দুর্নীতির ছবি দেখে চমকে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। কিন্তু শুধু চমকানোই কি যথেষ্ট? নাকি এবার দুর্নীতি দেখেও মুখ ফেরানোর সময় শেষ হবে?
বিজ্ঞাপন
দুর্নীতির এমন চেহারা আগে কখনো দেখেনি পশ্চিমবঙ্গ। মেঝেয় পড়ে পাঁচশ ও দুই হাজারের নোটের বান্ডিলের স্তূপ। অন্যদিকে সোনার বাট, বিশাল বিশাল নেকলেস, চওড়া বালা এবং আরো কত কী গয়না। দেখে মনে হচ্ছে, গোটা সোনার দোকানই যেন উঠে চলে এসেছে ফ্ল্যাটের ঘরে। এই ফ্ল্যাট পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। আগে তার একটি ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছিল ২২ কোটি, এবার পাওয়া গেল ২৮ কোটি, সবমিলিয়ে ৫০ কোটি। তার উপর কোটি পাঁচেকের সোনা ও গয়না।
স্কুলে পড়ার সময় একটা রচনা আমাদের সময়ে সবাইকে লিখতে হয়েছে, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন। এখন টাকার দাম এতটাই পড়ে গেছে যে, কেউ আর লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে না। কোটি টাকার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বাস্তবে যখন এক মন্ত্রীর বান্ধবীর দুইটি ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটি টাকা পাওয়া যায়, তখন মনে হয়, কোটি টাকার স্বপ্নও একেবারে আলুনি হয়ে গেছে। আর প্রতিদিনই খবর আসছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পার্থ-অর্পিতার বাড়ি-জমির কথা। অভিযোগ, সেসব বাড়ি এবং বিপুল পরিমাণ জমিও কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল। বোঝাই যাচ্ছে, যে ৫০ কোটি টাকা ও পাঁচ কোটির গয়না উদ্ধার হয়েছে, তা সম্ভবত ট্রেলার, পিকচার এখনো বাকি।
পার্থের বান্ধবী অর্পিতার বাড়ি থেকে আরো টাকা উদ্ধার
বুধবার দিনভর অর্পিতার আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। উদ্ধার আরো টাকা এবং সোনা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এসএসসি দুর্নীতি এবং অর্পিতা
গত শনিবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গ্রেপ্তার হয়েছেন তার বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে ২০ কোটিরও বেশি টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছিল ইডি। বুধবার তার আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বেলঘরিয়ার বাড়ি
উত্তর কলকাতা শহরতলির বেলঘরিয়ায় এই আবাসনে অর্পিতার আরো দুইটি ফ্ল্যাট আছে। বুধবার তারই একটিতে তল্লাশি চালায় ইডি। উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা এবং গয়না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী কী উদ্ধার
দিনভর তল্লাশি চালিয়ে ইডি শুধুমাত্র এই ফ্ল্যাটটি থেকে ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। তার সঙ্গে ছিল চার কোটি ৩১ লাখ টাকা বাজার মূল্যের সোনার গয়না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
১৯ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি
বাড়িটিতে বুধবার ১৯ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায় ইডি। পরে ফ্ল্যাটটিতে নোটিস লাগিয়ে সিল করে দেওয়া হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা গোনার যন্ত্র
টাকা গোনার জন্য ব্যাংক থেকে চারটি বিশেষ যন্ত্র নিয়ে আসা হয় রাতের দিকে। সেই যন্ত্রের সাহায্যেই সারা রাত ধরে টাকা গোনা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা নেওয়ার ট্রাঙ্ক
টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ট্রাকে ২০টি ট্রাঙ্ক নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে সেই ট্রাঙ্কে টাকা বোঝাই করে ট্রাকে তোলা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান
বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান চেয়ে পাঠায় ইডি। তারা এসে ফ্ল্যাটটি ঘিরে ফেলে। সকাল পর্যন্ত তারা এলাকায় পাহারায় ছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির অফিসাররা
বিকেলের পর ইডির উচ্চপদস্থ অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। তাদের উপস্থিতিতেই টাকা গোনার কাজ হয়েছে। আবাসনের এক আবাসিককেও সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অন্য ফ্ল্যাটটি
ওই একই আবাসনে আরো একটি ফ্ল্যাট আছে অর্পিতার। সেখানে এখনো তল্লাশি চালানো হয়নি। ফ্ল্যাটটি সিল করে দিয়ে গেছে ইডি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অর্পিতার মা
গোটা ঘটনায় হতভম্ব অর্পিতার মা। বলেছেন, মেয়ে কী করছে, তার কোনো খবর তার কাছে ছিল না। তিনি ভাবতেও পারচেন না এমন সব ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মানিককে জেরা
