ইউরোপের একটা বড় অংশ যখন অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও বেকারত্বের সমস্যায় জর্জরিত, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জার্মানি স্থিতিশীলতার এক উজ্জ্বল দ্বীপ হিসেবে শোভা পাচ্ছে৷ তবে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি একেবারে ঝুঁকিমুক্ত নয়৷
বিজ্ঞাপন
গত আগস্ট মাসেও জার্মানিতে বেকারত্বের হার ছিল মাত্র ৬.৭ শতাংশ৷ শুধু পরিসংখ্যানের বিচারে এই ফলাফল স্পেনের মতো দেশের কাছে ঈর্ষার কারণ হতে পারে৷ কিন্তু একইসঙ্গে জার্মানির কর্মসংস্থান দপ্তর জানিয়েছে, শতকরা হিসেব কম থাকলেও সংখ্যার হিসেবে বেকারদের সংখ্যা বাড়ছে৷ যেমন এই মুহূর্তে ২০ লাখ থেকে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ লক্ষ ১ হাজারে৷
শিক্ষিত তরুণরা কৃষিকাজের দিকে ঝুঁকছেন
দক্ষিণ এশিয়ায় পড়াশোনা বা চাকরির আশায় অসংখ্য তরুণ যখন শহরমুখী, তখন কেনিয়ার বহু শিক্ষিত তরুণই কিন্তু লেখাপড়া শেষে চাকরি পাবার আশায় বসে না থেকে কৃষিকাজ ও পশুপালনের মতো কাজ করছেন৷ তাঁদের মতে, কৃষিকাজ এখন একটা ব্যবসা৷
ছবি: Jeroen van Loon
ক্যারিয়ার পরিবর্তন
ভালো চাকরি বলতে যেসব পেশাকে বোঝায়, তেমন চাকরি খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়ে কেনিয়ার অনেক শিক্ষিত তরুণ এখন কৃষিকাজ ও পশুপালনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন৷ এই যেমন ছবির বাম দিকের তরুণটির নাম ফ্রান্সিস কিমানি৷ ৩০ বছরের এই তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পড়াশোনা শেষ করে কোনো চাকরি না পেয়ে এখন একটি খামার পরিচালনা করছেন৷ খামারে একশোর বেশি গরু ও প্রায় ২০০ ভেড়া ও ছাগল রয়েছে৷
ছবি: J. van Loon
কৃষক হয়ে বেশি আয়
খামার থেকে কিমানির আয় প্রতিমাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা৷ চাকরি করলে বেতন হিসেবে এই পরিমাণ অর্থ পাওয়া সম্ভব ছিল না৷
ছবি: J. van Loon
নারীরাও এগিয়ে আসছেন
৩০ বছরের মেরি গিতাউ পড়াশোনা শেষে চাকরি পাচ্ছিলেন না৷ শেষে তিনিও কৃষিকাজ শুরু করে দেন৷ ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, টমেটো চাষের পাশাপাশি গিতাউ মুরগি, শুকর ও খরগোশ লালন-পালন করেন৷
ছবি: J. van Loon
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
অ্যাকুয়াপোনিক্স ব্যবস্থার মাধ্যমে একসঙ্গে স্ট্রবেরি ও মাছ চাষ করছেন দানিয়েল কিমানি৷ তিনি মনে করেন, চাষের ক্ষেত্রে নতুন এই ব্যবস্থা আরও জনপ্রিয় হবে৷ কেননা এর ফলে পানি ও জায়গার অভাব দূর করা সম্ভব৷ অ্যাকুয়াপোনিক্স ব্যবস্থায় একটি ট্যাংকের পানিতে মাছ চাষের পাশাপাশি পানির ওপরে কোনো কিছু জন্মানো যায়৷
ছবি: Jeroen van Loon
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার
কৃষিকাজে শিক্ষিত তরুণরা আশায় পণ্য বিক্রি ও বাজারজাতকরণে এসেছে নতুনত্ব৷ ‘মুকুলিমা ইয়ং’ নামের ওয়েবসাইটে তরুণ কৃষকরা তাদের পণ্যের ছবি দেন৷ ক্রেতারাও সেখান থেকেই পণ্য কেনেন৷ এক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের দামও কম পড়ে৷
ছবি: Jeroen van Loon
‘‘কেউ কি পাখি বিক্রি করছেন?
এমন সব প্রশ্নের দেখা মেলে ‘মুকুলিমা ইয়ং’ সাইটে৷ ৩৫ বছর বয়সি জোসেফ মাচারিয়া মাত্র এক বছর আগে সাইটটি শুরু করেছিলেন৷ এখন তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি৷
ছবি: J. van Loon
‘আমরা সবাই কৃষক হতে পারি’
দানিয়েল কিমানির মতে, ‘‘আমরা সবাই আইনজীবী হতে পারবো না৷ তবে আমরা সবাই কৃষক হতে পারি৷’’ এই কথার মাধ্যমে কিমানি তাঁর আশার কথা শুনিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, কেনিয়াতে আরও বেশি সংখ্যক তরুণ কৃষিকাজের দিকে ঝুঁকবে৷ বর্তমানে কেনিয়ার প্রতি চারজনের মাত্র একজন কৃষিকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷
ছবি: Jeroen van Loon
কৃষিকাজ এখন একটা ব্যবসা
‘মুকুলিমা ইয়ং’ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা জোসেফ মাচারিয়া বলেন, ‘‘কৃষিখাত এখন শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর একটা উপায় নয়, এটা একটা ব্যবসা৷’’ তাঁর মতে, তরুণরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সহজেই কৃষি সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে৷
ছবি: Jeroen van Loon
8 ছবি1 | 8
চলতি বছর জার্মানি তথা ইউরো এলাকা সার্বিকভাবে আবার কিছুটা সংকটের মুখে পড়েছে৷ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমতির দিকে৷ রপ্তানির মাত্রা কমেছে, প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ আসছে না৷ সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদাও বাড়ছে না৷ মানুষ ভেবেচিন্তে খরচ করছেন৷ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন সংকটের ফলে জার্মান অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়েছে৷
তথ্য-পরিসংখ্যানের খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করেও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা জার্মান অর্থনীতির সার্বিক চিত্র সম্পর্কে বেশ আশাবাদী৷ অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টিয়ান শুলৎস মনে করেন, বাহ্যিক প্রবণতা উপেক্ষা করে এতকাল জার্মানিতে কর্মসংস্থানের হার স্থিতিশীল থেকেছে৷ তবে সাধারণ মানুষের ব্যয়ের প্রবণতা কমে চলা দুশ্চিন্তার কারণ বলে তিনি মনে করেন৷ আরেক বিশেষজ্ঞ – পস্টবাংক-এর অর্থনীতিবিদ হাইনরিশ বায়ার বলেন, বর্তমান দুর্বলতা কাটিয়ে প্রবৃদ্ধির হার আবার কিছুটা বাড়লে শ্রমবাজারও স্থিতিশীল থাকবে৷
অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সংকটের কালো ছায়া আরও বেশিদিন বজায় থাকলেই জার্মানির পক্ষে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে৷ এই অবস্থায় চলতি বছরের শেষে বেকারত্বের হার বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে৷ একমাত্র অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়লেই অর্থনীতি সেই ধাক্কা সামলাতে পারবে৷