নানা টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণের পরও ক্ষতিপূরণ দেয়া থেকে নিষ্কৃতি পেলো না গ্রিন লাইন পরিবহন৷ দুর্ঘটনায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে৷
বিজ্ঞাপন
হাইকোর্টের দুই বিচারক বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের উপস্থিতিতে রাসেলের হাতে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ৷
এর আগে বুধবার সকালে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ পরিশোধে এক মাস সময় চাইলে আদালত তা নাকচ করে বিকেল ৩টার মধ্যে ‘কিছু' অংশ হলেও পরিশোধের নির্দেশ দেন৷
এরপর বিকেলে ‘মাত্র' ৫ লাখ টাকা দেয়ায় ‘উষ্মা' প্রকাশ করলেও ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা আগামী এক মাসের মধ্যে রাসেলকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ এ আদেশের সময় পা হারানো রাসেল ও গ্রিন লাইন পরিবহনের মালিক হাজী মো. আলাউদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷
রাসেলের ক্ষতিগ্রস্ত ডান পায়ের চিকিৎসা সাভারের সিআরপিতে করানোর ও বাঁ পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কৃত্রিম পা লাগানোর আদেশও দেন আদালত৷
রাসেল সরকার এক সময় ছিলেন প্রাইভেট কারের চালক৷ গত বছর ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাস তাঁকে চাপা দেয়৷ তাঁর জীবন রক্ষায় একটি পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা৷
কী থাকছে নতুন সড়ক পরিবহণ আইনে?
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহাণির ঘটনায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিক্ষাগত যোগ্যতা
আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না৷ নতুন আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাসের শর্ত রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
সহকারী হতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা
আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না৷ নতুন আইনে চালকের সহকারীরও থাকতে হবে পঞ্চম শ্রেণি পাসের সার্টিফকেট৷ সহকারী হতে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্সের বিধান তো থাকছেই৷
ছবি: bdnews24.com
ন্যূনতম বয়স
ব্যক্তিগত গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতই অন্তত ১৮ বছর রাখা হয়েছে৷ তবে পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর৷
ছবি: DW
বাড়ছে সাজা
নতুন আইনের খসড়ায় চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছ’মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে৷ আগের আইনে এই অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman
সাজা হবে সহকারীরও
চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে নতুন আইনের খসড়ায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিষিদ্ধ মোবাইল ফোন
নতুন আইন পাস হলে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না চালক৷ এ আইন ভাঙলে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার
ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পুলিশকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিধি অমান্যে পয়েন্ট কাটা
প্রস্তাবিত আইনে লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট৷ বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে এই পয়েন্ট৷ পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স৷
ছবি: DW/M. Mamun
দুর্ঘটনার সাজা দণ্ডবিধিতে
পেনাল কোডে যা কিছু থাকুক না কেন অবহেলাজনিত কারণে গুরুতরভাবে আহত বা প্রাণহানি হলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে৷ তদন্তে দুর্ঘটনা যদি উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে প্রমাণিত হয় তাহলে তা দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় (নরহত্যা, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড) যাবে৷ আর চালকের কারণে প্রাণহানি হয়ে থাকলে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী সাজা দেওয়া হবে৷ তদন্ত কর্মকর্তাই ঠিক করবেন- অপরাধ কোন ধারায় যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাবেক সাংসদ উম্মে কুলসুমের করা এক রিট আবেদনে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট৷ পরে আপিল বিভাগেও ওই আদেশ বহাল থাকে৷
আদালতে গ্রিন লাইন মালিকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওয়াজি উল্লাহ, রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শামসুল হক রেজা৷
তবে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করে৷
৪ এপ্রিল গ্রিন লাইনের মহাব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার আদালতকে জানান, প্রতিষ্ঠানের মালিক চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছেন, ফিরবেন ৯ এপ্রিল৷
