‘হাইয়ান’ আঘাত হানার বেশ কয়েক দিন পরেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না৷ অবকাঠামোর অভাব ও অব্যবস্থার কারণে ত্রাণ ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না৷ মানুষের ক্ষোভও বেড়ে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিপাইন্সে বিধ্বংসী ঝড় ‘হাইয়ান'-এর দাপটে হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না৷ দেশের জাতীয় বিপর্যয় ত্রাণ সংস্থার সূত্র অনুযায়ী বুধবার সকালে মৃতের সংখ্যা ২,২৭৫ ছাড়িয়ে গেছে৷ আহতের সংখ্যা ৩,৬৬৫-রও বেশি৷ অন্যান্য সূত্রে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে৷ জাতিসংঘের অনুমান, শুধু টাকলোবানেই ১০,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ লেইটে ও সামার প্রদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপাইন্সে বিপর্যয়ের পর অবকাঠামো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, ত্রাণকাজে পদে-পদে সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ সেই সঙ্গে চলছে অরাজকতা৷ টাকলোবান শহরের কাছে উন্মত্ত জনতা একটি গুদাম থেকে চাল লুট করার চেষ্টা করছিল৷ মানুষের চাপে একটি দেয়াল ভেঙে গেলে কমপক্ষে ৮ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীরা গুদাম পাহারা দিলেও এত সংখ্যক মানুষকে আটকানো সম্ভব হয় নি৷ প্রায় ৫০ কিলো ওজনের কমপক্ষে ১২৯,০০০ চালের বস্তা লুট করা হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷
গোটা বিশ্ব থেকে ফিলিপাইন্সে ত্রাণ এসে পৌঁছচ্ছে৷ কিন্তু সেনাবাহিনী মোতায়েন করেও কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে দ্রুত সাহায্য পৌঁছাতে পারছে না৷ ফলে ক্ষোভ বাড়ছে৷ প্রেসিডেন্ট বেনিগনো অ্যাকুইনো গোটা দেশে জরুরি বিপর্যয় পরিস্থিতি ঘোষণা করা সত্ত্বেও সমস্যা রয়ে গেছে৷ আন্তর্জাতিক দাতারা এখনো পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি ডলারের সাহায্যের অঙ্গীকার করেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথমে ৩০ লক্ষ ইউরো পাঠিয়েছিল৷ পুনর্বাসনের জন্য আরও ১ কোটি ইউরো পাঠানো হচ্ছে৷ জার্মানির সাহায্যের অঙ্কও বেড়ে চলেছে৷ জার্মান সরকার ১০ লক্ষ ইউরো সাহায্যের ঘোষণা করেছে৷
স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার চেষ্টা করছে দুর্গতরা
টাকলোবানসহ ফিলিপাইন্সের ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকার মানুষ নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার চেষ্টা করছে৷ তার মধ্যে একটি বেদনাদায়ক কাজ হলো মৃতদেহগুলির সৎকার করা৷
ছবি: Nicolas Asfouri/AFP/Getty Images
শনাক্ত করা যাচ্ছে না মৃতদেহ
টাকলোবান শহরের বাইরে পাহাড়ের কোলে একটি কবরখানায় অনেক মৃতদেহ দাফন করা হয়৷ অনেক মৃতদেহ শনাক্ত না করতে পারায় গণকবর দিতে হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা এখনো ছেড়ে দেয়নি৷ তবে মৃতদেহগুলির ডিএনএ নমুনা রাখা হচ্ছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters
প্রয়োজনীয় সাহায্যে পাচ্ছে না মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে বিচ্ছিন্নভাবে খাদ্য ও পানীয় জল পৌঁছাচ্ছে বটে, কিন্তু অনেক মানুষই প্রয়োজনীয় সাহায্যের নাগাল পাচ্ছে না৷ লুটপাটের ঘটনা বাড়ছে, ফলে নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১ কোটি ১৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য সংস্থার প্রধান ভ্যালেরি আমোস টাকলোবান বুধবার পরিদর্শন করেছেন৷ তিনি বলেন, টাইফুন হাইয়ানের ফলে প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: Kevin Frayer/Getty Images
২ হাজার মানুষ নিখোঁজ
সামার প্রদেশে এখনো অন্তত ২ হাজার মানুষ নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ সেখানে মৃতের সংখ্যা প্রায় তিনশো বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তা৷
ছবি: Reuters
ত্রাণের বন্টন নিয়ে সমস্যা
রাজধানী ম্যানিলা ও সেবু-র বিমানবন্দরে দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী এসে জমা হচ্ছে৷ কিন্তু তার বণ্টন নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে৷ টাকলোবান শহরের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিমানবন্দরে চিকিৎসা তৎপরতা চলছে৷
ছবি: Reuters
খাদ্যের জন্য ঘুরে ফিরছেন শত শত মানুষ
স্বজনদের খোঁজে এবং খাদ্যের জন্য ঘুরে ফিরছেন শত শত মানুষ৷ লেটের একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী জানালেন, মানুষ খাদ্যের জন্য পাগলের মতো হেঁটে বেড়াচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
ফিলিপাইন্সের জাতীয় পুলিশ-বাহিনীর মুখপাত্র সোমবার এবিএস-সিবিএন টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশবাহিনী লুটপাটকারীদের হামলার শিকার হচ্ছেন, এমনকি তাঁদের পরিবারও বাদ যাচ্ছে না৷ সেনা মুখপাত্র কর্নেল রেমন জাগালা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, সামারে চার হাজার সেনা আছে৷ কিন্তু তাঁদের অনেকেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চীনের প্রভাব দেখানোর চেষ্টা
চীন সামগ্রিকভাবে গোটা অঞ্চলে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করলেও ফিলিপাইন্সের ত্রাণের প্রশ্নে যথেষ্ট উদার মনোভাব দেখাচ্ছে না৷ ফলে বেইজিংয়ের প্রশাসন দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ছে৷
ছবি: Nicolas Asfouri/AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষ নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষের অনাহার, রোগের প্রকোপ থেকে শুরু করে ত্রাণ কর্মীদের অবসাদের মতো অনেক ঘটনার কথা জানা যাচ্ছে৷ সরকার তাদের সমস্যার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছে না বলেও সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ অনেক মানুষ নিজেদের ভাঙা বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে প্রস্তুত নয়৷ অনেকের অন্য কোনো আশ্রয় নেই, বাকিরা নিজেদের ভিটেমাটি আগলে রাখতে চায়৷ ক্ষতিগ্রস্ত পথঘাট মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলির সঙ্গে বিমান যোগাযোগও ধীরে ধীরে আবার চালু হচ্ছে৷