উত্তর জার্মানিতে ভয়াবহ ঝড় জেভিয়ারের আঘাতে অন্তত ৭ জন মারা গেছে৷ তীব্র বাতাস আর বৃষ্টির কারণে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ জার্মানির আবহাওয়া সংস্থা জানাচ্ছে, ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০৫ থেকে ১১৫ কিলোমিটার৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনের রেলযোগাযোগ বন্ধ থাকায় আটকে পড়েছেন অনেকে৷ ব্রেমেন ও হানোফার এয়ারপোর্টে বাতিল করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট৷ এরই মধ্যে বার্লিনে ফায়ার ব্রিগেডের পক্ষ থেকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷ হামবুর্গেও দুর্ঘটনা এড়াতে জনসাধারণকে বাসায় থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ জার্মানির পূর্ব ও উত্তর অঞ্চলে ক্যাটাগরি ৩ মাত্রার ঝড়ের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে৷ রাতের মধ্যে এ ঝড় উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পোল্যান্ডের দিকে সরে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
অন্যদিকে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় নাটে'র আঘাতে বৃহস্পতিবার মধ্য অ্যামেরিকায় মারা গেছে অন্তত ২২ জন৷ এর মধ্যে নিকারাগুয়ায় ১১ জন, কোস্টারিকায় দু'জন শিশুসহ ৮জন এবং হন্ডুরাস ও এল সালভাদরে মারা গেছে ৩ জন৷ এছাড়াও নিঁখোজ রয়েছে অন্তত ১৭ জন৷ ঝড়ের প্রভাবে তুমুল বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে এসব অঞ্চল৷ ঝড়টি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে যুক্তরাষ্ট্রের গল্ফ উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা লুসিয়ানা থেকে আলাবামা পর্যন্ত জনগণকে ঝড়ের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন৷ শুক্রবার নাগাদ ঝড়টি মেক্সিকোর ইউকাতান পেনিনসুলায় আঘাত হানতে পারে৷
আরএন/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের প্রস্তুতি
কিছু দুর্যোগ কিংবা পরিস্থিতি আছে যা বলে-কয়ে আসে না৷ সেই অবস্থা মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়ে থাকে৷ নাগরিকদেরও নানান পরামর্শ দিয়ে থাকে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Taga
নিয়মিত অনুশীলন
জাপানে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, তা শেখানো হয়৷ এরপর প্রতি মাসে শেখানো এই বিষয়গুলো নিয়ে অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয়৷ ছাদ থেকে শক্ত কিছু পড়ে যেন মাথার তেমন ক্ষতি না হয় সেজন্য অনেক শিক্ষার্থীকে এরকম (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) টুপি দেয়া হয়৷ এছাড়া কয়েক তলা বিশিষ্ট স্কুলগুলোতে ঢালু পথের ব্যবস্থা রাখা হয় যেন ভূমিকম্পের সময় শিক্ষার্থীরা সেগুলো দিয়ে দ্রুত নীচে নেমে আসতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Taga
প্রতিটি সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ
বড় ধরনের কোনো কম্পন আঘাত হানতে যাচ্ছে কিনা – সে সম্পর্কে আগেভাগেই তথ্য জানার চেষ্টা করে জাপান৷ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে ভূমিকম্পের অন্তত কয়েক সেকেন্ড (সর্বোচ্চ ৫০ সেকেন্ড) আগেই সে সম্পর্কে তথ্য পেয়ে যায় দেশটি৷ সঙ্গে সঙ্গেই সেটি নাগরিকদের জানিয়ে দেয় তারা৷ ভাবছেন মাত্র কয়েক সেকেন্ড! কিন্তু ঐ মুহূর্তে এই কয়েক সেকেন্ডই ক্ষতির মাত্রা অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে৷
ছবি: APTV video
নিউক্লিয়ার বাংকার
সুইজারল্যান্ডে ১৯৬৩ সালের পর থেকে আবাসিক ভবন নির্মাণের সময় আবশ্যকীয় শর্ত হিসেবে ঐ ভবনে একটি নিউক্লিয়ার বাংকার তৈরির নিয়ম চালু আছে৷ বাড়ি থেকে ৭০০ মিটার দূরে ১২ মিলিয়ন টন শক্তিসম্পন্ন বিস্ফোরক বিস্ফোরিত হলেও যেন ঐ বাংকার টিকে থাকতে পারে সেরকম ক্ষমতাসম্পন্ন বাংকার তৈরি করতে হয় সুইসদের৷
ছবি: picture-alliance/Keystone/M. Ruetschi
আয়োডিনের মজুদ
বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের কর্তৃপক্ষ তাদের সংগ্রহে আয়োডিন রাখছেন৷ হঠাৎ করে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়লে সেই সময় এই আয়োডিন কাজে লাগবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
দুর্যোগ থেকে শিক্ষা
২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে প্রায় আড়াই লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়৷ এমন বড় ক্ষতি যেন আর না হয় সেজন্য অত্র অঞ্চলে এ ধরনের (ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে) সতর্কবাণী প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ফলে পরবর্তীতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/F. Schneider
স্মার্টফোনে বার্তা
সতর্কবার্তা পাঠাতে আজকাল স্মার্টফোন অ্যাপ ও ক্ষুদে বার্তার সহায়তা নেয়া হচ্ছে৷ ভারত, ফিলিপাইন্স সহ অনেক দেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বাস করা বাসিন্দাদের এই প্রক্রিয়ায় সতর্ক করা হয়ে থাকে৷
ছবি: FEMA
বাড়িতে খাবার আর ওষুধ রাখা
বেসামরিক প্রতিরক্ষার অঙ্গ হিসেবে জার্মান সরকার পরিকল্পনা করছে যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটলে, প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি সামলে ওঠার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের বাড়িতে কিছু কিছু করে রসদ রাখতে হবে৷ যেমন দশদিনের মতো খাবার, পাঁচদিনের মতো পানীয় জল রাখতে হবে৷ এছাড়া ওষুধ ও কিছু নগদ টাকা রাখারও পরামর্শ দেয়া হবে৷ তবে এ সব এখনও আলোচনার পর্যায়ে আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভূমিকম্প মোকাবেলার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে৷ এরইমধ্যে ৮৪টি প্রাথমিক এবং ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মহড়া সম্পন্ন করেছে৷ এ সংক্রান্ত একটি ‘গাইডলাইন’ চূড়ান্ত করতেও কাজ করছে সরকার৷ প্রায় ৬৬ হাজার প্রাথমিক এবং ৩২ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ধরনের মহড়া পরিচালিত হবে৷