1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টক শো নিয়ন্ত্রণে আইন?

১৬ অক্টোবর ২০১৮

মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সম্প্রচার আইন-২০১৮'র খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে৷ আইনের খসড়ায় টেলিভিশনের টক শো-তে মিথ্যা, অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিচেনার প্রস্তাব করা হয়েছে৷

Bangladesch Talkshow 'kamon bangladesh chai'
ছবি: Rtv

‘সম্প্রচার আইন ২০১৮' সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সম্প্রতি মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, প্রস্তাবিত  আইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও রাষ্ট্র ও সকার প্রধানের ব্যাপারে বিকৃত ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশের দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ কোটি টাকার জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া  টক শো-তে মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রচার করলে একই সাজার কথা বলা আছে এই আইনে৷

এই আইনে সম্প্রচার কমিশন, সম্প্রচার নীতিমালা, সম্প্রচার লাইসেন্স সবকিছুই রয়েছে৷ আইনের লঙ্ঘন হলে মোট ২টি ধারায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে৷ ১৯ ধারায় লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা৷ আর ২৮ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এই ধারা অনুযায়ী, ২৪ ধরনের অপরাধের মধ্যে টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে (টক শো)  মিথ্যা, অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানও রয়েছে৷

সম্প্রচার আইনের আওতায় রয়েছে প্রিন্ট, টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন৷ প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ‘‘সম্প্রচার ও অনলাইন মাধ্যমে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশবিরোধী ও জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না৷ আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত প্রচার করা যাবে না৷ দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার পরিপন্থি অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না৷ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন সামরিক, বেসামরিক ও সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না৷ এছাড়া বিজ্ঞাপনে শিশুদের পরনিন্দা, বিবাদ ও কলহের দৃশ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণের দৃশ্য দেখানো যাবে না৷ আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে বা আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করতে পারে এমন অনুষ্ঠান বা বক্তব্যও প্রচার করা যাবে ন৷এসব বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করলেও সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে৷

‘আইনটি যদি প্রতিহিংসার জায়গা থেকে হয়, তা হবে খুবই দুঃখজনক’

This browser does not support the audio element.

সম্প্রচার কমিশন

গণমাধ্যম পরিচালনার জন্য গঠিত সম্প্রচার কমিশন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স প্রদান করবে৷ এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কমিশনে অভিযোগ করে ফল পাওয়া যাবে৷ বাংলাদেশের ভূখন্ডের যে-কোনো প্রান্ত থেকে প্রিন্ট-অনলাইন-ইলেকট্রনিক মিডিয়া- রেডিওসহ যে-কেনো মাধ্যমের সম্প্রচার সংবাদ বলে গণ্য হবে৷ গণমাধ্যমগুলো পরিচালনার জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিশন গঠন করা হবে৷

এই কমিশন গঠনে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হবে৷ সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ দেবেন৷ কমিশনে একজন নারী কমিশনার রাখার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে৷ কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিযুক্ত হতে সংশ্লিষ্ট পেশায় ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে৷ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সম্প্রচার যন্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে এই কমিশনের প্রধান কাজ৷ লাইসেন্স প্রদানে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে৷

লাইসেন্স প্রাপ্তির শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে সাত বছরের জেল ও পাঁচ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷ এই অপরাধগুলো জামিনযোগ্য এবং বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না৷

গণমাধ্যম কর্মী আই

মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন-২০১৮'-এর খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷ এই আইনে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরতদের ‘গণমাধ্যমকর্মী' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে৷ ইংরেজিতে বলা হবে ‘মাস মিডিয়া এমপ্লয়িজ'৷

‘আইনটি এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যাতে যে কোনো কথাকেই চাইলে আইনের মধ্যে ফেলা যায়’

This browser does not support the audio element.

প্রস্তাবিত আইনে গণমাধ্যম কর্মীদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা হবে সর্বোচ্চ ৩৬ ঘণ্টা৷ এর বেশি হলে তাঁদের ওভারটাইম দিতে হবে৷ কর্মীরা বছরে ক্যাজুয়েল লিভ পাবেন ১৫ দিন৷ তাঁদের অর্জিত ছুটি জমা হবে ১০০ দিন৷ আগে তা ৬০ দিন ছিল৷ এছাড়া পূর্ণ বেতনে দুটি উৎসব ভাতা ও ১০ দিন উৎসব ছুটি পাবেন কর্মীরা৷ আইনে কর্মীদের ওয়েজ বোর্ড অনুসারে ন্যূনতম বেতন পরিশোধের পাশাপাশি তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে৷ এই ফান্ডে কর্মীরা চাকরির এক বছরের মাথায় চাঁদা জমা দিতে পারবেন৷ মালিক পক্ষকেও ওই ফান্ডে সমহারে চাঁদা জমা দিতে হবে৷

