টাইটানিকের খোঁজ
১০ এপ্রিল ২০১২জাহাজটি কোথায়
টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পর এর উদ্ধারের কথা ভেবেছিলো এর মালিক ব্রিটিশ কোম্পানি হোয়াইট স্টার লাইন৷ প্রথমে তারা ভেবেছিলো পুরো জাহাজটির ভেতর পিংপং বল ভরে ফেলা হবে, তাহলে হয়তো জাহাজটি ভেসে উঠবে৷ নয়তো অত্যন্ত শক্তিশালী চুম্বক অথবা বিশাল আকারের কোন বেলুনের সাহায্যে জাহাজটিকে সমুদ্রের গভীর থেকে তুলে আনা হবে৷ কিন্তু সেসব পরিকল্পনাই সার, কারণ জাহাজটি যে কোথায় ডুবে আছে সেটিই তারা জানতো না৷
ফরাসি-মার্কিন প্রচেষ্টা
ফরাসি আর মার্কিন বিজ্ঞানীরা শেষ পর্যন্ত টাইটানিক খুঁজে পান৷ তবে ততদিনে পার হয়ে গেছে ৭৩ বছর৷ তার আগে ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮১ এবং ১৯৮৩ সালে টাইটানিক উদ্ধারের জন্য উত্তর অ্যাটলান্টিকে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়৷ তবে কোন সাফল্য আসেনি৷ ১৯৮৫ সালে আবারও অভিযান শুরু হয়৷ ফ্রেঞ্চ রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর এক্সপ্লোরেশন অব দ্য সি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস এর উডস হোল ওশেনোগ্র্যাফিক ইন্সটিটিউশন এর একটি দল এবার মাঠে নামে, অর্থাৎ সমুদ্রে নামে৷ তাদের জাহাজটির নাম ছিল ল্য সুরোয়া৷ এই দলের অন্যতম অভিযাত্রী ছিলেন ফরাসি গবেষক জঁ লুই মিশেল৷ তিনিই প্রথম সমুদ্রের বুকে টাইটানিককে দেখতে পান৷
সমুদ্র তল্লাশি
জাহাজটি ঠিক কোন জায়গাটিতে ডুবে আছে, সেটি বের করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ৷ ল্য সুরোয়া জাহাজের গবেষকরা প্রথমে প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বেছে নেন৷ এরপর তারা পানিতে নামান সোনার এবং ম্যাগনেটোমিটার যন্ত্র৷ এই যন্ত্রগুলো প্রতিফলিত শব্দতরঙ্গের সাহায্যে সমুদ্রের পানিতে ধাতু শনাক্ত করতে পারে৷ ওই সময় ফরাসিদের কাছে ছিলো সেরা প্রযুক্তির সোনার যন্ত্র৷ অন্যদিকে মার্কিনীদের কাছে ছিলো যন্ত্রচালিত ডুবুরি বা ছোট্ট ডুবোজাহাজ৷ তাতে ছিলো ক্যামেরা৷ প্রথমে অভিযাত্রীরা পানির ১৫ থেকে ২০ মিটার গভীরে সোনার নামিয়ে ধাতু শনাক্তের চেষ্টা করেন৷ এজন্য ল্য সুরোয়া জাহাজটিকে এক কিলোমিটার আগে পিছে চালনা করা হয়৷ এভাবে গোটা ৪০০ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকাকে ছোট ছোট বক্সের মত করে ভাগ করা হয় এবং সেসব জায়গায় তল্লাশি চলতে থাকে৷ একদিন হঠাৎ করেই সোনার মেশিন ধাতু বস্তুর সিগন্যাল দিতে থাকে৷
অত্যাধুনিক ডুবোজাহাজ
১৯৮৫ সালের ২৫ আগস্ট, ল্য সুরোয়া ক্নর নামে আরেকটি জাহাজকে ডাকে৷ সেই জাহাজটিতে ছিলো রিমোট কন্ট্রোল চালিত একটি ডিপ সি ভেহিকল যার নাম আর্গো৷ এর ভেতরে করে এবার অভিযাত্রী জঁ লুই মিশেল ও তার সঙ্গীরা সমুদ্রের গভীরে ডুব দেন৷
পহেলা সেপ্টেম্বর, আর্গো নামছে সমুদ্রের গভীরে৷ ভেতরে টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন মিশেল৷ সেদিনের ঘটনা তিনি বর্ণনা করেন এভাবে, ‘‘প্রথমে সমুদ্রতলে আমি অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাই৷ জিনিসটি নড়ছিলো৷ আর কয়েক মিটার সামনে এগুনোর পর কী যেন চকচক করে উঠলো৷ তার মানে সেটা কোন ধাতু হবে৷ আর্গোতে থাকা ক্যামেরাটি আরও খানিকটা সামনে নেওয়ার পর আরও ধাতু দেখতে পেলাম৷ আমরা দেখলাম একটি রেলিং এর টুকরো....এটা আসলে জাহাজের একটা টুকরো৷'' কিন্তু তখনও অভিযাত্রীরা জানতেন না যে এটাই টাইটানিক৷
অবশেষে খোঁজ মিললো
নতুন আবিষ্কারের উত্তেজনায় ডিপ সি ভেহিকল আর্গো আরও খানিকটা এগিয়ে যায়৷ মিশেল বলেন, ‘‘আমরা ক্রমে আরও ভাঙ্গা ধাতুর টুকরো দেখতে পেলাম৷ কয়েক মিটার এগুনোর পর সবচেয়ে বড় টুকরোটি দেখতে পেলাম চার মিটার ব্যাস ও আট মিটার উঁচু৷ আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেলাম এটা জাহাজের বয়লার এবং এটা টাইটানিক, কারণ ছবিতে আমি এটাই দেখেছিলাম৷''
ডুবে যাওয়ার সময় টাইটানিক দুই টুকরো হয়ে যায়৷ আর সেটি পাওয়া যায় সর্বশেষ এসওএস এর স্থল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে৷ জাহাজের ক্রুর এই ভুলের কারণে অভিযাত্রীরা বহু বছর ধরে ভুল জায়গায় চষে বেড়িয়েছেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত মানুষের নাগালে আসে টাইটানিক৷ সমাপ্তি ঘটে বহুদিনের অজানা এক অধ্যায়ের৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম (এএফপি)
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন