১৬-তে জার্মানির ২৩ জন
জার্মানির কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ ২০১৬ সালের ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য তাঁর দল ঘোষণা করেছেন৷ ডর্টমুন্ডের মার্কো রয়েসসহ চারজন খেলোয়াড়কে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Eisenhuth
মানুয়েল নয়ার
নয়ার যে দলে থাকবেন, সেটা কোলের শিশুরাও বলে দিতে পারতো৷ জার্মানির নাম্বার ওয়ান জার্সিধারী নয়ার কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের তালিকাতেও সবার ওপরে৷ বিশ্বের সেরা গোলরক্ষকদের মধ্যে পড়েন, সেই সঙ্গে প্রায় ফুলব্যাকের মতো পেনাল্টি এরিয়া থেকে বেরিয়ে ট্যাকল করতে পারেন মানুয়েল নয়ার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Eisenhuth
মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন
নয়ারের বিকল্প৷ বার্সেলোনাতেও ‘ফার্স্ট চয়েস’ নন, শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়নস লিগ আর স্প্যানিশ কাপের ম্যাচগুলোতে বার্সেলোনার গোলপোস্টের নীচে থাকেন৷ সেখানে নাম্বার ওয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে, জার্মান একাদশে নয়ারের স্থান নেওয়া তাঁর জন্য দুরাশা৷ তবুও ল্যোভ তাঁর উপর অনেক আশা রাখেন৷
ছবি: M. Rose/Bongarts/Getty Images
ব্যার্ন্ড লেনো
নয়ারের পর মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনকে ডিঙিয়ে গোলে দু’নম্বর জায়গাটা বুন্ডেসলিগায় লেভারকুজেন দলের গোলরক্ষক ব্যার্ন্ড লেনোও দখল করে নিতে পারেন৷ জার্মানির ইয়ুথ টিমের আমল থেকেই লেনো আর টের স্টেগেনের মধ্যে লড়াই চলছে৷ তবে লেভারকুজেনের গোলে লেনোই অবিসংবাদিত নাম্বার ওয়ান, বার্সেলোনায় টের স্টেগেন যা নন৷
ছবি: picture alliance/Pressefoto/R. Rudel
জেরোম বোয়াটেং ও মাট্স হুমেল্স
বোয়াটেং (বাঁয়ে) আর হুমেল্স হলেন জার্মানির ডিফেন্সের প্রাণকেন্দ্র৷ জার্মানির ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন এই দু’জন৷ বুন্ডেসলিগার আগামী মরশুমে বায়ার্নের ব্যাক লাইনের ব্যাকবোনও হবেন এই দু’জন৷ হুমেল্স এতদিন বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডে ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
বেনেডিক্ট হ্যোভেডেস ও ইয়োনাস হেক্টর
জার্মান অথবা ইউরোপীয় ফুটবলে ব্যতিক্রমী ফুলব্যাক খুব বেশি ুপাওয়া যায় না, জার্মান একাদশে মোট ১৪ বছর ধরে যা ছিলেন সাবেক অধিনায়ক ফিলিপ লাম৷ ছবিতে হেক্টর বাঁয়ে ও হ্যোভেডেস ডানে৷ হেক্টর খেলেন কোলনে; হ্যোভেডেসের ক্লাব হলো শালকে৷ হোয়ভেডেস ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন৷
ছবি: picture alliance/Eibner-Pressefoto
এমরে চান
আরেক ফুলব্যাক, ব্যাকলাইনের যে কোনো পজিশনে খেলতে পারেন৷ আপাতত খেলেন এফসি লিভারপুলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে৷ বহুমুখী খেলোয়াড়, খুবই কাজের৷
আ এস রোমা-র আন্টোনিও রুডিগার (ডানে) ফুলব্যাক হিসেবে অথবা সেন্ট্রাল ডিফেন্সে খেলতে পারেন৷ ভ্যালেন্সিয়ার শ্কোদ্রান মুস্তাফি মাঝমাঠে খেলতে পছন্দ করলেও উইংয়েও খেলেছেন৷ ২০১৪ সালের দল থেকে মুস্তাফিকে প্রথমে বাদ দেওয়া হয়েছিল, পরে মার্কো রয়েসের ইনজুরির জন্য মুস্তাফি দলে আসেন ও জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর অবদান রাখেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Ibing
টোনি ক্রোস ও সামি কেদিরা
এই জুটিকে জার্মান মিডফিল্ডের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে৷ এই মৌসুমে ইউভেন্তুসে গিয়ে কেদিরা যেন পুনর্জীবন লাভ করেছেন৷ টোনি ক্রোস আসছেন রেয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জয় করার পরে৷ এই জুটিই জার্মানিকে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছিল৷
ছবি: Getty Images/Bongarts/A. Hassenstein
লুকাস পোডোলস্কি ও বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার
