প্রবল ঝড়-বৃষ্টি, ঝঞ্জা, দুর্যোগ থেকে আমরা দূরে থাকার চেষ্টা করি৷ জার্মানির এক ফটোগ্রাফার অসাধারণ ধৈর্য্য ও পরিশ্রম সম্বল করে এমন বিপর্যয়ের সন্ধানেই ঘুরে বেড়ান৷ তাঁর তোলা ছবিগুলির বিশেষ কদর রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
আলোকচিত্রী হিসেবে বাস্টিয়ান ভ্যার্নার বৃষ্টি হলে ও বাজ পড়লে বড়ই খুশি হন৷ ঝড়ঝঞ্ঝার মতো খারাপ আবহাওয়ায় তাঁর মন আনন্দে ভরে যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘ঝড়-বৃষ্টির এই তাণ্ডবের প্রভাবের মধ্যে সৌন্দর্য ও শক্তি লুকিয়ে রয়েছে৷ এমন সময়ে আমার মধ্যে যেন শিকারি ও জুয়াড়ি জেগে ওঠে৷ সেই তাগিদ পূরণ করলেই আনন্দ পাই৷’’
২৭ বছর বয়সি এই ফটোগ্রাফার ক্যামেরাকে হাতিয়ার করে ঝড়ের পেছনে ধাওয়া করেন৷ আকাশজুড়ে বিদ্যুতের জাল কিংবা ভয়ংকর দেখতে ঝড়ের মেঘের মতো চোখ ধাঁধানো আবহাওয়াই তাঁর প্রিয় মোটিফ৷ ‘ঝড় শিকারি' নামের বইয়ে তিনি সেই সব ছবি প্রকাশ করেছেন৷
ঝড়-বৃষ্টির সৌন্দর্যের ছবি তোলেন তিনি
04:10
আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য ও পূর্বাভাষের ভিত্তিতে বাস্টিয়ান নিজের মোটিফের খোঁজ করেন৷ দুর্যোগের আশঙ্কা দেখলেই তিনি সে দিকে রওয়ানা হন৷ এমনই এক ‘শিকারের’ সময় বাস্টিয়ান বলেন, ‘‘আজকের দিনে আমরা সুন্দর এক ঝড়ের আশা করছি, যাকে ‘শেলফ ক্লাউড’ বলা হয়৷ সেগুলি শক্তিশালী মেঘ, যেগুলি ঝড়ের সামনে থেকে আমাদের দিকে ধাওয়া করে৷ ক্যামেরার সাহায্যে আমি সেই দৃশ্য ধরে ফেলতে পারি৷’’
আলোকচিত্রী হিসেবে বাস্টিয়ান ছবি এডিটিং-এরও শিক্ষার্থী৷ শিশু বয়সেও তিনি মেঘ, বিদ্যুৎ, বাজের প্রতি জাদুময় আকর্ষণ অনুভব করতেন৷ প্রতি বছর ছবির সন্ধানে তিনি হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেন৷ জার্মানিতেই বেশি সময় কাটে৷ যেমন হাইডেলবার্গ শহরের কাছে ঝড় সৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি৷
প্রায়ই তিনি আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার আকর্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিড ওয়েস্ট অঞ্চলে ছুটে যান৷ তাঁর ক্যামেরার লেন্সে একটি টরন্যাডো বা ঘুর্ণীঝড় ধরা পড়েছে৷
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অবিশ্বাস্য কিছু ছবি
লন্ডনের রয়াল অবজারভেটরি প্রতি বছর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে চমৎকার ছবিগুলো বাছাই করে৷ এগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতাও হয়৷ এখানে কয়েকটি অসাধারণ ছবি দেখুন৷
ছবি: Ben Bush
একটা গ্রহের জন্ম
২০১৯ সালের মে মাসে চিলি থেকে ফটোগ্রাফার মার্টিন পুগ তার সিডিকে ১৭ টেলিস্কোপ দিয়ে ওপরে তাকিয়ে অবিশ্বাস্য এক ঘটনা দেখতে পান৷ তিনি দেখেন, একটি গ্রহের জন্ম হচ্ছে৷ এরপর অনেকবার পরিষ্কার আকাশের রাতে এই অস্ট্রেলিয়ান তথ্য সংগ্রহ করেন এবং আলোর যথাযথ পরিমাপ নেন৷ পরে ২৩ ঘণ্টা ধরে তিনি হাইড্রোজেন ঘূর্ণির এই ছবি তোলেন৷
ছবি: Martin Pugh
ওপরে তাকালে কী দেখা যায়?
