ভারতে এক ব্রাজিলিয়ান-স্প্যানিশ পর্যটককে সাতজন দল বেঁধে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিজ্ঞাপন
এই রিপোর্টে ধর্ষণ ও শারীরিক অত্যাচারের কথা আছে
ব্রাজিলিয়ান-স্প্যানিশ দম্পতি মোটরসাইকেল করে ভারত-ভ্রমণ করছিলেন। সাতজন তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে বলে অভিয়োগ। তিনজন গ্রেপ্তার, বাকি চারজনকে পুলিশ খুঁজছে।
পুলিশ কর্মকর্তা পীতাম্বর সিং খেওয়ার জানিয়েছেন, ''বাকিদের ধরতে একটা বিশেষ পুলিশ দল গঠন করা হয়েছে। দোষীরা যাতে কঠোর সাজা পায়, আমরা তা নিশ্চিত করব।''
এই ঘটনা নিয়ে যা জানা গেছে
গত শুক্রবার রাতে ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলায় ওই দম্পতিকে আক্রমণ করা হয়। ২৮ বছর বয়সি ভ্লগার ও তার ৬৪ বছর বয়সি স্বামী একটা ক্যাম্প করে থাকছিলেন। তারা গত কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেলে করে ঘুরছেন।
দুইজনই স্পেনের নাগরিক। পুলিশ তাদের রাত এগারোটা নাগাদ রাস্তার ধারে খুঁজে পায়। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল যে, তাদের প্রবল শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ তাদের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের মেডিকেল পরীক্ষা হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
রিপোর্ট প্রকাশ করলো ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি। এই সরকারি সংস্থা ভারতজুড়ে সব অপরাধের হিসেব রাখে। সেই রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে ভারতে ধর্ষণ ও অপরাধের ভয়াবহ ছবি।
ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৭টা ধর্ষণ হয়। ২০১৯ সালের হিসাব এটা। এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে বছরভর মোট ৩২ হাজার ৩৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Hatvalne
নারী-নির্যাতন বেড়েছে
দেশজুড়ে মোট চার লাখ পাঁচ হাজার ৮৬১ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতিতা হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার ২৩৬ জন। এই হিসাবই বলে দিচ্ছে, ভারতে নারী-নির্যাতন বেড়েছে।
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
একে রাজস্থান, দুই নম্বরে উত্তর প্রদেশ
ধর্ষণের সংখ্যার নিরিখে ভারতে এক নম্বর রাজ্য হলো রাজস্থান। সেখানে ২০১৯-এ পাঁচ হাজার ৯৯৭ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ধর্ষিতা হয়েছেন তিন হাজার ৬৫ জন। তিন নম্বরে মধ্যপ্রদেশ। সেখানে দুই হাজার ৪৮৫ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টায় এক নম্বরে উত্তর প্রদেশ।
ছবি: Reuters/Sivaram V
দিল্লিতে প্রতিদিন তিন জনকে ধর্ষণ
রাজধানী দিল্লির অবস্থাও শোচনীয়। এখানে প্রতিদিন তিনজন মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। ২০১৯-এ দুই হাজার ৩৫৫ জন নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। যৌন নিগ্রহের শিকার ৪৫৬ জন নারী। পরিবারের সদস্যদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন ১২৫ জন নারী। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে আটজনকে। আর বিয়েতে পন সংক্রান্ত বিবাদের জেরে মারা হয়েছে ১১৬ জন নারীকে। সব মিলিয়ে দিল্লিতে ২০১৮-র তুলনায় অপরাধ বেড়েছে ২০ শতাংশ।
ছবি: Reuters/
ধর্ষণের পর হত্যা
ভারতে মোট ২৭৮ জন মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে ২০১৯-এ। মহারাষ্ট্রে সব চেয়ে বেশি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মোট ৪৭ জন নারীকে হত্যার পর খুন করা হয়েছে মহারাষ্ট্রে। তার পরে আছে মধ্যপ্রদেশ, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি এবং উত্তর প্রদেশে ৩৪টি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
দলিত নারীদের নির্যাতনে একে উত্তর প্রদেশ