বুধবার সিজিও কমপ্লেক্সে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ১৪ ঘণ্টা টানা জেরা করছে ইডি। শুক্রবার তাকে ফের যেতে বলা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কুণাল ঘোষের বক্তব্য
বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল এবং মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, যদি তার কথা দলের পছন্দ না হয়, তাহলে তাকে দল থেকে বিতাড়িত করা হোক। কিন্তু তিনি এই দুর্নীতি মেনে নেবেন না।
ছবি: Privat
12 ছবি1 | 12
এই ট্রেলার দেখেই তো চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যতই টাকার টানাটানি থাকুক না কেন, শিল্পহীন রাজ্যের অর্থনীতি যতই দুর্বল হোক না কেন, রাজনীতিকের কাছে, তার বান্ধবীর অর্থনীতিতে মন্দার ছায়ামাত্র নেই। তাদের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠেছে। তার উপর আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, আড়ালে-আবডালে কান পাতলে শোনা যায়, রাজনীতিক, শিল্পপতিরা ঘরে টাকা রাখেন কম, বেশিরভাগটা দেশে-বিদেশে পাচার করে দেন, বিনিয়োগ করেন। তা পার্থ-অর্পিতা সেরকম কিছু করেছেন কিনা, তা তদন্ত আরো এগোলে টের পাওয়া যাবে। আপাতত যা পাওয়া গেছে, তাতেই আম-বাঙালির চোখ কপালে উঠেছে। এরকম দুর্নীতির টাকা গোনার লাইভই বা কবে দেখেছে বাঙালি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো যেখানে চার-ছয়ের বন্যায় স্কোর হুহু করে বাড়ছে।
পার্থ গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিক্ষোভকারীদের দাবি, চাকরি চাই
প্রায় পাঁচশ দিন ধরে তারা প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর খুশি হয়েও তাদের দাবি, এবার চাকরি দিতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami /DW
গান্ধী মূর্তির নীচে
রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে এই শামিয়ানার নীচে আন্দোলনরত কয়েকশ চাকরিপ্রার্থী নারী পুরুষ আজও একটাই আশায় এখানে প্রতিদিন অবস্থান করেন, “একদিন সুবিচার অবশ্যই পাওয়া যাবে। তারা চাকরি পাবেন।
ছবি: Subrata Goswami /DW
পার্থর বিরুদ্ধে
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের এই আন্দোলন, সেই দফতরেরই সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গত শুক্রবার ইডির আধিকারিকরা ২৭ ঘণ্টা তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার করেন। এতে খুশি বিক্ষোভকারীরা। এসএসসি-কেলেঙ্কারি যখন হয়, তখন পার্থ শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তখন থেকেই পার্থর বিরুদ্ধে সোচ্চার বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু তারা এখন অবিলম্বে চাকরি চান।
ছবি: Subrata Goswami /DW
ববিতার দাবি
২০২১ সালে ব্যক্তিগত ভাবে মামলা করেন ববিতা সরকার। পরবর্তীকালে তিনি জয়ী হন এবং সরকার তাকে চাকরি দিতে বাধ্য হয়। ববিতার মামলার জেরেই ব্যাপারটা ইডি ও সিবিআই পর্যন্ত গড়ায়। পার্থর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে ববিতা বলেছেন, ''এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমরা কী কারণে বঞ্চিত হয়েছি। তবে এটা সফল্য কি না জানি না, এটুকু বলতে পারি, কেউই আইনের ঊর্ধে নয়।''
ছবি: Subrata Goswami /DW
ক্যানসার আক্রান্ত সোমার কথা
এসএসসি দুর্নীতির পাশাপাশি ক্যানসারের মত মারণরোগের বিরুদ্ধেও লড়াই চালাতে হয়েছে সোমাকে। সোমার অবশ্য চাকরি হয়েছে, তবু আন্দোলনের মঞ্চকে ভুলে যাননি সোমা। সোমা আজও সুযোগ পেলে অবস্থান মঞ্চে আসেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ''জানতাম দুর্নীতি হয়েছে, তবে তার শিকড় যে এত দূর বিস্তৃত তা জানতাম না। তবে যদি উনি দোষী সাব্যস্ত হন, কঠিন শাস্তি চাইব।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
চাকরি চান মইদুল
যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের প্রেসিডেণ্ট মইদুল ইসলাম। আন্দোলন চলাকালীন আট দিনের সন্তানের মৃত্যুও দেখতে হয়েছে তাকে। তিনি জানালেন, তারা এই গ্রেপ্তারিতে দুঃখিত নন আবার খুশিও নন। কারণ তারা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই আছেন। তারা চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেলে খুশি হবেন।
ছবি: Subrata Goswami /DW
রাসমণির বক্তব্য
পূর্ব মেদিনীপুরের রাসমণি মাইতির গলায় কান্নার সুর। ''প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক কটাক্ষ সবকিছু উপেক্ষা করে দিনের পর দিন এই আন্দোলনে অবস্থান করছি। এমন একটা রাজ্যে বাস করি যে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে ইডির হেফাজতে, এর থেকে লজ্জার কী হতে পারে?''
