মহামারিতে লাখো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টা দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এর টিকা নিয়েও এরই মধ্যে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসাও শুরু হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো নিজেদের জনগণের জন্য টিকা কিনে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এখন পর্যন্ত কেবল বায়োনটেক-ফাইজারের টিকাই আন্তর্জাতিক অনুমোদন পেয়েছে। অ্যামেরিকা, ক্যানাডা এবং যুক্তরাজ্যে টিকার অনুমোদন মিলেছে, টিকা দেয়াও শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও আগামি সপ্তাহেই এই টিকার অনুমোদন দেয়ার কথা রয়েছে।
অথচ এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল? যখন থেকে করোনার টিকা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, ধনী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা তো বটেই, গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স- গ্য়াভি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সেপি বারবার বলে আসছে টাকার জন্য যাতে কোনো দেশ টিকা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে ব্যবস্থা করবে।
এই তিন সংস্থা মিলে কোভ্যাক্স নামের একটি প্রকল্পও গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০০ কোটি টিকা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য কেনার পরিকল্পনা করা হয়। বাংলাদেশও কোভ্যাক্সের আওতায় টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু এখন অর্থ সংকটে আছে প্রকল্পটি, এখনো কোনো চুক্তিও করতে পারেনি। ভবিষ্যতে আদৌ অর্থ জোগাড় সম্ভব হবে কিনা, তা-ও নিশ্চিত বলতে পারছেন না কেউ।
দাতা সংস্থা অক্সফাম কদিন আগেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ধনী দেশগুলো উৎপাদন হওয়ার আগেই সম্ভাব্য ৬১ শতাংশ ভ্যাকসিন কিনে রেখেছে। অথচ এই ধনী দেশগুলোতে বাস করেন বিশ্বের কেবল ১৩ শতাংশ মানুষ। এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একাধিক ভ্যাকসিনও যদি বাজারে আসে, তাহলেও এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
করোনা ভ্যাকসিন: কোন দেশের কী কৌশল
এক বছরেরও কম সময়ে করোনার কার্যকরী একাধিক ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে বিভিন্ন কোম্পানি৷ সেগুলো অনুমোদনও পেতে শুরু করেছে৷ আগেভাগে সংগ্রহে দেশগুলোর মধ্যে তোড়জোড় যেমন চলছে; তেমনি নাগরিকদের টিকা প্রদানে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কৌশল৷
ছবি: Allan Carvalho/NurPhoto/picture-alliance
পথ দেখালো যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ নেন ৯০ বছরের মার্গারেট৷ যুক্তরাজ্যে প্রথম আট লাখ টিকা পাবেন তার মতো প্রবীণ, সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মীসহ বাকি বয়স্ক নাগরিকরা৷ ফাইজারের কাছে মোট চার কোটি ডোজ টিকার অর্ডার দিয়েছে দেশটি; যার মাধ্যমে দুই ডোজ করে দুই কোটি মানুষের ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা মিলছে৷ পাঁচ কোটি ত্রিশ লাখ নাগরিকের সবাইকে টিকা দিতে যুক্তরাজ্যকে নির্ভর করতে হবে অন্য কোম্পানিগুলোর উপরে৷
ছবি: Jacob King/AP Photo/picture alliance
প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র
বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রও৷ দেশব্যাপী ছড়ানো বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ২৯ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পৌঁছেছে৷ ফাইজার থেকে আরো ২০ লাখ আর মডার্নার ৫৯ লাখ ডোজের চালান ছাড় হতে পারে আসছে সপ্তাহে৷ এই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের৷ প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সিং হোমে বসবাসরত, জরুরি সেবায় নিয়োজিত এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যধিতে আক্রান্তরা টিকা পাবেন৷
ছবি: Bran Woolston/REUTERS
ক্যানাডার তোড়জোড়
মডার্নার কাছ থেকে এক লাখ ৬৮ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পেতে সম্প্রতি চুক্তি করেছে ক্যানাডা৷ শর্ত অনুযায়ী অনুমোদন পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই চালান ছাড় শুরু করবে কোম্পানিটি৷ তবে তার আগেই ফাইজারের টিকা পৌঁছে গেছে দেশটিতে৷ ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে প্রয়োগও৷
ছবি: Adrian Wyld/REUTERS
দেরি করেনি সৌদি
আরব নিউজের সংবাদ অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার প্রথম চালান পৌঁছায়৷ পরের দিন থেকেই শুরু হয়েছে প্রয়োগ৷ টিকা পেতে একদিনে মোট দেড় লাখ মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন৷ সবাইকে বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাবেন ৬৫ বছরের বেশি বয়সি, বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী আর স্বাস্থ্যকর্মীরা৷
ছবি: Ahmed Yosri/REUTERS
শুরু হচ্ছে ইসরায়েলে
ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারিৎস-এর তথ্য অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রথম টিকা নেবেন দেশটিতে৷ এরপর প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পাবেন বাকি জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ সাধারণ নাগরিকদের টিকা প্রদান শুরু হবে আসছে সপ্তাহে৷ শুরুতে অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্করা৷ প্রাথমিক পর্যায়ে ফাইজারের কাছ থেকে কয়েক লাখ ভ্যাকসিন নিচ্ছে দেশটি৷ দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে নিজেদের উদ্ভাবিত একটি ভ্যাকসিনও৷
ছবি: Abir Sultan/REUTERS
অপেক্ষায় জার্মানি
নভেম্বরের শুরুতেই টিকা কর্মসূচির কৌশল নির্ধারণ করেছে জার্মানির সরকার৷ ইইউর মাধ্যমে ৩০ কোটি টিকার অর্ডার দিয়েছে দেশটি৷ টিকা পাওয়া মাত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৬০ টি বিতরণ কেন্দ্রে সেগুলো পৌঁছে দেবে সরকার৷ তবে সাধারণ মানুষকে এর আওতায় আসতে বেশ কয়েক মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে৷ কেননা, শুরুতে প্রাধান্য পাবেন বয়স্ক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকরা৷ এই তালিকায় আছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিতরাও৷
ছবি: Ralph Orlowski/REUTERS
জাপানে মহাযজ্ঞ
নিজেদের ১২ কোটি জনগোষ্ঠীর সবার জন্য আগামী জুনের মধ্যে করোনার টিকা নিশ্চিত করতে চায় জাপান সরকার৷ এজন্য ফাইজার, আস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার কাছ থেকে ২৯ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি হয়েছে৷ জনগণকে বিনা খরচেই এই টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার গত অক্টোবরেই৷ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে এরই মধ্যে সাড়ে দশ হাজার ডিপ ফ্রিজার কেনাসহ মহাযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
শেষ ধাপে চীন
পরীক্ষার শেষ ধাপে রয়েছে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির বেশ কয়েকটি টিকা৷ সেগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলেও জরুরি ভিত্তিতে এরই মধ্যে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী ও ঝুঁকিতে থাকা নাগরিককে পরীক্ষামূলক টিকা দেয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন প্রদেশের সরকার আগেভাগেই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জনসংখ্যার হিসাবে টিকার অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছে৷ কারা আগে ভ্যাকসিন পাবেন তার অগ্রাধিকার তালিকাও তৈরি করছে প্রশাসন৷
ছবি: Wang Zhao/AFP/Getty Images
একাধিক টিকার অপেক্ষায় ভারত
আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ৩০ কোটি নাগরিককে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা মোদী সরকারের৷ প্রথম ধাপের এই টিকা কর্মসূচীর আওতায় আসবেন স্বাস্থ্যকর্মী ও পঞ্চাশোর্ধ্বরা৷ এতে খরচ হবে ১৪০ থেকে ১৮০ কোটি ডলার৷ পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকবে ২৩টি মন্ত্রণালয়৷ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও আস্ট্রাজেনেকা, রাশিয়ার স্পুটনিক এবং ভারতীয় জাইডাস কেডিলা ও ভারতী বায়োটেকের টিকা আছে সম্ভাব্য প্রাপ্তির তালিকায়৷
ছবি: Dado Ruvic/REUTERS
চীনে চোখ পাকিস্তানের
চীনের একটি টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে পাকিস্তানে৷ ভ্যাকসিন কেনার জন্য ইমরান খান সরকারের এখন পর্যন্ত ঘোষিত বাজেট ২৫ কোটি ডলার৷ এই অর্থ দিয়ে একাধিক টিকা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা তাদের৷ প্রথম পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাবেন কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থকর্মী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা৷ পরবর্তী ধাপে গুরুত্ব দেয়া হবে বাকি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ষাটোর্ধ্বদের৷
ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images
অক্সফোর্ডের ভরসায় বাংলাদেশ
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো৷ যার মাধ্যমে পাওয়া যাবে তিন কোটি টিকা৷ এতে দেড় কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে৷ টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারের জন্য ১০ ধরনের জনগোষ্ঠীর তালিকা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cairns
11 ছবি1 | 11
মার্কিন প্রতিষ্ঠান মডার্নার টিকা এখনো অনুমোদন পায়নি। কিন্তু এর খরচ হবে আরো বেশি, প্রতি ডোজ অন্তত ২৫ ডলার। অর্থাৎ, মাথাপিছু ৫০ ডলার। সে হিসেবে এই টিকার জন্য বাংলাদেশের খরচ হবে প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
আপাতত বিভিন্ন দেশে অনুমোদন পাওয়া বায়োনটেকের টিকা প্রতি ডোজ ১৯ ডলার ৫০ সেন্ট, অর্থাৎ প্রায় ১৭শ টাকা। প্রতি জনের জন্য দুই ডোজ হিসেব করলে মাথাপিছু খরচ হবে ৩,৪০০ টাকা। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য এই টিকা দিতে হলে খরচ পড়বে কত? প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা!
