ইতিহাসের সাক্ষী আমরা সকলেই৷ কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেরাই ইতিহাস সৃষ্টি করেন৷ মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমনই এক কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা৷ ৫ই ডিসেম্বর, জোহানেসবার্গে নিজ বাসভবনে রাত সাড়ে আটটায় তাঁর মৃত্যু হয়।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা গভীর রাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন – এমন ঘোষণার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল দুঃসংবাদের আশঙ্কা৷ স্থির কণ্ঠে তিনি গোটা বিশ্বের সামনে ম্যান্ডেলার মৃত্যুর খবর জানালেন৷ দীর্ঘদিনের অসুস্থতার ফলে এই দুঃসংবাদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সহ গোটা বিশ্ব প্রস্তুত থাকলেও এই মুহূর্ত কারো কাছেই কাম্য ছিল না৷
সভ্যতার দোহাই দিয়ে শেতাঙ্গরা একসময় যখন বর্ণবাদের ঘূর্ণাবর্তে বিলীন করে চলেছিল মানবতাবাদকে, ঠিক তখনই সব শক্তি নিয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষুদ্রাকায় এই মানুষটি৷
প্রতিবাদের ভাষা তাঁর জানা ছিল৷ বুঝেছিলেন, শক্ত হাতেই ধরতে হবে হাল, উঁচুতে তুলতে হবে ঝান্ডা৷ তাই শেষ পর্যন্ত আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস নামের সশস্ত্র দলটির নেতৃত্ব উঠে আসে তাঁরই হাতে৷ অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লুমফন্টেইন শহরে গঠিত হওয়ার সময় এ দলের নাম ছিল ‘সাউথ আফ্রিকান নেটিভ ন্যাশনাল কংগ্রেস'৷ পরে ১৯২৩ সালে নতুন নামে আবির্ভূত হয় দলটি৷ ম্যান্ডেলা দলের সর্বশক্তি ব্যবহার করেন বর্ণবৈষম্য, বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামে৷ না, পথ মসৃণ ছিল না, ছিল বন্ধুর৷ এমনকি, ১৯৬২ সালে নাশকতার অভিযোগ তুলে তাঁকে পুরে দেয়া হয় কারাগারে, দির্ঘায়িত হতে হতে শেষ পর্যন্ত একটানা ২৭ বছরের কারাবাস৷
১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান মানবাধিকার আন্দোলনের অবিসংবাদিত এই নেতা৷ ততদিনে বিশ্বসভায় সর্বজনশ্রদ্ধেয় আসন করে নিয়েছেন নিজের দেশে ‘মাদিবা' নামে পরিচিত ম্যান্ডেলা৷ দক্ষিণ আফ্রিকার তখনকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন, জয় হয়েছিল তাঁর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনেরই৷ সুবাদে দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে রাজনীতির এক নতুন ধারা, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহুবর্ণের গণতন্ত্র৷
১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ – এই পাঁচটি বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়ে ম্যান্ডেলা চেষ্টা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে গড়ে তুলতে৷ তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ক্ষমতায় আসীন এএনসি৷ ঘৃণা, বিদ্বেষ, প্রতিশোধস্পৃহা নয় – গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি অটুট বিশ্বাস ও প্রখর দূরদৃষ্টির মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সমাজে বিভাজন অনেকটাই দূর করেন ম্যান্ডেলা৷ আর ইতিহাসের এমনই দিকপরিবর্তন যে, এক সময় নাশকতার মিথ্যা অভিযোগে যাঁকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল, সেই নেলসন ম্যান্ডেলাকেই ভূষিত করা হয় নোবেল শান্তি পুরস্কারে৷
ব্যক্তিগত জীবন
নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই, দক্ষিণ আফ্রিকার থেম্বু রাজবংশে৷ ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর, তিনি চলে আসেন জোহানেসবার্গে৷ দারিদ্র্যের কারণে ম্যান্ডেলাকে কখনও কাজ করতে হয়েছে খনিতে, কখনও বা ‘ল ফার্মে'৷ ডিগ্রি পরীক্ষা দিতে হয়েছে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে, পরে অবশ্য তিনি আইন পড়েছেন আলেক্সান্দ্রায়৷ ১৯৪৩ সালে যুক্ত হন এএনসির সঙ্গে৷
নেলসন ম্যান্ডেলা: স্বাধীনতার কণ্ঠ
নেলসন ম্যান্ডেলার হাসিমাখা এই মুখের কথা দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ মানুষেরই মনে থাকবে৷ যাঁকে সবাই ভালোবেসে ‘মাদিবা’ নামেই ডাকতেন৷
ছবি: Getty Images
বিদায়, নেলসন ম্যান্ডেলা
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাতে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে জানান নেলসন ম্যান্ডেলা আর নেই৷ দীর্ঘদিনের অসুস্থতার ফলে এই দুঃসংবাদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সহ গোটা বিশ্ব প্রস্তুত থাকলেও এই মুহূর্ত কারো কাছেই কাম্য ছিল না৷
ছবি: Getty Images
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ
১৯৯৪ সালের ১০ মে নতুন ইতিহাসের জন্ম হয়৷ গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷ ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷
ছবি: AP