আইনে বলা হয়েছে,গণমাধ্যমকর্মী ও মালিক পক্ষের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হলে ‘এডিআর'-এর মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করতে হবে৷ মালিক পক্ষকে এই আইনের সব বিধান পালন করতে হবে৷ এর ব্যত্যয় হলে বা লঙ্ঘিত হলে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে৷

প্রতিক্রিয়া

স্যাটেলাইট টেলিভিশন গাজী টিভির এডিটর, কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এবং  টকশো ‘জি ডায়ালগ'-এর উপস্থাপক অঞ্জন রায় বলেন,‘‘কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দেয়, সেটা অবশ্যই অপরাধ৷ কিন্তু যাঁরা টক শো-তে আসেন তাঁদের যদি এই ধরনের নৈতিকতা থাকে যে, তাঁরা মিথ্যা তথ্য দেবেন না, তাহলে এই ধরনের বিষয় সামনে আসতো না৷ এই আইনটি যদি প্রতিহিংসার জায়গা থেকে ব্যবহার করা হয়, তা হবে খুবই দুঃখজনক৷ এখন যেহেতু অনেক কিছুই হচ্ছে, সম্প্রচার নীতিমালা, ডিজিটাল আইন, এ কারণে বিষয়টি আইন পর্যায়ে সামনে এসেছে৷ কিন্তু আমার কথা হলো, আমরা যদি নৈতিক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, সেটি মনে হয় আইনের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে৷''

একাত্তর টেলিভিশনের টক শো একাত্তর জার্নালেরউপস্থাপক এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর মিথিলা ফারজানা মনে করেন এই প্রস্তবিত আইনে এক ধরনের কঠোরতা আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কখনো কখনো দেখা গেছে বক্তা বলছেন, তথ্য দিচ্ছেন, কিন্তু তাঁর কাছে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নেই৷ নিয়ন্ত্রণ না হলেও সেই তথ্যগুলো কিভাবে যাচাই-বাছাই হবে৷ কারণ, এটা তো একটা পাবলিক ফোরাম৷ তবে তথ্য সঠিক কী সঠিক নয় তা যাচাই-বাছাই কে করবেন? কমিশন যাচাই বাছাই করবে বলে শুনছি, তবে আসলে তা এখনো স্বচ্ছ নয়৷ সামনে নির্বাচন৷ এই সময়ে এই আইনটি মানুষের মধ্যে চিন্তা বা দুশ্চিন্তার জন্ম দেবে বলে আমার কাছে নিশ্চিতভাবেই মনে হয়৷''

‘তথ্য সঠিক কী সঠিক না, তা যাচাই বাছাই কে করবেন?’

This browser does not support the audio element.

এখানে উপস্থাপকের দায়-দায়িত্ব  সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘এ ধরনের তথ্য নিয়ে উপস্থাপক হিসেবে আমি সন্দেহ প্রকাশ করতে পারি, সংশয় প্রকাশ করতে পারি৷''

সাপ্তাহিক-এর সম্পাদক এবং বিভিন্ন টক শো-র নিয়মিত আলোচক গোলাম মোর্তোজা বলেন,‘‘যে কোনো প্রচারমাধ্যম যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো অসত্য তথ্য প্রচার করে, তাহলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো ব্যবস্থা নেয়া৷ এটা সাধারণভাবে বলা যায়৷ কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়ালে বা অসত্য তথ্য দিলে যে আইনের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে যে কোনো বক্তব্যকে, যে কোনো কথাকে এই আইনের মধ্যে ফেলে ব্যবস্থা নেয়া যায়৷ আমার কাছে যেটা সঠিক, সেটা আপনার কাছে সঠিক মনে না-ও হতে পারে৷ আপনি মনে করলেন আমি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছি৷ তার ভিত্তিতে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করা৷ যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই৷ আপনি যদি আপনার মতো করে একটা লেখা লেখেন, মতামত দেন, তখন যারা ক্ষমতায় থাকে, তারা মনে করতে পারেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করলাম৷''

তিনি বলেন,‘‘আইনটি এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যাতে যে কোনো কথাকেই চাইলে আইনের মধ্যে ফেলা যায়৷ এখন আমার কথা হলো, কথা বলা বা বাক-স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য এত আইন-কানুন, নিয়ম না করে সরকার ঠিক করে দিলেই পারে, কোন কথা বলা যাবে, কোন কথা বলা যাবে না৷ এতে সরকারেরও পরিশ্রম কমে যায়৷ আমাদেরও আতঙ্ক কমে যায়৷''

নির্বাচনের আগে এই আইনের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সুনির্দিষ্ট করে দেয়া এখন কঠিন৷ কারণ, এটা আইনের ওই বিভ্রান্তিকর তথ্যের মধ্যে পড়ে যেতে পারে৷ আমি এই যে কথাটি বললাম, সেটা কোনো অসত্য তথ্য বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর মধ্যে পড়ে কিনা, সেটা নিয়েও আমি চিন্তিত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