একজন মহাকাশবিজ্ঞানী ও ফটোগ্রাফারের শৈল্পিক সংযোগ ঘটলে কী হয় তা দেখা যায় এই ছবিতে৷ মহাকাশের মিল্কিওয়ের গ্যালাক্টিক কোরের এমন চমৎকার ছবিটি তুলেছেন জে ইভান্স৷ এই অজি তার দেশের লোহা ও ইস্পাত শিল্পের আইকনিক বিল্ডিং লিথগো ব্লাস্ট ফারনেসের ভেতর থেকে এই ছবিটি তুলেছেন একটি হাইরেজ্যুলেশন ক্যামেরা দিয়ে৷
ছবি: Jay Evans
শুক্রের গ্রাস
সেদিন চিলির ইএসও অবজারভেটরি থেকে সেদিন মহাকাশকে এমন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল৷ জটিল একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে ফটোগ্রাফার সেবাস্টিয়ান ভল্টমার এই ছবিটি তোলেন, যেখানে শুক্রকেও আলোকিত দেখাচ্ছে৷ এই একটি ছবি তৈরিতে তার মোট ৯৬টি ছবি লেগেছিল৷
ছবি: Sebastian Voltmer
লফোটেন দ্বীপের নর্দার্ন লাইটস
জার্মান ফটোগ্রাফার আন্ড্রিয়াস এটল নরওয়ের লফোটেন দ্বীপে এই ছবি তোলেন৷ আর্কটিক সার্কেলের নীচের এই জায়গাটি থেকে পৃথিবীর অন্যতম চমৎকার অরোরা বোরিয়ালিস দেখা যায়৷ তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘হামনয় লাইটস’৷
ছবি: Andreas Ettl
ছায়াপথের সাম্যতার ছবি
ফটোগ্রাফার অ্যান্ডি কেসলি একটি অতি উচ্চক্ষমতার টেলিস্কোপ দিয়ে এই অতিপ্রাকৃতিক মুহূর্তটুকু তুলে এনেছেন৷ গেল বছরের গ্রীষ্মে চাঁদের পেছনে উকি দেয়া শনির ছবি তোলেন৷
ছবি: Andy Casely
লন্ডনের ওপরে চাঁদ
তিনটি ব্যর্থ চেষ্টার পর ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার ম্যাথু ব্রাউনি লন্ডনের পূর্ণচন্দ্রিমার এই ছবিটি তোলেন৷ ব্যাটম্যান ছবির গোথাম শহরের আবেশ নিয়ে আসা ছবিটি তুলতে কয়েক মিনিট মাত্র সময় পান তিনি৷
ছবি: Mathew Browne
আর্কটিকে রংয়ের খেলা
আর্কটিকের এই রঙ যে কোনো ফটোগ্রাফারের ক্যামেরাতেই অদ্ভুত সব মুহূর্ত উঠে আসে৷ কিন্তু বেন বুশ একে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন এই ছবিটি তোলার মাধ্যমে৷ এর জন্য তাকে অবশ্য মাইনাস ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটলান্টিকের পাড়ে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে হয়েছে৷
ছবি: Ben Bush
7 ছবি1 | 7
জার্মানিতে এমন দুর্যোগ অত্যন্ত বিরল৷ এক বিশেষ রাডার যন্ত্রের সাহায্যে বাস্টিয়ান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার গতিপথ সম্পর্কে পূর্বাভাষ পান৷ এমন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বাস্টিয়ান বলেন, ‘‘একটি ঝড় মূলত সোজা পথেই জার্মানির উপর দিয়ে চলে যায়৷ সেটির লক্ষ্যবস্তুর যাত্রাপথেই আমি রয়েছি৷ ঝড় শিকারি হিসেবে আমাকে নিজেকে বাঁচিয়ে সেটির একেবারে সামনে চলে যেতে হয়৷’’
কারণ এমন ঝড়ের ঠিক মাঝের অংশটি ধূসর ও বৃষ্টিভরা৷ ফলে ভালো ছবি তুলতে হলে ঝড়ের সীমানার ঠিক বাইরে থাকতে হয়৷ কিন্তু ঘটনাস্থলে বিদ্যুতের চমক ও মেঘ সত্যি নাটকীয় মোটিফ সৃষ্টি করতে পারবে কিনা, তা কখনো বলা যায় না৷
লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে গাড়ি চালিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা যাবার পর বাস্টিয়ান ছবি তোলার সেরা জায়গা খুঁজে পেলেন৷ তবে ভালো ছবি তোলার আশা কমে গেল৷ কারণ সেখানে ধূসর আকাশ ছাড়া কিছুই দেখা গেল না৷ বাস্টিয়ান বলেন, ‘‘মাথার উপর হালকা বৃষ্টিপাত হলে হয়তো ঝড়ের কিছুটা রূপ দেখা যাবে৷ এ ছাড়া ঝড় যেন বৃষ্টির মোড়কে ঢুকে গেছে৷ প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে মেঘের কোনো কাঠামো দেখা যাচ্ছে না৷’’
বাস্টিয়ান ভ্যার্নার এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও অপেক্ষা করতে চান৷ আবহাওয়া-আলোকচিত্রী হিসেবে ধৈর্য্য বড় সম্পদ৷ ঘন কালো মেঘের জন্য অপেক্ষা করতে করতে নতুন পরিকল্পনা মাথায় আসতেই পারে৷ বাস্টিয়ান বলেন, ‘‘আমার করণীয় কাজের তালিকায় হারিকেন ঝড়ের মধ্যে ঢোকার ইচ্ছে রয়েছে৷ ঝড়ের ‘আই’ বা চোখের মধ্যে থেকে বাইরে ২০ কিলোমিটার উঁচু মেঘের প্রাচীর দেখতে চাই৷ ঠিক যেন স্টেডিয়ামের মতো৷ আমার চারিদিক হারিকেন ঘিরে থাকবে, এমন অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে চাই৷’’
এ যাত্রায় ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করে কোনো লাভ হলো না৷ এমন অভিজ্ঞতাও আবহাওয়া-আলোকচিত্রীর জীবনে বিরল নয়৷ এ ক্ষেত্রে কোনো গ্যারেন্টি নেই৷ কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকলে অসাধারণ শক্তিশালী ও সুন্দর ছবি তোলা যায়৷
ক্রিস্টিয়ান ভাইবেসান/এসবি
৪ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...