গান্ধী থেকে অনুপ্রেরণা
অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর জীবন একসময় নেলসন ম্যান্ডেলার জন্য বড় প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল৷ তাইতো ২৭ বছরের কারাজীবন শেষে যখন তিনি বাইরে বেরিয়ে আসেন তখন ম্যান্ডেলা সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে অহিংস আন্দোলনকেই বেছে নিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/DW
যুগান্তকারী এক পরিবর্তন
নেলসন ম্যান্ডেলার হাসিমাখা এই মুখের কথা দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ মানুষেরই মনে থাকবে৷ যাঁকে সবাই ভালোবেসে ‘মাদিবা’ নামেই ডাকতেন৷ আর যাঁর অবদান বিশ্বের ইতিহাসে এনে দিয়েছে যুগান্তকারী এক পরিবর্তন৷ ম্যান্ডেলা তাঁর জীবনের প্রায় তিন দশক কাটিয়েছেন কারাগারে৷
ছবি: Reuters/Mark Wessels
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আইনজীবী
১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশে জন্ম নেন নেলসন রোলিলালা ম্যান্ডেলা৷ উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর তিনি আইন পড়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ ছাত্র হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি, বিশেষ করে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে শিক্ষাজীবন থেকেই সংগ্রাম চালিয়েছেন ম্যান্ডেলা৷ ১৯৫২ সালে তিনি জোহানেসবার্গে অলিভার টাম্বোকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আইনচর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন৷
ছবি: AP
বর্ণবিদ্বেষ
বর্ণবিদ্বেষ – সোজা কথায় বললে কৃষ্ণাঙ্গ এবং শেতাঙ্গদের মধ্যকার মৌলিক বিভাজন – শিশু এবং তরুণকালে ম্যান্ডেলার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে৷ ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন তিনি৷ কোসা ভাষায় ম্যান্ডেলার বাবা তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘‘রোলিলালা৷’’ এই নামের অর্থ হচ্ছে, ‘‘যিনি শাখা ভেঙে দেন’’, কথ্যভাষায় ‘‘সমস্যা সৃষ্টিকারী৷’’
ছবি: AP
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
১৯৬৪: বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট ম্যান্ডেলা এবং অন্যদের শুনানি চলছিল আদালতে৷ কিন্তু পুলিশ সেই আদালতের বাইরে অবস্থানরতদের সরিয়ে দেয়৷ তথাকথিত ‘রিভোনিয়া ট্রায়াল’ এ ম্যান্ডেলাকে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷
ছবি: AP
দীর্ঘ কারাজীবন
রবেন দ্বীপের কারাগারে একটি পাঁচ বর্গমিটার ঘরে ১৮ বছর কাটিয়েছেন ম্যান্ডেলা৷ তাঁর পরিচয় নম্বর ছিল ৪৬৬৬৪৷ জেল থেকে মুক্তির পর ম্যান্ডেলা বলেন, ‘‘আমি একটি নম্বর হিসেবে পরিচিত ছিলাম৷’’
ছবি: cc-by-sa- Paul Mannix
গোটা বিশ্বের আগ্রহ
১৯৮৮ সালে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্য একটি দাতব্য সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ সেই অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি সংগীতশিল্পীরা ম্যান্ডেলার সত্তরতম জন্মদিন উদযাপন করেছেন এবং বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ দশঘণ্টার সেই কনসার্টে হাজির হয়েছিলেন সত্তর হাজার মানুষ, যা ষাটটির বেশি দেশে সম্প্রচার হয়েছিল৷
ছবি: AP
অবশেষে মুক্তি
১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি - সাতাশ বছর পর - কারাগার থেকে মুক্তি পান ম্যান্ডেলা৷ ছবিতে মুষ্টিবদ্ধ হাত উচিয়ে ম্যান্ডেলা এবং তাঁর তৎকালীন স্ত্রী উইনি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শাসকদের বিরুদ্ধে নিজেদের বিজয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছেন৷
ছবি: AP
রাজনীতিতে ফেরা
১৯৯০ সালের মে মাসে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-র হাল ধরেন ম্যান্ডেলা এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রিডেরিক উইলিয়াম ডি ক্লার্ক (বামে) সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন৷ এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবিদ্বেষ মুছে ফেলার উপায় বের করা৷ ১৯৯৩ সালে তিনি এবং ক্লার্ক নোবেল শান্তি পুরস্কার জয় করেন৷
ছবি: AP
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট
১৯৯৪ সালের ১০ মে দিনটি ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে৷ সে বছরের এপ্রিলে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়লাভের পর সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ম্যান্ডেলা৷ ১৯৯৯ সাল অবধি এই দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ পরবর্তীতে তাঁর কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাবো এমবেকি৷
ছবি: AP
‘‘রেইনবো নেশন’’ কি ব্যর্থ হয়েছে?