দলিত নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি, অত্যাচারের ঘটনায় এক নম্বরে যোগী আদিত্যনাথের উত্তর প্রদেশ। সেখানে ২০১৯-এ ১১ হাজার ৮২৯ জন দলিত নারী নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হয়েছেন। আদিবাসী মেয়েদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ক্ষেত্রে অবশ্য এক নম্বরে মধ্য প্রদেশ। ২০১৮-র তুলনায় দলিত নারীদের উপর অত্যাচার বেড়েছে সাত শতাংশ ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
দলিত মেয়েদের ধর্ষণ করে খুন
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবরের গোড়ায় তিনজন দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে উত্তর প্রদেশে। হাথরাসে পরিবারের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দলিত তরুণীর মৃত্যু হয় প্রায় দুই সপ্তাহ পর। বলরামপুরে কলেজে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন দলিত ছাত্রী। তাঁকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে অত্যাচার চালানো হয়। মেয়েটির মৃত্যু হয়। ভাদোইতে ১১ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে মাথায় পাথর দিয়ে মারা হয়।
ছবি: Francis Mascarenhas/Reuters
অধিকাংশ ধর্ষক চেনা লোক
এনসিআরবি তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে ৯৪ শতাংশ নারীকে চেনাজানা লোকের হাতে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। তারা কেউ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রতিবেশী, চাকরিক্ষেত্রে বস, মালিক, সহকর্মী বা সামাজিক মাধ্যম সূত্রে চেনা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Maqbool
প্রতিবাদে বাধা
হাথরাসের ধর্ষণের প্রতিক্রিয়া সারা দেশে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তর প্রদেশে প্রতিবাদ করতে দেয়া হচ্ছে না। হাথরাসে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের আটকে দেয়া হয়েছিল হাথরাসে। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে যেতে দেয়া হয়নি। দিল্লি-ঘেঁষা নয়ডাতে তাঁদের আটকে দেয়া হয়।
ছবি: Anushree Fadnavis/Reuters
এনসিআরবি
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তৈরি হয় ১৯৮৬ সালে। তবে ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলাস্তরে ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইনফরমেশন ব্যবস্থা তৈরি হয়। তারা বছরে তিনটি রিপোর্ট তৈরি করে। অপরাধ চিত্র, আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং কারাগার নিয়ে। সব রাজ্য সরকরের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট বানানো হয়।
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
ইনস্টাগ্রামে এখন ডিলিট করা একটি ভিডিওতে দম্পতি অভিযোগ করেছিলেন, তাদের মারা হয়েছে এবং ওই নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত কয়েক বছরে ওই দম্পতি বিশ্বের অনেকগুলি জায়গায় ঘুরেছেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। তাদের দুই লাখ ৪০ হাজার ফলোয়ার আছে।
ওই দম্পতি স্পেনের একটি টেলিভিশনে বলেছেন, আক্রমণকারীরা স্বামীকে বারবার মারধর করে এবং স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। ওই দম্পতি বলেছেন, তারা কোনো হোটেলে জায়গা পাননি বলে কাছে একটা জায়গায় ক্যাম্প করে ছিলেন।
ওই নারী বলেছেন, তাকে কয়েকজন পালা করে ধর্ষণ করে। বাকিরা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল। দুই ঘণ্টা ধরে এটা চলে।
ভারতের পরিস্থিতি
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ ভুক্তভোগীদের অনেকেই কখনই তাদের উপর অত্যাচারের কথা পুলিশে জানান না।
অপরাধের জন্য কুখ্যাত যেসব ভারতীয় শহর
ভারতের বেশ কিছু অংশে কিছু বিশেষ বিশেষ অপরাধের বাড়বাড়ন্ত রয়েছে৷ সেই শহরগুলি কোনটি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AP Photo
গাড়ি চুরি
উত্তর প্রদেশের মীরাট ও মুজফফরনগরের সাথে জড়িত হয়েছে বহু গাড়ি চুরির ঘটনা৷ শুধু তাই নয়, উত্তর ভারতের অন্যান্য শহরে গাড়ি চুরির ঘটনার তদন্ত থেকে উঠে এসেছে এই দুই শহরের দাগী আসামীদের নাম৷