জাতীয় একাদশে ‘পোল্ডি’ ও ‘শোয়াইনি’র আবির্ভাব ২০০৪ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে৷ সেই থেকে তাঁরা জার্মানির হয়ে প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টে খেলে আসছেন৷ তবে ফ্রান্সে তাঁরা কেমন খেলবেন, তা বলা শক্ত৷ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে পোডোলস্কি কিছুটা খেলার ‘ধার’ হারিয়েছেন৷ ওদিকে শোয়াইনস্টাইনগার আপাতত একটি চোট কাটিয়ে উঠছেন৷ তবে ল্যোভ দৃশ্যত এই দু’জনকে হাতেই রাখতে চান৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES/M. Gilliar
টোমাস ম্যুলার
বায়ার্নের সাবেক কোচ লুই ফান খাল একবার ঘোষণা করেছিলেন, ‘ম্যুলার খেলবেই৷’ কথাটা বোধহয় জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও খাটে৷ ফরোয়ার্ড লাইনে ম্যুলারের মতো গোলগেটারকে বাদ দেওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: picture alliance/Pressefoto ULMER/M. Ulmer
মারিও গ্যোৎসে
গ্যোৎসে বায়ার্নে যাবার পর আর ঠিক তাঁর ফর্ম কিংবা জায়গা খুঁজে পাননি৷ তবুও তিনি জাতীয় টিমের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য৷ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ে জার্মানির হয়ে চূড়ান্ত গোলটি করেছিলেন এই গ্যোৎসে৷ ইউরো ২০১৬ তাঁর জন্য একটা ব্যক্তিগত সুযোগও বটে৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
মেসুত ও্যজিল
ওয়েজিল আর্সেনালে ঠিক সুবিধা করে উঠতে পারেননি৷ কখনো ভালো খেলেন আবার কখনো ততোটা চোখে পড়ার মতো নয়৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি জার্মান দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের মধ্যে ধর্তব্য৷ ফ্রান্সে জার্মানির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে প্লে-মেকার হিসেবে ও্যজিলের পার্ফর্মেন্সের উপর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Revierfoto
মারিও গোমেস
তুরস্কে বেসিকটাস ইস্তানবুলের সঙ্গে ভালো একটা মৌসুমই কাটিয়েছেন জার্মানদের প্রিয় ‘সুপার মারিও’৷ ইউরো ২০১২-র পর এই প্রথম জার্মানির হয়ে খেলছেন এই স্ট্রাইকার৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
লিরয় সানে
শালকে-তে খেলেন, ক্রমেই উন্নতি করে চলেছেন এবং সেভাবেই ল্যোভের নজর কেড়েছেন৷ অফেন্সের খেলোয়াড়, বয়স মাত্র বিশ৷ জাতীয় দলে এই প্রথম৷
ছবি: picture alliance/Promediafoto/M. Deines
জোশুয়া কিমিচ
এ বছরই প্রথম বায়ার্নের হয়ে খেলতে শুরু করেন কিমিচ এবং কোচ পেপ গুয়ার্দিওলার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন৷ মিডফিল্ড বা ডিফেন্স দুই পজিশনেই খেলতে পারেন, তবে ল্যোভ সম্ভবত কিমিচকে মিডফিল্ডেই ব্যবহার করবেন৷
ছবি: M. Rose/Bongarts/Getty Images
ইউলিয়ান ভাইগল
ডর্টমুন্ডের কোচ টোমাস টুখেল ইউলিয়ান ভাইগলকে তাঁর সেন্ট্রাল মিডফিল্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন৷ সেকেন্ড ডিভিশন থেকে বুন্ডেসলিগায় আসার পর ভাইগল দেখিয়েছেন, তিনি জাতীয় দলে থাকার যোগ্যতা রাখেন৷ তাই ডর্টমুন্ডের মাটিয়াস গিন্টার, মার্সেল শ্মেলৎসার বা এরিক ডুয়র্ম ডাক না পেলেও, জুলিয়ান ভাইগল ঠিকই ইউরো ২০১৬-য় যাচ্ছেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/G. Chai von der Laage
ইউলিয়ান ড্রাক্সলার
ভল্ফসবুর্গে এ মৌসুমে বিশেষ সুবিধা করতে না পারলেও, ড্রাক্সলার স্কোয়াডে থাকছেন৷ একদিকে তাঁর আক্রমণের ক্ষমতা, অন্যদিকে ২০১৪-র বিশ্বকাপে তাঁর অবদান - দুটোই দৃশ্যত ল্যোভের স্মরণে ছিল৷
ছবি: picture alliance/Sven Simon
আন্দ্রে শ্যুয়র্লে
ভল্ফসবুর্গে শ্যুয়র্লেরও মৌসুম যে খুব ভালো কেটেছে, এমন নয়৷ তবে তিনি জাতীয় একাদশের সঙ্গে চিরকালই ভালো পার্ফর্মেন্স দেখিয়ে এসেছেন৷ বুন্ডেসলিগা মৌসুম ভালোভাবেই শেষ করেছেন৷ এবার দেখা যাক ইউরোতে কেমন খেলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/El-Saqqa
ল্যোভ-এর পছন্দ
‘‘আমার মনে হয়, খেলার ক্ষমতার পরেই আসে খেলোয়াড়ের ব্যক্তিত্ব, প্লেয়াররা যাতে মাঠের বাইরেও তাদের ছাপ রাখতে পারে-’’ বলেছেন ল্যোভ৷ দেখা যাক ফ্রান্সে কী ঘটে৷