২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বড় শহরগুলোর অনেক বস্তিতে বিদেশি বিদ্বেষ এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে৷ এ সময় অনেক অভিবাসী প্রাণ হারায়৷ ফলে যে প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে যে ‘‘রেইনবো নেশন’’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ম্যান্ডেলা, বিশেষ করে যেখানে সবার মিলে মিশে থাকার কথা, সেটি কি ব্যর্থ হয়েছে?
ছবি: AP
ক্রীড়াপ্রেমী ম্যান্ডেলা
যুব বয়সে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন একজন বক্সার৷ খেলাধুলা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য ছিল এরকম – খেলায় শ্রেণি, ধর্ম বা বর্ণের কোনো ভূমিকা নেই৷ ক্রীড়াপ্রেমি ম্যান্ডেলা কারাগারে থাকার সময়ও নিজেকে ফিট রেখেছেন৷ সেখানে তিনি নিয়মিত ব্যায়াম করতেন৷
ছবি: Getty Images
শেষবার জনসম্মুখে
২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ আর সেসময়ই ম্যান্ডেলাকে শেষবারের মতো জনসম্মুখে দেখা গিয়েছিল৷ উপরের ছবিটি ২০০৪ সালের ১৫ মে তারিখের৷ কারণ ঐ বছরই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচিত হয়৷
ছবি: AP
ম্যান্ডেলার সঙ্গে ড. ইউনূস
২০০৯ সালে ম্যান্ডেলার ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসবে বক্তব্য রেখেছিলেন বাংলাদেশের নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ ম্যান্ডেলার মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ইউনূস ঐ ঘটনাটিকে তাঁর জীবনের অন্যতম সুখকর ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন৷
ছবি: AP
জীবনের শেষ দিনগুলো
ম্যান্ডেলা তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছর মানুষের সামনে আসেননি৷ সে সময়টুকু তিনি পরিবারের সাথে কাটিয়েছেন৷ ছবিতে ২০১১ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার ৯৩তম জন্মদিনে তাঁকে নাতি-পুতিদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
17 ছবি1 | 17
প্রথম স্ত্রী এভিলিন কোটো মাস৷ কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় ১৯৫৭ সালে৷ এরপর উইনি ম্যান্ডেলার সঙ্গে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন৷ সেই সময়েই ম্যান্ডেলার বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বিপ্লব, জেল খাটা, একের পর এক রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সেইসঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম আর বিপ্লবে নেতৃত্ব৷ সে কাজে উইনি ছিলেন তাঁর সত্যিকারের সঙ্গিনী৷
তারপরও ‘মাদিবা'র ব্যক্তিগত জীবন স্থায়ী ছিল না, ছিল না শান্তির৷ নিজের মা, দুই ছেলে, এমনকি নাতনির মৃত্যুও তাঁকে দেখতে হয়েছে৷ বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে বহু দিনের সাথী উইনির সঙ্গে৷ কিন্তু হাল ছাড়েননি ন্যান্ডেলা৷ আবারো সংসার পেতেছেন৷ বিয়ে করেছেন গ্রাসা মাচেলকে৷
শারীরিক অসুস্থতা
ম্যান্ডেলার শারীরিক অসুস্থতা তাঁকে তো বটেই, গোটা বিশ্বকেই বারবার উদ্বিগ্ন করে তুলেছে৷ প্রথমে প্রস্টেট ক্যান্সার, তারপর ফুসফুসে সংক্রমণ আর তার সঙ্গে বয়সজনিত কারণে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন তিনি৷ ২৭ বছর কারাবাসের মধ্যে প্রায় ১৮ বছর তাঁকে বন্দি রাখা হয়েছিল রবেন আইল্যান্ডে, সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছিল যক্ষা৷ শেষ পর্যন্ত সেই যক্ষাই তাঁর শ্বাসযন্ত্রের চিরস্থায়ী ক্ষতি করে দিয়েছে, নিয়েছে প্রাণ৷
আজ তিনি নেই৷ অথচ পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁর অবদান এনে দিয়েছে এমন যুগান্তকারী এক পরিবর্তন, যার প্রভাব গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ জীবনের ৬৭ বছর তিনি উৎসর্গ করেছিলেন রাজনীতির কাজে, তাই নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিনটিকে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ৷ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের কথায়, ‘‘ম্যান্ডেলার কাহিনির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অসাধারণ শক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত৷''
গোটা বিশ্বের সব স্তরের মানুষের কাছে তাই তো তিনি মহান এক নায়ক৷