ছবি: Colourbox/Andrey Armyagov
খুন
মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে খুনের ঘটনা রমরমিয়ে চলে উত্তর প্রদেশের ইটাওয়া ও বুলন্দশহর অঞ্চলে৷ গত কয়েক বছরে এই দুই শহরের সাথে বিহারের বেগুসারাই শহরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খুনের ঘটনা, জানাচ্ছে ভারতের জাতীয় অপরাধ ব্যুরো৷
ছবি: Fotolia
পরিচয়পত্র জালিয়াতি
ভোটার কার্ড বা ‘আধার’ জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির ঘটনা কয়েক বছরে মারাত্মক হারে বেড়েছে৷ অপরাধ ব্যুরোর সাইবার ক্রাইম বিভাগ জানাচ্ছে, এমন অপরাধের হারে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণের শহর হায়দরাবাদ৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
লুট ও ডাকাতি
মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানের বিভিন্ন অঞ্চল লুটপাটের জন্য কুখ্যাত৷ হাইওয়ে সংলগ্ন বসতিহীন অঞ্চলগুলিই অপরাধীদের নজরে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
‘আইটি ফ্রড’
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নতুন ধরেন অপরাধ৷ বেঙ্গালুরু, যেখানে রয়েছে বিশ্বের তাবড় তাবড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার দপ্তর, বর্তমানে ভারতের আইট ফ্রড বা তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধের রাজধানী৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
ধর্ষণ
একের পর এক ভয়াবহ ধর্ষণের খবর সামনে আসার পর থেকে বলা হচ্ছে যে রাজধানী দিল্লিই ভারতের ‘ধর্ষণ রাজধানী’৷ যদিও এই দাবির সত্যতা যাচাই করার মতো কোনো তথ্য নেই, তাও দিল্লির গায়ে রয়েই গেছে এই তকমা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saurabh Das
গুম বা অপহরণ
বেশ কয়েক দশক ধরে চলে আসা গুমের প্রবণতা এখনও ভারতের রাজ্য বিহারের পিছু ছাড়েনি৷ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাজনিত কারণেই সেখানে বেশির ভাগ গুমের ঘটনা হয় বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
কয়লা মাফিয়া
কয়লা খনির জন্য বিখ্যাত ঝাড়খণ্ডে সক্রিয় আছে বহু মাফিয়া চক্র৷
ছবি: Ravi Mishra/Global Witness
বন্যপ্রাণীর চোরাশিকার ও পাচার
ভারতের উত্তরাখণ্ড, যেখানে রয়েছে বন্যপ্রাণীদের জন্য অভয়ারণ্য, বর্তমানে বন্যপ্রাণীদের চোরাশিকার ও পাচারের একাধিক চক্র৷ বাঘ, চিতাবাঘ ছাড়াও নানা রকমের পাখির চোরাপাচার হয় সেখান থেকে৷
ছবি: AP
মাদক বাজার
হিমাচল প্রদেশের কুলু ও মানালি অঞ্চলে রয়েছে মাদক-পর্যটনের ব্যাপক প্রচলন৷ বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে রয়েছে এই অঞ্চলে আসার ঝোঁক৷ যার কারণ এই অঞ্চলে ব্যাপকহারে গাঁজা, আফিম ও চরসের উৎপাদন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. R. Jain
নকল
পরীক্ষায় নকল করার জন্য বিহারের বদনাম রয়েছে কয়েক দশক ধরে৷ এতটাই গভীরে এই নকলের ধারা যে বেশ কয়েক বার সারা রাজ্যে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ ওঠে ও শিক্ষার্থীরা দোষীও সাব্যস্ত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
11 ছবি1 | 11
নারী অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, ভারতের পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী। তারা পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকেও কাঠগড়ায় তোলেন। কারণ, বছরের পর বছর ধরে মামলা চলতে থাকে এবং খুব কমই শাস্তি হয়।
২০১২ সালে দিল্লির কুখ্যাত নির্ভয়া-কাণ্ড পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছিল। ২৩ বছর বয়সি এক নারীকে বাসে ধর্ষণ করা হয়, পৈশাচিকভাবে মারা হয়, তারপর দেহ ফেলে দেয়া হয়। পরে অবশ্য অভিযুক্তদের ফাঁসি হয়। কেবল একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধী জেল খাটার পর মুক্তি পায়।