এরপর রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধে গ্রিন লাইলকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেয় হাই কোর্ট৷ এর পর আদালতে হলফনামা দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয় পরিবহনটির কর্তৃপক্ষকে৷ এবার নির্দেশ না মানলে গ্রিন লাইনের সব বাস জব্দ করে নিলামে তুলে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করে আদালত৷
এদিকে, এ মামলায় পক্ষভুক্ত হতে আপিল বিভাগে আবেদন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি৷
এডিকে/জেডএইচ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ঢাকার সড়কে ফের অনিয়ম
ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে নিয়মে ফিরেছিল ঢাকার রাজপথ৷ মন্ত্রী, পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সড়কে চলতে বাধ্য হয়েছিলেন ট্রাফিক আইন মেনে৷ আন্দোলন শেষে সেই ঢাকা আবার ফিরে গেছে চিরচেনা রূপে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পারাপার
ঢাকার বেশিরভাগ জায়গাতেই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন না পথচারীরা৷ ঝুঁকি নিয়ে নীচ দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে সড়ক পারাপার
গাড়ি চলছে কি চলছে না, তা দেখার সময় কোথায়? সড়ক পারাপারে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
চলন্ত গাড়িতে ওঠানামা
ঢাকার রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে ওঠানামার সাধারণ দৃশ্য এটি৷ বাস চালকরা আগের মতোই যাত্রীদের অনেকটা বাধ্য করছেন এভাবে ওঠানামা করতে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
রাস্তার মাঝখানে বাস থামানো
যাত্রী তুলতে চালকরা নির্ধারিত জায়গার বদলে বরাবরের মতোই সড়কের মাঝখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তুলছেন৷ ঢাকায় যানজটের এটি একটি অন্যতম কারণ৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
বাসের প্রতিযোগিতা
ঢাকায় চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যে বাসে বাসে প্রতিযোগিতা বন্ধের কথা বলা হলেও তা মানছেন না চালকরা৷ বেশি যাত্রী তোলার জন্য ঢাকার বাস চালকরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছেন৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
মোবাইল কানে সড়ক পারাপার
মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে অনেককেই সড়ক পার হতে দেখা যায় ঢাকায়, যার ফলে অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনারও শিকার হন তাঁরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
ফুটপাথে মোটরবাইক
যানজটের শহর ঢাকায় মোটরসাইকেল আরোহীরা সুযোগ পেলেই ফুটপাথকে বেছে নিচ্ছেন তাঁদের চলার পথ হিসেবে৷ ফলে বিপাকে পড়ছেন পথচারীরা৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
বেপরোয়া মোটরবাইক
ঢাকার রাস্তায় মোটরবাইক চালকদের অনেকেই বেপরোয়াভাবে চলাচল করেন৷ বেশিরভাগ সময়ই তাঁদেরকে ট্রাফিক আইন অমান্য করতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
পুলিশের মোটরবাইক
পুলিশের অনেক মোটরবাইকও ঢাকায় চলাচল করে বেপরোয়াভাবে৷ ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেই ঢাকার ইস্কাটনে হেলমেট ছাড়া বিপরীত দিকে চলতে দেখা গেল এই পুলিশ সদস্যকে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
বন্ধ হয়নি বাদুড় ঝোলা
ঢাকার রাস্তায় বাসে চলতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় চলাচল বন্ধ করার কথা বলা হলেও ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেই দেখা গেল সে দৃশ্য৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
আছে লক্কর ঝক্কর বাসও
ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশের পক্ষ থেকে লক্কর ঝক্কর বাস চলাচল বন্ধের কথা বলা হলেও থেমে নেই তা৷ অনেক ক্ষেত্রে লক্কর ঝক্কর বাসকে রঙের সামান্য প্রলেপ দিয়ে চালানো হচ্ছে সড়কে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
বেপরোয়া ভিআইপি
ছাত্র আন্দোলনে অনেক নাজেহাল হওয়ার পরও বেপরোয়া থেকেই গেছেন অনেক ভিআইপি৷ রং সাইডে এখনো বীরদর্পে চলাচল করতে দেখা যায় তাঁদের৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
পুলিশ কী আইনের উর্ধে?
ঢাকার রাস্তায় ভিআইপিদের পাশাপাশি সবেচেয়ে বেশি ট্রাফিক আইন না মেনে চলাচল করছে পুলিশের গাড়ি৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
বাসে উঠতে সড়কের মাঝে
ঢাকার রাস্তায় বাসে উঠতে পথচারীরা সড়কের অর্ধেকেরও বেশি দখল করে দাঁড়িয়ে আছেন৷ ফলে অনেক সময়ই দুর্ঘটনায় পড়েন অনেকে৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
লেন অমান্য
ঢাকার রাস্তায় চলাচল করতে বিভিন্ন ধরনের বাহনের চালকরা ‘লেন’ মানেন না৷ ফলে সবসময়েই সড়কে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়৷ কয়েকদিনের ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার সড়কে লেন মানতে বাধ্য হয়েছিলেন চালকরা৷