ছবি: Subrata Goswami /DW
রুকসানার কাছে আশার আলো
পার্থ চট্টোপধ্যায়ের গ্রেপ্তারিতে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন মালদার রুকসানা খাতুন। বললেন, ''সব দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসুক তবে এর সঙ্গে আমাদের নিয়োগটাও প্রয়োজন।''
ছবি: Subrata Goswami /DW
কেলেঙ্কারির অংশ, বলছেন মনোজ
মনোজ ঘোষ বললেন, ''সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এই গ্রেপ্তারিটাও কেলেঙ্কারির একটা অংশ, এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।''
ছবি: Subrata Goswami /DW
যারা ঘুষ দিয়েছেন তাদের শাস্তি চান সুদীপ
যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের স্টেট কো-অর্ডিনেটর সুদীপ মণ্ডল বললেন, ''যারা ঘুষ খেয়েছে তারা যেমন অপরাধী, যারা দিয়েছেন তারাও দোষী। তাদের বিচারও আদালতের মাধ্যমেই হোক।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
এবার চাকরি চান তনয়া
নদিয়ার তনয়া বিশ্বাস বললেন, ''দুর্নীতির আর কত প্রমাণ প্রয়োজন? যেখানে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং স্বীকার করে নিয়েছেন যে দুর্নীতি হয়েছে। ২০১৯ সালে উনি নিজে এসে আমাদের বলে গিয়েছিলেন যে প্রয়োজন হলে আইন বদল করেও আমাদের নিয়োগ করা হবে, কোথায় গেল সেই সব কথা? কাজেই এই গ্রেপ্তারি নিয়ে আমাদের আলাদা কোনও উচ্ছ্বাস নেই। যতক্ষণ না আমাদের চাকরি হচ্ছে আমাদের মুখে হাসি ফিরবে না।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিয়োগপত্র চান সুদীপ
মুর্শিদাবাদের সুদীপ সাহার বক্তব্য তার হাতের পোস্টারেই লেখা রয়েছে। জানালেন, ''গ্রেপ্তার, বিচার, জিজ্ঞাসাবাদ সব চলুক, কিন্তু আগে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগপত্রটা দিক''
ছবি: Subrata Goswami/DW
11 ছবি1 | 11
ইডি বা সিবিআই বলেনি, তবে অনুমান করা যেতেই পারে এই অর্থের উৎস এসএসসি কেলেঙ্কারি। কারণ, সূত্র বলছে, এসএসসি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি ইডি দুইটি ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার করেছে। দুটো ছবি পাশাপাশি রাখুন। অর্পিতার ফ্ল্যাটে টাকার পাহাড়ের ছবি, অন্যদিকে কলকাতাতেই গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভকারীদের ছবি। তারা পরীক্ষা দিয়ে পাস করে যোগ্যতামান পেরোনোর পরেও চাকরি পাননি। রাস্তার ধারে বসে লড়ে যাচ্ছেন। কারো সন্তান জন্মের আটদিন পরে মারা গেছেন, কেউ স্বামী-বাচ্চাকে নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কেউ ক্যানসারের মতো রোগকে সঙ্গী করে দিনের পর দিন বিক্ষোভ দেখিয়ে গেছেন। শুধু অর্থের জোর থাকায় তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে অন্যরা চাকরি পেয়েছেন, মন্ত্রী ও তার বান্ধবীর ঘরে আরো টাকার বান্ডিল ঢুকেছে, আর তারা রাস্তার পাশে প্ল্যাকার্ড ধরে বসে আছেন একদিন ন্যায় পাবেন, এই আশায়। এই দুই ছবির পরতে পরতে রয়েছে অন্যায়ের কাহিনি, দুর্নীতির রমরমার গল্প।
