1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঝড়-বন্যায় ক্ষতি কত?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ এপ্রিল ২০১৮

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ঝড় বা বন্যায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব নেই৷ তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের প্রকল্প প্রণয়নের সময় কখনো কখনো আংশিক হিসাব করেছে৷ তবে তাতে আর্থিক ক্ষতির হিসাবই প্রাধান্য পেয়েছে৷

সাইক্লোন
ছবি: AFP/Getty Images

ইউএনডিপি-র হিসাবে ১৯৮০ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২১৯টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়৷ এতে ১৬ বিলিয়ন ইউএস ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হয়৷

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক আগের বছর, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ‘গোর্কি' নামের ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান৷ ভেসে যায় লক্ষ লক্ষ গবাদি পশু৷

উপকূলীয় এলাকার ১৮টি জেলায় আঘাত হানা ওই ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি ভেসে যায়৷ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন লাখ লাখ মানুষ৷

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের আরেকটি ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়৷ ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে এই ঝড় আঘাত হানে৷ ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত করে ঘূর্ণিঝড়টি৷ প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায় এতে৷ এছাড়া এক কোটি মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১০ লাখ ঘর-বাড়ি৷

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর'-এ সাড়ে তিন হাজার মানুষ মারা যায়৷ দেশের প্রায় ৬ লক্ষ টন ধান নষ্ট হয়৷ ঝড়ের প্রভাবে প্রায় ৯ লাখ ৬৮ হাজার ঘর-বাড়ি ধ্বংস এবং ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়৷ এই ঝড়ে প্রায় দুই লক্ষ ৪২ হাজার গৃহপালিত পশু এবং হাঁস-মুরগি মারা যায়৷

‘বন্যার কারণে বাংলাদেশ চাল আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে’

This browser does not support the audio element.

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা' বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে৷ আইলায় কমপক্ষে তিন লাখ পরিবার ঘর-বাড়ি হারান৷ আট লাখ টন খাদ্য ঘাটতি হয়৷ প্রায় দু'শ মানুষ মারা যায়৷ এই ঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলে লবণ পানি প্রবেশ করায় পানীয় জলের তীব্র সংকট তৈরি হয়, যে সংকট এখনো কাটেনি৷

২০১৩ সালের ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোহসেন-এর কারণে উপকূলীয় এলাকায় কমপক্ষে ৫০ জন মারা যান৷ ফসল এবং বাড়ি-ঘরেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷

২০১৬ সালের ২১ মে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু'৷ এই ঝড়ে ২৪ জন মারা যান৷

২০১৭ সালে বাংলাদেশে সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় হলো ‘মোরা'৷ ৩০মে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ছ'জন নিহত এবং ১৩৬ জন আহত হন৷ ৫২ হাজার ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়৷ ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ হয় গৃহহীন৷ এছাড়া মোট ৩৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এই ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এই এলাকায় ১৭ হাজার বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷

গত বছর জাতিসংঘ জানায়, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩২০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ২ শতাংশ৷ বিশ্বব্যাংক এই ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলারের একটি ঋণ প্রস্তাব দিয়েছে৷

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে বছরে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে৷

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, ২০০০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে, তাতে সব মিলিয়ে এক হাজার কোটি ডলার বা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা মোকাবেলায় অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ৷ বিশ্বেও বাংলাদেশের এই সক্ষমতা প্রশংসিত৷ আবহাওয়া বার্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো নিজস্ব জনবল ছাড়াও ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং ১৩ লাখ স্কাউটকে দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷

‘আমাদের তাই অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াতে হবে’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস)-এর নির্বাহী পরিচালক জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. এম আতিক রহমান ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘আগে সাইক্লোনে লাখ লাখ মানুষ মারা যেত৷ এ সংখ্যা কমেছে৷ এখন বছরে ১০ জনও মারা যায় না৷ অথচ ফসল বা অন্যান্য ক্ষতি কিন্তু কমানো যাচ্ছে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যু কমার কারণ হলো মানুষ এখন সাইক্লোন সেন্টারে যায়৷ আগে গবাদি পশু রেখে কেউ যেতে চাইত না৷ বর্তমানে আইন করা হয়েছে যে, পরিস্থিতি খারাপ হলে যে কোনো কাউকে সাইক্লোন সেন্টারে যেতে বাধ্য করা যাবে৷ তাছাড়া এখন আলাদা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থাকায় ব্যবস্থাপনাও সহজ হয়েছে৷''

ড. এম আতিক রহমান বলেন, ‘‘বন্যা ৮-১০ দিন থাকে৷ এতে পানি দাঁড়িয়ে থাকে৷ ফলে ফসলের ক্ষতি এড়ানো যায় না৷ বাংলাদেশ এই বন্যার কারণেই চাল রপ্তানিকারক দেশ থেকে এখন আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে৷ এক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আরো কাজ করার আছে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাইছি লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে না এনে আশ্রয় কেন্দ্র মানুষের কাছে নিয়ে যেতে৷ তার মানে হলো, প্রত্যেক এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতির অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঝড়-বন্যা আমাদের দেশের একটা বৈশিষ্ট্য৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে ক্রপ ক্যালেন্ডার বদলে গেছে৷ মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে৷ ঝড়-বন্যার ‘ফ্রিকোয়েন্সি' বাড়ছে৷ আগে ১০ বছর পর পর হতো, এখন প্রতিবছর হয়৷ আইলা এবং সিডর এক বছরের ব্যবধানে হয়েছে৷ ফলে কৃষক আগের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তাই অভিযোজন ক্ষমতা বাড়াতে হবে৷ লবণাক্ততা বাড়ছে, তাই লবণ সহনীয় ধান লাগবে আরো৷ পানিও বাড়ছে, তাই পানির সঙ্গে সমতা রাখতে পারে এমন ফসল লাগবে৷''

ঝড়ে অর্থনৈতিক ছাড়া আর কী কী ধরনের ক্ষতি হয়৷ লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