শুধু টিকার খরচ হিসেব করলেই হবে না। এই টিকা পরিবহন ও সংরক্ষণেও বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাংলাদেশের পক্ষে এই ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তাও খুব বাস্তবসম্মত হবে না৷
টিকার গবেষণায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগে বায়োনটেক ও ফাইজারের মুল লক্ষ্যই ছিল এই খরচের কয়েকগুণ বাজার থেকে তুলে আনা। বায়োনটেক জার্মান সরকারের সহায়তা নিলেও ফাইজার মার্কিন সরকারের কাছ থেকেও কোনো সহায়তা নিতে চায়নি। বরং নিজেরাই বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে করোনার টিকা গবেষণায়, যাতে একবার টিকা চলে এলে এর সব মুনাফা প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারে। সে কাজে তারা বেশ সফলই হয়েছে বলা যায়।
এদিকে অক্সফোর্ড ও আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন শুরুতে বেশ এগিয়ে থাকলেও গবেষণা সংক্রান্ত জটিলতায় এখন পিছিয়ে পড়েছে। এই ভ্যাকসিনটির দিকেই মূলত তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দরিদ্র দেশ।
আস্ট্রাজেনেকা তাদের টিকা সর্বনিম্ন মূল্যে বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিল। প্রতি ডোজ কেবল তিন থেকে চার ডলার, অর্থাৎ মাথাপিছু দুই ডোজের জন্য খরচ পড়তো ছয় থেকে আট ডলার। অর্থাৎ, বাংলাদেশের সবাইকে টিকা দিতে খরচ পড়তো কেবল ১১ হাজার কোটি টাকা।
একই সঙ্গে টিকার ফর্মুলা নিজেদের কাছে না রেখে বিশ্বের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভাগাভাগি করায় উৎপাদন ও সরবরাহ করার ক্ষেত্রেও দ্রুততা আনার চেষ্টাও ছিল তাদের।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদন ও সরবরাহে প্রস্তুতও রয়েছে। তাদের সঙ্গে ভ্যাকসিন কেনার কথা চূড়ান্ত করেছিল বাংলাদেশও।
বাংলাদেশের অর্থনীতি তবুও পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে অনেকটাই ভালো। আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর অবস্থা কী হবে!
এর আগেও ইবোলার মতো অনেক রোগের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন গবেষণা দ্রুতগতিতে এগোয়নি কেবল সেই গবেষণার খরচ আফ্রিকায় ব্যবসা থেকে তুলে আনা সম্ভব হবে না বলে।
২০১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা মহামারির পর ‘ভবিষ্যৎ মহামারিতে' আমাদের কী করা উচিত, কী শিক্ষা নেয়া উচিত, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি অনলাইন কোর্সে অংশ নিয়েছিলাম। নানা কিছুর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ, মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কর্মী, চিকিৎসক, ভাইরোলজিস্ট, সবাই একটি বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত ছিলেন ‘পরের মহামারিতে' ভ্যাকসিন দ্রুতই পৌঁছাবে বিশ্বের নানা প্রান্তে।
কিন্তু টাকাই কি শেষ পর্যন্ত শেষ কথা বলবে? দেখা যাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মানবাধিকারের ঝান্ডা ওড়ানো দেশগুলো শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেয়।
করোনার কবলে ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারের পার্টি
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু ছাড়িয়েছে রেকর্ড৷ জার্মানি তাই হেঁটেছে কড়া লকডাউনের পথে৷ এমনকি ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারের আয়োজনও বাতিল করা হয়েছে৷ বার্লিনের মদ্যশালাগুলো এখন কেমন চলছে? এ নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