সেরা ‘ফুড ফটোগ্রাফার’ হলেন এক বাংলাদেশি
ইংল্যান্ডের ‘দ্য ফুড অ্যাওয়ার্ডস কোম্পানি’র আয়োজনে প্রতিবছর ‘পিঙ্ক লেডি ফুড ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ বাংলাদেশের কেএম আসাদের তোলা একটি ছবি এবার প্রতিযোগিতার সেরা পুরস্কার পেয়েছে৷
ছবি: K M Asad
সেরা ছবি
খাবারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের এই ছবিটি তুলেছেন কেএম আসাদ৷ ২০২০ সালের ‘পিঙ্ক লেডি ফুড ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতার ‘পলিটিক্স অব ফুড’ বিভাগে এটি প্রথম হয়েছে৷ এছাড়া ‘ওয়ার্ল্ডস বেস্ট ফুড ফটো অ্য়াওয়ার্ড’ও জিতেছে এটি৷ ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশের নূর আহমেদ জিলাল এবং ২০১৭ সালে শোয়েব ফারুকীর ছবি সেরা হয়েছিল৷
ছবি: K M Asad
ইজতেমায় রান্না
বিশ্ব ইজতেমা প্রাঙ্গণে খাবার রান্না হচ্ছে৷ কেএম আসাদের এই ছবি ‘ফুড ফর সেলেব্রেশন’ বিভাগে প্রথম হয়েছে৷ ২০২০ সালের প্রতিযোগিতায় ৭০টি দেশের প্রায় নয় হাজার ছবি জমা পড়েছিল৷
ছবি: K M Asad
ইলিশের স্তূপ
চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাটে আজিম খান রনির তোলা এই ছবি ‘অন দ্য ফোন’ বিভাগে সেরা হয়েছে৷
ছবি: Azim Khan Ronnie
দর কষাকষি
এক ব্যক্তি দর কষাকষির জন্য বাজারে অপেক্ষা করছেন৷ জেয়াবল হকের এই ছবি ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম স্টোরি টেলার্স ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ বিভাগে প্রথম হয়েছে৷
ছবি: Jeyabol Hoque
রাখের উপবাস
নারায়ণগঞ্জের বারদীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কার্তিকব্রত বা রাখের উপবাস অনুষ্ঠানে তোলা আজিম খান রনির এই ছবি ‘ফুড ফর সেলেব্রেশন’ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে৷
ছবি: Azim Khan Ronnie
মরিচ শুকানোর ছবি
বগুড়ার সারিয়াকান্দির এক চাতালে আজিম খান রনির তোলা মরিচ শুকানোর এই ছবি ‘ফুড ইন দ্য ফিল্ড’ বিভাগে তৃতীয় হয়েছে৷
ছবি: Azim Khan Ronnie
বিক্রির জন্য খাবার
নসিমনে চড়িয়ে গরু হাটে নেয়া হচ্ছে৷ শাফায়েত হোসেন অ্যাপোলোর তোলা এই ছবি ‘ফুড ফর সেল’ বিভাগে তৃতীয় হয়েছে৷
ছবি: Shafayet Hossain Apollo
জীবনের জন্য খাবার
এক নারী শ্রমিক সিলেটের পাথর কেয়ারিতে কাজের ফাঁকে সন্তানদের নিয়ে খাবার খাচ্ছেন৷ এ এন এম জিয়ার তোলা এই ছবি ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ফুড ফর লাইফ’ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে৷