যা বলছিলাম, দুর্নীতির এই নগ্ন রূপ আগে দেখেনি পশ্চিমবঙ্গ। এই লাইনটা লেখার পরই মনে হলো, সত্যিই কি তাই! না কি, দুর্নীতির চিহ্নগুলো আমরা খুব সহজেই উপেক্ষা করেছি। প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, এতবড় আকারে দুর্নীতির ছবি এর আগে সামনে আসেনি। কিন্তু ছোটখাট তো এসেছে, আসে। পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পরই কী করে বিশাল বাড়ি করে ফেলা যায়, তা তো আমরা পশ্চিমবঙ্গের গ্রামেগঞ্জে দেখেছি। সিন্ডিকেট, তোলাবাজি-সহ হাজারো উপায়ে দলের নেতারা কীরকমভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছেন, সেটাও তো দেখতে বাকি নেই। পাঁচ বছর পর সাংসদ-বিধায়কদের সম্পত্তি কীরকমভাবে বেড়ে যায়, সেটাও তো আমাদের চোখের সামনে নিয়ে আসছে বেসরকারি সংস্থা এডিআর। হতে পারে, সেখান থেকে ৫০ কোটি পাওয়া যাবে না, রাতভর টাকার বান্ডিল মেশিনে ঢোকাতে হবে না, কিন্তু কয়েক ঘণ্টা তো লাগবেই!
আসলে আমরা বড় সহজভাবে মেনে নিয়েছি, রাজনীতিকদের কাছে তো দুর্নীতির টাকা থাকবে। বিপদটা এখানেই। তারপরও তো বিনা প্রতিবাদে দুর্নীতিগ্রস্তদেরই জিতিয়ে আনছি। তাহলে কি দায়টা আমাদের উপরেও বর্তায় না? পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় খোলাখুলি কিছু মন্তব্য করেছিলেন। তখনও তো আমরা সব জেনেবুঝেও চুপচাপ থেকেছি। বরং বিচারপতির বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছি। তার জন্যই তো আজ এই ছবি দেখতে পাচ্ছি আমরা। পার্থ ওঅর্পিতাকে জানাতে হবে, এই সম্পদ তারা কোথা থেকে পেয়েছেন, তেমনই যারা এই অর্থ তাদের দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে সেই সব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে, যারা পার্থদের সম্পদ বাড়াতে সাহায্য করেছেন।
তৃণমূলের কিছু নেতা এখন মুখ খুলছেন। কুণাল ঘোষ পার্থের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করেছেন। যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য টুইট করে বলেছেন, ফোঁড়া যখন পুঁজে ভরে এসেছে, তখন তা ফাটিয়ে দেয়াই শ্রেয়। একটি ফোঁড়ার জন্য গোটা শরীরকে কষ্ট দেয়া বৃথা। সত্যিই কি পরিস্থিতিটা এতই সহজ-সরল? একজনই দুর্নীতি করেছেন? বাকিরা সকলেই সাধু? পশ্চিমবঙ্গে সিন্ডিকেটরাজ চলে না, বালি মাফিয়ারা সক্রিয় নয়, গুড়-বাতাসা বা ঢাকের চড়াম চড়াম শোনা যায় না? দেবাংশু, আপনি জানেন, একজনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বাকি সবাইকে সাধু প্রতিপন্ন করার সহজ রাস্তাটা সমস্ত রাজনৈতিক দল নিয়ে থাকে। তাতে সাময়িক স্বস্তি থাকে ঠিকই, কিন্তু মূল অসুখ কখনো যায় না। মূল অসুখ সারাতে গেলে নির্মমভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেই সিদ্ধান্ত কি এবার দেখবে পশ্চিমবঙ্গ? বাঁচতে গেলে তো আশা নিয়েই থাকতে হয়। তাই আপাত অসম্ভব জেনেও এই আশাটুকু থাক।