ওবারবাউমেক
করোনার কড়াকড়িতে বন্ধ হয়েছে মায়োর বার ওবারবাউমেক৷ লকডাউনে নিজের ব্যবসার ক্ষতি হলেও, এটাই একমাত্র পথ বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, “মানুষের দুর্দশার সময় তার পাশে থাকা উচিত৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন এর উলটোটা সত্যি৷ এখন দূরে থাকা মানেই কাছে থাকা৷’’
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
ক্রাস বোয়েজার ভোলফ
বার্লিনের এই বারটির ম্যানেজার মাক্স৷ তিনি বলেন, “আমার ধারণা ছিল বারের ব্যবসা সব সংকট থেকে মুক্ত৷ কারণ মানুষ সবসময়ই পান করতে ভালোবাসে৷ কিন্তু আমি ভুল ছিলাম৷ এই বছর আমাদের সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকা শিখিয়েছে৷ এটাই লকডাউন৷’’
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
রেভোল্টে
রেভোল্টে বারের ম্যানেজার কাতিয়া৷ লকডাউনে বার বন্ধ হওয়ায় বেশ হতাশ তিনি৷ কাতিয়া বলেন, “লকডাউনে বেঁচে থাকাই দায়৷”
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
উয়েবেরবেক
বার বন্ধ থাকলেও মার্কো প্রতিদিনই নিজের বার উয়েবেরবেক-এ এসে বসেন৷ তিনি বলেন, “৯০ এর দশকের একটি যুদ্ধজাহাজের নাম ছিল উয়েবেরবেক৷ আমার এই বারটিকেও যুদ্ধজাহাজই মনে হয়৷ আমার বন্ধু এবং কর্মচারিরা এখন অপেক্ষা করছেন কবে লকডাউন শেষে এই জাহাযে চড়ে নিজের বাড়ি যেতে পারবেন৷”
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
ভাইনার ব্লুট
নিজের বারের জানালায় বসে আছেন এভলিন উইনার৷ তিনি বলেন, "২০২০ আমাদের জন্য সত্যিই একটি কঠিন বছর৷ আমি এখনও আশাবাদী৷ আমি মনে করি এটি চলবে কিন্তু একসময় এর শেষ হবেই৷’’
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
জি-বার
নিজেদের বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন জি-বারের তিন কর্ণধার গুয়েনি, কনস্টানটিন এবং স্টিভ৷ গুয়েনি লকডাউনের সিদ্ধান্তে তেমন একটা খুশি না৷ তিনি বলেন, “এই সার্কাস যখন বন্ধ হবে, তখন কিভাবে বাইরে যেতে হয় সেটা ভুলে না গেলেই হয়৷’’
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
ওয়াট
এই বারের মালিক সিন্ডি৷ তিনি বলেন, “আমি যতক্ষণ সম্ভব, যেভাবে চলি সেভাবেই চলবো৷ এটা কেবল বেঁচে থাকার বিষয় নয়, অস্তিত্বের বিষয়৷ সামাজিক, সাংস্কৃতিক আবহ চর্চার স্থান যেমন বার, পাব, ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গেলেও সংকৃতি চর্চা বন্ধ হবে না৷ কোনো না কোনো ভাবে অন্য কোথাও এটি চলতে থাকবে৷”
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
ডি টাগুং
এই বারের মালিকের নাম ড্যানিয়েল৷ তিনি বলেন, “আমি এখন একটা সময়ের অপেক্ষা করছি, যখন বার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের আমি আবার ‘কেমন আছেন’ জিজ্ঞেস করতে পারবো৷ এখন বরং আমাকেই জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, আমি কিভাবে টিকে আছি৷’’
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
মোলেনফ্রিডহফ
পেটার ও আন্দ্রেয়াও খুব বাজে সময় কাটাচ্ছেন৷ পেটার বলছেন, “আমরা এই লকডাউনের কারণ বুঝতে পারছি এবং মেনেও নিয়েছি৷ কিন্তু নিজেদের রাজনীতিবিদদের দাবার ঘুঁটি মনে হচ্ছে৷ এতদিনে আমাদের অনেক দূর আগানো উচিত ছিল৷
ছবি: Hannibal Hanschke/REUTERS
ফ্রাংকেন
এই বারের বারটেন্ডার নেট্টি৷ বার বন্ধ থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই বারে আসেন তিনি৷ বলছিলেন, “আমি মানুষজনের হাসি এবং উদ্দাম রাতগুলোর অভাব টের পাই৷’’