ঝড় অররের তাণ্ডবে পোল্যান্ডে চারজনের মৃত্যু, জার্মানিতে রেল চলাচলে বিঘ্ন, ফ্রান্সে বিদ্যুৎ বিপর্যয়, নেদারল্যান্ডসেও মানুষ আহত।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার উত্তর ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে তাণ্ডব চালাল ঝড় অরর। এর ফলে পোল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস-সহ বেশ কয়েকটি দেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
পোল্যান্ডে মোট চারজন মারা গেছেন। তার মধ্যে একজন মারা যান তার ভ্যান ঝড়ের দাপটে উল্টে যাওয়ায়। দেওয়াল ধসে একজন মারা গেছেন। পশ্চিম পোল্যান্ডে গাছ পড়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিদ্যুৎ ছাড়া লাখো মানুষ
ফ্রান্সে দুই লাখ ৫০ হাজার বাড়িতে সারারাত বিদ্যুৎ ছিল না। ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসে এখনো প্রবল গতিতে হাওয়া বইছে।
জার্মানিতে অনেকগুলি রাজ্য ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসে ঝড়ের দাপটে ঘরের টালির ছাদ উড়ে গেছে, গাছ পড়েছে। স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, অন্ততপক্ষে চারজন আহত হয়েছেন। বেলজিয়ামেও ডাচ সীমান্তের একটি শহরে ঝড়ের দাপটে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জার্মানির অবস্থা
জার্মান ওয়েদার সার্ভিস(ডিডাব্লিইডি) আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিল যে, ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার গতিতে ঝড় হবে। উত্তর ও উত্তরপূর্ব জার্মানি সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপরই নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া সহ অনেক জায়গায় দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করা হয়। পূর্ব জার্মানিতে অনেক রাজ্যে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।
জার্মানিতে ট্রেনের লাইনে গাছ পড়ে গেছে। ওভারহেড লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলি এখন ঠিক করার কাজ চলছে। বস্তুত জার্মানি জুড়েই অসংখ্য গাছ পড়েছে। উত্তর-পশ্চিম জার্মানিতে একজন আহত হয়েছেন। পূর্ব জার্মানিতে একটি গাড়ির উপর গাছ পড়ে যায়। তাতে একজন আহত হন। গাড়ি থেকে বের করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বার্লিন চিড়িয়াখানার পশুদের ঢাকা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হয়।
চলতি বছরের যত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ
জার্মানি, ক্যানাডা কিংবা চীন-ভারত - সব অঞ্চলেই এ বছর ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিয়েছে৷ ছবিঘরে দেখুন বিভিন্ন সময়ে আঘাত হানা কিছু দুর্যোগের মুহূর্ত৷
ছবি: Noah Berger/AP Photo/picture alliance
ইউরোপে বন্যা
গ্রীষ্মকালে অতিবৃষ্টির কারণে ইউরোপের জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে৷ আকস্মিক এ বন্যায় শুধুমাত্র জার্মানি ও বেলজিয়ামেই দুইশ নয় জন প্রাণ হারান৷ আর ঘরছাড়া হয়েছেন শত শত মানুষ৷ এমন বন্যা গত এক দশকেও দেখেনি ইউরোপ৷
ছবি: Thomas Lohnes/Getty Images
আক্রান্ত চীন, ভারতও
অতিবৃষ্টির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দুই জনবহুল রাষ্ট্র চীন এবং ভারতেও বন্যা দেখা দিয়েছে৷ হতাহতের সংখ্যা সেখানেও কম নয়৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কারণেই এমন পরিস্থিত তৈরি হচ্ছে যা আসছে বছরগুলোতেও হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
রেকর্ড গরম যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডায়
ইউরোপ কিংবা এশিয়া যখন বন্যায় নাকাল, যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার কিছু অঞ্চল তখন উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে৷ দক্ষিণ ক্যানাডার লিটোন অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৪৯ দশমিক ছয় ডিগ্রি পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে৷
ছবি: Ted S. Warren/AP/picture alliance
দাবানলে পুড়ছে
উষ্ণ তাপমাত্রায় সৃষ্ট তীব্র গরম কমে আসলেও আবহাওয়ার শুষ্কতার কারণে দেখা দিচ্ছে অন্য বিপদ৷ যুক্তরাজ্যের অরিগন অঞ্চলের কথাই ধরুন৷ সেখানে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট দাবানলে দুই সপ্তাহে বিশাল এলাকা পুড়ে গেছে৷
ছবি: National Wildfire Coordinating Group/Inciweb/ZUMA Wire/picture alliance
ঝুঁকিতে আমাজন?
এদিকে, দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ ব্রাজিল দগ্ধ হচ্ছে তীব্র খরায়৷ এমন খরা গত একশ বছরেও দেখেনি দেশটি৷ এর ফলে পৃথিবীর ফুসফুস হিসেবে খ্যাত আমাজনে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Andre Penner/AP Photo/picture alliance
মঙ্গায় আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষ
তীব্র খরায় কারণে ফসল উৎপাদন না হওয়ায় আফ্রিকার দেশ মাদাগাস্কারের প্রায় ১১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ তীব্র খাবার সংকটে পড়েছে৷ পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে সেখানকার মানুষ ক্ষুধা মেটাতে ক্যাকটাস ও পোকামাকড় খেয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় আছে৷
ছবি: Laetitia Bezain/AP photo/picture alliance
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘর ছাড়া হাজারো মানুষ
প্রাকৃতিক দুর্যোগে মুখে ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা গত এক দশকের মধ্যে ২০২০ সালেই সবচেয়ে বেশি ছিল৷ পরিসংখ্যান বলছে, বন্যা, বৃষ্টি ও খরাসহ নানা ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০২০ সালে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন৷
ছবি: Fabeha Monir/DW
7 ছবি1 | 7
ফ্রান্সের অবস্থা
ফ্রান্সে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার। আইফেল টাওয়ারের উপরে ঝড়ের গতিবেগ রেকর্ড করেছে মেট্রো ফ্রান্স। সেখানে ঘণ্টায় ১৫৩ কিলোমিটার বেগে ঝড় হয়েছে।
ঝড়ের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিন হাজার টেকনিশিয়ান এখন পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নেমেছেন। ফ্রান্সে বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। কিছু জায়গায় ফ্লাশ ফ্লাড হয়েছে।